যাও পাখি বলো তারে – পর্ব ৬

0
620

#’যাও পাখি বলো তারে’❤
#’লেখাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ০৬
.
সকালটা স্নিগ্ধময়। না একটু বেশিই স্নিদ্ধময়! কনকনে শীতের মাঝে ঘুম থেকে ওঠা বড়ই কষ্টকর। কিন্তু সেই শীতকে জয় করে আমি বেড়িয়েছি বাগানে হাঁটতে। কুয়াশাচ্ছন্ন মৌসুমে পাতায় কিংবা ফুলে থাকা শিশির কণা ছুঁয়ে দিতে বেশ ভালো লাগে আমার। এক আলাদা শিহরণে প্রচুর আনন্দ পাই আমি। বিরাট বড় বাগানের একপাশে আছে নানা রকমের ফুলের চাষ। সেদিকেই শিশির কণা ছুঁতে এগোচ্ছি আমি। পৌঁছেও যাই কিছুক্ষণের মাঝে। কিন্তু যেই না ফুলের শিশির বিন্দু ছুঁতে যাবো ওমনি গম্ভীর কণ্ঠে পেছন থেকে কেউ বলে উঠে,

—” শীতের মাঝে কি করছো এখানে? চাদরও তো আনো নি। ঠান্ডা লাগবে সে খেয়াল আছে মিস?”

চমকে গিয়েও যেন চমকালাম না আমি। কেননা একমাত্র একজনই এমন ভূতের মতো পেছন থেকে এসে দেখা দেন আমায়। তাই বুঝতেও বাকি নেই আমার পেছনে রেয়ান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকটা স্বাভাবিক ভাবে উনার দিকে ফিরে মৃদু হেসে বললাম,

—” আমার অভ্যাস আছে। নানু বাড়িতেও এমন শীতের সময় বের হয়েছি আমি।”

উনি আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন এবার। কান থেকে হ্যাডফোন সরিয়ে গলায় ঝুলিয়ে নিলেন। নিজের পরনের জ্যাকেট আমায় পরিয়ে দিলেন হঠাৎ-ই! আচমকা এমন হওয়ায় বিস্ময় নিয়ে তাকালাম উনার দিকে। তবে উনি বিশেষ ভাবগতি প্রকাশ করলেন না। প্যান্টের পকেটে হাত দু’টো রেখে সামনের দিকে চেয়ে রইলেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

—” এতে লাভ? মানে শুধু কি হাঁটতে আসো নাকি অন্য কিছু?”

নিজেকে স্বাভাবিক করলাম আমি। যতই বলি না কেন, কিন্তু আমার ঠান্ডা লাগছিল। চাদরটা আনতেও ভুলে গিয়েছিলাম। তাই জ্যাকেট-টা ভালোভাবে নিজের শরীরে জড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে বললাম,

—” শিশির বিন্দু ছুঁয়ে দিতে প্রচুর ভালো লাগে আমার। আপনিও ছুঁয়ে দেখুন। ভালো লাগবে।”

বলতে বলতেই একটি ফুলের শিশির বিন্দু ছুঁয়ে দিলাম আমি। চিরচেনা শিহরণে আনন্দিত হয়ে খানিকটা শব্দ করে হেসে উঠলাম। যা অন্যের কানে খিলখিল প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করে। পাশে দাঁড়ানো উনি পুরোটাক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। কি মনে করে ডান হাত দিয়ে নিজেও শিশির বিন্দু ছুঁয়ে দিলেন আমি যেখানটায় ছুঁয়েছি ঠিক তার একটু পাশে। পরপরই মুখে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে অতি মৃদু স্বরে বলে উঠলেন,

—” দারুণ তো! ”

কথাটা অস্পষ্ট ভাবে শুনলাম আমি। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি হাসছেন। যা দেখে আমার হাসিও প্রসারিত হলো! কিন্তু বেশিক্ষণ তা টিকে রইল না। হঠাৎ-ই মেহেরুনের গলা শুনতে পেলাম আমি। আমাকে ডাকছে সে! তাই একবার রেয়ান ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই দ্রুত চলে এলাম সেখান থেকে। উনি শুধু আমার যাওয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও জগিং করতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন।

