বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ২৯

0
684

#বিষাক্তময়_আসক্তি(The Villain 😈)
#Sumaiya_Akter_Mim
#পর্ব_২৯…………🌼

“সাদা সাদা বরফে ঢেকে আছে আশেপাশের দালান গাছপালা গুলো। বরফে সাদা হয়ে আছে সব।। রাস্তায় বরফের কারনে ক্লিন বয়-রা রাস্তা বরফ গুলো পরিষ্কার করছেন ব্যস্ত হয়ে।।”
“গাড়ির কাচের জানালা ভেদ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ইরফান ।গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ইরফানের বুকে গুটি শুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে আয়ানা।ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যে হাত দিয়ে আয়ানাকে জড়িয়ে রেখেছিলো সেই হাত দিয়ে মাথায় আলতো করে ছুয়ে দেয়,অন্য হাত দিয়ে কপালের লেপ্টানো চুল গুলো কানের পেছনে গুজে দিয়ে কপালে চুমু খায়।।আয়ানাকে বুকের সাথে আরেকটু গভীরভাবে জরিয়ে ধরে ড্রাইভার কে বলে গাড়ির হিটারটা অন করে দিতে ।।আয়ানার দিকে তাকিয়ে আয়ানার হাতের পিচ্চি আঙ্গুল গুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে আঙ্গুল গুলো দিয়ে খেলতে লাগলো।।এই কাজটা করতে তাঁর ভিষন ভালো লাগে।। ইদানিং ভালো লাগার পরিমানটা খুব বেড়ে গেছে সাথে ভালোবাসার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার চাহিদাটা ও বেড়ে যাচ্ছে।।।।

__সকাল সাতটায় আয়ানাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে ইরফান! রাতে দেরী করে ঘুমানোর কারনে চোখ টেনে ও খুলতে পারছে না আয়ানা।। ইরফানের ভয়ে ঘুম ঘুম চোখে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নেয় সে। আজকে তাঁরা লিপা বেলীতে যাবে কালকে রাতেই ইরফান তা প্ল্যান করেছে।।‌ইরফান আয়ানাকে নিয়ে দেশের বাহিরে কোথাও হানিমুনে যাওয়ার প্ল্যান ছিলো কিন্তু গতকাল রাতে নিজাম উদ্দিন আবার পালিয়েছে এবার কোথায় আছে তা গার্ডরা খুঁজে চলছে, কিন্তু পাচ্ছে না তাকে! কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। কিন্তু ইরফানের চোখ থেকে সে বেশি দিন বাঁচতে পারবে না ঠিক পাতাল থেকে হলে ও বের করবে আর তাকে শেষ করবে।।। নিজাম উদ্দিন এখন ইরফানের দুর্বলতা জেনে গেছে! ইরফানের প্রান ভোমরা যে আয়ানা সে ভালো করে জানে তাই তাকে আঘাত করার জন্য আয়ানাকে মোহরা বানাবে!আর এটা কিছুতে হতে দিবে না ইরফান।আয়ানাকে যে ক্ষতি করার বিন্দুমাত্র ও চেষ্টা করবে তাকে সে এই পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিবে।। ধ্বংস করে দিবে সব।।।আয়ানাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র রিক্স নিতে চায় না সে তাই যতো দিন নিজাম উদ্দিনকে পাবে না ততোদিন হানিমুন ক্যান্সেল।আয়ানার আর তার মধ্যেকার দূরত্ব কে ঠিক করতে আর আয়ানাকে ও এই চার দেয়াল থেকে বাহিরের পরিবেশ উপভোগ করার জন্য লিপা বেলীতে নিজেদের বাগান বাড়িতে যাচ্ছে।।।
লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।।।

__লিপা বেলীতে নিজেদের বাগান বাড়িতে প্রবেশ করতে দুজন গার্ড দুই দিক থেকে দরজা খুলে দেয়।।বাড়ির মেইন ফটকের কাছে আসতে গাড়ি থামায়।। ইরফানের পাশে গাড়ির দরজা খুলে দিতে ইরফান বসা অবস্থা গাড়ির ভেতর থেকে নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলে গার্ডের হাতে দেয়।। ইরফান নেমে আয়ানাকে সাবধানতার সাথে কুলে তুলে নেয়।।আয়ানাকে কুলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দোতলায় নিজেদের রুমে চলে যায়। রুমে প্রবেশ করে আয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে আয়ানার শরীরে ভালো করে ব্ল্যানকেট জড়িয়ে দিয়ে আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।।।

