জীবনসঙ্গী
পর্ব ১০
writer Tanishq Tani
শাশুড়ি মা পুরো বাড়িটা বাড়ির চাকর বাকর সহ পরিবারের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো,,
হুট করে ঘরোয়াভাবে বিয়েটা হওয়াতে কেউ এ বিয়ের বিষয় টা জানে না,,
রান্নাঘরে অরুনা চৌধুরী, ছোট চাচিমা সুমাইয়া চৌধুরী, ফারিহা, সবাই মিলে গল্প করছে আর শশীকে অনি সহ এ বাড়িতে কে কেমন সব বলছে,,,
আচ্ছা ভাবি তুমি তো ভালো বিরিয়ানি আর ভুনা খিচুরী রান্না করতে পারো তাই না?
ভালো হয় কি না জানি না,,তবে পারি রান্না করতে,,,কিন্তু তুমি কি করে জানলে,,,
জানি জানি,,আমার কাছে জাদু আছে,,,আরো অনেক কিছু জানি শুনবা?শশীর হাতে মাথা ঠেকিয়ে,,
আন্দাজে,, কপাল কুচকে তাকায় শশী,,
বিশ্বাস করলে না তো তোমার ননদীনিকে,,,
তাহলে প্রমান দেই
তুমি রোমান্টিক গল্পের চেয়ে এডভেঞ্চার টাইপ গল্প বা মুভি লাইক করো,,তুমি হরর মুভিওলাইক করো,,যদিও ঐ মুভির ভয় একসপ্তাহ তোমার মধ্যে থাকে,,আমি এটাও জানি স্কুল লাইফে একদিন কেনো ফ্রেন্ডসের থেকে গল্পের বই নিয়ে বাসায় এসে স্কুল ড্রেস চেঞ্চ খাওয়া দাওয়া ভুলে ঐ অবস্থায় গল্পের পুরো বইটা পড়া সন্ধ্যা দিকে শেষ করো,,,
হ্যাঁ,, এসব তুমি কি করে জানলে,,অবাক তাকায় ফারিহার দিকে,,
বলছিলাম না,,আমার কাছে জাদু আছে,,,
শশীর অবাক লাগে এই মেয়ে এতো কিছু কি করে জানলো,,হয়ত মা বা কাজিনদের কেউ বলেছে,,,
বলো না ফারিহা কি করে জানলে এসব,,
ওমা,,বললাম ই তো,, জাদু দিয়ে,,তোমার কিছু জানার প্রয়োজন হলে বইলো আমি জাদু দিয়ে সব বলে দেবো,,
শশী ভাবে সত্যি কি জাদু টোনা এসব আছে নাকি,,সব ভূয়া কথা,,ফারিহা নিশ্চয়ই কারো কাছ থেকে শুনে এখন ভাব নিচ্ছে সব জানি জাদু দিয়ে,,,বেক্কল মাইয়া হিহিহি
হুম ভালো হয়েছে,,এতো জানা তো ভালো না ননদীনি,, বেশি জানলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেবে,,ফিসফিস করে ফারিহা কে বলে শশী,,,
সত্যি বলছ,,আলহামদুলিল্লাহ,, ভাবি তোমার মুখের কথায় আল্লাহ রহমত দিক,,
এ্যা,, এই তুমি খুশিতে লাফাচ্ছ কেন? পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি,,,
হ ভাবি,,তুমি যেই কথা বলেছ পাগল না হয়ে কই যাবো বলো,,আমার এখনি ভেতরে কুচ কুচ হোতাহে বিয়ের কথা শুনে,,,
ফারিহা,,তুমি বিয়ের কথা শুনে এমন করছ,, সিরিয়াসলি,,কোনো মেয়ে যে বিয়ের কথা শুনে এমন লাফাতে পারে এই প্রথম দেখলাম,,পারোও তুমি,,,
আরে ভাবি,,তুমি আসলেই কিছু বুঝো না,,বিয়ে মানে কত্ত আনন্দ,, ভরপুর রোমাঞ্চ,, আমি তো রাতুল কে বলেছি বিয়ের পর আমাকে দার্জিলিং নিয়ে যেতে,,ঠান্ডা ঠান্ডা মৌসুমে দুজন এক চাদরে,,উই,, কি খুশি লাগছে,,শশীকে জরিয়ে ধরে ভাবনায় হারিয়ে যায় ফারিহা,,
কি রে ফারিহা,,এভাবে জরিয়ে আছিস কেন শশীকে,,
কই ছোট মা,,আমি তো আদর করছিলাম আমার ভাবিকে,,তাই না ভাবি,,, আই লাবু ভাবি,,চোখ টিপ দিয়ে বলে ফারিহা,,,
এই ফারিহা আর ফারিহার ভাই দুটোই দেখি এক ধাঁচের গড়া, হবেই বা না কেন রক্তের ভাইবোন না,,লজ্জা শরম বেচে খাইছে,,
এই অনি কলেজে জ্বালিয়ে মারছিলো শশীকে,,এতে প্রেমভাব কই পায় ভাইবোন দুটো আল্লাহ জানে,,,রোমাঞ্চ মনে হয় মাথার মধ্যে গিজগিজ করে,,,
