#পতিতা_বউ
২য় পর্ব
নুহা সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করলে। অঞ্জনা দি আর ফুলী নুহা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিলেন।
শবনম বেগম নুহার হাত ধরে তার পাশে বসালেন। নুহা বসা মাত্রই শবনম বেগম কে জড়িয়ে ধরলেন।
শবনম বেগম নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তাকে বললেন,
>>মা তুই যে এখানে আইসোস তা কি জামাই জানে?
শবনম বেগমের এই কথা শুনে নুহা একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো। মনে মনে ভাবলো “মামুণি কে যদি সব বলে দেয় তাহলে তিনি হয়তো আমাকে ভুল বুঝবেন বরং তাকে কিছু না বলাই ভালো কিছুদিন এখানে থাকার পর আমি অন্য এক শহরে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো”
>>কিরে মা আমি তোরে কিছু জিজ্ঞাসা করছি কিছু বলতাসোস না কেন?
শবনম বেগমের কথায় নুহার ধ্যান ভাঙ্গলো। তারপর সে বললো,
>>হ্যা মামুণি সে জানে। আসলে আফিফ অন্য এক শহরে গিয়েছে। কয়েকদিন পরে আমিও চলে যাবো। যাওয়ার আগে আমি কিছুদিন এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। তাই তো চলে আসলাম তোমার কাছে। হয়তো আর কখনো তোমাদের দেখতে পাবোনা।
>>ওহ আইচ্ছা। কিন্তু মা এইখানে তোর থাকা উচিত হয়বোনা। এটা পতিতালয় আর পতিতারাই এইখানে থাকে। একসময় তোর বাসস্থান এইটা আছিলো ঠিকই কিন্তু এখন তোর পরিচয় ভিন্ন। তুই এইখানে থাকলে তোরই বিপদ হয়বো।
>>তাহলে মামুণি আমি কোথায় থাকবো?
>>এক কাজ করি আমি তোরে আমার কুঠীর একদম উপরের তলার একটা ঘর পরিষ্কার করে দেই। ওই তলায় শুধু তুই ই থাকবি। বিনা দরকারে নিচে নামবি না। লোকে যেন তোরে না দেখে। আর তোর লগে ফুলী সবসময় থাকবো। কিছু লাগলে তোর ওরে দিয়াই আনাবি। আর আমি তোরে সময়মত গিয়া দেইখা আসবোনে।
>>আচ্ছা মামুণি। আমি এমনেও বেশি দিন থাকবোনা ৪-৫দিন থেকেই চলে যাবো।।
>>আইচ্ছা। আয় এহন তুই আমার বুকে আয় মা। কতদিন পর তুই আইছোস আমারে দেখতে। এই ফুলী যা আমার মা র জন্য কুঠীর উপরের তলার ঘর টা পরিষ্কার কইরা দে।
এই বলে শবনম বেগম নুহা কে আবার বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। নুহা ও কাঁদছে। এতদিন পর তার মামুণির কাছে আসতে পেরে।
নুহার পরিচিয় হলো সে একজন পতিতা। তবে ছিলো একসময়ে। শবনম বেগমের কাছেই সে ছিলো। খুব ছোট থাকতে তাকে শবনম বেগম কুড়িয়ে এনেছিলো রাস্তা হতে। সেই ছোট বয়সেই নুহা ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিলো। তারপর থেকে সে এই পতিতালয়েই ছিলো পতিতা হিসেবে। কিন্তু নুহা ছিলো সবার থেকে ভিন্ন। তার আচার-ব্যবহার ছিলো অন্যরকম। রূপে গুণে সে অন্যতম ছিলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সে শবনম বেগমের প্রিয় হয়ে ওঠে। আর শবনম বেগম ও তাকে মেয়ের মত দেখতেন। তারপর থেকে তিনি নুহাকে এখানে থাকার পাশাপাশি পড়ালেখা করার সুযোগ ও করে দেন। আফিফের সাথে নুহার ভার্সিটি তেই পরিচয় হয়েছিলো। তারপর থেকে নুহার পুরো লাইফ টাই চেঞ্জ হয়ে যাই।
