বিষাক্তময় আসক্তি – পর্ব ৩২

0
651

#বিষাক্তময়_আসক্তি (The Villain 😈)
#Sumaiya_Akte_Mim
#পর্ব_৩২……….🌼

(কিছুদিন গল্প দিতে পারেনি তার জন্য দুঃখিত।আমার বাসায় যে ওয়াইফাই আছে সেইটা নষ্ট হয়ে গেছে তাঁর জন্য গল্প দিতে পারেনি। আজকে নতুন ওয়াইফাই লাগানো হয়েছে যদি কোনো সমস্যা না করে তবে গল্প আবার রেগুলার দিবো।।)

”সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পরে আয়ানা আজকে ঘুরতে যাবে তাই সে প্রচন্ড এক্সাইটেড।। সকালের ব্রেকফাস্টের পর্ব চুকিয়ে তাঁরা ঘুরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো।। সাথে করে তিনটি গাড়ি নিয়ে গেছে সবসময়ের মতো।। একটি গাড়িতে ইরফান আয়ানা আর দুজন গার্ড একজন গাড়ি চালাচ্ছে আর অন্যজন রোবটের মতো তার পাশে বন্দুক হাতে বসে আছে।।‌আর বাকি গাড়িতে গার্ড রয়েছে।। কিছু গার্ড আগে থেকে পাহাড়ে জায়গায় পৌঁছে আছে তাঁরা মানুষের ভিড় কমাচ্ছে আর জায়গা ক্লিন করে নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে ইরফানদের আসার অপেক্ষায়।।।

__গাড়িতে বসে আয়ানা কাঁচের গ্লাস ভেদ করে বাহিরের মনোরম দৃশ্য দেখছে অপূর্ব সুন্দর এই কাশ্মীরের প্রত্যেকটি জায়গা যতো দেখছে ততো দেখার ইচ্ছে জাগায়।। এতো সুন্দর জায়গা আয়ানা এর আগে কখনো দেখিনি।।এই কাশ্মীর সম্পর্কে যতো শুনেছে ততো শুনতে ইচ্ছে করতো তাঁর এখন তো সে স্বজ্ঞানে আর স্বশরীরে এখানে অবস্থান করছে আর দেখছে ছোটবেলায় আসলে কী হবে তখনের কথা কী আর তাঁর মনে আছে।। টিভিতে কতো দেখতো আর আফসোস করতো কিন্তু কখনো জায়েদ আহাম্মেদ তাকে নিয়ে আসেনি কিন্তু এখন তাকে সবসময় এখানেই থাকতে হবে ভেবে আয়ানা মনে মনে হাসে। হঠাৎ মাথায় ইরফানের হাতের স্পর্শে ভাবনা থেকে বের হয়ে সেদিকে তাকালো।।।
ইরফান আয়ানার মাথার সাদা উরনাটা দিয়ে দিলো নিজে ও সাদা পাঞ্জাবির সাথে সাদা রুমাল টা বেঁধে নিলো খুব সুন্দর লাগছে তাঁকে চেহারায় কেমন নূরানী ভাব ফুটে উঠেছে আয়ানা ও আজকে ধবধবে সাদা গ্ৰাউন পরেছে মাথায় উরনাটা পড়িয়ে দেওয়ায় তাকে ও খুব স্নিগ্ধ লাগছে। ইরফান ভালো ভাবে উরনাটা মাথায় জড়িয়ে আয়ানার থুতনিতে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললো,,
__এবার ঠিক আছে।।।
আয়ানা মৃদু হেসে আবার বাহিরের দৃশ্য দেখতে লাগলো।।। ইরফান আয়ানাকে বুকে জড়িয়ে মোবাইল টিপছে।।।।।