অনির সাথে প্রথম দেখা হয় রিমির সুবাদে,,
শশীদের কলেজের সামনের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলো আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ অনিকেত,,,
বাসকেট চ্যাম্পিয়ন ছিলো কলেজের,,বাস্কেট টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতা দেখতে রিমি একপ্রকার জোর করে ধরে কলেজের পাশের মাঠটাই নিয়ে যায় শশীকে,,,
শশীর এসব খেলা একদম ভালো লাগে না,,সব গুলো ছেলেকে হা করে গিলছে মেয়েগুলে,,বিশেষ করে শশীদের গ্রুপের সবচেয়ে ডঙি স্মার্ট মেয়ে মিলা,,
একটু পর পর একটা ছেলেকে মিলা অনি মাই বেবি বলে চিৎকার করছে,,, ছেলেটা অন্যসব ছেলেগুলে থেকে একটু বেশিই ড্যাসিং,, ৬ ফুটের কাছাকাছি,,সুঠাম দেহ,,,মাংসপেশি গুলো নিয়ে দেখে বোঝা যায় সেই লেভেলের জিম করে,,,
রিমির কানটা ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে এই ডঙির ডং দেখে,,
শশীরে আমার তো মনডা চাচ্ছে লাত্থি দিয়ে মিলার বাচ্চারে মাঠে ফালাই দিতে,,
ঐ ছেলে যে ওকে পাত্তাও দিচ্ছে না সেদিকে মহারানীর কোনো হুশ নেই বেহায়ার মতো অনি মাই বেবি ডং,,ভেঙছি কেটে বলে
বেশি ক্ষন বসে এই মিলা আর বোরিং বাস্কেট বল খেলা দেখে বিরক্ত লাগে শশীর,,
ঐ রিমি তুই যাবি না আমি একাই যাবো,,,
এমন করছিস কেন,,থাক না একটু খেলা তো প্রায় শেষ ই,,
তুই থাক,,
শশী রিমির উপর রাগ করে উঠে চলে আসে মাঠ থেকে,,
মাঠ থেকে কিছুদূর ফাঁকা গলি দিয়ে হেটে যাচ্ছে শশী
ভর দুপুর সময় পুরো গলিটা ছমছমে লাগছে,,সবাই খেলা দেখতে যাওয়ায় গলিটা এতো ফাঁকা,, শটকাট তাড়াতাড়ি করে বাসায় যাওয়ার জন্য মেইন রোড দিয়ে না গিয়ে এই রাস্তায় আসছে,,,
অনেক দূর আসার পর শশীর মনে ভয়টা বেশিই চেপে গেছে,,
৫ মিনিটের রাস্তা চলে এসেছে,,কিন্তু ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে,, রিমির উপর আর ঐ ডঙির উপর বিরক্ত হয়ে কি মনে করে যে এ রাস্তায় এলো খেয়ালি নাই শশীর
আর রিস্ক না নিয়ে আবার কলেজ মাঠের দিক উল্টো পথে হাটা শুরু করলো,,
৫ মিনিটের রাস্তা ৩ মিনিটেই শেষ করে মাঠে এসে দেখে সব ফাঁকা,,,
একি গেলো কই সব,,
ঐ রিমি রিমি,,,
এদিক ওদিক উঁকি দিয়ে খুজতে থাকে রিমি কে,,হঠাৎ পেছনে ঘুরতেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগে,,
উপরে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে আধা হয়ে যায়,,,অনিকেতের বুকে হাত দিয়ে শশী দাড়িয়ে আছে,,তাড়াতাড়ি করে অনিকেতের বুক থেকে হাত সরিয়ে দূরে সরে যায়,,,
অনিকেত স্পিডের ক্যান থেকে চুমুক দিয়ে খেতে থাকে আর শশীর দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে ধীর পায়ে এগোয়,,,
দেখুন সামনে আসবেন না একদম,,আমি কিন্তু চিল্লাবো,,,
ভাই ভাবি তো দেখি চিল্লাবে বলে,,ও ভাবি চিল্লাইয়েন না,, আমার ভাইয়ের মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে তাহলে,,পেছনে দাড়িয়ে অনির বন্ধুরা মজা করতে থাকে,,,
অনি পেছনে তাকাতেই,,
শশী এই সুযোগে দেয় ভো দৌড়,,
গেটের সামনে গিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে ঠিক ঐ ভাবে এখনো অনিকেত তাকিয়ে আছে,,,
