#পতিতা_বউ
৬ষ্ট পর্ব
নুহা শবনম বেগমের কাছ হতে উঠে ছাদের চিলেকোঠার ঘরটিতে গেলো।এই ঘরটি তার একান্ত ব্যক্তিগত। সে এখানে পড়ালেখা করে আর আল্লাহর ইবাদত করে। নুহা এত জঘন্য স্থানে থেকেও আল্লাহর ইবাদত করতে একটুও পিছপা হয়নি। সে প্রত্যেকবার নামাজ পড়ার আগে নিজেকে পবিত্র করে নেয়। আর এই ঘরটিকেও সে সবসময় পবিত্র করে রাখে।
নুহা তার রিডিং টেবিলে বসতে বসতে আফিফের কথা ভাবতে লাগলো। আফিফ কে যতটা খারাপ সে ভেবেছিলো আসলে সে ততটা খারাপ নয়। তার প্রতি আফিফের দায়িত্বশীলতা দেখে সে বরাবরই মুগ্ধ।
এদিকে আফিফ তার ব্যাল্কুনি তে গিটার নিয়ে বসেছে। তার চোখের সামনে শুধু নুহা ভাসছে। অথচ সে এখনো নুহার চেহেরাও দেখেনি। তারপরেও সে তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে। এই প্রথম কোনো মেয়ে আফিফের মনে এত দাগ কেটেছে।
>>ভাই কি ভাবছিস ব্রো?
রাফির কথায় আফিফের ধ্যান ভাঙলো। রাফি দু’কাপ কফি নিয়ে এসে আফিফের পাশে বসতে বসতে বললো,
>>এত গভীরভাবে কি ভাবছিলি ব্রো?
আফিফ রাফির কাছ থেকে কখনো কিছু লুকোয় না।তার এক নাগারে সব বলতে লাগলো। আফিফের কথা শুনে রাফি তো অবাক।
>>আজ একদিন ভার্সিটি মিস দিলাম আর তুই এত কিছু ঘটিয়ে ফেললি জাস্ট ওয়াও। যাক লাইফে তোর তাহলে এবার কেউ আসলো শেষমেশ।
>>ধুর তুই কত দূর চিন্তা করে ফেলেছিস। জাস্ট কয়েক ঘণ্টারই পরিচয়।
>>দেখ ব্রো তুই আগে পরে এই মেয়ের প্রেমে পড়বিই লিখে রাখ আমার কথা।
রাফি হাসতে হাসতে চলে গেলো। আর আফিফ কে ভাবনায় ফেলে গেলো। রাফি আফিফদের ভার্সিটির সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট আর আফিফ লাস্ট ইয়ারের।
পরেরদিন সকালে নুহার বের হতে একটু লেইট হয়ে গেলো। আফিফ নুহার জন্য আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ওয়েট করছিলো। নুহা আসতেই সে বাইক স্টার্ট দিতে দিতেনুহা কে বললো,
>>দেরী হলো যে?
>>আসলে বুঝিনি যে আপনি একদম সময়মত চলে আসবেন।
>>শুনো আমি কিন্তু অনেক পাঙ্কচুয়াল। সময়কে খুবই মেনে চলি মনে রেখো। আর কখনো যাতে দেরী নাহয়।
>>আচ্ছা আর কখনো হবেনা।
>>বসো।
নুহা উঠে বসতেই আফিফ বাইক স্টার্ট দিলো। আজ তারা পথে একটু আধটু গল্প করলো। আফিফ নুহাকে তার ফ্যামিলি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো,
>>ফ্যামিলি তে কে কে আছে তোমার?
নুহা এই প্রশ্নটি শুনে কেমন যেন চুপ হয়ে গেলো। নুহার একটা পরিবার আছে ঠিকই কিন্তু সে জানেনা তারা এখন কোথায় আছে কেমন আছে? নুহার সবই মনে আছে। তার মা বাবা ছোট বোন সবার চেহেরাই তার চোখের সামনে ভাসছে। তার বর্ত্তমান পরিবার বলতে শবনম বেগম আর কুঠির মেয়ে গুলোই আছে। তার দু’চোখ ভরে এলো। আফিফ আবার বললো,
>>কি হলো বললে না?
>>আমি আর আমার মামুণি।
>>জানো আমার ফ্যামিলি টাও সেমই আমি ছোট মা আর আমার ছোট ভাই। বাবা নেই আজ ৭বছর হলো।
নুহা লক্ষ্য করলো এসব বলতে বলতে আফিফ এর গলা ভারী হয়ে আসছে। আফিফ আর নুহা ভার্সিটির পার্কিং লটে ঢুকতেই ক্যাম্পাসের সবাই তাদের হা করে তাকিয়ে আছে।
আফিফ আফসার তাও একটা মেয়ের সাথে করে বাইকে এসেছে। এটা সবার জন্য অবাক করা বিষয়। কারণ আফিফ কোন মেয়েকে সচরাচর সহ্য করতেই পারেনা। কিন্তু আজ প্রথম আফিফ কে কোনো মেয়ের সাথে দেখা গিয়েছে। নুহা নেমে পড়লো। আফিফ বাইক সাইডে রেখে নুহাকে বললো,
>>আচ্ছা শুনো আমার নাম্বার টা রাখো ক্লাস শেষে আমায় একটা কল দিও। ভুলেও একা যাওয়ার সাহস করবে না।
>>আচ্ছা। এবার আমি আসি
>>হুম যাও কিন্তু সাবধানে
আফিফের আচরণে নুহার ভালো লাগা যেনো ক্রমাগত বাড়ছেই। সে আফিফের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
>>থ্যাংক ইউ এ লট।
আফিফ নুহার চাহনি তে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলো।নুহার প্রতিউত্তরে সে আর কিছু বলতে পারেনি। নুহা চলে আসলো।
নুহা ক্লাসে ঢুকতেই দেখলো অনিমা বসে আছে। অনিমা নুহাকে দেখে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
>>কিরে আমি তোর জন্য কতক্ষণ অপেক্ষা করলাম আর তুই আমাকে না বলেই বেড়িয়ে গেলি। একটা কল তো দিতেই পারতিস।
>>সরি সরি আসলে আমি আফিফের সাথে এসেছি আজকে।
>>কিইইইই?
অনিমা তো পুরাই অবাক। তারপর নুহা অনিমা কে সব খুলে বলতেই অনিমা আসল ঘটনা বুঝতে পারলো।
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan