বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ধামাকা

0
640

#বিষাক্তময়_আসক্তি(The Villain 😈)
#Sumaiya_Akter_Mim
#ধামাকা_পর্ব🔥

“ইরফান এক ভ্রু উঁচু করে মেয়েটিকে দেখছে।এই মেয়ে এখানে কেনো এসেছে।। ইরফানের দৃষ্টি অনুসরণ করে আয়ানাও মেয়েটির দিকে তাকালো বেশ সুন্দর মেয়েটি চুল গুলো ব্রাউন কালার করে রেখেছে।।।।।

জায়েদ আহাম্মেদ পুলিশের উদ্দেশ্য করে বলেন,,,

—-কি হয়েছে অফিসার আপনারা এখানে।আপনারা তো জিসানের ফাইল ক্লোজ করে দিয়েছেন তাহলে।।অবাক হয়ে।।

“আমরা জিসানের মৃত্যু বিষয়ে কিছু বলতে আসেনি এসেছি মি. জিসান সম্পর্কে কিছু বলতে।(অফিসার)
অফিসারের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে যায়। ইরফান এখনো শান্তভাবে অফিসারের সাথে আসা মেয়েটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।। তখনি মেয়েটি বলে উঠলো,,

—হাই গাইজ আমি লিসা রেহমান।মি.জিসান আহাম্মেদের হাঁফ বিয়ে করা বউ।কিছুটা তাজ্জিল্য শুরে।।
মেয়েটির কথা শুনে সবাই আকাশ থেকে পড়লো।কী বলছে এই মেয়ে পাগল টাগল হয়ে গিয়েছে নাকি।সবাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এতোক্ষণ চারিপাশের খেয়াল ছিল না সাফিয়ার কিন্তু এখন এমন কথা শুনে সে লাফ দিয়ে উঠে পড়লো বিষ্ময় জেনো কাটছেই না কারোর।। একটার পর একটা ঝাটকা সামলাতে পারছে না কেউ।।সকলে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকলেও ইরফান শান্ত ভাবে তাকিয়ে আছে।।। লিসাকে ইরফান হলুদে দেখেছিল তারপর আজকে দেখছে।।ওই দিন বিষয়টি নিয়ে না ঘাটলেও যখন জেনেছে জিসান আয়ানাকে চায় তখন জিসান সম্পর্কে সব তথ্য কালেক্ট করে ইরফান গার্ডদের দিয়ে। তখন জিসান সম্পর্কে সব জানতে পারে আর লিসা সম্পর্কেও দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ছিলেন সাথে জিসানের কালো বিজনেসের সহপাঠী ছিলেন লিসা রেহমান।।লিসা জিসানকে ভালোবাসলেও জিসান শুধু তাকে পুতুল হিসাবে নাচিয়েছে আর ভোগ করেছে।। ইরফান লিসাকে লোক লাগিয়ে খুঁজেছে কিন্তু লিসা তখন কাশ্মীর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গিয়েছে তাই সে ইরফানের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল না হলে এতো দিন জিসানের সাথে আকাশে থাকতো।। হঠাৎ সাফিয়ার চিৎকারে ইরফান বিরক্তি নিয়ে সেদিকে তাকালো,,,,

—-কিসব ফালতু কথা বলছেন!কে আপনি?আর কোন সাহসে আমার ভাইয়ার নামে উল্টো পাল্টা কথা বলছেন।। রেগে চিৎকার করে বললো সাফিয়া।।।
সাফিয়ার কথার সাথে সবাই সায় জানালো।। সাফিয়া আবার কিছু বলতে যাবে তাঁর আগে লিসা তাকে থামিয়ে তাজ্জিল সুরে বলল,,,,,

