প্রেমমানিশা – পর্ব ৩৫

0
234

#প্রেমমানিশা(৩৫)

‘ এত সাসপেন্স ক্রিয়েট না করে বলে দিলেই তো পারিস নাক বুচি ‘

আচমকা জাপানের হুংকার দেওয়া কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য অতসী লাফিয়ে উঠলো। বুকে হাত রেখে বার কয়েক বড় বড় নিশ্বাস ফেলে ভ্রু কুচকে বললো ‘ হুট করে এমন চিৎকার দিলে কেন ? আমাকে তোমার ধমকের জোরে মেরে ফেলতে চাইছ নাকি ? আর নাক বুচি কি হ্যা ? আমার নাম নাই ? ‘

‘ তোকে মেরে ফেলতে চাইছি না মেরে ফেলবো। এত সাসপেন্স ক্রিয়েট না করে সোজাসুজি বললেই পারিস। তা না উনি বলবে কেন ? উনি তো বিশ্ব সেরা ড্রামাবাজ। আর তোকে আমি নাক বুচি বলেই ডাকব। তোর কোনো সমস্যা ? আমি কিন্তু তোর বড় ভাই হই। ‘ জাপান দাত কিরমির করে বললো।

‘ হুহ আসছে আমার বড় ভাই। তোকে আমি বড় ভাই মানিনা বুঝলি ? ‘ অতসী ভেংচি কেটে বললো।

‘ তুই আমাকে তুই বললি ? তোর এত বড় সাহস ? ‘ জাপান চোখ কপালে তুলে বললো।

‘ সাহসের আর দেখলে কি। এই সাইয়ারা কবির অতসীর অনেক সাহস। তোমার মত ভীতুর ডিম না আমি। ‘ অতসী পুনরায় ভেংচি কাটলো।

‘ কিহ!! আমি ভীতুর…. ‘ তবে এবার আর জাপান কিছু বলতে পারলো না। সানাহ্ তার আগেই ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো ‘ উফফ ভাইয়া ঝামেলা কেন করছো ? ও পাগল বলে কি তুমিও ওর মতো পাগলামি করবে ? ‘ সানাহ্ বেশ বিরক্ত। এই দুই ভাই বোন হরহামেশা ঝগড়া করে আর তাদের ঝগড়ার সমাধান ওকেই করতে হয়।

সানার কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না জাপান। মৌন হয়ে বসে রইলো। অতসী ওকে দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করলো ‘ এরপরের দিন ঘটলো আসল কাহিনী। ওই বড় ভাই বাড়ির সামনে এসে আপাইকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে আই লাভ ইউ বলছে। তখন আমরা মিরপুরের ওইদিকে থাকি। আশেপাশের যত নেইবার আছে সব এর ওর জানালা দিয়ে উকিঝুকি মারছে। বাবা ‘ Flora ‘ তে। আমি, আপাই আর মা বাসায়। আমি আর মা ভেবেছিলাম আপাই হয়তো প্রতিবারের মতো এইবারও এড়িয়ে যাবে। কিন্তু আপাই এবার এমন একটা কাজ করলো যে আর কোনো ছেলে সাহস করেও আপাইকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেনি আজ পর্যন্ত।

আমাকে আর মাকে অবাক করে দিয়ে সরাসরি ওই বড় ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাড়ালো। বড় ভাই তো বহুত খুশি কিন্তু কিছুক্ষন পরেই ঐ খুশি উড়ে গেলো। আপাই ওই বড় ভাইকে কি বললো সেটা আমরা আজ অব্দি কেউ জানতে পারিনি তবে এরপর আর ওই বড় ভাই কেন আর কোনো বড় ভাইকেও আমাদের বাড়ির আশেপাশে দেখা যায়নি। এমনিতেই আপাই বরাবর আস্তে আস্তে কথা বলে তাই ওর কথা শোনা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা তবুও জানার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আপাই বলেনি। আজ পর্যন্ত এই কথা লুকিয়ে রেখেছে। ‘

