তুমি সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো – পর্ব ২

0
461

#তুমি_সুখের_বৃষ্টি_হয়ে_ঝড়ো
#সমুদ্রিত_সুমি
পর্ব ২

মাঘের শেষ ফাগুনের শুরু তাও শীত যেন বহুগুণ। এই কনকনে শীতে যখন ভেজা শরীর আর ভেজা কাপড়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলো ভোর।তখন যেন কয়েক মুহূর্তে ধূসর নিজের কন্ঠনালীর ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলো।মুখে থেকে বারকয়েক একটা আওয়াজ হচ্ছিল। আল্লাহ সহায় হোন।ধূসর যখন কল ব্যাক করতে যাবে তখনই সেই নাম্বার থেকে দ্বিতীয়বার কল আসে।সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রিনা নামের একটি মেয়ে জানায় আজ চারদিন হয়েছে ভোর ঘরের দরজা বন্ধ করেছে।একবার শুধু খুলেছিলো তাও তাঁর মায়ের দোয়া করানোর দিন।আর খোলেনি।যখন ধূসর সব শুনে প্রশ্ন করে।এতো কথা তাঁকে কেন জানানো হচ্ছে। তখন সেই মেয়েটি বলে।সে ছাড়া আর কেউ ভোরকে আগলে রাখবে না।সে যেন খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের বাড়িতে চলে আসে।ধূসর এক প্রকার মনের সাথে যুদ্ধ করেই চলে এসেছে মোর্সেদ বাড়ি।যখন সে বাড়িতে ঢুকে ছিলো তখন মনে হয়েছে সব কিছু স্বাভাবিক।বাড়ির প্রতিটা মানুষ নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।যেন কিছুই হয়নি। বিষয়টা ধূসরের অনেক অবাক লেগেছিলো।তাই সে সরাসরি সফিউল মোর্সেদকে প্রশ্ন করে।ভোর কোথায়।উনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।কথাটা হয়ত এই বাড়ির কারো পছন্দ হয়নি।তা-ই তো। সফিউল মোর্সেদের মা,কুহেলি বেগম বলে উঠলেন।তোমার ওতো কি দরকার। আর যদি বেশি দরকার হয় নিজে গিয়ে খুঁজে দেখ।এই কথা শুনে যখন ধূসর কিছু বলতে যাবে।তখনই বাড়ির সব মহিলারা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো যে যাঁর কাজে।বিষয়টা খুব অপমান জনক হলেও ধূসর তা গিলে ফেললো।তখনই কোথা থেকে রিনা নামের সেই মেয়েটি বলে উঠলো।” আমার সাথে আসুন।”বারকয়েক দরজা ধাক্কা দিলেও যখন ভোর দরজা খুললো না তখন রিনা বললো।”ভাইয়া আপনি দরজাটা ভেঙে ফেলুন।” কথাটা বলতে দেরি হলেও কথাটা কেঁড়ে নিয়ে সফিউল মোর্সেদের স্ত্রী আফিয়া বেগম বলে উঠলো।”তোর তো সাহস কম না রিনা তুই ওই মেয়ের জন্য এতো দামি দরজা ভেঙে ফেলার কথা বলছিস।যাঁর প্রয়োজন ওই মেয়েকে তাঁকে বল।ওই মেয়ের জন্য যেন আমার বাড়ির কোন ক্ষতি না করে।” ধূসর আরেক দফা অবাক হলো তাঁর কথা শুনে।এদের কাছে একজন মানুষের থেকে দরজার মূল্য বেশি হলো।এটাও তো জানে না মেয়েটা নিজের কোন ক্ষতি করেছে কিনা।সত্যি মানুষ ভারি আজব।ধূসর আফিয়া বেগমের মুখের উপর বলে দিলো।এই দরজার মূল্য আমি চুকিয়ে দিবো।কথাটা বলেই ধূসর দরজাটা ভাঙাতে শুরু করলো।কিন্তু তাঁর শক্তির কাছে দরজা হার মানলো না।অনেক চেষ্টা করেও যখন দরজা ভাঙতে পারছিলো না ধূসর তখন কোথা থেকেই একজন শক্ত হাতের পুরুষ সামনে এসে বললো।” সব কিছু সবাইকে দিয়ে হয় না।” তারপর তাঁরা দুজন মিলে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে।পুরো ঘরে চোখ বুলিয়েও ভোরকে কোথাও পাওয়া গেলো না।তখন রিনা এক ছুটে ওয়াশরুমে চলে যায় চেক করতে।তখনই দেখতে পায় ভোরের করুন অবস্থা। এক চিৎকার দিয়েই ওখানেই ভোরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।ততোক্ষণে ধূসর আর আফিম চলে আসে ওয়াশরুমে রিনার চিৎকার শুনে।আফিম আর ধূসর ভোরের এমন অবস্থা হয়তো আশা করেনি তাই দুজনেই স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।