________________________________

বেলা এগারোটার দিকে ঘুম থেকে উঠে আয়ানা। ঘুম থেকে উঠে রুমের চারপাশে দেখে প্রথমে চমকে যায়! পরে মনে পরে সে কোথায় আছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইরফানকে খুঁজে।ইরফান রুমে কোথাও নেই? বারান্দায় ছায়া দেখা যাচ্ছে তার মানে ইরফান বারান্দায়!আয়ানা বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।।।নীল কালারের একটা সুতির গ্ৰাউন পরে বের হয়ে এসে দেখে ইরফান সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল গুতাচ্ছে!আয়ানা ড্রেসিনং টেবিলের উপর থেকে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে গুটি গুটি পায়ে ইরফানের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়।।। সামনে আয়ানাকে দাঁড়াতে দেখে ইরফান মুচকি হেসে মোবাইলটা টেবিলের উপর রেখে আয়ানার হাত ধরে সামনের টুলের উপর বসিয়ে আয়ানার মাথার চুল শুকাতে লাগলো।।। এটা এখন ইরফানের সাথে সাথে আয়ানার ও অভ্যাস হয়ে গেছে! ইরফান আয়ানার চুল শুকিয়ে আয়ানার লম্বা চুল গুলো আচড়াতে সাহায্য করে!
__তুমি নিচে টেবিলে অপেক্ষা করো আমি একটা কল এ্যাটেন্ট করে আসছি!আয়ানার কপালের চুল গুলো গুজে দিয়ে বললো।।
__আচ্ছা! ইরফানের কথা মতো আয়ানা নিচে চলে গেলো।।।
আয়ানা নিচে চলে যাওয়ার পর ইরফান হাতের মোবাইলটা নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। কিছুক্ষণ কথা বলে নিচে চলে আসে! ইরফান শিড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখলো আয়ানা টেবিলের উপর বসে ঠোঁট বাঁকা করে চারিদিকে তাকাচ্ছে।আর আশেপাশের র্সাভেট গুলোকে ও আড় চোখে দেখছে।ইরফান গিয়ে আয়ানার পাশে বসতে আয়ানা সোজা হয়ে বসে। ইরফান আয়ানার দিকে ঝুঁকে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,,

__কী দেখছিলে এই ভাবে?পালানোর প্ল্যান করছিলে! তাহলে এইসব চিন্তা মাথা থেকে নামিয়ে ফেলো এতেই ভালো হবে বুঝতে পেরেছো!
__আ-আমি পালানোর চেষ্টা করছি না!ঢোক গিলে, আমি তো দেখছিলাম বাড়িটা। মাথা নিচু করে।
__ওকে খাবার শেষে দেখবে এখন চটপট খাবার শেষ করো একদম ঝামেলা করবে না অনেক বেলা হয়েছে। মুখে খাবার দিয়ে।।।
ইরফানের কথা মতো আয়ানা খাবার খেতে শুরু করলো! খাবার খাওয়া শেষ হতে ইরফান নিজের খাবার শেষ করে আয়ানাকে নিয়ে সম্পূর্ণ বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখালো।। সম্পূর্ণ বাড়িটা ঘুরে দেখে আয়ানা ক্লান্ত!এতো বড় বাড়ি যে আয়ানা দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে যায় সাথে ভালো ও লাগে।।‌