__ইরফানদের গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে একজন গার্ড এসে দরজা খুলে দেয় ইরফান গাড়ি থেকে নেমে আয়ানাকে নামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।।।আয়ানা গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখছে অনেক সুন্দর জায়গা এখানে আসতে পেরে আয়ানা খুশি মনে জোরে নিঃশ্বাস টেনে নেয়।। আশেপাশে মানুষ আছে কিন্তু তাদের থেকে খুবই দূরত্ব বজায় রেখেছে।।।আয়ানা পাহাড়ের শিড়ির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে এতো গুলো শিড়ি বেয়ে গেলে তাঁর কোমড় পা এবং কি সব আজকে নিঃশেষ হয়ে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু সমস্যা নেই যতো কষ্ট হবে হোক কিন্তু তাঁর আজকে ওইখানে যাওয়া চাই ব্যাস।।‌‌ইরফান গার্ডদের সাথে কথা বলে আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে শিড়ি গণনায় ব্যস্ত। ইরফান মুচকি হেসে ঝটপট আয়ানাকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করলো আর তাঁর পেছন পেছন গার্ডরা।।আয়ানা হঠাৎ এমন হওয়ায় ঘাবড়ে যায় ইরফানকে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগে ইরফানের দৃষ্টি দেখে থেমে যায়।।।এটা তাঁর প্রত্যাশার বাহিরে বা অবাক হওয়ার বাহিরে না বরং সে একা একা ওই পাহাড়ের শিড়ি বেয়ে উঠবে এটা অবাক হওয়ার কথা এবং কি প্রত্যাশার বাহিরে কারণ ইরফান কখনো তাকে ওইটায় একা ওঠতে দিবে না।।‌‌আয়ানা চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখছে কিনা, কিন্তু না সবাই তাদের কাজ করছে ভুলে ও এইদিকে তাকাচ্ছে না! তাঁর মানে কারোর তাকানোর অনুমতি নাই কারন দ্যা ইরফান খান যাচ্ছে ভেবে আয়ানা মনে মনে ভেংচি কাটলো।।ইরফান আয়ানাকে নিয়ে একদম পাহাড়ের জায়গায় মতো এসে নামালো আয়ানা ইরফানের দিকে তাকিয়ে দেখলো এতো পথ আসার পর ও কতো স্ট্রং ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।।ইরফান আয়ানাকে হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো।। খুবই সুন্দর জায়গাটা সব মানুষ মাজারের দিকে এবং আশেপাশে নিজ নিজ কাজ করছে।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।