—–বিশ্বাস না হওয়ার কথা। কিন্তু আমি প্রমাণ ছাড়া আসিনি। আমার কাছে প্রমাণ আছে।এই যে এইগুলো বলে বাঁকা হেসে হাতের ফাইলটি দিল।।।।
সাফিয়া বিষ্ময় নিয়ে জলদি করে হাতের ফাইলটি নিয়ে সেটা খুলে দেখলো কিছু কাগজপত্র।। কাগজ গুলো ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো এগুলো রেজিস্ট্রার কাগজ পত্র, ভালো করে দেখে চমকে গেল সাফিয়া তাকে চমকাতে দেখে বাকি সবার টেনশন আরো বেরে গিয়েছে।।।সাফিয়ার হাত থেকে কাগজ গুলো সামিয়া আহম্মেদ নিলেন। উনার মাথায় জেনো বাজ পড়লো তাদের ছেলে বিয়ে করেছে কিন্তু তাদের না জানিয়ে।।।লিসা নিজের ব্যাগ থেকে কিছু ছবি দিল সবাই ছবি গুলো দেখে লজ্জায় ছবি গুলো লিসার হাতে তুলে দিল।।ছবি গুলো লিসা আর জিসানের খুব ক্লোজ ক্লোজ ।।যে কেউ দেখলে বুঝবে এঁরা স্বামী স্ত্রী।।।লিসা ছবি গুলো রেখে সবার দিকে তাকালো, এতোক্ষণে সবার কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে আশেপাশের প্রতিবেশী গুলো বলাবলি করছে।।।লিসা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,

—–সবার হয়তো এখনো কোনো কিছু মাথায় আসছে না।।আর এতো দিন আমি কোথায় ছিলাম কেনো এখন হঠাৎ উদয় হয়েছি অনেক প্রশ্ন মনে।।তাই আমি সব কিছু ক্লিয়ার করে বলছি।। আমি এখানে আপনাদের ছেলের আসল সত্যি আপনাদের বলতে এসেছি।মুখ শক্ত করে গম্ভীর গলায় বলল।।।
লিসার কথা শুনে সবাই অবাক হয়।লিসা আবার বললো,,,

—-হুম আসল সত্যি যা আপনাদের জানা প্রয়োজন।।। আপনাদের ছেলে কতোটা খারাপ কতোটা নিচ তা বলতে এসেছি আমি এখানে।।।
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।।।।

—–একদম মুখ সামলে কথা বলবেন। আমার মৃত ভাইয়াকে নিয়ে উল্টো পাল্টা কিছু বলবে না।। ভাঙ্গা কন্ঠে চিৎকার করে বললো।।।
সাফিয়ার চিৎকার শুনে সবাই অবাক হলো।। সাফিয়া বরাবরই শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কখনো উঁচু গলায় কথা বলে না কিন্তু নিজের বড় ভাইয়ের নামে এমন কথা সে সহ্য করতে পারছে না।।।

— রিলেক্স রিলেক্স!এতো হাইপার হবে না সাফিয়া। আমি প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না।।আর আমার কাছে প্রমাণ আছে বলেই আমি এসব বলছি বাঁকা হেসে।।।‌আর সবচেয়ে বড় কথা এতো যে ভাইয়া বলে সম্বোধন করছো কিন্তু আমার কথা শুনলে দ্বিতীয় বার আর ভাইয়া ভাইয়া বলবে না। সবার চেয়ে তুমি বেশি ঘৃণা করবে তোমার ইনোসেন্ট ভাইয়াকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে।।।

—-কী প্রমান আছে?আর আমার নাম কি করে জানলে।আর আমি নিজের ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি ঘৃণা কেনো করতে যাবো।।অবাক হয়ে।

—-শুধু তুমি নয় তোমার বাড়ির প্রত্যেককে আমি খুব ভালো করে চিনি।আর তোমাকে তো একটু বেশি চিনি।।আর তোমার ভাইয়ার আসল সত্য জানলে সবচেয়ে বেশি তুমি ঘৃণা করবে।।।।(লিসা)
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।।লিসা কিছুক্ষণ চুপ থেকে সবার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,

“আমি আর জিসান একই সাথে একই ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি।।। আমি আমার বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে হওয়ার সুবাদে খুব আদরের তাই কিছু চাওয়ার আগেই পেয়ে যেতাম আর এসব কারণে একদমই বিগড়ে গিয়েছিলাম আমি।।সারা দিন ঘোরাঘুরি হাজারটা ছেলের সাথে রিলেশনশিপ আর রাতে পার্টি এসব ছিল প্রতিদিনের রুটিন।।

