#ঘায়েল
#পর্ব_৭
#Saji_Afroz
.
.
.
নাতাশার কাছে রানবীর কথা শুনে চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো নুসাইবার।
শেষ পর্যন্ত রানবীই তাকে দেখতে এসেছে!
অন্য কেউ হলে নাহয় পছন্দ হয়নি বলে বিদেয় করতো। এখন এসব বললে রানবী যদি তার বফ এর কথা বলে দেয় বাসায়!
সর্বনাশ হবে।
কেননা নুসাইবার বফ তার ক্লাসমেট। এতো তাড়াতাড়ি তাকে বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। আবার বফ এর কথা নুসাইবা নাতাশাকেও জানায়নি। এই মুহুর্তে কি করতে পারে সে!
নুসাইবার চিন্তা দূর করে নাতাশা বললো-
রানবীর সাথে তোর বিয়ে হোক এটা আমি চাইনা।
.
খুশি হলেও নুসাইবা তা দেখালো না। গম্ভীর গলায় বললো-
ও ৪২০বলে?
-৪২০হলেও ভালো মনের মানুষ সে। আমার সাথে প্রেম করলেও কখনো খারাপ কিছু ইঙ্গিতও করেনি।
-তবে?
-দেশে ছেলের অভাব রয়েছে! আমার এক্স কেনো তোর হাসবেন্ড হবে?
-হু সেটাই।
-তো এখন সবার সামনে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবি। যা করার রানবী করবে।
-কি করবে?
-আমি জানিনা। তবে সে এই বিয়েটা হতে দিবেনা।
-হুম, তুমি যা বুঝো।
.
.
সবার সামনে এসে বসলো নুসাইবা।
তাকে দেখে সাবিনার বেশ পছন্দ হলো।
খায়রুন রিমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো-
নুসাইবা কিন্তু সুন্দরী আছে। কি বলো রিমা?
-হু।
.
বড়রা কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে সাদ্দাম উদ্দীন বললেন-
আমার মনেহয় ওদের একটু আলাদা কথা বলতে দেয়াই ভালো হবে।
.
সাবিনা সহমত প্রকাশ করলে তাদের পাঠানো হয় একটি আলাদা রুমে।
রুমে প্রবেশ করেই মাথার উড়নাটা ফেলে রানবীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নুসাইবা বললো-
মেয়ে আর পাওনি?
-আমার কোনো শখ নেই তোমাকে বিয়ে করার।
-তো এসেছো কেনো!
-ওয়েট ওয়েট! তুমিও এতো সেজেগুজে গিয়েছো কেনো?
-আমি তো মেয়ে মানুষ। নিরূপায় বলে…
-আমিও আপুর কথা রাখতে এসেছি।
-এখন কি হবে!
-মাথা গরম করে লাভ নেই। ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে।
-হুম।
-তোমার তো বিয়ে দিতে বাসায় উঠে পড়ে লেগেছে তাইনা?
-হু! ফুফুর শরীরটা খারাপ বলে মা বাবা তার বাসায় গিয়েছেন। নাহলে আজই এনগেজমেন্ট সেরে ফেলতে বলতো।
-তো তোমার বফ কে বলো প্রস্তাব নিয়ে আসতে।
-এটাই তো সমস্যা। সে কিভাবে আসবে! সে পারবেনা এই বয়সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে।
.
নুসাইবার কথা শুনে হেসে উঠলো রানবী।
রানবীর হাসি দেখে কেঁদে উঠলো নুসাইবা।
কাঁদতে কাঁদতেই বললো-
আমি ওকে ভালোবাসি অনেক।
.
রানবী খানিকক্ষণ নুসাইবার দিকে তাকানোর পর মৃদু হেসে বললো-
কিছুই করার নেই এখন। বিয়েটাতে রাজি হতেই হবে।
.
.
.
নুসাইবা কে নিয়ে নিচে নেমে এলো রানবী।
সকলের দৃষ্টি তাদের দিকে।
সাবিনা রানবীর উদ্দেশ্যে বললো-
কেমন লাগলো নুসাইবা কে?
.
রানবী জবাব দিলো-
ভালো। আমি এই বিয়েতে রাজি।
.
কথাটি শুনে সাবিনা ও সাদ্দাম উদ্দীন খুশি হলেও নাতাশা খুশি হতে পারলোনা। এদিকে রিমা ও খায়রুনও পড়ে গেলো মহা ভাবনায়।
নাতাশা সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো-
রানবী রাজি হলে হবে নাকি! না মানে, নুসাইবার মত টাও জানা দরকার।
নুসাইবা তুই বল? এই বিয়েতে তুই কি রাজি?
.
মাথা নিচু করে নুসাইবা জবাব দিলো-
হুম, আমি রাজি।
.