_________
আয়ানাকে রুমে বসিয়ে দিয়ে ইরফান বাগানে যায়। লিপা বেলীতে ইরফানের পরিচিত একজন বৃদ্ধা লোক এসেছে সে নাকি অনেক বার বাগান বাড়িতে এসেছে ইরফানের খুঁজে কিন্তু তার দেখা মিলে নি আজকে এখানে এসেছে এই খবর শুনে তিনি এসেছেন ইরফানের সাথে দেখা করতে তাই ইরফান তাঁর সাথে দেখা করতে বাগানের দিকে যায়।।।‌আয়ানা একা একা বিরক্ত হচ্ছে,বাড়ির সবাইকে ও বড্ড মিস করছে দুই দিন হলো কারোর সাথে কথা হয় না।কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। ইরফান আসলে একবার বলে দেখবে একটু কথা বলতে যদি দেয়।।। আয়ানা রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় যায় প্রকৃতি বিলাস করতে।এই রুমের বারান্দা থেকে বাড়ির ভিউ টা খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়।আয়ানা মুখে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে জোরে বাতাসের গন্ধ টেনে নিচ্ছে।। হঠাৎ চোখ ঘুরিয়ে বাগানের দিকে তাকিয়ে আয়ানা আবাক হয়ে যায়। আরেকটু সেই দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো,একজন বৃদ্ধা ইরফানের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কপাল ঠেকিয়ে কান্না করছে আর ইরফান লোকটার কাঁধের কাছে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এটা দেখে আয়ানা বিস্ময়কর চোখে তা দেখছে!তার জানা মতে ইরফান গরিব মানুষ পছন্দ করেন না তাদের ঘৃণা করে কিন্তু আয়ানার সম্পূর্ণ ভাবনা ইরফান মিথ্যা করে দিয়েছে! ইরফান লোকটাকে কিছু একটা বলছে ইরফানের চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে খুব রেগে আছে সে ।। ইরফান একজন গার্ডকে ইশারা করতে গার্ড বেশ কিছু টাকা দেয় বৃদ্ধা কে বৃদ্ধা সেইগুলো পেয়ে আরো কেঁদে দেয় বুঝা যাচ্ছে খুব প্রয়োজন ছিলো তাঁর টাকার।বৃদ্ধার কান্না দেখে আয়ানার ও চোখে পানি চলে আসে সে কারোর চোখের পানি সহ্য করতে পারে না কখনো ইমোশনাল ফ্লিম স্টরি কিছু দেখতে পারে না কান্নার জন্য।।। ইরফান গার্ডদের সাথে কথা বলছে হঠাৎ বারান্দায় আয়ানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে ভেতরে যেতে।।ইরফানারে চোখের ইশারা পেয়ে আয়ানা তাড়াহুড়ো করে ভেতরে চলে যায়।। ইরফানের নিষেধ বাহিরের মানুষ আসলে যেনো বাড়ির বাহিরে না আসে।।।আয়ানা রুমে এসে রুমের টিভির রিমোট নিয়ে বিছানার কাছে আসতে পেছন থেকে ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসতে চমকে পেছনে তাকায় আয়ানা।।‌পেছনে তাকিয়ে ঢোক গিলে সে । মস্ত বড় এক কুকুর রুমের সোফায় বসে তার দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে।।।এই বাড়িতে কুকুর কোথায় থেকে আসলো আয়ানা বুঝতে পারছে না !আয়ানা ছোট বেলা থেকে কুকুর ভিষন ভয় পায়।।। একবার ঈদে জায়েদ আহাম্মেদ সহ পরিবার নিয়ে নানার বাড়ি যান ঈদ উদযাপন করার জন্য। ঈদের দিন বিকেল বেলায় সব বাচ্চাদের সাথে আয়ানা তুতুল তেঁতুল তলায় কানামাছি খেলছিলো খেলার সময়ে তাঁরা সবাই দেখলো গাছের নিচে একটা কালো কুকুর ঘুমিয়ে আছে তা দেখে তুতুল গিয়ে একটা লাঠি নিয়ে কুকুরের লেজ উল্টিয়ে দেখতে লাগলো সে মূলত চেক করছে এটা ছেলে কুকুর নাকি মেয়ে কুকুর। বারবার কুকুরের লেজ নাড়ানোর কারনে কুকুরটা ঘুম থেকে উঠে ক্ষেপে যায়।।কুকুরটা উঠে তুতুল সহ সবাইকে তাড়া করে কামড় দেওয়ার জন্য।সবাই পালাতে সক্ষম হলে ও আয়ানা পারে নি কুকুর টা তার হাতে কামড় দিয়ে ছিলো এর জন্য তাকে ইনজেকশন এর গুতো খেতে হয়েছে তাও আবার তিনবার।।‌এরপর থেকে কুকুর দেখলেই তার কান্না পায়।।আয়ানা তার ছোট বেলার ভাবনায় যখন বিভোর ছিলো তখন কুকুরটা তার খুব কাছে চলে আসে কুকুরের ঘেউ ঘেউ আওয়াজে আয়ানা ভয় পেয়ে যায়।।।
__আম্মিইইইইইই বলে জোরে চিৎকার করে এক লাফ দিয়ে বিছানার উপর উঠে পরে।।। তাকে দৌড়ে উপরে উঠতে দেখে কুকুরটাও তার সাথে বিছিনায় উঠে যায়!কুকুরকে বিছানায় উঠতে দেখে আয়ানা ভয়ে নিচে নেমে যায়। সে যেদিকে যাচ্ছে কুকুর ও জোরে জোরে চিৎকার করে সেদিকে যাচ্ছে।। একপ্রকার দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে তাদের মাঝে।।আয়ানা দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে যায় কিন্তু এই শয়তান কুকুর তার পেছনেই ছাড়ছে না।। ইরফানের মতো তার সাথে জড়িত সব জিনিসের মধ্যে ঝামেলা আছে।। কোনটাই তার পেছন ছাড়ে না তাকে উত্ত্যক্ত করে সবসময়।।আয়ানা আল্লাহর নাম জপ করছে আর ইরফানের নাম যেনো এসে এই কুকুরের হাত থেকে তাকে বাঁচায়।।আয়ানা ভয়ে রুমের বড় কাঁচের টেবিলটার উপর উঠে বসে পরে ।। তাকে উপরে উঠে বসতে দেখে কুকুরটা রেগে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো কারন সে টেবিলের উপর উঠতে পারছে না।।তা দেখে আয়ানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হেসে টেবিলের উপর পা গুটিয়ে বসে পরে।।‌
কুকুরটাও নাচরবান্দা যাচ্ছেই না বারবার উপরে উঠার চেষ্টা করছে।। কুকুর বার বার ব্যর্থ হওয়া ভিষন রেগে জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করছে আর উপরে উঠার জন্য লাফাচ্ছে।।।কুকুরের চিৎকার শুনে আয়ানা ভয় পেয়ে বিরিক্ত সুরে কুকুরটাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,,

