প্রেমমানিশা – পর্ব ৩৪

0
215

#প্রেমমানিশা(৩৪)

[পর্ব: শুভ পরিণয়]

বাগানে দাড়িয়ে আছেন মিস্টার আশরাফ। এক মনে ভোরের আলো দেখছেন। সূর্য তার লালিমা নিয়ে ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে পূর্বের আকাশে। মিস্টার আশরাফ সেই সূর্যোদয় দেখছেন। সানাহ্দের বাড়ির বাগান থেকে সূর্যোদয় দেখার দৃশ্য নয়নাভিরাম। আশেপাশে প্রভাতকালিন পাখিদের মৃদু গুঞ্জন আর ছোটো ছোটো নাম না জানা পাখির আকাশ জুড়ে বিচরণ যেন প্রকৃতিকে দিয়েছে এক অন্যরকম প্রাণ।

মিস্টার আশরাফের চোখে জল ভিড় করে এসেছে। উনি ভাবতেও পারছেন না যেই সানাহ্ কাল অব্দি মা হারা বাচ্চা একটা মেয়ে ছিল সেই সানার বিয়ে। আর কয়েক ঘণ্টা পরেই মেয়েটা কারোর বাড়ির মেয়ের সঙ্গে সঙ্গে কারোর বাড়ির বউও হবে। কারোর ভাগ্নি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কারোর স্ত্রীও হবে। সময় অনেক দ্রুত পেরিয়ে যায় তবে সেটা মানুষের অগোচরে। মানুষ যখন সেই পেরিয়ে যাওয়া সময়ের সন্ধানে বের হয় তখন আবিষ্কার করে যেই সময় তারা খুঁজছে সেই সময় তো বহু আগেই পেরিয়ে গেছে।

একটা সময় ছিল যখন সানার মা মারা যাওয়ার পরে সানাহ্ নিজেকে সামলাতে পারত না। হাজার মানুষের ভিড়ে একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে সবার মাঝেই থাকার চেষ্টা করতো। কিন্তু আজ সময়ের প্রভাবে সেই সানাহ্ বদলে গেছে। এখন এই সানাহ্ পারে একা একা থাকতে,নিজের মতো থাকতে। সে পারে শত মানুষের ভিড়ে নিজেকে আলাদা রাখতে। এখন আর একলা হওয়ার ভয় নেই তার। সে যে সকলের মাঝে থেকেও বরাবর একলাই ছিল।

—-

সানাহ্দের বাড়িতে বেধেছে হুলুস্থুল কান্ড। পুরো বাড়ি জুড়ে হইচই। হইচইয়ের উৎস সানাহ্। বাড়ির মেয়ে বাড়িতে নেই। নিজের বিয়ের দিন হুট করেই কাউকে না জানিয়ে গায়েব হয়ে গেছে সানাহ্। মিসেস কায়নাত দোতলার সিড়ি থেকে বসার ঘরে দাড়িয়ে থাকা অতসীকে হাক দিয়ে বললেন ‘ এই পেয়েছিস সানাহ্কে ? ‘

কিন্তু অতসীর নেতিবাচক উত্তরে আশাহত হলেন। কোথায় যে গেল মেয়েটা হুট করে ? ওইদিকে ছাদ থেকে চিৎকার দিয়ে বাগানে দাড়িয়ে থাকা মিস্টার আমানকে আরাব বললো ‘ মামা সানাহ্ তো ছাদেও নেই। ‘ সকলে ছুটেছে চতুর্দিকে। মিসেস রাহেলা সোফায় বসে মাথায় অনবরত আইস প্যাক দেওয়া মিস্টার কবিরের দিকে আরেকটা আইস প্যাক বাড়িয়ে দিয়ে বললেন ‘ ভাইজান চিন্তা করবেন না। সানাহ্ হয়তো আশেপাশেই গেছে। এক্ষুনি চলে আসবে। ‘