.
.
ইপশিতার সাথে ড্রয়িংরুমে মাহিম এগিয়ে আসতেই সকলে হাততালি দেয়া শুরু করলো।
ইপশিতা দেখতে পেলো, তার মা বাবাও হাততালি দিচ্ছে!
সে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
ধন্যবাদ।
.
তার মা তার কপালে চুমু একে দিয়ে বললেন-
মায়েরা কখনো সন্তানের খারাপ চায়না। মাহিমের মতো ছেলে ও তার পরিবারের কাছে তোকে দিতে আপত্তি নেই আমার। একবার বলে দেখতেই পারতিস, তোর মনের কথা।
.
মাথাটা নিচু করে ইপশিতা বললো-
ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
.
মাহিমের মা আফরোজা ইসলাম তার ব্যাগ থেকে এক জোড়া বালা বের করে, ইপশিতার উদ্দেশ্যে বললেন-
এদিকে আসোতো মা। এগুলো পরিয়ে দিই তোমায়।
.
ইপশিতা যেনো এসব বিশ্বাস করতে পারছেনা। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে সে।
মাহিমের দিকে তাকাতেই সে ইশারা করলো, তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য।
ইপশিতা মৃদু হেসে আফরোজা ইসলামের পাশে এসে সালাম করলো তাকে।
আফরোজা ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন-
সুখে থাকো মা।
.
দুচোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ইপশিতার।
নিজেরমনে বলছে সে-
এসব যেনো স্বপ্ন না হয়!
.
.
.
আজ ক্লাসের শুরুতে রানবীর দেখা পেলোনা পুনম।
ক্লাসের শেষেও তার বন্ধুদের দেখতে পেলেও, রানবী কে দেখলোনা সে।
রানবীর কি শরীর খারাপ?
নিজেরমনে প্রশ্নটি করেই হাত দিয়ে মাথায় একটা বাড়ি দিলো পুনম।
রানবী কে নিয়ে সে ভাবছে কেনো!
উফফ… ভাবতেই পারে। ভাই বন্ধু বানিয়েছিলো তাকে।
তাই ভাবনায় আসাটা স্বাভাবিক।
কিন্তু কিভাবে তার খবর নিবে এখন? তার বন্ধুদের সাথে কথা বলাটা কি ঠিক হবে?
কেনো হবেনা! একটা মানুষ আরেকটা মানুষের খবর নিতেই পারে।
কথাটি ভেবেই রনিদের কাছে এগিয়ে এসে পুনম বললো-
ভালো আছেন ভাইয়ারা?
.
সকলে একইসাথে জবাব দিলো-
জ্বী।
.
আকিব জিজ্ঞেস করলো-
তুমি ভালো আছো?
-হুম। রানবী কে দেখছি না যে?
-তোমার ভাই বন্ধু?
-হুম। রানবীর কথাই বলছি।
.
-আমি এখানে।
.
পেছনে ফিরে রানবী কে দেখে খুশি হবার বদলে লজ্জা পেলো পুনম।
এমনিতে তাকে ভাইয়া ডাকা ছাড়া কথাই বলেনা সে৷ আজ কেনো তার নাম ধরে খোঁজ নিতে আসলো!
রানবীর দিকে তাকিয়ে পুনম বললো-
না মানে ভাই এর সাথে বন্ধুও তো বানিয়েছিলাম, তাই আর কি…
.
তাকে থামিয়ে রানবী বললো-
কোনো সমস্যা নেই। আমাকে মিস করছিলে বলেই তো খুঁজছো।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে পুনম বললো-
মোটেও মিস করছিলাম না।
-তাহলে?
-এমনিতেই খবর নিচ্ছিলাম।
-আমার জায়গায় আর কেউ হলে কি খবর নিতে? যেমন আকিব, বাদশা বা রনিকে না দেখলে কি খবর নিতে?
.
আমতাআমতা করে পুনম জবাব দিলো-
হু নিতাম!
-ওহ ভালো।
-আচ্ছা আসি।
.
পুনম এগিয়ে যাচ্ছে, রানবী তাকে থামিয়ে
বললো-
একটু ভেবে দেইখো, অন্য কেউ হলে খবর নিতে নাকি।
.
পুনম মুচকি হেসে চলে গেলো।
রানবী আকিবের কাধে হাত রেখে বললো-
তোমাকে একদিন না দেখে যার মনে চিন্তা হবে, বুঝতে হবে তার মনে তোমার জন্য কিছুনা কিছু তো আছেই। এটা কি জানিস?
.
আকিব বললো-
কি?
-সাইকোলোজিকাল ফ্যাক্ট এবাউট লাভ!
.
(চলবে)
See Translation