এবার সকলে একসঙ্গে সানার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। সানাহ্ ফোনে ব্যস্ত থাকলেও শেষের কথাগুলো সে ভালো করেই শুনেছে তাই মাথা উঠিয়ে সকলকে একবার করে জরিপ করে বললো ‘ বেশি কিছু না। শুধু বলেছিলাম আমার ফুপা পুলিশ কমিশনার তাই তেড়িবেড়ি করলে সোজা ইভ টিজিং এর দায়ে এক বছরের জন্য জেলে পুড়ে দেবো। জানেন তো বাংলাদেশে আইন বলে কিছু একটা আছে ? বাংলাদেশের কোর্ট কিন্তু অতটাও অচল নয়। ‘

সকলে হতভম্ব, ভাবেনি সানার মতো শান্তশিষ্ট,ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে এরকম ভয়ঙ্কর হুমকি দিতে পারে। তবে ফারহান অবাক হয়নি। ইতিমধ্যে সে সানার তুই তুকারির শিকার তাই এই মেয়ে কি চিজ সেটা তার জানা। সে মৃদু কেশে সকলের মনযোগ আকর্ষণ করে বললো ‘ বলছি কি আড্ডা কি আগানো হবে নাকি এখানেই স্থগিত ? ‘

ফারহানের কথা শুনে সকলে বিস্ময়ের চূড়ান্ত রেশ কাটিয়ে নিজ নিজ দুনিয়ায় ফিরে এলো। অতসী ফারহানের কথার রেশ ধরে বললো ‘ স্থগিত মানে ? আড্ডা অবশ্যই হবে সঙ্গে ননস্টপ ফুল মাস্তি। এবার আপাই গান ধরবে। ফারহান ভাইয়ের আবৃত্তির পর আপাইয়ের গান । আহা যাকে বলে মেঘ না চাইতে জল। ‘

এবার সানাহ্ শীতল দৃষ্টিতে নজর দিল অতসীর দিকে। মৃদু গলায় বললো ‘ গান ছেড়েছি ১৫ বছর!! ‘। একমাত্র রুদ্র,ফারহান আর নিনিকা বাদে সকলেই স্বাভাবিক। আরাব কথার রেশ টেনে বললো ‘ ছেড়েছিস তো কি হয়েছে ? শোনা তো বন্ধ হয়নি। তারমানে তুই গান জানিস। অনেকদিন গাস না বলে প্রথমে খারাপ হলেও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। তুই ওসব চিন্তা করিস না। তুই শুধু গান ধর। গান শোনার কাজ আমাদের। ‘

‘ তুমি যদি গানের উসিলায় আমাকে আড্ডা থেকে উঠিয়ে দিতে চাও তাহলে নির্দ্বিধায় বলো। আমি উঠে যাচ্ছি। ‘ বলেই সানাহ্ ফোন নিয়ে উঠে দাড়ালো। কারোর কথায় বিন্দুমাত্র কান না দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল তবে জাপানের কথা শুনে দাড়িয়ে গেলো। জাপান বললো ‘ বড় মামার গান কতটা প্রিয় ছিল সেটা আমাদের থেকেও ভালো তুই জানিস। আর সেই গানকেই তুই ছেড়ে দিলি ? এত স্বার্থপর কখন হলি সানসাইন ? ‘

কথাগুলো শুনেও সানার মাঝে তেমন কোনো ভাবাবেগ দেখা দিল না তবে তার শুভ্র চোঁখ জোড়া যেন রক্তিম হয়ে উঠেছে। চলনবলন স্থির। কোনদিকে না তাকিয়েই সোজা হনহন করে বেরিয়ে গেলো। সেইদিকে তাকিয়ে জাপান এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফারহান জাপানের এই যন্ত্রণাময় দীর্ঘশ্বাস লক্ষ্য করে বললো ‘ তোমরা আড্ডা কন্টিনিউ করো… আমি সানাহ্কে নিয়ে আসছি। ‘

—-

এই রাত শুধু যে গানের
এই ক্ষণ এ দুটি প্রাণের
শুধু দুজনের
এই রাত তোমার আমার….

