এক তুমিতে আসক্ত – পর্ব ২২

0
437

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২২
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

১৪৭.

সোহেল অন্ধকার জগতে পা রেখেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কর্ম যেইটাকে বলে।

‘ আছে নাকি কোনো সুন্দরী?

‘ভাই আমি এই শহরে একটা মাইয়ার লাই আইছি। মাইয়াডা হেব্বি সুন্দরী।

‘তাই নাকি? কাস্টমারদের মন ভরাইতে পারবোতো?

‘পারবো মানে ১০০% পারবো। তবে ওরে খুজঁবার লাই কিছু সময় লাগবার পারে।

‘সমস্যা নাই। ততদিন তুমি এইখানেই থাকো।

‘আইচ্ছা।

১৪৮.

অর্ষা প্রিয়ন্তি অফিসের সামনে এসে প্রিয়ন্তি বললো,

‘তুই যা আমি গাড়িতে বসে ফেইসবুকিং করি।

‘পাগল নাকি? আমাকে দারোয়ান চিনে? ঢুকতে দিবে? আর তোকে কি এনেছি গাড়িতে ঢং করার জন্য?

‘যানা বইন আমার। প্লিজ প্লিজ।

‘ওফ থাক তুই আমি গেলাম।

এইটা বলে অর্ষা গাড়ি থেকে নেমে বড় গেইট টার ভেতরে ঢুকে। এরপর আরেকটা সুন্দর কারুকাজ করা গেইট দেখে অবাক হয় সে। এইসব গেইট কোনো কোম্পানীর অফিসে সে আগে কখনোই দেখেনি। এইসব ভাবতেই একটা সিকিউরিটি গার্ড এসে বলে,

‘এই মেয়ে এইখানে কি চায় হুম? যাও বের হও।

‘আ আস আসলে চাচা আমি প্রান্তিক ভাইয়াকে খাবার দিতে এসেছি।

‘প্রান্তিক স্যারকে? আজবতো। না না তোমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া যাবেনা। হঠাৎ দারোয়ানের ফোনে একটা কল আসে। কলটা ধরতেই,

ওপাশঃ…….

দারোয়ানঃ না মানে ইয়ে

ওপাশঃ…..

দারোয়ানঃ ওকে। ওকে স্যার পাঠিয়ে দিচ্ছি। দারোয়ান কলটা রাখতেই অর্ষাকে নরম কন্ঠে বললো,

‘আসুন মেডাম আসুন। স্যারের কেবিনে আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।

আচমকা দারোয়ানের এমন আচরণ কিছুটা ভাবাই অর্ষাকে। সে এতো সেতো না ভেবে দারোয়ানের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।

১৪৯.

প্রান্তিক চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে বসে। সে কফি খেতে খেতে বাইরের দিকে না তাকালে হয়তো অর্ষাকে ঢুকতেই দিতোনা সিকিউরিটি। অর্ষাকে দেখে দারোয়ানকে কল দিয়ে রেগে বললো,

‘ওকে দাড় করিয়ে রেখেছো কেনো? তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে আসো।

ব্যাস হয়ে গেলো। এরপর আর কি? দারোয়ান অর্ষাকে সাথে নিয়ে আসছে।

এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অর্ষাকে সামনে দেখে প্রান্তিক। মুচকি হেসে বললো,

‘আসো। এইখানো বসো।

অর্ষা প্রান্তিকের একদম পাশে বসে টিফিনবাক্সটা খুলতে খুলতে বললো,
‘আলোর পরোটা আর মাংস নিয়ে এসেছি তাড়াতাড়ি খেয়ে নিনতো।

‘আমি খাবোনা। এখন অনেক কাজ.. তুমি বসে বসে খাও আমি কাজ করছি। ফাইল হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে কথাটা বললো প্রান্তিক। আড়ঁচোখে একবার অর্ষার দিকে তাকালো সে। বুঝতে চাইছে অর্ষার রিয়াকশন। অর্ষা রুটি ছিঁড়ে মাংস নিয়ে প্রান্তিকের মুখের সামনে ধরলো। প্রান্তিক অবাক হয়েছে তবে ঘাবড়ায়নি। কারণ সে এইটাই চাইছিলো।

‘কি হলো খান।

‘বললাম তো খাবো….প্রান্তিক কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই প্রান্তিকের মুখে খাবার তুলে দিয়েছে অর্ষা। প্রান্তিক খাবার খেতে খেতে মিনমিনিয়ে বললো,

‘ওফ বউ আমার পুরো বউগিরি করছে।

‘এই এই কি বললেন?