মিস্টার কবিরকে মিথ্যা আশা দিলেও মিসেস রাহেলাও চিন্তিত। সানাহ্কে দেখে ওনার মনে হয়নি মেয়েটার বিয়েতে আপত্তি আছে। অথচ মেয়েটা সেই সকাল থেকে গায়েব। প্রথমে সকলে ভেবেছিল হয়তো ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ক্রমেই যখন সকাল পেরিয়ে সময়টা দুপুরে গিয়ে ঠেকলো তখন মিসেস কায়নাতের সন্দেহ হলো। উনি উনার সন্দেহকে পাকাপোক্ত করতে ছুটলেন সানার ঘরে। গিয়ে দেখলেন সানাহ্ যথারীতি রুমে নেই। বারান্দায় শাড়ি ঝুলিয়ে সেটা দিয়ে নেমে গেছে।

মিসেস কায়নাত অতিরিক্ত চিন্তায় রীতিমত ঘামছেন। এসি ঘরে বসেও তার দরদর করে ঘাম হচ্ছে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে মগের পর মগ কফি খাচ্ছেন। উনার শুধু একটাই চিন্তা এই ভর দুপুরে মেয়েটা কোথায় গেলো। এইদিকে শায়খকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেও তার ভাগ্নির সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেছে।

চিন্তা হওয়ারই কথা। সকলের অনুমান বলছে সানাহ্ বেরিয়েছে সকালে সকলে যখন ঘুমিয়ে ছিল। আর এখন দুপুর পনে চারটা। অন্যদিকে ফারহানরা আসবে সাড়ে চারটায়। তারমানে হাতে আছে আর মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট। এইটুকু সময়ের মধ্যে যদি সানাহ্ না ফিরে তাহলে আশঙ্কা করা যায় অনেক বড়সর একটা ঝামেলা হতে চলেছে। হবু বেয়াইনদের সামনে পুরো বংশের নাম তো ডুববেই সঙ্গে দুই বান্ধবীর সম্পর্কও নষ্ট হবে।

‘ আই থিঙ্ক জাপান জানে শায়খ আর সানাহ্ কোথায় ‘
আরাবের এই কথায় সকলে যেন চমকে উঠলো। সকলের দৃষ্টি একসঙ্গে গিয়ে বসলো সোফায় বসে থাকা জাপানের দিকে। সে ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত। তবে আরাবের কথা শুনে এবার সে নড়েচড়ে বসলো। নিজের এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে দিয়ে ঠিক করে দিলো।

সত্যিই তো ব্যাপারটা কারোর মাথাতেই আসেনি। সানাহ্ বরাবরই জাপানের অনেক ক্লোজ আর শায়খেরও জাপানের সঙ্গে বেশ সখ্যতা আছে। তার উপর দিয়ে সানাহ্ আর শায়খের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরও জাপানের বিচলিত না হওয়া আরও ঘোরতর সন্দেহের ব্যাপার। ঘটনা আন্দাজ করতেই মিস্টার কবিরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।

‘ আরাব কি ঠিক বলছে জাপান ? শায়খ আর সানাহ্ কোথায় সেটা কি ওরা তোমাকে বলে গেছে ? ‘ মিস্টার কবির থমথমে গলায় বললেন।

মামা হিসেবে উনি উনার বোনের ছেলেদের খুব ভালোবাসেন। অত্যধিক স্নেহ করেন তাদের। তবে এহেন বিপদের সময় উনি নিজেকে নমনীয় রাখতে পারলেন না। নিজের স্বভাবের বিরুদ্ধে তাকে কঠোর হতে হলো। প্রথম দিকে নিজের মামার এমন রুঢ় স্বর শুনে অবাক হয়েছিল জাপান। তবে সে নিজেকে সামলে নেয়। দৃঢ় গলায় বললো ‘ ভাইয়া যেটা বলেছে সেটা ঠিক। আমি জানি ওরা কোথায়। কিন্তু আমি সেটা বলতে পারবো না। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সানসাইন বলেছে ও যেখানেই যাক না কেন বিয়ের আগেই ফিরে আসবে। ‘