বারান্দায় বসে আছে সানাহ্। মোবাইলে বাজছে তার আর তার বাবাইয়ের প্রিয় গান। এই গান তার সুখ, দুঃখ, আনন্দ সবকিছুর সঙ্গী। তার অভিমানী রাতের সাক্ষী এই গান। একমাত্র এই গানটা শুনলেই তার মনে হয় তার মামনি আর বাবাই তার কাছে আছে। তার ছোটো বয়সে তার বাবাই তাকে আর তার মামনিকে নিয়ে প্রায়শই এই গান শুনত। এটা ছিল উনার মনের ভাবাবেগ প্রকাশের মাধ্যম,ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যম।

কাধে কারোর স্পর্শ টের পেয়েও মাথা তুলে তাকালো না সানাহ্। কিছুক্ষণ পর টের পেলো মানুষটা তার পাশে বসেছে। সানাহ্ তবুও চুপ রইলো। মৌন থেকে রাতের নিস্তব্ধতা অনুভব করছে সে। এই মুহূর্তে তার কিছুই বলতে ইচ্ছা করছে না। শুধুই নীরব থাকতে মন চাইছে।

‘ আমাদের সবারই একটা যন্ত্রণা আছে যেটা আমরা কাউকে বুঝাতে পারিনা। সবার মানে সবার। হোক সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। সুখী মানুষেরও অ-সুখ আছে। কিন্তু আমাদেরকে সেই যন্ত্রণা ভুলে এগোতে হয়। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, যন্ত্রণা এসব নিয়েই আমাদের জীবন। তাই বলে তো পুরনো যন্ত্রণাকে ঘিরে জীবন কাটানো যায় না। পুরনো যন্ত্রণা ভুলে না এগোলে নতুন যন্ত্রণা নিয়ে জীবন কি করে কাটাবে ? তাহলে দুই যন্ত্রণার ভারে তোমার ঘাড়ই না ভেঙে যাবে ? ‘

সানাহ্ নীরবে মন দিয়ে শুনলো ফারহানের প্রতিটা কথা। এই একটা মানুষ আছে যার প্রত্যেকটা কাজ,প্রত্যেকটা কথা সবই তার ভালো লাগে। সব মানে সব। এই মানুষটা যদি তার হাজার দুঃখের মাঝেও একটা সুন্দর কথা বলে তখন সেই কথাই তার মনে আশা দেয়। তাকে নতুন আশার আলো দেখায়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ফারহানের বলা প্রতিটা কথা তাকে নতুন আশার পথ দেখাচ্ছে যেই পথে সে হাঁটতে চায়।

সানাহ্ মুচকি হেসে তার চোখের পানি মুছে বললো ‘ রিয়াশা ম্যাডামের অত কাছাকাছি যাবেন না। আমার উনাকে পছন্দ নয়। উনি সবসময় আপনার গায়ে পড়েন। উনাকে দেখলেই আমার গা পিত্তি সব আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলে। আর আমি গান গাইলে কিন্তু হাসতে পারবেন না। অনেকদিন গান গাই না। ‘

ফারহান সানার কথার জবাবে কিছু বললো না। সে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। সানার কথাই বলে দিচ্ছে সানার কাছে তার গুরুত্বটা ঠিক কোথায়। সানাহ্ স্বভাবে বৈপরীত্য দেখালেও সানার বাচনভঙ্গি যে অন্য কথা বলে এটা ফারহানের বহু পূর্বেই জানা। এতকাল ধরতে পারেনি হুটহাট সানার রেগে যাওয়ার রহস্য। তবে আজ রহস্য নিজেই তার দুইয়ে দুইয়ে চার করে সমাধান ফারহানের সামনে হাজির করেছে।

—-

অবশেষে ফারহানের অনেক বোঝানোর পর সানাহ্ গান গাইতে রাজি হলেও সকলে সংকটে পড়লো এ নিয়ে যে সানাহ্ গান গাইলেও ব্যাকগ্রাউন্ড টিউন কে দিবে। এই আড্ডা মহলে কেউই গিটার, মাউথ ওয়ার্ম বা ফ্লুট বাজাতে জানেনা তবে হুট করে সানার মনে পড়লো অতসী তো ছোটবেলায় বাঁশি বাজানো শিখেছিল। সানাহ্ বলে উঠলো ‘ অতস বাঁশি বাজালে কেমন হয় ? ‘

