#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -২
গোধূলি কথাটা বলা মাত্রই দীপ্ত গোধূলির হাত ধরে হাটা শুরু করলো।দীপ্তের এহেন কান্ডে গোধূলি চমকে উঠে।সাথে সাথে গোধূলির কপাল কুঁচকে আসে।কথা নেই বার্তা নেই এইভাবে হাত ধরে নিয়ে যাওয়ার মানে কি?উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,
– আরে আরে কি করছেন আপনি?
দীপ্ত গোধূলির দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,
– কোনো কথা বলবি না।চুপচাপ আমার সাথে আয়।
হুট করে দীপ্ত ওর হাত ধরে ফেলবে গোধূলি এটা ভাবতেও পারে নি।ওর খুব অস্বস্তি হচ্ছে।গোধূলি বিরক্তির স্বরে বললো,
– আরে!কি করছেনটা কি আপনি?আমার হাত ধরে কেন হাটছেন?আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে একা একা হাটতে পারবো না।আমার হাতটা ছাড়ুন আপনি।আমি একাই যেতে পারবো।
গোধূলির কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায় দীপ্ত।ধরে রাখা হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কড়মড় করে তাকায় গোধূলির দিকে।তারপর চাপা গলায় বলে,
– আমি কি একবারো বলেছি,তুই একা একা যেতে পারবি না?
– তাহলে হাত ধরলেন কেন?
গোধূলি দীপ্তের হাতের মুঠোয় থেকে নিজের হাতটা ছাড়ানোর জন্য কখন থেকে মোচড়াচ্ছে।কিন্তু দীপ্ত কিছুতেই ওর হাত ছাড়ছে না।শেষে গোধূলি ব্যর্থ হয়ে নিচু গলায় বললো,
– হাতটা ছড়ুন,আমার লাগছে।
– লাগুক,ছাড়ার জন্য তো ধরি নি!
দীপ্ত কথাটা বেশ শক্ত গলায় বলেছে।গোধূলি বিস্ফোরিত চোখে দীপ্তের দিকে তাকায়।ভ্রু কুঁচকে বললো,
– মানে?
– কিছু না!
– আপ…..
গোধূলি কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু দীপ্ত ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
– নো মোর ওয়ার্ডস।
দীপ্তের চোখে মুখে কেমন যেন রাগের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।সেটা দেখেই গোধূলি একটু ভয় পেয়ে যায়।ফলে চুপচাপ মাথা নিচু করে নেয়।দীপ্তও কথা না বাড়িয়ে আবার সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে।এইদিকে রাগে গোধূলির গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।একে তো ওর সব প্ল্যান বন্ডুল করেই দিয়েছে তাও যে একটু আশা ছিল যে,এবার অন্তত ভার্সিটির ভেতরে এসে বান্ধবীদের নিয়ে একটু মজা করবে।কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এই আশাতেও জল ঠেলে দিচ্ছে এই দীপ্তের বাচ্চা!এইভাবে হাত ধরে কেন নিয়ে যেতে হবে ওকে?ও কি রাস্তা চিনে না নাকি?আজব!গোধূলি এদিক সেদিক চোখ বুলিয়ে দেখে সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।কি একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে ওকে।এখন গোধূলির বিশাল রাগ হচ্ছে দীপ্তের উপর।কত করে বললো ওর হাতটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু দীপ্ত ওর কথা শুনলো কই?সেই তো ওর হাত ধরেই নিয়ে যাচ্ছে।
– এবার হাতটা ছাড়ুন।আমি যাচ্ছি তো!
মিনমিনে স্বরে বলে গোধূলি।দীপ্ত গোধূলির দিকে এক পলক তাকায়।গোধূলি ফের রিনরিনে স্বরে বললো,
– এখন তো চলেই এসেছি।এবার অন্তত হাতটা ছাড়ুন!
– চুপচাপ আমার সাথে যাবি আর একদম স্টেজের কাছে গিয়ে বসবি।সাবধান এর মধ্যে আর কোনো কথা বলবি না।
দীপ্ত নির্বিকারভাবে হাঁটছে।গোধূলি মাথা তোলে দীপ্তের দিকে তাকায়।এখন ও অবাক না হয়ে পারছে না।দীপ্ত এবার একটু বেশিই করছে মনে হচ্ছে।এতক্ষণ চুপ ছিল বলে এই মুহূর্তে ওর পক্ষে আর চুপ থাকা সম্ভব না।গোধূলি গলার স্বর উঁচু করে বললো,
– আপনার সাথে মানে?
– কেন শুনতে পাস নি কি বললাম?
– আমি আপনার সাথে বসতে যাবো কেন?আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে বসবো।
শক্ত গলায় বললো গোধূলি।দীপ্ত ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বললো,
– দেখি তুই কেমন পারিস!
– আপনি কিন্তু……
– স্টপ ইট!
গোধূলিকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে দীপ্ত ওর হাত ধরে সবার সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আর গোধূলি লজ্জায় মরমে মরছে!কি একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পরলো ও।না পারছে সইতে না পারছে কিছু বলতে।সবাই হা করে দীপ্ত আর গোধূলির দিকেই তাকিয়ে আছে।আর তাদের ওই রকম চাহনি দেখে গোধূলি ওর হাতটা ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা!দীপ্ত নির্বিকার ভাবেই এগিয়ে গিয়ে ঠিক স্টেজের প্রথম সারিতে গিয়ে বসলো।গোধূলিকেও ওর পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে চোখে ইশারা করলো বসার জন্য।দীপ্তের এহেন কান্ডে এইমুহূর্তে গোধূলি অবাকের চরম পর্যায়ে। যেখানে ভার্সিটির সকল স্যার ম্যামরা বসে আছেন,সেখানে কিনা বেয়াদবের মতো ও বসে পড়বে?ভার্সিটিতে এসে প্রথম দিনই বেয়াদবের খাতায় নাম লিখাবে ও?না না সেটা অন্তত ওর পক্ষে সম্ভব না।গোধূলি চলে যেতে নিলেই দীপ্ত ভারী গলায় বললো,
– গোধূলি!