বসার ঘরে চলছে পিনপতন নীরবতা। মিস্টার কবিরের মেজাজের পারদ আঁচ করতে পেরে কেউ আর শব্দ করেনি। সকলেই নিরবতা মেনে চলেছেন। শুধু যুদ্ধ চলছে দুজন মানুষের মধ্যে। মিস্টার কবির আর জাপানের মধ্যে কোল্ড ওয়ার চলছে। একে অপরের মধ্যে চোখে চোখে যুদ্ধ চালাচ্ছেন তারা।

সময়টা চারটা পনেরো। ফারহানদের সাড়ে চারটায় আসার কথা থাকলেও রাস্তা ফাঁকা পেয়ে ওরা পনেরো মিনিট আগেই চলে এসেছে। হুট করে ঠিক করা সময়ের আগেই হাজির হতে দেখে মিসেস কায়নাত ঘাবড়ে গেলেন। ভয়ে উনার সমস্ত শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। চেহারা ইতিমধ্যে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখ মুখের ভাব বদলে গেছে।

বান্ধবীর এহেন পরিবর্তন মিসেস আশার চোখে পড়লো। উনি চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘ কি হয়েছে কায়নাত ? তোকে এমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে কেন ? শরীর খারাপ করছে নাকি ? ‘

নাহ্ কোনো উত্তর দিতে পারলেন না মিসেস কায়নাত। দিবেনই বা কি করে ? কি বলবেন ? উনার মেয়ে বিয়ের দিন বিয়ে ছেড়ে পালিয়ে গেছে এটা কি আদৌ বলার মতো কথা ? উনি ভেবে পাচ্ছেন না বান্ধবীকে মুখ কি করে দেখাবেন। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করলেন। আলতো হেসে বললেন ‘ নাহ্ শরীর খারাপ। আসলে প্রথম মেয়ের বিয়ে তো। এই সময় মায়েদের একটু চিন্তা হয়ই। তাই হয়তো এরকম লাগছে। ‘

‘ ওহ্…. আমি আরও কি না কি ভাবলাম। যাই হোক সানাহ্কে রেডি করিয়ে দে তো। ইমাম হুজুর চলে এসেছেন। ‘

এবার মিসেস কায়নাত পড়লেন ফ্যাসাদে। কি উত্তর দিবেন বান্ধবীকে ? যে তার মেয়েকে এখনও খুজেই পাওয়া যায়নি ? মিথ্যা কথা বলে আশাও তো দেওয়া যাবে না। এই মিথ্যা আশা যে বান্ধবী মেনে নিতে পারবে না। তাই বলে কি মানুষটার মনে কষ্ট দিয়ে সত্যি কথা বলে দিবে ? এখন সত্যি না বললে পরে বিয়ের সময় যখন সব সত্যি সবার সামনে আসবে তখন বান্ধবী পারবে তো নিজেকে সামলাতে ?

নাহ্ মিসেস কায়নাত কিছু লুকোবেন না। যেটা সত্যি সেটাই বলবেন। যা হয় হোক। একটা মিথ্যা কথা বলে কাউকে মিথ্যা আশা উনি দিবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। যেটা উনি চান না। সামান্য মিথ্যা কথার জন্য কত সম্পর্ক ভাঙার কথা শুনেছেন উনি। আজ নিজে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাননা উনি।

উনি উনার বান্ধবীকে আসল সত্যিটা বলতে প্রস্তুত হলেন ঠিকই কিন্তু উনার কথার উনার মুখেই রয়ে গেলো কারণ উনার নজর পড়েছে সদর দরজার দিকে। সদর দরজা দিয়ে শায়খ ঢুকছে। পরক্ষনেই মনে হলো কেউ উনার কাঁধে হাত রেখেছে। পিছন ফিরে দেখলেন অতসী তাকে ডাকছে। উনি অতসীর ইশারা দেখে বুঝলেন সে কিছু বলতে চায়। অতসীর ইশারা বুঝতে পেরে বান্ধবীকে বলে অতসীকে নিয়ে সাইডে গেলেন। অতসীকে কেমন উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার অগোচরে কিছু একটা ঘটেছে যার প্রত্যক্ষ দর্শন করেছে অতসী।