__একজন বয়স্ক মহিলা ওদের সামনে আসতে ইরফান মহিলাটিকে দেখে মুচকি হেসে বললো,,
__সালাম তামজিদা।।
ইরফানের কথা শুনে বয়স্ক মহিলাটি নিজের ফোকলা দাঁতে হেসে বললো,,
__সালাম ইরফান! কেমন আছো তুমি?
__ভালো।আমার ওয়াইফ মিসেস আয়ানা ইরফান খান আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে।। মহিলাটি আয়ানার দিকে তাকাতে আয়ানা মহিলাটিকে সালাম জানালো।।মহিলাটি আয়ানার দিকে তাকিয়ে বিশাল হাঁসি দিয়ে বললো,,
__মাসাল্লাহ ইরফান তোমার বিবি তো দারুন।।একদম পরী আয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে।।।ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।।।আয়ানা বেশ অবাক হলো ইরফান মহিলাটির নাম ধরে ডাকায় কিন্তু তা বেশি সময় স্থির হলোনা এর আগেই মহিলাটি বলে উঠলো,,
__তুমি আমাকে তামজিদা বলে ডাকবে আমি এই বিশাল মাজার আর লাভ ট্রি দেখা-শুনা করি তাই সবাই আমাকে আমীনা বলে ডাকে যার অর্থ আমানত রক্ষাকারী।।আর ইরফান আমাকে তামজিদা বলে ডাকে ছোট বেলায় থেকে এটা আমার আসল নাম যার অর্থ মহীমা কীর্তন।। বলে মুচকি হাসলো মহিলাটি।।আয়ানার খুব পছন্দ হলো নাম দুটোই আর বুঝতে পারলো মহিলাটি খুবই জ্ঞানি এবং অপরিমিন শক্তির অধিকারী ইরফান তাকে বলেছিলো এই মহিলার কথা যে কিনা এই সম্পূর্ণ প্রেমনগর (পাহাড়ের নাম) দেখাশোনা করে এবং তিনি নিজে ও খুবই জাগ্ৰত শক্তির অধিকারী।। ইরফান মহিলাটির নাম তামজিদা বললায় সে ভেবেছিলো কোনো এক যুবতী হবে কিন্তু না।।।আয়ানার ভাবনার সুতা কাটলো মহিলাটির কথায়।।।
__আমার জানা মতে ইরফান তুমি এসব পছন্দ করো না এবং কখনো আসো না আজকে আসলে যে বিবি চাইছিলো বলে এলে নাকি মুচকি হেসে।।।
মহিলাটি কিছুক্ষণ থেমে আবার বললো,,,,,,,, বলেছিলাম না তোমার কপালে পরী আছে দেখলে তো আমার কথা কখনো মিথ্যা যায় না।।।এই পারবে তোমার পাথরের মতো মনকে নরম করতে বলে আবার হাসতে লাগলো।।।
আয়ানা গোলগোল চোখে মহিলাটিকে দেখছে মহিলাটি খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। শরীরে বয়েসের ছাপ পরায় কিছুটা হিলে্ গেছে কিন্তু বেশ সুন্দরী হওয়ায় বিধায় এখনো অনেক সুন্দর লাগছে।‌আগেকার জামানার মানুষ এটা বুঝা যাচ্ছে না বেশ সুন্দর একটা কালো বোরকা আর হিজাব পরে আছে।। আল্লাহ যেনো সব নূরানী এনার মুখে ঢেলে দিয়েছেন।। আয়ানাকে উদ্দেশ্য করে বললো,,
__কী মেয়ে পাড়বে না?
আয়ানা বেকলের মতো শুধু মাথা নাড়ালো তা দেখে ইরফান বাঁকা হেসে আয়ানার হাত ধরে মহিলাটির থেকে বলে সামনে এগোতে লাগলো।।।

__বিশাল বড় লাভ ট্রি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আয়ানা ইরফান আর তাদের কিছু দূরে তাদের গার্ড।।।আয়ানা হা করে তাকিয়ে আছে গাছটার দিকে দুনিয়ার কিছু যেনো তাঁর হুঁশ নেই।। বিশাল বড় গাছটা অনেক বয়স হয়েছে শিকল ডাল পাল কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কিন্তু তবুও কী অসাধারণ গাছটি চিরিচিরি পাতা গুলো বাতাসের কারণে দোল খাচ্ছে।।গাছটায় মুড়িয়ে রেখেছে সাদা কাপড় আর নীল রঙের সুতা দিয়ে।।। গাছের ডালপালা গুলো একটু ও ফাঁকা নেই বাধা বাকি।।।গাছের বেশ কিছু উঁচু ডালে সাদা জোড়া পাখির খাঁচা।।আয়ানা হাত দিয়ে গণে দেখলো দশ থেকে পনেরটার মতো হবে।।পাখি গুলো কিচিরমিচির করে বেশ মুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে।।সবাই দূর থেকে পাখি গুলোকে দেখছে কেউ চোখ বন্ধ করে কিছু বিরবির করছে একেক জন একেক রকম কাজ করছে।।।।গাছটি সাদা আর নীল রঙের কাপড় মুড়ানোর এক বিশেষ উদ্দেশ্যে হলো এখানকার যে মুরিদ ছিলো সে সবসময় সাদা কাপড় পরিধান করতো আর তাঁর প্রেয়সী তাঁর সাথে মিল রেখে নীল রঙের কাপড় পরিধান করতো কারন নীল রং ভালোবাসার প্রতীক আর তাই গাছটা এবং এখানকার প্রত্যেক জিনিস নীল সাদায় সজ্জিত করা হয়েছে।।।।