জিসানের সাথে পরিচয় আমার ভার্সিটির প্রথম দিন।।ভার্সিটিতে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম ছেলে ছিল সেই সাথে প্লে বয়ও বটে।।সে যেমন তাঁর পরিবারের সদস্যদের দেখাতো ঠিক তেমন ছিল না। বিশেষ কারণে সে সবসময় সবার সাথে ভালোমানুষীর নাটক করে যেতো।।ও ঠিক কেমন ছিল আমার থেকে ভালো ওঁর নিজের বাবা মা বোনও জানে না।।।।বাড়িতে সবাইকে মি. ইনোসেন্ট গুড বয় দেখালেও বাহিরে ছিল একদম অন্যরকম।।। সারাদিন হাজারটা মেয়ের সাথে রিলেশনশিপে থাকতো সে রাতে পার্টি,দামি দামি মদ আর ড্রাগস্ সেবন করতো এসবের জন্য তাঁর কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন হতো না।।সে দামি দামি ড্রিংক করে এবং ড্রাগস নিয়ে অনায়েসেই চলাচল করতে পারতো তাঁর নেশা হতো না কিন্তু কখনো নেশা করে বাড়ি ফিরতো না কারণ সে ছিল খুব চালাক চতুর প্রকৃতির মানুষ সে কোন রকম ভুল করে সবার সামনে নিজেকে প্রকাশ করতো না। সবসময় ড্রাগস নিয়ে হোটেলে মেয়েদের সাথে রাত্রি যাপন করতো আর বাড়িতে বলতো বন্ধুর বাড়ি আছি।।।। কথাগুলো খুব চিবিয়ে চিবিয়ে বললো লিসা।। লিসার কথা জেনো কারোর বিশ্বাস হচ্ছে না ঘৃণায় সকলের গা গুলিয়ে আসছে, লজ্জায় সকলের মাথা নিচু করে রেখেছে তাদের মতো এমন ধর্মীক পরিবারে এসব শুনা যে কতোটা লজ্জাজনক বলা বাহুল্য, প্রতিবেশী তো কানাকানি করছে।।একেক জন বলছে,,,কী ভালো সাধু সেজে থাকে আর তলে তলে এসব করে বেড়ায় ছিহ্ছিহ্ছিহ্।।।সবার কানাকানি শুনে লজ্জা জেনো কয়েক ধাপ বেড়ে গেল জায়েফ আহাম্মেদের উনি শান্ত ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।।।।লিসা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে আবার বলতে লাগলো লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।
জিসান ছিল একদম আমার টাইপের তাই তাঁর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল একসময় আমরা বিএফ জিএফ হওয়ার ডিল করি।। আমরা একজন আরেকজনের সাথে বিএফ জিএফ থাকবো কিন্তু শুধু এতোটুকুই সে জানিয়ে দেয় সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।।।।এতে আমার কিছু যায় আসে না তাই আমিও শর্ত মেনে নেই।।। আমি তো এমনই চাই! কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত একসাথে থাকার পর ধিরে ধিরে আমি জিসানকে ভালোবেসে ফেলি তাই সে যেমন যেমন বলতো তেমন তেমন করতে লাগলাম।। কিন্তু সে শুধু আমাকে ভোগ্য পণ্য আর নিজের খেলার পুতুল হিসাবে ব্যবহার করতো আমি সব জেনেশুনে তাঁর কথা শুনে চলতাম কারন দিন যতো যাচ্ছিল আমি তাঁর প্রতি আরো বেশি ভালোবাসা অনুভব করছিলাম।।। এইভাবে চলে গেল অনেক দিন আমাদের ভার্সিটি লাইফ শেষ এরি মাঝে অনেক বার নিজের মনের কথা বলেছি কিন্তু জিসান শুধু উপহাস করত তা নিয়ে।। জিসানের লক্ষ্য ছিল একটা আর তা হলো অনেক টাকা ইনকাম করা সে টাকার প্রতি একদম জোক ছিল তাই যেখানে টাকা সেখানে নিজের জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে দ্বিধা করতো না সে।।।