‘ কি হয়েছে ? ডেকে আনলি কেন ? ‘ – মিসেস কায়নাত

‘ মা আপাই চলে এসেছে। গোসল করে রেডি হচ্ছে। ‘ – অতসী

যদিও শায়খকে দেখার পরপরই ব্যাপারটা আন্দাজ করেছিলেন মিসেস কায়নাত কিন্তু মেয়ের কথায় নিশ্চিন্ত হলেন। ফোস করে সস্তির নিশ্বাস ফেলে বললেন ‘ তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন ? তাড়াতাড়ি ওকে রেডি কর…. ‘

অতসী অবাক তার মায়ের কথায়। সে অনুমান করেছিল এই খবরটা পাওয়ার পর তার মা হয়তো দিক বেদিক হারা হয়ে সবার কথা ভুলে তার আপাইকে শাসাতে ছুটবে। কিন্তু তার অনুমান একেবারেই ভুল ছিল এবার । মিসেস কায়নাত তার ইমেজিন করা কোনো ঘটনাই ঘটাননি। উল্টো কথাগুলো বলে বান্ধবীকে সানাহ্ আসছে এই খবর দিতে ছুটলেন।

বসন্তের রঙে প্রকৃতি তার পুরনো সত্তায় ফিরেছে। ধারণ করেছে তার বহু পরিচিত সোনালী আবরণ। গাছে গাছে নাম না জানা পাখির জোড়া আর চারদিকে অজানা সব ফুলের গন্ধে পরিবেশ এক অপার্থিব সৌন্দর্য ধারণ করেছে। শোনা যায় ফাগুন প্রেমের আগুন। তাই হয়তো আজ পহেলা ফাগুন হওয়ায় রাস্তায় নেমেছে এক ঝাঁক কপোত কপোতীর দল। কেউ প্রেমিক প্রেমিকা আবার কেউ কেউ নব বিবাহিত স্বামী স্ত্রী।

পহেলা ফাগুনেই বাতাসে প্রেমের আগুন ছড়িয়ে সানাহ্ আর ফারহানের বিয়েটা হয়ে গেলো। বিয়ে, তিন কবুল বলে একে অপরকে স্বামী স্ত্রী মেনে বিয়ে। এখন আশেপাশের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ পর্ব চলছে। সানার মা এবং শাশুড়ি মা দুজনেই প্রত্যেকের ঘরে ঘরে ‘ আমাদের ছেলে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের জন্য দোয়া করবেন ‘ বলে হাসিমুখে মিষ্টি বিলচ্ছেন। কেউ কেউ আলহামদুলিল্লাহ বলে সেই মিষ্টি হাসিমুখে গ্রহণও করছেন।

মিস্টার কবির,মিস্টার আমান এবং মিস্টার আশরাফ গেছেন ‘ Flora ‘ তে। মিস্টার কবির নিজে দাড়িয়ে থেকে এমপ্লয়ীদের মাঝে মেয়ের বিয়ের খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করবেন। মিসেস রাহেলা আর মিসেস মারিয়া রান্নাঘরে অতি আগ্রহ নিয়ে সন্ধ্যায় খাওয়ার জন্য চা নাস্তা তৈরি করছেন।

প্রকৃতিতে বসন্তের আবির্ভাব ঘটলেও হালকা শীতের আমেজ এখনও কিছুটা আছে। এই শীতের রাতেই বাগানে বন ফায়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন ফায়ারের চারদিকে গোল করে চেয়ার পাতা হয়েছে। এই বন ফায়ারকে ঘিরেই সকলে নাচে, গানে, আড্ডায় মেতে উঠবে। অবশ্য এতসব কিছুর আয়োজন করেছে জাপান। তার কথা হলো ইরফান বংশের বড় মেয়ের বিয়েতে সব ধরনের হইহুল্লোড় হওয়ার কথা। অথচ সানার এসব পছন্দ না বলে অতি সাধারণভাবে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পরও যদি নাচাপিচা নাহয় তাহলে এতবড় অন্যায় কিছুতেই মেনে নিবে না জাপান। আফটার অল কাজিন মহলে তার একটা সম্মান আছে।