__আরে আজিভ কুত্তা তো তুমি এতো ঘেউ ঘেউ কেনো করছো।। এতোক্ষণ তাড়া করে ও কী স্বাদ মেটে নি।।শুনো মিস্টার কুত্তা মহাশয় কুত্তা বলছি বলে রাগ করবে না প্লিজ! আমি জানি তোমার আমাকে পছন্দ না আমার ও ঠিক তোমাকে একদমই পছন্দ না ঠোঁট উল্টিয়ে বললো।।।
আয়ানার কথাটা মনে হয় কুকুরের একদম পছন্দ হয়নি তাই তো সে আবার জোরে জোরে ঘেউ ঘেউ করতে লাগলো।।আয়ানা শুকনো ঢোক গিলে আবার বললো,,
__একটু তো জিরিয়ে নেও!কুকুরের সাথে ভাব জমানোর জন্য আয়ানা টেবিলের উপর থেকে কাঁচের সাজানো কোকের বোতল তুলে নিলো! বোতলের ছিপি খুলে আয়ানা গন্ধে নাক মুখ কুঁচকে নিলো।।
__ছিহহহহহহহহহ ! কী বাজে গন্ধ?এটা আবার কেমন জুস?এই ভিলেনটা না জানি কয়দিন এর বাসি জুস এখানে জমিয়ে রেখেছে।।নয়তো ভালো কম্পানির জুস হবে তাই এমন গন্ধ।।আয়ানা নাক মুখ কুঁচকে নাকে হাত দিয়ে জুসের বোতল থেকে জুস ফ্লোরে ঢেলে দিলো।।।।
আয়ানা ফ্লোরে জুস ঢালতে কুকুরটা তা আয়েশ করে খেতে লাগলো।। খুব তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে।।আয়ানা কুকুরের খাওয়া দেখে খুশি হয়ে বলতে লাগলো,,
__বাহ এটা তো জাদু হয়ে গেলো।। নিশ্চয়ই খুব খেতে টেস্ট জুসটা তাইতো কুত্তাটা ভর্দ্র হয়ে গেছে।। আমি ও একটু খেয়ে দেখবো এটা কেমন বোতলের দিকে তাকিয়ে।।।না থাক এরোগেন্ট ম্যান যদি বকে!!আয়ানা বোতলের ছিপি লাগিয়ে কুকুরের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেলো!!