‘ক ক্ কই কিছুনাতো।

‘দারোয়ানকে আপনি কল করেছিলেন?

‘হুম। সম্ভব হলে নিজেই যেতাম। মাথা পেইন করছিলো তাই ওকে বলেছি নিয়ে আসতে।

‘মাথা পেইন করবেনা? না খেয়ে কাজ করলে। আচ্ছা যাইহোক আমি যাই। প্রিয়ন্তি গাড়িতে ওয়েট করছে।

‘প্রিয় এসেছে?

‘হুম।

‘এইখানে আসেনি কেনো? আসলেইতো দারোয়ান কিছু বলতোনা।

‘আপনার বোন বলে কথা সেতো গাড়িতে ফেইসবুকিং করছে।

‘এই খোঁচা দিলে আমায়? আমার বোন যেমন আমি তেমন নাকি?

‘ওমা ভাইয়ের মতোইতো বোন হবে।

‘এই..প্রান্তিক কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ষা উঠে টিফিন বাটি ঠিক করতে করতে বললো,

‘আমি যাচ্ছি। আর সম্ভব হলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন। যেহেতু মাথা পেইন করছে।

‘এই কোথায় যাচ্ছো বসো।

‘আরে হাত ছাড়ুন কেউ দেখবে।

‘ছাড়বোনা। এইখানে বসো।

প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে এক টান দিয়ে নিজের কাছে মিশিয়ে নেই। এক ধ্যানে অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘মেয়ে তুই আমার আশা, তুই ভালোবাসা
তোর চোখে আমার সব ক্লান্তির সর্বনাশা’।

অর্ষা হচকিয়ে উঠে। অর্ষার বার বার মনে হচ্ছে প্রান্তিকের কথায় আর তার চাহনিতে কিছু একটা ছিলো যাতে করে যে কাউকে ঘায়েল করা হবে যায়। অর্ষা কিছু না বলে তাড়াতাড়ি প্রান্তিকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে লাগলো। আর এইদিকে প্রান্তিক অর্ষার যাওয়ার পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে বললো,

‘আজকে যা হবে তা কিভাবে নিবে তুমি হৃদয়মোহনী! এইটা ভাবতেই প্রান্তিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

১৫০.

আসসালামু ওয়ালাইকুম। এইখানে তাইফা আছে?

‘হুম আছে। কে তুমি মা?

‘আসলে আন্টি আমি রিমি। তাইফার বেষ্ট ফ্রেন্ড। ওহ আসতে বললো তাই এসেছি।

‘ওমা তাই? আসো আসো ভেতরে আসো।

মনিশা চৌধুরী রিমিকে ভেতরে নিয়ে তাইফার রুমের সামনে এনে বললো,

‘এইটা তাইফার রুম। তুমি ডাকো আমি যায়। আবার কোনো এক সময় এসে না হয় গল্প জুড়ে দিবো।

রিমি মুচকি হেসে বললো, ‘অবশ্যই আন্টি।

১৫১.

অর্ষা প্রিয়ন্তি বাসায় ফিরতেই নাফিস সরদার আর রাহেলাবানুর সাথে আফ্রাকে দেখে জড়িয়ে ধরে অর্ষা৷ রাহেলা বানুকে প্রিয়ন্তি জড়িয়ে ধরে বলে,

‘খালামনি তুমি আসবে আর আমিই জানিনা?

‘মারে হঠাৎ আসা পড়লো তাই আর কি। আপা তুই কেমন আছিস?

‘মনিশা চৌধুরী হেসে জবাব দেয় ভালো। আয় ভেতরে আয় বস।

‘তা প্রান্তিক কই?

‘খালুজান ভাইয়া অফিসে। একটু পরই চলে আসবে।

জমে গেলো বসার রুমে আড্ডার আসর।

১৫২.

রিমি তুই!

‘হুম এসে পড়েছি।

“আসতে কোনো সমস্যা হয়নিতো?

‘আরে না। তুই যে কি বলিস। চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির ফরহাদ চৌধুরীকে কে না চিনে! তাই আসতে কোনো সমস্যাই হয়নি।

রিমির লাস্ট কথাটা শুনে থমকে যায় তাইফা। তড়িঘড়ি করে আবার বললো,

‘রিমি তুই কার নাম বললি?

‘কার নাম আবার। ফরহাদ চৌধুরীর।

তাইফা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। মনে মনে বলে,

‘লক্ষের এতো কাছে আমি ছিলাম? যেই মানুষটাকে এতোদিন খুঁজছি সেই মানুষটা আমার সামনেই ছিলো!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here