মিসেস রাহেলা আর মিসেস মারিয়া কিছুক্ষণ আগে চা নাস্তা দিয়ে গেছেন। নাস্তা হিসেবে নুডুলস, শাকের পাকোড়া, পেঁয়াজু, ডিম চপ আর আলুর চপ করা হয়েছে। যদিও সানার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার কথা হয়েছিল কিন্তু সানাহ্ই নিষেধ করে দিয়েছে যে তার জন্য আলাদা করে কিছু করতে হবে না। মিসেস আশা অবশ্য খুশি হয়েছেন ছেলের বউ রুপি মেয়ের এহেন উন্নতিতে। যাক মেয়েটা মানিয়ে নিতে শুরু করেছে এটাই বেশি।

বড়রা সকলে তাদের মতো কাজ কারবার শেষ করে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। আর ছোটদের জায়গা হয়েছে লনে। যদিও সানার এত তেলে ভাজাভুজি জিনিস পছন্দ না কিন্তু নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় সে তৎপর। পাকোড়ার গাঁয়ে টিসু পেঁচিয়ে খাচ্ছে। এতে এক্সট্রা অয়েল শুষে নিবে টিসু পেপার। এতকাল এসব ভাজাভুজি সম্পর্কে সানাহ্ যা ধারণা রেখেছে আজ দেখি তার ঠিক উল্টো। খাবারগুলো তার ধারণা মতে মোটেই অখাদ্য নয় বরং বেশ সুস্বাদু।

‘ যেহেতু আজ আমাদের মধ্যে নিউ ম্যারিড কাপল আছে সেহেতু শুরুটা তাদের দিয়েই হবে। ফারহান এখন আমাদের গান গেয়ে শোনাবে। ‘ আরাব সকলের মাঝে ঘোষণা করে বললো।

কথাটা শুনে সকলে হাততালি দিলেও ফারহান আটকে উঠলো। মৃদু চিৎকার করে বলল ‘ কি!! আমি গান গাইবো ? আমি কি করে গান গাইবো ? আমি কবিতার মানুষ, আমি গান জানি আবৃত্তি জানি। আমি কি করে গান গাইবো ? ‘

এবার যেন নিনিকা সুযোগ পেয়ে গেলো কথা বলার। ফারহানের কাধে চাপর মেরে বললো ‘ তাহলে আবৃত্তিটাই করো না। কতদিন শুনিনা তোমার আবৃত্তি। মনে আছে তুমি যখন ক্লাস নাইনে স্কুলের ফাংশনে আবৃত্তি করেছিলে তখন মেয়েদের সারির একেকটা মেয়ে তোমার আবৃত্তি শুনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল ? ‘

এবার ফারহান নিনিকার মাথায় চাটি মেরে দাত কিরমির করে বললো ‘ তোকে কে বললো মেয়েরা আমার আবৃত্তি শুনে হুমড়ি খাচ্ছিল ? ‘

‘ উহ ভাইয়া এত মারো কেন ? তুমি যখন নাইনে ছিলে তখন কি আমি পিচ্ছি ছিলাম। বড়জোর ৫-৬ বছর ছিল আর আমি ছোটো থাকলেও মামানিতো আর ছোটো ছিল না। মামানি বলেছে আমাকে মেয়েরা কেমন করে তাকাতো তোমার দিকে। ‘ নিনিকা ব্যথার জায়গায় আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে নাক মুখ কুচকে বললো।

‘ তাহলে তো আর কথাই রইলো না। সো মিস্টার দুলাভাই আপনি এবার আবৃত্তি শুরু করুন। এটা আপনার বউয়ের বড় ভাই মানে আপনার বড় শালার অনুরোধ। ‘ আরাব বললো।