__কী ভালো লেগেছে তোমার?আয়ানাকে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো ইরফান।।
__জ্বী খুব! ধন্যবাদ বলে মুচকি হাসলো আয়ানা।।
ইরফান ও বিনিময়ে হেসে আয়ানাকে নিয়ে গাছটির একদম কাছে এগিয়ে গেলো সেখানে জায়গায় জায়গায় আগরবাতি জ্বলছে আর আতরের খুশবু ছড়িয়ে আছে।।আয়ানা জোরে নিঃশ্বাস টেনে নিলো ভেতরে।। ইরফান আর আয়ানা কিছুক্ষণ গাছটির দিকে তাকিয়ে দেখলো।। দুজন গার্ড এসে তাদের পাশে দাঁড়ালো একজনের হাতে ফলের ঝুড়ি সে এইগুলো গাছের নিচে রাখলো আরেকজন এর হাতে আগরবাতি নীল সাদা কমিনিকেশন স্লিক র্জজেটের কাপড়ের লে্ইস আরো কিছু জিনিস আছে যা আয়ানা জানে না।‌‌।। ইরফান থলি থেকে আগরবাতি প্যাকেট ছিঁড়ে আগুন জ্বালিয়ে গাছের কোটরায় একটি মাটির পাত্রে রেখে দিলো।।। ইরফান আয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,,,,
__এটাতে উইস করতে হবে তুমি তোমার চোখ বন্ধ করো তারপর উইস করবে এখানে কাজ শেষ করে আমরা সম্পূর্ণ জায়গা ঘুরবো কেমন তারপর মাজার শরীফে নামাজ আদায় করবো আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বলে মুচকি হেসে আয়ানাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে নিজে ও পাশে দাঁড়ালো।।আয়ানা ইরফানের কথা শুনে চোখ বন্ধ করে উইস করছে।।। বেশ কিছুক্ষণ উইস করার পর আয়ানা নিজের মনে থাকা অজানা কিছু প্রশ্ন মনে মনে আওড়াতে লাগলো।।। চোখের সামনে শুধু বারবার ইরফান ভেসে উঠছে আর তাদের বিয়ে একসাথে থাকার মূহুর্ত ইরফানের কেয়ারিং আরো অনেক কিছু।।।আয়ানা চোখ খুলে পাশে ইরফান কে তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে বললো,,
__আপনি উইশ করলেন না যে?
__আমার সব উইশ তো তোমাকে ঘিরে নতুন করে আর করতে হবে না তো কী উইশ করলে?আয়ানার কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো।।
__জ্বী উইশ বলতে নেই। মিনমিন করে বললো আয়ানা।।
ইরফান বেবি স্মাইল দিয়ে আয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বললো,,
–আচ্ছা ঠিক আছে এখন দাগা বাঁধতে হবে।।।
__আমি বাঁধবো।আয়ানা উত্তেজিত হয়ে বললো।।
ইরফান আয়ানার দিকে ভ্রু নাচিয়ে মুচকি হেসে বললো,,
__তুমিই করবে বলে আয়ানার হাতে কাপড় দিয়ে দেয় আয়ানা মুচকি হেসে একদিক ওদিক দেখতে লাগে কোথায় বাঁধবে কোথাও একটু পরিমাণ ও ফাঁক নেই।আয়ানা অসহায় দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকায়! ইরফান মুচকি হেসে আয়ানার কোমরে হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে উপরে দিকে উঠায় আর বলতে থাকে,,,
__আমাদের ভালোবাসা সবার উপরে এবং ব্যাতিক্রম থাকবে মেরি জান।।।
আয়ানা প্রথমে ভয় পেলে ও ইরফানের সাপোর্টে গাছের মোটা ডালে ধরে খুব সুন্দর করে শক্ত করে কাপড় টা বেঁধে দেয় এর সাথে অন্য কোনো কাপড় বাঁধা নেই সাথে একটা খাঁচা আছে যাতে একজোড়া কপোত কপোতী তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে আয়ানা মুচকি হেসে পাখির খাঁচা টা আলতো হাতে নাড়িয়ে দেয়।।।।। ইরফান আয়ানার কাজ হয়ে গেলে তাকে নিচে নামিয়ে দেয় তারপর আয়ানাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,,,
__এবার খুশি তো মেরি জান!
__জ্বী অনেক।।।।
ইরফান আয়ানাকে নিয়ে এইখানের আশেপাশে ঘুরে সামনে এগোলো আয়ানা শুধু তখনের চোখ বন্ধ করার পরের দৃশ্য গুলো নিয়ে ভাবছে।।।।বেশ কিছু পথ যাওয়ার পর মাজারের কাছে পৌঁছালো।। মাজারের ভেতরে ঢুকার সময় একজন মহিলা আতর গোলাপ জল ছিটিয়ে দিলো তাদের উপর অন্যজন ময়ূরের পালক দিয়ে তৈরি ঝাড়ু বিশিষ্ট জিনিসটা আয়ানার গায়ে লাগানোর আগে ইরফান হাত দিয়ে বাঁধা দিতে লোকটি মাথা নত করে আজ্ঞা জানালো।। ইরফান আয়ানাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।