‘ এমা আমি!! আমি তো সেই কবেই ভুলে গেছি বাঁশি বাজানো। আমি কি করে বাজাবো ? ‘ অতসী আতকে উঠে বললো।

এবার যেন জাপান লাই পেলো। বিদ্রুপ করে বললো ‘ পারবি কি করে। তোর মনে থুড়ি প্রেমের আগুন লেগেছে। ফাগুন প্রেমের আগুন। প্রেমের আগুন লাগলে বীণা বাজাতে না পারা মানুষও আনমনে বীণার সুর তুলে। তুই সিঙ্গেল মানুষ। তুই এমনিতেও পারবি না। ‘

জাপান কথাটা মজার ছলে বললেও অতসী যেন বিমূর্ষ হয়ে গেলো এই কথা শুনে। সকলে জাপানের কথা শুনে হাসাহাসি করছে কিন্তু সানাহ্ লক্ষ্য করলো অতসী আনমনা, কি যেন ভেবে সে দুঃখে দুঃখে মরে যাচ্ছে। সানাহ্ এবার জাপানের মনযোগ আকর্ষণ করে বললো ‘ তোমরা এসব মজা করা এখন বন্ধ করো। কথা ছিলো আমরা আড্ডা দিবো, গান গাইবো আর নাচবো। কিন্তু এখন তো দেখছি একেকজন আরেকজনকে খোঁচা মেরে কথা বলছে। এরকম চললে আড্ডা আর কন্টিনিউ করবো না আমি। ‘

‘ এই এই না না সরি… আই অ্যাম সরি। তুই উঠিস না। আমি তো এমনই বলছিলাম। তোর নাক বুচি বোন যে এভাবে সিরিয়াসলি নিবে সেটা কে জানত ? এই বুচি আই অ্যাম সরি। ‘ বলে অতসীর দিকে ইনোসেন্ট মুখ করে তাকালো জাপান।

মুহূর্তের জন্য জাপানের এহেন ভাবভঙ্গি দেখে অতসীর হাসি আসছে। জাপানকে এখন যেন ঠিক একটা হাবলা হাবাগোবা ছেলে মনে হচ্ছে যে অপরাধ করে ইনোসেন্ট মুখে মায়ের কাছে সরি বলছে। অতসী জাপানের কথার উত্তর না দিয়ে উঠে দাড়ালো। পকেটে ফোন গুঁজে বললো ‘ তোমরা বসো… আমি ফ্লুট নিয়ে আসছি। ‘

নিস্তব্ধ প্রকৃতি। বাতাসে দূর থেকে ভেসে আসছে রাতের অজানা পোকার ডাক। সানাহ্ ছোটোবেলায় এর নাম দিয়েছিল কুহুকি পোকা যে শুধু রাতের আঁধারে তার অবস্থান জানান দেয়। প্রকৃতির মাঝে বয়ে যাওয়া হালকা ঠান্ডা আমেজে যেন চারদিকে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ছড়াচ্ছে।

এই হালকা শীতের ফুলেল আমেজে আকাশ বাতাস কাপিয়ে অতসী বাঁশির সুর তুললো। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে সানাহ্ও গেয়ে উঠলো তার স্বভাব ভিন্ন এক গান। সকলে মুগ্ধ হয়ে শুনছে সেই শ্রুতি মধুর সঙ্গীত। এ যেন এক নতুন সানাহ্ যার স্বভাব বলে সে পশ্চিমা সংস্কৃতি প্রেমী তবে তার সঙ্গীতের সুর তাল, লয় বলছে সে একজন বাঙালীও বটে।

সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।
সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস?
লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ….