__ইরফান নিজের কাজ শেষ করে রুমে এসে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়! রুমের অবস্থা নাজেহাল তার সাথে সামনে যা দেখলো তা দেখে বিস্মিত চোখ দুটো কোটোরা থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।।।‌

__ফ্লোরে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পা দুটো সোজা করে নাচছে টাইগার আর তার এই বেসামাল নাচ দেখে হেসে কুটি কুটি হচ্ছে আয়ানা।। জীবনে কবে এতো প্রাণ খুলে হেঁসে ছিলো তাঁর মনে নেই আজকে জেনো হাসতে হাসতে চোখ থেকে পানি বের হয়ে ছাড়বে।।।।

__জুস খাওয়ার পর টাইগার নামক কুকুরটি আয়ানার ভাষা কুত্তাটি খাওয়ার পর জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগে তা দেখে আয়ানা বেশ ভয় পেয়ে যায়।।আয়ানা ঢুক গিলে মনে মনে ইরফানকে সরন করছে যেনো তাড়াতাড়ি আসে।। কিন্তু ইরফানের আসার কোনো হদিসই নেই।। হঠাৎ করে কী হলো কুকুরটার বার বার গোল গোল রানিং করছে পাগলের মতো!তারপর আপনাআপনি লাফাতে লাগলো মানে নাচতে লাগলো।।‌শুধু নাচ নয় বিনা গানেই সেই লেভেলের নাচ।।।আয়ানা আবাক নয়নে কুকুরের দিকে তাকিয়ে রইলো কুকুরের এই অদ্ভুত নাচ দেখে তার পেট ফেটে হাসি আসছে।।তাই সে ও বিনা বাক্যে জোরে জোরে হাসতে লাগলো।।।

ইরফান আয়ানার মুখে এমন প্রানবন্তর হাঁসি দেখে অবাকের রেশ কাটিয়ে মুখে মুগ্ধতা ফুটে উঠলো।।। ইরফান আয়ানার কাছে যেতে আয়ানা ইরফানকে দেখে মুখে হাত চেপে হাসতে লাগলো।।সে অনেক চেষ্টা করছে হাঁসি থামানোর কিন্তু সে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছে।।এই এক সমস্যা কোনো অতিরিক্ত মাত্রায় হাঁসি উঠলে সে এবং তুতুল দুজনের কেউই হাঁসি থামাতে পারেনা।। হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পরে।।। ইরফান আয়ানার কান্ড দেখে অবাক না হয়ে পারছেনা।।এই মেয়ে হঠাৎ এতো হাসি কী ভাবে হাসছে।। মনে হচ্ছে অনেক দিনের জমানো হাঁসি সব বেড়িয়ে আসছে।।‌ইরফান আয়ানাকে কোলে তুলে টেবিল থেকে বিছানায় নিয়ে নামিয়ে দিলো।।আয়ানা এখনো নিজের হাঁসি আটকাতে হাত কামড়ে ধরে রেখেছে।। তার ইরফানারে সামনে হাসতে ভয় লাগছে কিন্তু সে নিরূপায় কারণ সে হাসি থামাতে ব্যর্থ।।‌

__এবার চুপ যাও আয়ু! এতো হাসলে তোমার পেট ব্যথা করবে।আয়ানার মুখ থেকে হাত নামিয়ে শান্ত গলায় বললো ‌।।।
হাসতে হাসতে আয়ানার সারা মুখ লাল হয়ে গেছে।।আয়ানা ধীরে ধীরে হাসির পরিমাণ কমিয়ে আনছে চোখ খিছে হাসি কন্ট্রোল করছে।। হাঁসি থামার পর আয়ানা নিচের দিকে তাকিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে।। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে।।আয়ানাকে স্বাভাবিক হতে দেখে ইরফান মুচকি হেসে আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বললো,,,
__গুড! এবার ঠিক আছে।।।।
ইরফান গার্ডকে কল করতে একজন গার্ড এসে কুকুরটাকে নিয়ে যায়!কুকুরটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে।।।