অতঃপর কি আর করবে ফারহান। বাধ্য হয়েই ধরলো আবৃত্তি ~

খুব কাছে এসো না কোন দিন
যতটা কাছে এলে কাছে আসা বলে লোকে
এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা
কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা ।

যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে
মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন
দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির।

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে ছোঁয়া, থেকে স্পর্শ
রোদ্দুরের বু্‌ক, থেকে উত্তাপ
শীতলতা, থেকে উষ্ণতা
প্রেমে্‌র, খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা

তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী।

ফারহানের আবৃত্তি শুনে সকলে হাত তালি দিয়ে উঠলো। সানাহ্ নির্নিমেষ পানে তাকালো ফারহানের চোখে। শুভ দৃষ্টি হলো চার চক্ষুর। বন ফায়ারের উষ্ণ অভ্যর্থনায় বাড়লো তাদের হৃদয়ের উষ্ণতাও। বোন আর বোন জামাইয়ের এহেন রোমান্টিক মুহূর্তে অতসী ব্যাগ্রা দিয়ে বললো ‘ তাই বলি আমার বোনটা কেন আপনার প্রেমে পড়ে এমন অধঃপতন হলো। এমন কাব্যিক,রোমান্টিক প্রেমিক থাকলে কে না প্রেমে পড়ে। ‘

অতসীর কথায় ফোঁড়ন কেটে জাপান বললো ‘ কারেকশন প্লিজ। প্রেমিক না ওটা স্বামী হবে। ‘
অতসী জবাবে বললো ‘ ওই আর কি যাই হোক। এখন কনের বোন হওয়ার খাতিরে আমি বলবো। আজ আমি তোমাদের একটা সিক্রেট বলবো। ‘

‘ সিক্রেট!! কি সিক্রেট ? ‘ সকলে সমস্বরে বলে উঠলো।

‘ আপাই যখন মেট্রিকের পর স্কুল বদলে কলেজে ভর্তি হলো কাহিনী তখনকার সময়ের। রূপবতী হওয়ায় আপাইয়ের অ্যাডমায়ারের শেষ নেই। তার মধ্যেই একজন ছিলেন পাড়ার এক বড় ভাই। আপাইকে দেখলেই মোমের মতো গলে যেতেন। উনি কখনও মুখ ফুটে কিছু বলতেন না তাই আপাই ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই এড়িয়ে চলত। কিন্তু একদিন ঘটলো এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। ওই বড় ভাই আপাইয়ের বাড়ি ফেরার পথে আপাইকে প্রেম পত্র দিলো। আপাই কিছু বললো না তখন। বাড়ি এনে সোজা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল পুড়িয়ে ফেলতে।

এমন প্রায়শই হতো। রূপবতী ছিল আমার আপাই। তার উপরে পড়তো সরকারি কলেজে যেখানে ছেলে মেয়ে একসঙ্গে ক্লাস করে। কাজেই এমন অনেক ছেলেই ছিল যারা আপাইকে প্রপোজ করার সাহস করতে না পেরে প্রেম পত্র দিত আপাইয়ের ব্যাগে। আপাই সেটা বাড়ি এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে বলতো। আমি আবার ওগুলো পুড়াতাম না। সোজা নিয়ে মাকে দিতাম।

মা আবার আপাইয়ের পাওয়া প্রেম পত্র পড়তো আর হাসতে হাসতে ছেলেদের লেখার হাজার ভুল বের করত। আজ অব্দি গোটা শতেকের উপরে প্রেম পত্র পড়েছে মা। মাঝে মাঝে এসব গর্ব করে বলে মা। তবে সেবার প্রেম পত্র পড়ে মা নিজেই পুড়িয়ে দিলো ওটা অথচ মা ওগুলো জমিয়ে রাখতে শখ করে…. ‘ এতটুকু বলে থামলো অতসী।

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here