______________________

ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই দীঘির চোখ যায় আবদ্ধের দিকে। ঠোঁট ফুলিয়ে দীঘির দিকে ফিরে ঘুমিয়ে আছে সে। কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে তাকে। ভাবতেই মুচকি হাসলো দীঘি। আবদ্ধের দিকে ফিরে তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। হাত দিয়ে প্রথমে আবদ্ধের কপাল, চোখ, পাঁপড়ি, গাল, নাক সবশেষে অধরযুগলের আশপাশে হাত ঘোরাতেই হুট করে চোখ মেলে তাকালো আবদ্ধ। দীঘিকে নিজের এত কাছে দেখে তৎক্ষণাৎ চোখ বড় বড় করে ফেলল সে। দীঘিও চমকে গেল। তবে নিজ জায়গা থেকে বিন্দু মাত্র নড়ল না। আবদ্ধ বিরক্তি নিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল দীঘিকে। চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,

—” ঘুমের মধ্যেও কি তোমার এসব আজেবাজে কাজ করতে হয়? শান্তিতে ঘুমাতেও দিবে না নাকি?”

মুখ ফুলিয়ে নেয় দীঘি। আবদ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
—” আপনি সবসময় এমন করেন কেন? আমি কাছে এলেই আপনার যতসব বিরক্তি!”
—” অবশ্যই! কারণ তুমি আমাকে বিরক্ত করো। তাছাড়া এখনও তুমি আমার গা ঘেঁষে আছো। যা আমার বিরক্তির প্রধান ও অন্যতম কারণ।”

দীঘি মুখটাকে আরেকটু ফুলিয়ে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,

—” আমি ঘেঁষবো না তো কে ঘেঁষবে? আমি তো আপনার বউই তাই না?”

আবদ্ধ বিড়বিড় করে বলল,

—” বউ না, বলো আস্ত একটা বিরক্তির গোডাউন। ”

কথাটা শুনতে পেয়ে চটে গেল দীঘি। আবদ্ধ কি বলেছে তাকে? সে আস্ত একটা বিরক্তির গোডাউন? আবদ্ধ তাকে এসব ভাবে? রেগে গিয়ে বলে উঠল দীঘি,

—” নিজের বউকে এভাবে বলতে পারলেন আপনি? এমন করলে কিন্তু আমি চলে যাবো হুহ!”

আবদ্ধ দীঘিকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে নামতে নামতে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল,

—” নিজের বোনের মতো অন্যের সাথে পালিয়ে যাবে নাকি?”

কথাটা এমনি এমনি বললেও দীঘির বেশ গায়ে লাগে। নিমিষেই মন খারাপ হয়ে যায় তার। সে তো মজার ছলে বলেছিল এমন কথা। সত্যি সত্যিই আবদ্ধকে ছেড়ে চলে যেত নাকি? আবদ্ধ কি এই সামান্য মজাও বোঝে না? দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কান্না নিয়ন্ত্রণ করল দীঘি। মুচকি হেসে বলল,

—” আমি আপনাকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য বিয়ে করি নি। আপনাকে মাঝপথে একা ফেলে যেতেও না। তাই নিশ্চিন্তে থাকুন।”

এমন কথায় আবদ্ধ শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দীঘির দিকে। বুঝতে পারছে তখন এমন কথা বলা উচিত হয়নি তার। দীঘির মুচকি হাসির পেছনে স্পষ্ট কষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। তবে কোনো ‘সরি’ জাতীয় শব্দও উচ্চারণ করল না। দীঘিও হয়তো সে শব্দ শোনার অপেক্ষায় ছিল না। কথাটুকু বলেই পরমুহুর্তে ওয়াশরুমে চলে যায় সে।

____________________

সকাল ৮টা বাজতে চলল। সবাই মিলে একে একে ডাইনিংরুমে নাস্তা করতে যাচ্ছি। মেহেরুনও ইতোমধ্যে চলে গেছে ডাইনিংরুমে। একমাত্র আমি ছাড়া! সকালে রেয়ান ভাইয়ের জ্যাকেট ভুলে নিজের সাথেই নিয়ে এসেছি আমি। এখন সেটা হাতে নিয়ে বসে আছি বিছানায়। বুঝতে পারছি না কিভাবে উনাকে দিবো জ্যাকেট-টা। আচ্ছা, এখন তো সবাই ডাইনিংরুমে নাস্তা করতে গিয়েছেন। হয়তো রেয়ান ভাইও! এ সুযোগে তার রুমে গিয়ে জ্যাকেট-টা রেখে আসলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ! দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলাম রেয়ান ভাইয়ের রুমের উদ্দেশ্যে। রুমে ঢোকার আগে রুমটাকে ভালোভাবে দেখে নিলাম একবার। ধীর পায়ে এগিয়ে বিছানায় জ্যাকেট-টা রাখতেই হঠাৎ পেছন থেকে একটা অপরিচিত পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে উঠল,