“ভার্সিটি শেষ জিসান ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র থাকা সুবাধে নিজের পড়াশোনার সাথে সাথে ছোট কম্পানিতে জব নিলো সেখানে তাঁর বেতন ছিল অনেক ভালো তবুও তাঁর কাছে সেটি কম মনে হতো। তাঁর আরো টাকা চাই অনেক টাকা আর তা খুব শীঘ্রই কারন তাঁর আসল লক্ষ্যে পৌঁছাতে টাকার প্রয়োজন।। টাকার নেশায় এতোটা বুঁদ হয়ে গিয়েছে সে শেষ পর্যন্ত খারাপ কাজে জড়িয়ে পরে।।। মাদক, অস্ত্র, মেয়ে প্রচারের মতো জঘন্য কাজ করতে শুরু করে।।আমি তাঁর ব্যবসায় তাকে সঙ্গ দিয়েছি এবং দুজনে মিলে এসব কাজ করেছি। অনেক টাকা ইনকাম হতো এইসব টাকা ৮০%ছিল জিসানের আর ২০%আমাকে দেওয়া হতো। এতে আমার কোনো মাথাব্যথা ছিল না কারণ জিসানকে আমি ভালোবাসি তাই জিসানের যা কিছু সব আমরি হবে।।
এরি মাঝে বেশ কিছুদিন চলে যায় এইভাবে আমারা ভালো ব্যবসা করেছি কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই আমি এর মধ্যে জিসানকে নানাভাবে আমাকে বিয়ের করার কথা বলেছি কিন্তু সে আমাকে উপেক্ষা করেছে।।সে বরাবরই জানিয়েছে সে শুধু একজনকে ভালোবাসে আর তাঁর জন্য এইসব করছে তাকে সুখি রাখার জন্য ।।।
লিসার কথা শুনে আয়ানা ভয় পেয়ে ইরফানের হাত আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।জিসান যে এতোটা খারাপ একদম ধারনার বাহিরে।। ইরফান আয়ানাকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে রাগে তাঁর মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে পুরাতন জিদ আবার মনে চেপে ধরে যদি জিসান বেঁচে থাকতো তাহলে আরো কঠিন শাস্তি দিতো তাকে।। ওইদিনের কথা ভাবতে ইরফান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আয়ানাকে।।।।
ইরফানের ইচ্ছে করছে এই লিসা নামক মেয়েটিকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিতে কিন্তু পারছে না এখন তারপাশে আয়ানা আছে বলে।।। ইরফান জিসানের সম্পর্কে খুঁজ নিয়ে সব তথ্য আগেই জেনে গিয়েছিল কিন্তু তখন বেঁচে যায় লিসা যদি তখন নাগালের বাহিরে না যেতো ঠিক একই ভাবে দুজনে মরতে হতো।।।
লিসার কথায় ইরফান তাঁর দিকে তাকালো,,,,

“এইভাবে কাটছিল সময় জিসান নিজের লক্ষ্যে সফল হচ্ছিল তাই সে খুব খুশি ছিল। সবসময় বলতো আর কিছু দিন তারপর আমি আমার লক্ষ্য পৌঁছে যাবো তখন সারাজীবনের জন্য আমার ভালোবাসাকে নিজের করে নিবো তাঁর জন্যতো এতো আয়োজন বলে পাগলের মতো হাসতো।। তখন আমার মনে জিসানকে হারানোর ভয় প্রতি নিয়ত বাড়তে লাগলো কী করবো বুঝতে পারছিলাম না তখনই একদিন জানতে পারলাম আমি মা হতে চলছি জিসানের সন্তানের মা।।।
জিসানের সন্তানের মা হতে চলছি কথা শুনে সবাই জোরে চিৎকার করে বললো,,,