দু’জনের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয় কয়েক মুহূর্তে। নিজেদের মধ্যে ফিরে আসে যখন রিনা আবারও চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে।আফিম দৌড়ে গিয়ে ভোরকে কোলে তুলে নিতেই একজন মেয়ে কঠিন কন্ঠে বলে উঠে।” ওকে ছেড়ে দাও।” আফিম সাথে সাথেই কঠিন চোখ তুলে তাকায় নিজের স্ত্রী ইলমার দিকে।কিন্তু আফিমের সেই কঠিন দৃষ্টি সম্পূর্ণ এড়িয়ে সে আবারও বলে উঠে।” বললাম তো ওকে তোমার কোল থেকে নামাও।যদি তোমার কোলে নেওয়ার এতো শখ হয়ে থাকে আমি তো সামনেই আছি আমাকে নেও। এদের এতো কথা এতো অবহেলা ধূসরের অসয্য লাগতে লাগলো তাই সে জোর করেই এক প্রকার আফিমের কোল থেকে ভোরকে কেঁড়ে নিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলো।আর বললো–শরীরে আল্লাহ এখনো যা শক্তি দিয়েছেন তাতে নিজের আপন মানুষকে আগলে রাখতে পারবো কারো সাহায্য ছাড়াই।কথা গুলো বলেই ভোরকে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরলো ধূসর। পথে অনেক কথাই তাঁর কানে এলো।”একদম মায়ের মতো অভিনয় শিখেছে। কতো যে রঙ্গলিলা দেখাবে আল্লাহ যানে।এতো দরদ তাহলে বিয়ে করে নিলেই পারে ইত্যাদি।” চাইলেই এই সব কথার উত্তর ধূসর দিতে পারে।কিন্তু এখন সঠিক সময় নয়।মূর্খের সাথে তর্কে না জড়িয়ে গাছের সাথে কথা বলা অনেক ভালো।ভেজা কাপড়েই ভোরকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো ধূসর। সেই বাড়ি থেকে বেড়িয়েই ধূসর ভোরকে হসপিটালে ভর্তি করেছে।তারপর কেটে গেছে প্রায় পৌনে ছয় ঘন্টা। এখনো ভোর চোখ খুলে সামনে তাকায়নি। আঘাতটা গভীর না হলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য ভোর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সাথে আছে অতিরিক্ত মানুষিক চাপ,খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম। সব মিলিয়ে যেন মাঝ নদীতে নৌকা ফুটো হওয়ার মতো।
জীবনের সাতাশটা বছর চলে গেছে কিন্তু কখনো এমন পরিবার ধূসর দেখেনি।কেমন পরিবার ভাবলেই কেমন লাগে।চোখটা একটু ঝাপসা হতেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ধূসর। উদ্দেশ্য ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দেওয়া। তখনই মনে হলো কেউ তাঁর হাত খুব শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে। হাতের দিকে তাকালেই দেখা গেলো ভোর খুব শক্ত করে ধূসরের হাত চেপে ধরে আছে।হাতটা ছাড়াতে চাইলেও পারলো না ধূসর।আরেকটু চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো ভোরের ঙ্গ্যান ফিরছে।সে আস্তে আস্তে কিছু বলছে।হাত ছাড়ানো ছেড়ে দিয়ে কানটা এগিয়ে নিলো ভোরের মুখের কাছে।মুখের কাছে নিতেই শুনতে পেলো।এভাবে ছেড়ে না দিলেও পারতে আফিম ভাইয়া।আজ মা-ও ছেড়ে গেছে তুমি-তো সেই কবে ছেড়ে গেছো। আজ আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকবো।কি নিয়ে থাকবো বলো না কি নিয়ে থাকবো।আর কিছু শোনা গেলো না বাকি কথা গুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।ধূসর ভাবতে রইলো আফিম কে? কার কথা বলছে ভোর।এসব ভাবতেই একজন নার্স এসে বললো–
ভোরের ঙ্গ্যান ফিরলে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে।কিছু ঔষধ আর নিয়মিত খাবার খেলেই ভোর সুস্থ হয়ে যাবে।সব শুনে ধূসর হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে নার্সকে বিদায় জানালো।তখনো ভোর আঁকড়ে আছে ধূসরের হাত।উপায় না পেয়ে আবারও চেয়ারে বসে পড়লো ধূসর। তারপর প্রায় দশ মিনিট পর ভোর চোখ খুলে তাকায়।ভোরকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে ধূসর সস্থির শ্বাস ফেলে।

