পতিতা বউ – পর্ব ৪৫

0
484

#পতিতা_বউ

৪৫তম পর্ব

অনুর সাজ শেষ। বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে গায়ে জড়ানো ডাইমন্ড কাট এর জুয়েলারি সব জুয়েলারির মাঝেই কালো একটা স্টোন। ডার্ক গ্রীন এএ উপর কালো কারুকার্য করা লেহেঙায় আরো অপরূপ লাগছে ওকে।
ফাইজা বেগম চোখের কোণা থেকে কাজল নিয়ে অনুর কানের পেছনে লাগিয়ে দিলেন। অনু হুট করেই ফাইজা বেগম কে জড়িয়ে ধরলো। ফাইজা বেগম পরম যত্নে অনুর গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

>>মন খারাপ করিস না। আজকে থেকে তুই আমার মেয়ে হয়েই থাকবি। আমার নুহা আর তুই আমার দুইটা মেয়ে।

অনু নাট টেনে আরো আঁকড়ে ধরলো ফাইজে বেগম কে। চোখের পানি গুলো চেপে নিলো। হঠাৎ তার হাতের দিকে নজর পড়তেই সে ফাইজা বেগম কে ছেড়ে সরে এলো। ফাইজা বেগম বললেন,

>>তুই এখানে বস। আমি গিয়ে রেডি হয়ে নিই।

>>আচ্ছা আম্মি।

ফাইজা বেগম যেতেই অনু আলমারি খুলে কিছু খুঁজে নিলো কিন্তু পেলো না। কিছুক্ষণ চিন্তা করতেই পরক্ষণে মনে পড়ে গেলো তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু কোথায়।

সোহান মাত্রই গোসল সেড়ে বেড়িয়েছে।
পড়নে শুধু স্যুটের প্যান্ট টাই। খালি গাঁয়ে চুল মুছতে ব্যস্ত সে। হুট করেই অনু রুমে ঢুকে সোহান কে এমন অবস্থায় দেখে কিছু টা বিব্রতবোধ করলো। তারপর আলমারি খুলে কিছু খুঁজতে লাগলে সোহান বললো,

>>কি খুঁজো?

>>এইতো পেয়ে গিয়েছি।

>>কি?

অনু সোহানের সামনে একটা ব্রেসলেট উঁচিয়ে ধরে। সোহান সেটি হাতে নিয়ে দেখে। প্লাটিনাম এর ব্রেসলেট এতে অনুর নাম খোদাই করা। অনু বলে,

>>বাবার দেওয়া শেষ কিছু তাই আমি চাই বাবার দোয়া হিসেবে এটি আমার হাতেই থাকুক আজকের দিনে।

ব্রেসলেট টির দিকে চোখ রেখে অনু বললো। কথাটা বলতে গিয়ে অনুর স্বরটা কেমন যেন ভারী হয়ে এলো। চোখজোড়া ভরে এলো।
সোহান পরম যত্নে সেটি অনুর বামহাতে পড়িয়ে দিলো।

এরপর সোহান গিয়ে শার্ট টা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বোতাম লাগাতে নিলেই অনু এসে বললো,

>>মে আই?

অনুর থেকে এমন কিছু সোহান মোটেও আশা করেনি। খুশির চোটে সোহানের মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুলো না সে শুধু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। সোহানের সম্মতি পেয়ে অনু বোতাম লাগাতে শুরু করলো। অনুর বোতাম লাগানো শেষে সোহান শার্ট ইন করে নিলো। অনু বেশ যত্নে স্যুটের কোটটা পড়িয়ে দিলো সোহানকে। সোহান মুগ্ধ হয়ে অনুকে দেখতে ব্যস্ত। বউ সাজে অপরূপ লাগছে অনুকে। অনু এটা ওটা করার সময় ওর চুড়ির ঝংকার যেন সোহানের বুকে ঝড় তুলছিলো। অনুর কপালে একটি উষ্ণ পরশ দিতে পারলে মন্দ হতোনা। সোহানের চোখ অনুর বেকে থাকা টিকলি টায় আটকে গিয়েছে। কোট পড়ানো শেষে অনু বললো,

>>বেডে গিয়ে বসুন।

সোহান চুপচাপ গিয়ে বসে পড়লো। অনু সোহানের মাথা টা একটু ভালোভাবে মুছে চুলে জেল লাগিয়ে চুল গুলো সেট করে দিলো। সোহানের হাতে ওয়াচ টা পড়িয়ে দিলো,পারফিউম লাগিয়ে দিলো। অনুর নিজের ও কেনো জানি বেশ ভালো লাগছে। কেমন যেন বউ বউ লাগছে নিজেকে। “এভাবে রোজ রেডি করিয়ে দিতে পারলে মন্দ হয়না” মনে মনে ভাবে অনু।