—–মায়য়য়য়য়য়য়।।।।।

—-হুম কিন্তু আমার পাপের শাস্তি আমার অনাগত সন্তান পেয়েছে তাইতো পৃথিবীর আলো দেখার আগে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।। তাঁর নিষ্ঠুর মা’কে ছেড়ে চলে গিয়েছে। শাস্তি দিয়েছে আমাকে।। বলে মুখ চেপে ডুকরে করে কেঁদে উঠলো লিসা।। লিসার কথা শুনে উপস্থিত সকলেই আবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে কেউ তো তাঁর চোখের পানি দেখে নিজেও কেঁদে দিয়েছে।।।‌
লিসা ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকে বললো,,,
যখন আমি জানতে পারেছি আমি মা হবো তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়েছে আমাকে নিজের কাছে।। সারারাত নিজের পেটে হাত দিয়ে কথা বলেছি আমার অনাগত সন্তানের সাথে ভেবেছিলাম জিসানকে বললে সে হয়তো সন্তানের জন্য আমাকে মেনে নিবে এবং বিয়েও করবে লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।। কিন্তু জিসান এতোটা উন্মাদ হয়ে উঠেছিল তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য যদি আমি বলি আমার পেটে তাঁর সন্তান আছে তাহলে বাচ্চা এবং আমাকে মারতে তাঁর হাত কাঁপবে না একদম।তাই আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে লাস্ট যেদিন জিসান আমার সাথে ছিল সেদিন খুব ড্রাংস ছিল সেদিন তাঁর হুঁশ ছিল না একদম আমি ইচ্ছে করে ড্রিংকের গ্লাসে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম।। যখন জিসানের একদমই হুঁশ ছিল না তখন আমি আগে থেকে তৈরি করা বিয়ের রেজিস্ট্রার পেপারে জিসানের সাইন করিয়ে রাখি যাতে পরে ব্ল্যাকমেইল করলে আমাকে সব নিয়মকানুন মেনে বিয়ে করে বউয়ের পরিচয় দেয়।।।
সাফিয়ার বিয়ের আগে একদিন জিসান আমাকে কল করে জানালো তাড়াতাড়ি করে আমাদের পার্সোনাল ডেরাখানায় আসার জন্য।। আমিও তাড়াতাড়ি করে এসে দেখি জিসান ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে আর সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের কাজের লোকজন।। আমি জিসানকে জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারি আমাদের রাত বারোটার মধ্যে যে মেয়েগুলো কে প্রচার করবো তাদের মধ্যে একটি মেয়ে পালিয়ে গিয়েছে এতে করে আমাদের অনেক লোকসান হতে পারে।যার কাছে প্রচার করবো তিনি সময়ের মধ্যে সব গুলো মেয়েকে চান যদি একজন কম হয় তাহলে যতোটাকা এই কাজের জন্য দিয়েছে সব টাকা ফেরত নিবে সাথে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে।এসব কথা শুনে জিসানের মাথা অনেকটা খারাপ হয়ে গিয়েছে সে কোনো মতে টাকা গুলো হারাতে চায় না তাঁর জন্য যা করতে হবে সে করবে। উন্মাদের মতো ব্যবহার করতে লাগলো লোক লাগিয়েছে মেয়ে খুজার জন্য কিন্তু যে মেয়ে প্রয়োজন তাঁর বয়স হতে হবে বিশ থেকে পঁচিশ এর মধ্যে এমন বয়সী মেয়ে খুজা এতো কম সময়ে খুব ট্রাপ।। অনেক খুজার পর যখন কোনো মেয়ে পায়নি তখন পাগলের মতো করে ব্যবহার করতে লাগলো।। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে কাউকে কল করলো পরে জানতে পারি এটা সাফিয়া ছিল সে সাফিয়া কে কল করে একটা ঠিকানায় আসতে বলে জলদি তারপর কল কেটে দেয়, আমি জানতে চাইলে বলে এই বয়সী মেয়ে দুঘন্টার মাঝে না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাই সাফিয়াকে সে অন্য মেয়েদের সাথে প্রচার করবে কারন সাফিয়ার বয়স এর মধ্যে ছিল।। নিজের আপন বোনকে প্রচার করে দিবে শুনে আমি অনেক আবাক হই আমার জানা মতে জিসান সাফিয়াকে ভিশন ভালোবাসে তাহলে।। আমি অনেক বলি এমন না করতে একটা ডিল গেলে আরেকটা করবো কিন্তু সে বলে না আমি কোনোমতে এতো গুলো টাকা হারাতে চাই না বলে রেজিস্ট্রেশন পেপারে সাফিয়ার নাম লিখে পাশে সে সাইন করে দিলো।। কিন্তু ভাগ্যে সাফিয়ার সহায় হোন তাইতো সাফিয়া আসার পূর্বে একটা মেয়েকে পাওয়া যায় যার বয়স তেইশ বছর ছিল তাকে প্রচার করা হয়েছে অন্য মেয়েদের সাথে।।।। আমার ভাবতেই ঘৃণা হচ্ছিল যে কি করে একজন ভাই তাঁর বোনকে বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে।। শুধু মাত্র টাকার জন্য নিজের বোনকে বেঁচে দিতে সে পিছু পা হবে না।।।