__সাদা টাইলস বিশিষ্ট একটা বিশাল কক্ষের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে ইরফান আর আয়ানা।। সাদা টাইলস দিয়ে সারা মাজারের ভেতরের অংশ আবৃত। বাহিরে যতোটা সুন্দর ভেতরে এর চেয়ে দ্বিগুণ সুন্দর।।। মনে হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশ করেছে।। অপরূপ সুন্দর খুশবু নাকে ভারি খাচ্ছে।।আয়ানা চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখছে।।। ইরফান এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আর অন্যহাতে মোবাইলে কথা বলছে আয়ানার দিকে ও তাকাচ্ছে।। দূর থেকে তাদের এই দৃশ্য তামজিদা দেখছেন।।।আয়ানা তাঁর দিকে তাকাতেই তিনি তাকে তাঁর কাছে আসার জন্য ডাকলো।।আয়ানা ইরফানের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ইরফান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কী হয়েছে?আয়ানা তামজিদার দিকে তাকাতেই ইরফান ও সেই দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তারপর কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় আর চোখে ইশারা করে যেতে।।আয়ানা হাঁসি মুখে তামজিদার দিকে এগিয়ে যায়।।। তামজিদা তাদের থেকে কয়েক কদম সামনে।।

__সালাম তামজিদা! ধীরে গলায় বললো আয়ানা।।
__সালাম!কী এতো ভাবছো গো মেয়ে। মিষ্টি হেসে আয়ানাকে বললো।।।।
__আ-আমি কিছু ভাবছি না তো।।। কিছুটা তোতলিয়ে বললো।।।
আয়ানার কথা শুনে মুখের হাসি আরো চওড়া করে বললো।।।
__খুবই অবুঝ তুমি! নিজের মনের কথা শুনতে চেষ্টা করো এতো ভাবলে কী চলে।।যা প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো তাই সত্যি তুমি তা মিথ্যা করতে পারবেনা ভালো হবে তা মেনে নেও কিসমতের উপর আমাদের কারোর হাত নেই সব মালিকের (আল্লাহর) তৈরি উপরের দিকে হাত তুলে।।‌‌
আয়ানা চুপচাপ তামজিদার কথা গুলো শুনছে।। পেছনের দিকে ঘুরে দেখলো ইরফান তাঁর দিকে তাকিয়ে মোবাইলে কথা বলছে।।আয়ানা আবার তানজিদার দিকে তাকালো।।তানজিদা আবার বলতে শুরু করল,,