সোহান উঠে দাঁড়াতেই অনু সোহানের কলার ঠিক করে দিয়ে বলে,

>>নাউ পার্ফেক্ট।

সোহানের কোটের উপর হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনু সোহানের বুকে মাথা রাখে।
সোহান শকড,
“এই মেয়ের আজ হলো কি আল্লাহ..! অতি শোকে কি মেমোরি লস হয়ে গেলো নাকি”
মনে মনে আউড়ায় সোহান।
অনু সোহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে নেয়। সোহান বেশ দ্বিধাদন্দে ভুগে তারপর জড়িয়ে ধরে অনুকে। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ ছিলো দু’জনে। অনু সোহানের বুকে মাথা রেখেই বলে,

>>আপনাকে রোজ এইভাবে রেডি করে দেওয়ার অনুমতি দেবেন?

অনুর কথায় সোহান এবার কনফার্মড অনু ওকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সোহান অনুকে ছাড়িয়ে অনুর কপালে একটি চুমু একে দেয়। তার টিকলি টি ঠিক করতে করতে বলে,

>>আমাকে রোজ রেডি করে দেওয়াটা তোমার অধিকার। এতে অনুমতি নেওয়ার কিছুই নেই বুঝলে।

>>হুম

>>আমাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছো?

সোহানের প্রশ্ন শুনে অনু আগের ন্যায় সোহানের বুকে মাথা ঠেকায় সোহান ও জড়িয়ে ধরে। এরপর অনু বলে,

>>নিজেকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছি। আপনাকে মেনে নিচ্ছি না আমি আপনাকে ভালোবাসার চেষ্টা করছি। যা হবে বৈধ ভালোবাসা। আমি আপনার বাম পাঁজরের অংশ ছিলাম বলেই আপনার সাথেই আমার জোড়া হয়েছে। বলতে গেলে মা-বাবা,ভালোবাসা সবই হারিয়ে ফেলেছি।
তবুও আমি থমকে থাকতে চাই না আর এগিয়ে নিতে চাই নিজেকে আর পাশে খুঁটি হিসেবে আপনাকে চাই। থাকবেন তো আমার পাশে?

সোহান অনুর মাথায় একটি চুমু দিয়ে বলে,

>>যতদিন বেঁচে আমি তোমার ছায়ার মতই পাশে থাকবো।

>>উঁহু ছায়ার মত পাশে চাই না কারণ অন্ধকারে ছায়া ও সঙ্গ ছেড়ে দেয়। আমার রন্ধ্রে প্রবাহমান রক্তের ন্যায় সাথে চাই আপনাকে। লাশে পরিণত হলেও যেমন রক্ত কে আলাদা করা যায়না তেমনি আপনাকেও যেন আলাদা করা না যায় আমার থেকে।

>>কথা দিলাম তুমি যেমন ভাবে চাও ঠিক সেভাবেই তোমার পাশে থাকবো।

অনু আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে সোহানকে। সাথে সোহান ও।

নুহা অনুকে খুঁজতে খুঁজতে সোহানের রুমে গিয়ে ঢুকে। সোহান নুহাকে দেখে হাত দিয়ে ইশারা করে কিছু। নুহা মুচকি হেসে দরজা টেনে দিয়ে বেড়িয়ে আসে।
কিছুক্ষণ আগে রাফির সাথে কথা হয়েছে।রাফি আয়ুশির কথা বলেছে। সাথে বিয়ের ও। নুহা মহাখুশি। রাফির গতি হবে একটা। আয়ুশির সাথে নুহার দুয়েকবার কথা হয়েছিলো।নিঃসন্দেহে খুব ভালো মেয়ে সে। রাফিকে ভালো রাখবে। এতে নুহা বেশ খুশি হয়।
এখন অনু আর সোহান কে সাথে দেখে খুশি দ্বিগুণ বেড়ে যায় ওর।
মনে মনে আল্লাহকে লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই সবার জীবন এভাবে গুছিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু পরক্ষণেই বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে ওর। নিজের পেটে হাত রেখে ভাবে তার নিজের জীবন টাই যে অগোছালো রয়ে গেলো।

চলবে…
#Razia_Binte_SuLtan

[দুঃখিত আরো এক পার্ট বাড়ানো লাগবে। সময়ের কারণে নাহয় এই পার্টেই শেষ করে দিতাম। মন্তব্য জানাবেন কিন্তু। আসসালামু আলাইকুম❤]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here