__তখন বারান্দায় কেনো গিয়েছিলে ? আমি নিষেধ করেছিলাম না বাহিরে কোনো ব্যাক্তি আসলে বের হবে না।।‌আয়ানার ঠোঁটের উপর থেকে চুল সরিয়ে।।
__না মানে আমার ভালো লাগছিলো না তাই!! মাথা নিচু করে আঙ্গুল মোচড়াতে মোচড়াতে বলল।।।।
__ওকে! কিন্তু পরবর্তীতে যেনো না হয়।।।।
__জ্বি! মাথা দুলিয়ে।।।
__ওকে ঠিক আছে!চলো___
ইরফান আয়ানার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো।।। বাগানের পুলের সামনে একটা টেবিল সেখানে গিয়ে বসলো।।। ইরফান আয়ানার হাতে নিজের মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বলল,,,
__সকালে মামনি (শীতল) তোমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে এখন কথা বলো শান্ত গলায় বললো।।‌ইরফানের কথায় কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল টা নিজের কাছে নিলো আয়ানা বেশ কিছু সময় কথা বলে সবার সাথে।।। ইরফান টেবিলের উপর নিজের ল্যাপটপে কাজ করার ফাঁকে আয়ানার হাস্যোজ্জ্বল মুখের দিকে তাকায়।। পরিবারের সাথে কথা বলে আয়ানা খুব খুশি।। ইরফান আয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে কফির মগে চুমুক দেয়।।‌আয়ানা ইরফানের দিকে মিষ্টি হেসে হাতের মোবাইলটা বাড়িয়ে দেয়।।‌মাথা নিচু করে পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোর ঘসতে লাগে।।‌‌
__যা বলতে চাইছো তা বলে ফেলো আয়ু জান।।ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল ইরফান।।
__জ্বি থ্যাংক ইউ! মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।।
ইরফান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বেবি স্মাইল দিয়ে আয়ানার হাত ধরে আয়ানাকে নিজের কাছে এনে আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বললো,,

__ভালোবাসি তোমায় আয়ু জান! খুব বেশি।।আর তোমার জন্য আমি সব করতে রাজি একবার শুধু মুখ ফুটে বলো তুমি আমি তোমার ভালোবাসা পেতে সব করবো সব।।।।
ইরফানের মায়া ভরা চোখ আর ভালোবাসা পাওয়া কাতর কন্ঠ শুনে আয়ানার খুব মায়া হচ্ছিলো।।। ইচ্ছে করছিলো ইরফানকে বলতে যে আমি যদি বলি এসব মাডার ভিলেন গিরি ছেড়ে ছোট্ট একটা সাধারণ জীবন যাপন করতে পারবেন? তাহলে আমার ও আপনার সাথে থাকতে সমস্যা নেই।।। আয়ানা কিছু বলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এমন সময় ঘেউ ঘেউ শব্দ পেয়ে ইরফানকে জড়িয়ে ধরে।।।আবার টাইগার এসেছে সে ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে চলে এসেছে একজন গার্ড জোর করে তার গলার শিকল টেনে ধরে রেখেছে।। হঠাৎ কুকুরটার ব্যবহার সবাই অবাক হচ্ছে!কারন কুকুরটা খুবই শান্ত মার্জিত একটা পোষা কুকুর যা ইরফানের খুব প্রিয়।।। ইরফান আয়ানার হঠাৎ এইভাবে জড়িয়ে ধরায় চমকে যায়।। নিজেকে সামলে আয়ানার পেছনে তাকিয়ে দেখে টাইগার চিৎকার করছে সেই ভয়ে আয়ানা তাকে জড়িয়ে ধরেছে তা দেখে ইরফান দুষ্ট হেসে।আয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,

__টাইগার তোমার খুব নিকটে আমি কী তোমাকে ছেড়ে দিবো আয়ু?
আয়ানা ভয় পেয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথা নাড়িয়ে না বলে।। ইরফান ঠোঁট কামড়ে হেসে আয়ানাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।। ইরফান আয়ানার মাথা তুলে আয়ানাকে সোজা করে দাড় করিয়ে এক সাইড থেকে আয়ানাকে জড়িয়ে ধরে টাইগারের কাছে নিয়ে যায়।।আয়ানা বেচারির তো ইচ্ছে করছে পালিয়ে যেতে।।ইরফান টাইগারের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পরে ইরফান টাইগারের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।।আর তার সাথে কথা বলছে।।আয়ানা চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছে।।। ইরফান কুকুরটা শান্ত হতে আয়ানার হাত ধরে কুকুরের মাথায় রাখতে গেলে আয়ানা দাঁত খিচে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে।তা দেখে ইরফান শান্ত গলায় আয়ানাকে বললো,,
__কিছু হবে না আয়ু।।
আয়ানা তবুও একই রকম করছে মাথা নাড়িয়ে না বলছে সে দিবে না।। ইরফান বিরক্তি হয়ে আয়ানার হাত জোড় করে টাইগারের মাথায় বুলিয়ে দেয়।।।