__শুনো মেয়ে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ ঝামেলা সবই থাকবে তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামানো ঠিক না।।বয়স খুব কম তাই বুঝতে সমস্যা হচ্ছে আমাদের জামানায় মেয়েরা আরো কম বয়সে বিয়ে হতো ওঁরা কিন্তু খুব ভালো সংসারের হাল ধরতে পেরেছে।।সব কিছু বুঝতে শিখো এটাই তোমার তাগদির যা মালিক ঠিক করে দিয়েছে।।স্বামীর পাঁজরের হাড় দিয়ে স্ত্রী কে তৈরি করা হয় , জম্মের আগে থেকেই মালিক সব ঠিক করে রেখেছে তাই চাইলে ও কেউ বদলাতে পারবে না।।। তাই বলছি মনের উত্তর গ্ৰহন করো পিছু টান অতীত ভুলে গিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করো।একটা ভালোবাসার ঘর বাঁধো ।।।।।। ভালোবাসায় পারে পাথরের বুকে ফুল জম্মাতে।আলোর এতো কদর কিন্তু অন্ধকার আছে বলে তাই অন্ধকার কে ভালোবাসো আর নিজের আলোয় আলোকিত করো তাঁর জীবন।। জীবনের মানে ভালোবাসা, ভালোবাসা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ।।। খুব প্রয়োজন তোমার ভালোবাসা তাঁর জন্য ইরফানের দিকে ইশারা করে।।।‌
আয়ানা ঢোক গিলে মাথা নিচু করে নিলো তাঁর মনের সব ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে।। তামজিদা মুচকি হেসে আয়ানার গালে হাত রেখে বললো,এতো ভেবো না মেয়ে সব খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে। তোমার জীবনে অনেক সুখ লিখা আছে কষ্ট তোমাকে ছুঁয়ে ও দেখতে পারবে না।। লেখিকা সুমাইয়া আক্তার মিম।।

__ইরফান কথা শেষ করে ওদের দিকে এগিয়ে এসে পুনরায় আয়ানার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।। তামজিদা মুচকি হেসে নিজের হাতে থাকা পাত্র থেকে তাদের উপর হালকা পানি ছিটিয়ে দিলো আর বললো,,,,

__দুজনে গিয়ে নামাজ সম্পূর্ণ করো।।। খুশি থাকো সারাজীবন।।।বলে উনি ওখান থেকে চলে গেলো।।। ইরফান আয়ানার হাত ধরে মাথার ঘোমটা ঠিক করে নামাজের স্থানের দিকে এগিয়ে গেলো পেছনে গার্ডদের বাহিরে অবস্থান করতে বলে গেলো।।।।আয়ানা ইরফানের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে আর মনে মনে সব কথা গুলো সাজাচ্ছে।।। তাঁর উত্তর সে পেয়ে গেছে কিন্তু কিছু উত্তর বাকি আছে যা শুধু ইরফানের কাছে আছে।।।।
ইরফান আয়ানাকে কিছু ভাবতে দেখে থেমে যায়।।আয়ানার দিকে ঘুরে আয়ানার হাত ধরে নিজের আরেকটু কাছে এনে বললো,,,

__কী হয়েছে?ভ্রু নাচিয়ে।।
__না মানে কিছু হয়নি। মাথা নিচু করে।।
__ওকে ঠিক আছে চলো।।বলে আয়ানাকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।।
ইরফান আর আয়ানা ভেতরে প্রবেশ করতে একজন ইমাম তাদের নামাজের স্থান দেখিয়ে দিলো।। দুজনে আবার ওযু করে এসে একই সাথে নামাজে বসলো।‌।
বিয়ের দিন রাতে স্বামী স্ত্রীকে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করতে হয় কিন্তু সে সুযোগ তাদের হয় নি।। আজকে এখানে নতুন করে নামাজের ওসিলায় তাদের নতুন এবং সুন্দর ভালোবাসা সম্পূর্ণ জীবন আল্লাহ কবুল করে নিবেন তাঁদের অজান্তেই।।।