অবশেষে আপনি চোখ খুললেন।আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।এভাবে ভয় না দিলেও পারতেন। আপনার পরিবার কখন জানি আমায় মেয়ে চোরের অপবাদে জেলে ঢুকিয়ে দেয়।দেখেন আমি এখনো বিয়েসাদী করিনি।এই বয়সে জেলে টেলে যেতে পারবো না।পরে দেখা যাবে মেয়ের বাবারা আমায় তাঁর মেয়ে দিলো না।এই বলে যে, ছেলে মেয়ে চোরের অপবাদে জেল খেটেছে।না ভাই এটা হবে না।

ধূসরে মুখে ফাজলামো কথা শুনে ভোর হেঁসে দিলো।যা দেখে ধূসর বললো–

এই ঠোঁটে শুধু হাসি মানায় বিরহের ছাপ নয়।রাত অনেক হয়েছে চলুন আপনায় বাড়িতে দিয়ে আসি।আপনার এমন অবস্থা ছিলো যে রাগের মাথায় আপনার পরিবারকে কিছু না বলেই নিয়ে এসেছি।এমন কি তাঁদের আপনার অবস্থানও জানাতে পারেনি।উঠতে পারবেন তো?

আমাকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।

হুম

ভোর উঠতে গিয়েও পারলো না।মাথায় ব্যথা শুরু হলো।সেটা দেখে ধূসর নিজেই হাত বাড়িয়ে ভোরকে সাহায্য করলো উঠতে।তারপর হাসপাতালের সব মিটিয়ে ভোরকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।একটি সিএনজি ডেকে তাতে চড়ে বসলো বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।তাঁর মাঝে কিছু খাবার কিনে নিলো ধূসর ভোরের জন্য। অনেকটা পথ সামনে তাঁরা এগিয়ে গেলো।হঠাৎ ভোর বলে উঠলো।

ক’টা বাজে

ধূসর হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললো– পৌঁনে এগারোটা।

আচ্ছা। সামনে একটা ঝিল আছে ওখানে একটু নিয়ে যাবেন।

এতো রাতে ওখানে যাওয়া ঠিক হবে?

প্লিজ

ধূসর চেয়েও বলতে পারলো না।আপনার শরীর ভালো না।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ বাহিরে থাকা যাবে না।এতে আপনার আরো ক্ষতি হতে পারে।আপনার অনেকটা সময় বিশ্রাম নিতে হবে।

তাই সে সিএনজি ওয়ালাকে বললো ঝিলের পাড়ে নিয়ে যেতে।সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ঝিলের রেলিং ধরে দাঁড়ালো দুজন। চারিদিকে মানুষের সমাহার খুব কম।দু-একজনকে দেখা যাচ্ছে। আর যতদূর চোখ যায় শুধু পানি।ঝিলের মাঝে চাঁদের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।চাঁদের আলোয় ঝিলের পানি চিকচিক করছে।সেদিকেই তাকিয়ে আছে ভোর।আর ধূসর দেখছে অপূর্ব এক মোহনীয় নারীকে।যাঁর সৌন্দর্য চাঁদের সাথে করলেও কম হবে।আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তারা যেন কথা বলছে। চাঁদ তাঁদের সাথে যোগ দিয়েছে। এমনটাই মনে হচ্ছে ধূসরের কাছে।দু’জনেই ব্যস্ত একজন আল্লাহর সৃষ্টি দেখতে আরেকজন আল্লাহর সৃষ্টির সেরা মানুষ দেখতে।দু’জনের চোখেই মুগ্ধতা। হঠাৎ সেই মুগ্ধতা ছেয়ে গেলো অন্ধকারে। আকাশের দিকে চেয়ে ভোর হঠাৎ বলে উঠলো।