গুন্ডা বদমাশ সবগুলো,,,বলে আবার দৌড়ে চলে যায় সামনে থেকে,,,
এরপর প্রায় প্রতিদিন অনিকেত কে শশী মহিলা কলেজের সামনে দেখতো,,,
মাঝেমধ্যে টিচারদের সাথে কথা বলার বাহানায় কলেজে ঢুকে পড়ত,,
অনিকেতের পারফিউমের গন্ধ শশী অনেকদূর থেকে চিনতে পারতো,,
বুঝতে পারতো তখন অনিকেত আশেপাশেই আছে,,
শশী নিজেও এখন অনিকেতের জন্য দূর্বলতা অনুভব করে,,যদিও প্রথম থেকেই সব মেয়েদের মতো অনিকেত কে ওর ভালোই লাগতো,,,,
কিন্তু নামেই ও শশী(চাঁদ,) বাস্তবে ও তো পৃথিবীর ধূলো,,,
একদিন মিলা এসে হঠাৎ হাতটা ধরে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো,,,
শশী অনিকেত মোটেও ভালো ছেলে না,,আমি জানি অনিকেত তোকে ভালেবাসার নামে মিথ্যা অভিনয় করছে,,ও আমার সাথেও এমন করেছিলো,,এগুলে সব ওর অভিনয়,,
বড়লোক বাবার একমাত্র ছেলে,,মেয়েরা ওর জন্য একরাত্রের বিছানার সাথী,,তারপর ও ছুড়ে ফেলে দেয় রাস্তায় তাদের,,অনেক মেয়ের জীবন ও নষ্ট করেছে,,তুই ওর ফাদে পা দিস না,,,
তোর সাথেও কি বিছানায় গিয়েছিলো অনি ভাই মিলা,,,পেছন থেকে হঠাৎ এসে রিমি প্রশ্ন করে মিলাকে
দেখ শশী,তোর বাবা নাই মামার বাড়ি আশ্রিতো থাকিস তাই বললাম তোর ভালোর জন্য
রিমির কথার জবাব না দিয়ে রিমিকে ভেংচি দিয়ে চলে যায়,,,
দেখলি কত্তবড় মিথ্যাবাদী মিলা টা,,,
মিথ্যা বলেছে তুই কি করে বুঝলি,, কারো সম্পর্কে এতোবড় কথা কেউ কখনো মিথ্যা বলতে পারে না,,,
মনে রাখিস যা রটে তা কিছুটা বটে,,,
হ তুই সব বুঝিস,,ও ইচ্ছা করে অনি ভাইয়ের নামে মিথ্যা বললো,,অনি ভাই ওকে পাত্তা দেয় না তাই,,বুঝতে পারছে তোকে ভালোবাসে তাই তোর মন বিষানোর জন্য অনি ভাইয়ের নামে মিথ্যা বলছে,,,
এসব ছেলেরা কখনো কাওকে ভালোবাসে না,,এরা শুধু মেয়েদের জীবন নিয়ে খেলে,,,
তুইও মিলার কথা বিশ্বাস করছিস,,
ঐ দিন রিমির সাথে শশীর অনেক কথা কাটাকাটি হয়,,জানের বান্ধবীটার সাথে আজ ঐ গুন্ডা অনির জন্য ঝগড়া লাগলো,,ওকে তো কোনোদিন আমি ভালোবাসবো না,,একপ্রকার জিদ চেপে যায় শশীর,,,
ভাবি কি করছ,,
ফারিহার ডাকে অতীত স্মৃতিচারন থেকে বাস্তবে ফেরে শশী,,,
আরে ভাবি কি প্লেট পুলেট ধুচ্ছ,, রাখো তো এসব,, চলো ভাইয়ার কনসার্ট শুরু হয়ে গেছে হয়তো,,,
চলো চলো,,
শশীকে টেনে ধরে ড্রইং রুমের সোফায় দুজন বসে,,
এই নাসিফ তোর শিনচ্যান বাদ দিয়ে চ্যানেল আইতে দে,, দাদাভাইয়ের গান শুরু হয়েছে,,,
সত্যি আপু,,,
নাসিফ দাদাভাইয়ের গান শোনার জন্য শিনচ্যান দেখা বাদ দিয়ে চ্যানেল আইতে দেয়,,,
না হলে জীবনেও চ্যানেল পাল্টাতো না ও
রাইজিং সিঙ্গিং স্টার অনিকেতের গান শোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ কনসার্টে এসেছে,,,
তখনি লাইট মঞ্চে পড়তেই অনিকেতের গান শুরু হলো,,গিটার হাতে বসে গান শুরু করে অনিকেত
ভালেবাসার সাগর তুমি ইইইইই
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আখি
হয় যে ছলছল
হয় যে ছলছল
তোমার মিলনে বুঝি গো জীবন,,
বিরহে মরন
বিরহে মরন,,
তুমি আমার এমনি একজন,,
যারে একজনমে ভালেবেসে ভরবে না এ মন
একজনমের ভালোবাসা
একজনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পড়তে লাগে যতক্ষণ,,,
চলবে