চলে যেতেই নিয়েও থেমে যায় গোধূলি।প্রচুর বিরক্তি নিয়ে ফিরে দীপ্তের দিকে।দীপ্ত ফের ওকে ইশারা করলো বসার জন্য।গোধূলি চাইলেই এখান থেকে চলে যেতে পারতো।কিন্তু গোধূলিকে বাধা দিচ্ছে ওর বিবেক।এখন যদি ও এখানে দীপ্তের সাথে ঝামেলা করে তাহলে সবাই হাসাহাসি করবে।খুব বিশ্রী একটা ব্যাপার হবে তখন।গোধূলি রাগে গজগজ করতে করতে থপ করে বসে পড়লো দীপ্তের পাশের চেয়ারটায়।দীপ্ত একদৃষ্টে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।গোধূলি দীপ্তের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
– আজকে যে আমি কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছিলাম একমাত্র আল্লাহ মাবুদই জানেন!
– শয়তানের!
দীপ্ত ওর হাতের ফোনটা পকেটে রেখে সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বললো।গোধূলি চকিত দৃষ্টিতে তাকায় দীপ্তের দিকে।ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞাস করলো,
– মানে?
– কেউ কারো মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠে না বরং ঘুম থেকে উঠে তারপর মুখ দেখে।যাইহোক,এইসব তোর মাথায় ঢুকবে না।
গোধূলি দীপ্তের সাথে তর্কে জড়াতে চায় না।তাই চুপ করে রইলো।তবে গোধূলি মনে মনে ভাবতে লাগলো ও সকালে কার মুখ দেখে ধ্যাৎ মানে ঘুম থেকে উঠে কার মুখ দেখেছিল!আজকে ওর ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল।ঘর থেকেই লতিকাকে ডেকে বলেছিল খাবার দিয়ে যাওয়ার জন্য। ভার্সিটিতে আসবে বলে তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম ঢুকে পড়ে।ও যখন ওয়াশরুমে ছিল তখন লতিকা এসে ব্রেকফাস্ট রেখে যায়।তারপর ও যখন ওয়াশরুম থেকে বের হলো তখন তো দীপ্তকেই সবার আগে দেখেছে ও।হ্যাঁ দীপ্তর মুখই তো দেখলো!তখন দীপ্তের বলা শয়তান কথাটা মনে হতেই ফিক করে হেসে দেয়।
ও বুঝে গেছে আজকে ওর দিনটা দীপ্তের জন্যই ভেস্তে গেছে।ও যেভাবে এই দিনটা কাটাতে চেয়েছিল সেটা আর সম্ভব নয়।তাই চুপচাপ বসে থাকাই শ্রেয়।
যথা সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্যার ম্যামরা নবীনদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।ভার্সিটি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনা করেন।তারপর নবীনদের মাঝে গোলাপ ফুল দিয়ে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়।সবাইকে ফুল দেওয়ার সময় একটা ছেলে গোধূলিকে ফুল দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছিল।কিন্তু সেই ফুল আর ওর কাছ অব্দি এসে পৌছালো না। তার আগেই সেটা দীপ্ত নিয়ে নেয়।গোধূলির খুব লজ্জা লাগছিল তখন।কারণ ফুলটা নেওয়ার জন্য ও হাত বাড়িয়েছিল।দীপ্ত কেন এমনটা করলো?ওর ব্যবহারটা গোধূলির কাছে খুব খারাপ লেগেছে।ইনফ্যাক্ট সকাল থেকেই দীপ্তের এমন উদ্ভট আচারণ গোধূলির কাছে ভালো লাগছে না।নেহাতি ওর বাবা বলেছে,নয়তো গোধূলি কখনোই দীপ্তের সাথে আসতো না।গোধূলি কিছুক্ষণ দীপ্তের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখায় মনোযোগ দেয়।শান্ত হয়ে বসে রইলো গোধূলি।ওকে এতটা নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকতে দেখে দীপ্ত বার কয়েক আঁড়চোখে তাকিয়েছে ঠিকই কিন্তু কোনো কথা বলে নি।
তারপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ভার্সিটির সিনিয়ররা সবার আগে একক ও দলীয় নাচ উপস্থাপন করেছে।গোধূলি খুব মনোযোগ দিয়ে তাদের নাচ গুলো উপভোগ করছিল।যতটা মন খারাপ নিয়ে বসে ছিল নাচ দেখার পর মনটা ততটাই ভালো হয়ে গেছে।এক সময় তাদের নাচের পর্ব শেষ হয়ে যায়।এখন নাকি গানের কন্সার্ট হবে।গানের কথা শুনেই গোধূলির মনটা আরো ভালো হয়ে যায়।কারণ গানের সাথে ওর একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে।ওর গান খুব ভালো লাগে।গোধূলি নিজেও খুব ভালো গান করে।
কনসার্টের জন্য স্পেশাল অতিথি এসেছে।সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই স্পেশাল অতিথির গান শুনার জন্য।গোধূলিও বেশ কৌতূহল নিয়ে বসে আছে।হঠাৎ করেই স্টেজে যাওয়ায় জন্য দীপ্ত চৌধুরীর নাম এনাউন্স করা হয়!
চলবে…..