———-
হ্যালো সোহেব তোমাকে যে মেয়ের ছবি পাঠানো হয়েছে তাকে আমার চাই।। কাশ্মীরের যেখান থেকে পারো তাকে আমার সামনে হাজির করবে।।এই আমার কাছে অনেক মূল্যবান একটা জিনিস বাঁকা হেসে হাতের ছবিটির দিকে তাকিয়ে লোকটি বললো।।।

__ওকে বস কাজ হয়ে যাবে। আমাদের লোক রাতের মধ্যে কাশ্মীর পৌঁছে যাবে।।‌

__খুব সাবধান! ওইখানের বাদশা যেনো জানতে না পারে। তাহলে বুঝতে পারছো একজনের ও প্রান ফিরে পাবে না।।।

__জ্বী জ্বী বস। কিছুটা ঘাবড়িয়ে।।।
অপরপাশের লোকটি টুট করে কল কেটে দিয়ে মেয়েটির ছবির দিকে হিংস্র ভাবে তাকিয়ে বললো,,
তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আয়ানা আহাম্মেদ।।। বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো লোকটি।।। লোকটি হাঁসি থামিয়ে রাগি গলায় বলতে লাগলো ,,, তোমাকে মরতে হবে বেবি।। তোমার কোনো বিরাট দোষ নেই তোমার একটাই দোষ তুমি ইরফান খানের স্ত্রী।।। আমার ভাইয়ের খুনির বউ তুমি বলে জোরে চিৎকার করে আয়ানার ছবিটা ফেলে দিলো লোকটি।।।।।।।।

__বস আপনার চাঁচা নিজাম উদ্দিনকে শত্রু পক্ষের লোক খুন করেছে। আজকে সকালে এয়ারপোর্টে তাকে মাডার করা হয়েছে।।।
__কালকে ভাইয়ের জন্য দোয়া পড়ানো হবে চাঁচার জন্য ও ব্যবস্থা করো বলে লোকটি চলে যায়।।।
লোকটি চলে যেতে একজন লোক বললো,,
__দেখলি তো চাঁচা মারা গেছে মাথা ব্যথা নেই কিন্তু চাচাতো ভাই মরেছে সেই কবে তা নিয়ে পরে আছে।।।আর যার সাথে পাঙ্গা নিয়েছে তাঁর পায়ের কাছে ও পৌঁছাতে পারবে না। মরনের ভয়ে এইখানে আজ দুই বছর আত্মগোপনে করে রেখেছে।।একহাত খুয়িয়ে এখানে এসে লুকিয়ে আছে বলে লোকটা হাসতে হাসতে চলে গেলো তাঁর সাথের লোকটা ও।।।

নিজাম উদ্দিনের ভাতিজা লন্ডনের গোপন ছোট খাটো ডন।।।বাবা চাচার মতো বেআইনি ব্যবসা মেয়ে বাজি সব খারাপ কাজে আসক্ত।। ইরফানের হাতে বাবা চাচাতো ভাই মারা গেছে সাথে নিজের একহাত ইরফানের ছুড়ির আঘাতে শেষ হয়েছে তারপর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের অসৎ কাজ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু কখনো সফল হয়নি।। নিজের অসৎ পথের টাকা উরিয়েছে ইরফানকে মারার জন্য কিন্তু বিফল হয়েছে এখন ইরফানের দুর্বলতা জেনে গেছে তাই সেই ফন্দি আঁটছে।।সে ইরফানের এক চুলও বাঁকা করতে পারবে না তাই আয়ানাকে শেষ করে ইরফান কে জীবিত রেখে মৃত্যু দিতে চাচ্ছে।সে জানে আয়ানা ছাড়া ইরফান নিঃস্ব তাঁর কোনো অস্তিত্ব ও খুঁজে পাওয়া যাবে না।।
কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব।




#To_Be_Continued…….🌼
#Happy_reading ..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here