লিসার কথা শুনে সাফিয়া ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে মুখে হাত দিয়ে জোরে জোরে কান্না করছে সে।।। সবাই জেনো এসব শুনার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।।। জায়েফ আহাম্মেদ বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে তা দেখে সামিয়া আহম্মেদ দৌড়ে পানি নিয়ে এসে তাকে দেন তিনি কোনো কথা না বলে পানি টুকু খেয়ে নিলো।। সকলের চোখে এতোক্ষণ এর মায়া ভালোবাসা কাটিয়ে একরাশ বিরক্তি ঘৃণা রাগ প্রকাশ করছে জিসানের উপর।।যদি সে বেঁচে থাকতো তাহলে তাঁর অবস্থা ঠিক কী হতো তা কেউ ভাবতেও পারছে না।।। সামিয়া আহম্মেদ নিজের সন্তানের জন্য লজ্জা হচ্ছে জিসান এমন কিছু করবে তা জেনো কল্পনায় করতে পারছে না তিনি।।।
সাফিয়া মুখে হাত চেপে কান্না করছে।। তাঁর ভাই কি করে তাঁর সাথে এমন করতে পারে? তারমানে ওইদিন রাতে এইজন্য এতো রাতে তাকে ওই ঠিকানায় যেতে বলেছিল।যদি সে যেতো তাহলে তাঁর সঙ্গে কি হতে পারতো ভেবে আরো জোরে শব্দ করে কান্না করতে লাগলো সে।।। শীতল আহাম্মেদ তাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিচ্ছে।।।

“লিসা পুলিশের হাত থেকে কিছু কাগজপত্র আর ছবি সবার হাতে হাতে দিলো যেখানে স্পষ্ট প্রমাণ হয় এসব কাজ জিসান করেছে।এসব দেখার পর সবার আর কিছু দেখার ইচ্ছে নেই যা প্রমাণ পাওয়ার তা সবাই পেয়েছেন।।