—” হ্যালো গার্ল! কে তুমি? এ রুমে কি করছ?”

চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি পেছনে ফিরতেই দেখলাম একজন অচেনা ছেলে দাঁড়িয়ে আছেন আমার সামনে। কিন্তু রেয়ান ভাইয়ের রুমে এই ছেলেটা কে? আগে কখনো দেখেছি বলে তো মনে হচ্ছে না। ভাবতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম ছেলেটির দিকে। সেও আমার দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে বলল,

—” উপস! সরি তোমাকে চিন্তে পারি নি আমি। মীরা রাইট? ছবি দেখেছিলাম তোমার। তা রেয়ানের রুমে হঠাৎ?”

আমি ভদ্রতার খাতিরে একটু হেসে বললাম,

—” আসলে একটা কাজ ছিল। আপনি? ”

উনি আগের নেয় মুচকি হেসেই বললেন,

—” আমি সবুজ। রেয়ানের ফ্রেন্ড। ইনফেক্ট বেস্ট ফ্রেন্ড! কালকে অনেক রাত করে এসেছি তো তাই হয়তো দেখো নি। আর চিনতেও পারছো না।”

আমি এবারও হাসলাম। তাছাড়া কি করবো? অচেনা একটা ছেলের সাথে হুট করেই তো কথা বলা যায় না। কেমন অস্বস্থি, অস্বস্থি লাগছে। হয়তো সেটা বুঝতে পেরেছেন সবুজ ভাইয়া। আবারও একটু হেসে বলে উঠলেন,

—” নাস্তা করবে না? সবাই তো এখন ডাইনিংরুমে। চলো সেখানে যাই।”

আমিও মাথা নাড়ালাম। আগে আগে চলে এলাম সেখান থেকে।

___________________

নাস্তার টেবিলে সবাই মিলে বিভিন্ন আড্ডায় মেতে উঠেছি আমরা। বিশেষত আবদ্ধ ভাইয়া আর ভাবীকে নিয়ে। সবুজ ভাইয়াকেও মেজো চাচী, আম্মু আর ছোট চাচী বকেছেন অনেক। কেন তিনি ওত রাত করে এসেছেন? রাস্তায় যদি কোনো বিপদ-আপদ হতো? সবুজ ভাইয়া সুন্দর মতো রেয়ান ভাইয়ের নাম লাগিয়ে দিয়েছেন তখন। কিন্তু তবুও যখন বকাটা তার ভাগেই বেশি বেশি করে পড়েছে তখন হাসি-মুখে সেগুলো গ্রহণও করেছেন তিনি। এদিকে সবাই সবার মতো আড্ডায় মেতে থাকলেও রেয়ান ভাইয়া গম্ভীর মুখো হয়ে চুপচাপ খাবার খাচ্ছেন। যেন সবার পৃথিবী এক আর তার পৃথিবী আলাদা। যা ভেবে মনে মনে খুব করে বকলাম তাকে। সবসময় এমন গম্ভীর হয়ে থাকেন কেন উনি? উনার এই গম্ভীর ভাব দেখে উনার নামও রেখে ফেলেছি আমি- “দ্যা গ্রেটেস্ট মিস্টার মুডি কিং!”

______________________

চলবে…
(দুঃখীত দেড়ি এবং ছোট হওয়ার জন্য। কালকে পুরোটা দিন ইলেক্ট্রিসিটি ছিল না৷ আজকেও ওয়াইফাই প্রবলেম ছিল। তাছাড়া আমি একটু অসুস্থ। আজকের পর্বটা হয়তো ভালোভাবে গুছাতে পারি নি। তাই সবকিছুর জন্য আবারও সরি!)
Ishanur Tasmia

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here