__দেখলে তো কিছু হয় নি।।এটা তোমাকে কামড়াবে না। শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো।।আয়ানাকে দাঁড় করিয়ে আবার আগের মত জড়িয়ে ধরে বললো।।।
আয়ানা এখনো ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট উল্টিয়ে আছে।।।। ইরফান টাইগারের সাথে আয়ানার পরিচয় করিয়ে দিলো।।টাইগার আয়ানাকে ইরফান জড়িয়ে রেখেছে দেখে ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে লাগলো।। ইরফান গার্ডকে বলে টাইগার কে নিয়ে যেতে বললো।।‌

__তুমি এতো কুকুরকে ভয় কেনো পাও আয়ু জান।আয়ানাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আয়ানার থুতনিতে আঙ্গুল চেপে ধরে বললো।।‌
__আই ডোন্ট লাইক কুত্তা।। মাথা নিচু করে খিট খিটে গলায় বললো।।এই কুত্তা তাকে আজকে অনেক প্যারা দিয়েছে।।‌
__হোয়াট? ইরফান আয়ানার মুখে কুত্তা কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।।।
__জ্বি! ইরফানারে কথায় মাথা নিচু করে জবাব দেয় আয়ানা।।
__কুত্তা এটা কেমন ভাষা আয়ু। এর নাম টাইগার পরবর্তীতে এমন উদ্ভট ভাষায় কথা বলবে না ঠিক আছে।।।
কুত্তার আবার নাম আছে নাকি। টাইগার অর্থ বাঘ কুত্তা বাঘ হলো কীভাবে।। আয়ানা মনে মনে বললো আর মুখে বললো আচ্ছা ঠিক আছে।।।‌

____________________________

টিম টিম আলো জ্বলছে বাগানের কাছটায়।। দুপুর গড়িয়ে বিকেল বেলা আর বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা আর এখন সেই সন্ধ্যা বেলা শেষ হয়ে রাত নয়টা বাজে।। একটি দিন শেষ হয়ে নতুন দিনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।। ইরফান আজকে রাতে বাগানের ওইখানে ডিনারের ব্যবস্থা করতে বলছে গার্ডদের ।প্রায় সব কাজ শেষ।।‌ইরফান বাগানে গিয়েছে কাজ কেমন হয়েছে দেখার জন্য ।।আয়ানা রুমে বসে আছে ইরফান বলছে সে এসে নিয়ে যাবে তাই চুপচাপ বসে আছে।।বড্ড পিপাসা আর ক্ষুধা লেগেছে তার।। ইদানিং খুব ঘন ঘন ক্ষিধে পায় তাঁর মনে হয় ক্ষিধের রাক্ষস ঢুকেছে পেটে।।আয়ানা পেটে হাত দিয়ে কাচুমাচু হয়ে রুমের কাঁচের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো। টেবিলের উপর থেকে পানি খেতে গিয়ে দুপুরের কথা মনে হয় কুকুরটাকে সে জুস খাইয়ে ছিলো আর কুকুর জুস খেয়ে অনেক খুশি হয়েছে।।আয়ানা আগের কাঁচের বোতল নিয়ে বিছানার উপর বসে পরে।।ছিপি খুলে নাক কুঁচকে বলে,,

__কী গন্ধ ছিহ!একটু খেয়ে কী দেখবো কেমন?এরোগেন্ট ম্যান যদি বকে।।না বুঝতে পারবে না একটুনি খাবো হাত দিয়ে ইশারা করে বললো।।আয়ানা নাক চেপে খুশি মনে এক ঢুক খেয়ে চোখ মুখের বারোটা বাজিয়ে ফেলেছে।।।আয়ানা গলায় হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বললো,,
__কী তেতো জুস! কিন্তু খুব মজা বলে আবার খেতে লাগলো।।।।‌‌










#to_be_continued…………..🌼
(কেমন হয়েছে সবাই গঠন মূলক মন্তব্য করবেন ধন্যবাদ 😌)

#happy_reading.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here