—ওই দিনের পর থেকে আমার সাথে আর জিসানের কোনো কথা হয়নি আমি অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি তাই বাধ্য হয়ে সাফিয়ার হলুদের দিন রাতে এসেছিলাম উদ্দেশ্য সবাইকে সব সত্যি বলে দিবো কিন্তু এর আগেই জিসান আমাকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয় আর বলে যদি আরেকবার তাঁর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিংবা কাউকে কিছু বলি তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে।আমি নিজের অনাগত সন্তানের জীবন বাঁচাতে সেদিন রাতে কাশ্মীর ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছি।। জিসান যদি জানতে পারতো আমার গর্ভে তাঁর সন্তান তাহলে সেদিন আমার সাথে সাথে আমার সন্তানকেও মেরে ফেলতো সে ।আমি চাই আমার সন্তান এই পৃথিবীর আলো দেখবে। আমার বাঁচার শেষ আশা আমার সন্তান তাই তাকে বাঁচানো আমার প্রধান কাজ।। নিজের পরিবারকে ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিলাম বাবা মা’কে বলাতে এই বিপদে তাঁরা আমার সাথে ছিল।। সন্তান যেমন হোক বাবা মা কখনো তাদের ফেলে দেয় না।। সেখানে যাওয়ার পর সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু কথাই আছে না পাপ বাপকেও ছাড় দেয় না ঠিক তেমনি হলো একটা ছোট্ট দূর্ঘটনায় আমি আমার অনাগত বাচ্চার মুখ দেখার আগে সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
ডাক্তার জানিয়েছেন শুধুমাত্র চোট পাওয়ায় কারনে বেবি নষ্ট হয়নি বরং অতিরিক্ত ড্রিংস করার ফলে বেবি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।ডাক্তার আরো জানিয়েছে ভবিষ্যতে আমার বেবি হওয়ার সম্ভাবনা ৮৫% নেই।এটা ছিল আমার সবচেয়ে বড় শাস্তি । আমার পাপের শাস্তি আমার অনাগত সন্তান পেয়েছে। একজন মেয়ে হয়ে এতোগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছি তাই আল্লাহ আমাকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছে, তাই আমি ঠিক করেছি যখন সুস্থ হবো তখন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবো এবং জিসান ও তাঁর সাথে যুক্ত সকলের কথা পুলিশকে জানাবো।। সুস্থ হতে অনেক সময় নিয়েছে যখন সুস্থ হয়েছি তখন সব প্রমান নিয়ে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করি এবং জিসান ও বাকিদের কথা জানাই কিন্তু জিসান মারা গিয়েছে তা আমি জানতাম না পুলিশ আমাকে জানালো। জিসানের এতো সুন্দর মৃত্যু আমি একদম সহ্য করতে পারছি না সে যা করেছে তাঁর জন্য তাকে একটু একটু করে মরতে দেখলে আমার শান্তি হতো সাথে সেইসব মেয়েদের যাদের সুন্দর জীবন সে নষ্ট করেছে।।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।
জিসানের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না এটা আয়ানা ভালো করে জানে। জিসানের মৃত্যু যেভাবে হয়েছে এর চেয়ে কঠিন ভয়ংকর মৃত্যু হতেই পারে না।।।কথা গুলো ভেবে আয়ানা ইরফানের বুকে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলো।।।।

❀লিসার কথা শুনার পর কেউ আর কোনো কথা বলেনি সবাই নিরব চোখে তাকিয়ে আছে।।লিসাকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার আগে লিসা কান্না ভেজা চোখে সকলের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,,,

—-জিসান শুধু টাকা আর তাঁর ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসে আর কাউকে না।সে যা করেছে তাঁর ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য করেছে।ভালোবাসা মানুষকে ভালো করতে পারে আবার ভালোবাসা মানুষকে হিংস্র এবং অনেক খারাপ বানাতে পারে কারণ ভালোবাসাটা হলো #বিষাক্তময়_আসক্তি।

“জায়েদ আহাম্মেদ সোফায় বসে ভাবতে লাগলো, এসবের পেছনে তাঁর ভুল ও আছে কোনো না কোনো ভাবে সে এসবের জন্য দায়ী। জিসান ছোট বেলায় থেকে আয়ানাকে পছন্দ করে আর সেটা খুব গভীরভাবে তিনি জিসানকে কথা দিয়েছিল যখন আয়ানার বিয়ের বয়স হবে তিনি তাদের বিয়ে দিবে।। কিন্তু তিনি কথা রাখেনি।তিনি জিসানকে বলতো, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে ততোদিনে আয়ানারও বিয়ের বয়স হবে তখন তাদের বিয়ে দিবে।তাই উন্মাদের মত জিসান টাকা ইনকাম করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল।।সে আয়ানাকে পাওয়ার জন্য সব করতে রাজি।।। জায়েদ আহাম্মেদ চেয়েছিল জিসান ভালো কিছু করোক কিন্তু তাঁর কথাটাকে প্রাধান্য দিয়ে জিসান এতোটা উত্তলা হয়ে পরে যে সে তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে খারাপ পথে চলে গিয়েছে,সে খারাপ পথ বেছে নিয়েছে।। ভেবে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে জান তিনি।।।। তাঁর হাতে কিছু ছিল না।।। জিসান ভুল করেছে এমন জঘন্য কাজ করে তাই হয়তো তাঁর শাস্তি এমন পেতে হয়েছে।

#To_be_continued……………..🌼

#Happy_Reading

লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম✵

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here