আজ আমার সেই ছোট্ট বেলায় নিজেদের ধারণাকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে।ইচ্ছে করছে সত্যিকে মিথ্যা ভাবতে।ছোটবেলায় মা বলতো।কেউ মা-রা গেলে সে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়।আজ সেই গল্পটাকে সত্যি ভাবতে ইচ্ছে করছে।আচ্ছা যদি এই কথাটা সত্যি হয় তাহলে তো আমার মা ওই দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে তাই-না? আমার মা না শুধু আমার কষ্ট দেখেছে তাঁর কষ্ট কখনো দেখেনি।তাহলে আজ যে আমার কষ্ট হচ্ছে মা কি দেখতে পারছে না।এই একটা মানুষই তো ছিলো যে আমার কষ্ট বুঝতো আল্লাহ তাঁকেও আমার থেকে কেঁড়ে নিলো।আচ্ছা কথায় আছে আল্লাহ যা কেঁড়ে নেয় তাঁর হাজার গুন ফিরিয়ে দেয়।তাহলে আমার মা’কে কেঁড়ে নিয়ে কি দিবে আমায়।মা তুমি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা । এই দেখো এই বুকটায় জ্বালা করছে।শ্বাস আঁটকে আসছে মা।মা তুমি শুনতে পাচ্ছো আমার কান্না। তুমি দেখতে পাচ্ছো তোমার আদরের কন্যার মাথা ফেটে গেছে। রক্ত পড়েছে অনেক। মা তুমি কথা বলো না।কিভাবে থাকবো আমি তোমায় ছাড়া। তুমি জানো মা আজ চারদিন আমি বালিশে মাথা দেই না।কারণ তোমার হাত ছিলো আমার বালিশ। আজ চারদিন আমি খাবার খাইনা।তুমি জানো না তুমি না খাইয়ে দিলে আমি খেতে পারি না।মা’গো ও মা আমার কষ্ট হচ্ছে এই বামপাশে এই জায়গাটায় ব্যথা হচ্ছে।

ভোরের এই অস্থিরতা দেখে ধূসর ভোরের পিঠে হাত দিয়ে শান্তনা দিতেই ঝাপিয়ে পড়লো ভোর ধূসরের বুকে।হাউমাউ করে কাঁদতে রইলো।

আমার মা’কে ফিরে আসতে বলুন না।বলুন তাঁর জন্য তাঁর মেয়ের কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ ধূসর বলুন না।ওই পাষাণ মা’কে বলুন না ফিরে আসতে।আল্লাহ এতো কঠিন নিয়ম কেন বানালেন? কেন আমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছে আল্লাহ। একজন’ই তো ছিলো আপন বলতে।তাকে-ও কেন কেড়ে নিলো।প্লিজ ধূসর বলুন না আমার মা’কে ফিরে আসতে।আমি যে আর পারছি না।এই ব্যথাটা যে আমাকে তিলেতিলে শেষ করে দিচ্ছে। আমি যে রক্তে মাংসে গড়া মানুষ আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে।দেখুন আমার বুকটা কেমন ধুকপুক করছে।এই ব্যথা যে আপন কাউকে হারানোর ব্যথা এটা যে সইতে পারছি না ধূসর। কথা গুলো বলেই আরো ঝাপটে ধরলো ভোর ধূসরকে।ধূসর যেন নিজের কথা হারিয়ে ফেললো। কি বলে তাঁকে শান্তনা দিবে তা যেন ধূসরের মস্তিষ্ক জানে না।

চলবে,,

প্লিজ সবাই অনুপ্রেরণা মূলক কমেন্ট করুন।যাতে লেখার আগ্রাহ্য বেড়ে যায়।এতো কষ্ট করে গল্প লিখি যখন দেখি আপনারা নাইস নেক্সট লিখেছেন খুব কষ্ট লাগে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here