সেই কুঠি টির ৫তলার একটি রুমে নুহার থাকার ব্যবস্থা করা হলো। দুপুরে খাবার খেয়ে নুহা রুমে একটু আরাম করার জন্যে এলো। ফুলী নুহার পাশের রুমটাই ছিলো।
নুহা গোসল এর জন্য নিজের ব্যাগ হতে কাপড় বের করার সময় আফিফ এর ছবির একটি ফ্রেম চোখে পড়লো। ফ্রেমটি সেই এনেছে। ফ্রেমটি হাতে নিয়ে সে দেখতে লাগলো। তার দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে ফ্রেমটি বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মেঝেতে বসে পড়লো।
“কেনো আফিফ কেনো সন্দেহ করলে আমাকে? আমি তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি বলো। আমার সব কিছু জুড়ে শুধু তুমিই তো আছো। আমি একসময় যা ছিলাম তা ভুলে আমি তোমার সাথে নতুন করে পথচলা শুরু করেছিলাম। তুমিই তো বলেছিলে আমার অতীত কখনো আমাদের মাঝে আসবে না তবে কেনো এমন করলে?শেষমেশ তোমার মা ই জিতে গেলো আফিফ। আমার ভেতরে যে তোমার অংশ বড় হচ্ছে সেই খবর টুকুও তোমাকে দিতে পারলাম না আমি। আমার কপাল টা এতই খারাপ।”
নুহা নিজেকে এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।কিছুক্ষণ পরে জোহরের আযান দিলো। নুহা গোছল করে ওজু করে নামাজ পড়তে বসলো। নামাজ শেষে মোনাজাত করলো “ইয়া আল্লাহ তুমিই ভালো জানো সব। তুমি সব কিছুই দেখেছো। তুমি যা করবে সব মেনে নিবো কেননা তুমি যা করো তা ভালোর জন্যই করো। আল্লাহ তুমি ছোট মার উদ্দেশ্য গুলো কখনোই পূরণ হতে দিও না।আফিফ কে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ তার ভুল গুলো ভেঙ্গে দাও।আমার অনাগত সন্তানের জন্য হলেও ফিরিয়ে দাও।আমিন”
এদিকে আফিফ সকাল থেকে এখনো রুম হতে বের হয়নি। আফিফের ছোটমা নাহিদা আফসার তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। তিনি আফিফের মায়েরই যমজ বোন। আফিফের মা অরুনা আফসার তার জন্মের পর পরই মারা যান এবং বাবা নিয়াজ আফসার গত ১০ বছর আগে গত হয়েছেন। এরপর থেকে আফিফের বাবার ব্যবসার সব কিছুই নাহিদা দেখাশোনা করেন সেই সাথে আফিফ কে ও তিনি বড় করেছেন। নাহিদার এক ছেলে আছে রাফি। সে নাহিদাকে কেনো জানি প্রচন্ড ঘৃণা করে তাই সে তার মায়ের সাথে থাকেনা। আফিফ কে তিনি তার নিজের সন্তানের মত দেখেন কিনা জানা নেই তবে আফিফ তাকে মায়ের মতই সম্মান করে। নাহিদার কোনো কথা আফিফ কখনো অবিশ্বাস করেনি কারণ তিনি অযৌক্তিক কিছু কখনই বলতেন না।
নুহা কে নিয়ে তার বলা কথা গুলো আফিফ বিশ্বাস না করতে চাইলেও সে নিজের চোখে দেখেছে যে নুহা এমনই।
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan
[যথাযথ রেস্পন্স পেলেই আমি খুব তাড়াতাড়ি গল্পের আরেকটি পার্ট দিবো]