বাতাসে মৃদু ঝঙ্কার তুলে একসময় সানাহ্ তার সঙ্গীতের ইতি টানল। পরিবেশটা এক প্রকার শান্ত হয়ে আছে। সকলে বসে বসে চোখ বুজে অনুভব করছে রাতের গভীরতা। অতসী কেমন যেন গম্ভির ভাব ধরে রেখেছে মুখে। সানাহ্ সেইদিকে একবার নজর দিয়ে বলল ‘ আমি তো তোর অনুরোধ রাখতে গান গেয়েছি। এবার তোরও আমার কথা রাখা উচিত। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় সেটা জানিস তো ? ‘

সানার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলো না অতসী। মৃদু গলায় বাতাসে বিষাদ মিশিয়ে সুর তুললো। সে গান গাইছে খালি গলায়। তার গানের সঙ্গে না বাজছে কোনো বাঁশির সুর না কোনো সেতারা। এ যেন এক মধুর মিশ্রণ। খালি গলার সুর আর পশ্চিমা সঙ্গীতের এক অপূর্ব বিষাদময় মিশ্রণ যেন বলে দিচ্ছে সম্পর্কের টানাপোড়েন। অতসীর এই বিষাদ পূর্তি সুর সকলের মন বিষাদ করে তুলছে। সকলে অপলক চেয়ে আছে অতসীর দিকে। রসিকতা প্রিয় জাপানও অবাক সেই সুর শুনে।

A broken heart is all that’s left
I’m still fixing all the cracks
Lost a couple of pieces when
I carried it, carried it, carried it home

I’m afraid of all I am
My mind feels like a foreign land
Silence ringing inside my head
Please carry me, carry me, carry me home

I’ve spent all of the love I saved
We were always a losing game
Small town boy in a big arcade
I got addicted to a losing game

Oh
Oh
All I know, all I know
Loving you is a losing game….

সকলের মনে বিষাদের সুর বাজছে। অতসী নিজেকে সামলে নেয়। চেহারায় কৃত্রিম খুশি খুশি ভাব এনে বললো ‘ কেমন লাগলো ? ভালো গেয়েছি না ? আরে সবাই এভাবে মুখ লটকে বসে থাকলে কিভাবে হবে ? একটু ব্রিফ তো দাও কেমন গেয়েছি। নাকি বাজে হয়েছে ? হলে আমার দোষ নেই কারণ আমি টিউন আর্টিস্ট। গান গাওয়া আমার কাম্য নয়।

তবে এবার আমাদের ফেমাস ড্যান্সার নাচবে। আপাই তোকে নাচতেই হবে। কতদিন দেখিনি তোকে নাচতে। ‘

‘ সবার সামনে নাচবো ? তুই ভালো করেই জানিস আমি নাচ জানলেও কখনও কারোর সামনে নাচি না। সবার সামনে গানের তালে কোমর দুলিয়ে নাচ আমার পছন্দ নয়। জোর করলে আমি কিন্তু উঠে যাবো। ‘ সানাহ্ হুমকি দেওয়ার রুপে বললো।

‘ এখন কোনো নাচ টাচ হবে না। সবাই ঘরে চল খেতে। রাত দশটা বাজে। এখন না খেলে ঘুমোতে যাবি কখন ? ‘ ফারহানের ফুপু মিসেস মারিয়া এসে বললেন। উনি সানার কথা শুনেছেন তাই সানাহ্কে এসবের হাত থেকে বাঁচানোর পাঁয়তারা করলেন। এমনিতেও তিনি সবাইকে খেতে আসতে বলতেই এসেছিলেন।

—-

বারান্দায় মিটিমিটি আলো জ্বলছে। এক কোণায় একটা নীলচে আলো জ্বালিয়ে রেখেছে সানাহ্। তার বারান্দাটা বাড়ির অন্য সব বারান্দা থেকে বেশ খানিকটা বড়। এক পাশে ডিভান আর তার পাশেই আড়াআড়ি করে সুইং চেয়ার। বারান্দাটা ডিভানের সাইডে স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরা। কাচ লাগানো হয়েছে যাতে বৃষ্টি এলে ডিভান আর সুইং চেয়ার ভিজে একাকার না হয়।

সানাহ্ বারান্দার খোলা অংশে বাতাসের গাঁয়ে গা এলিয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রকৃতিতে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। মিটমিট করে জ্বলে উঠা বারান্দায় হালকা শীতের আমেজ সানার মেজাজ ফুরফুরে করেছে।

খানিকটা দূরে কাচের অপর পাশে ডিভানের উপর রাখা ফোনে একটা পুরনো দিনের হিন্দি গান বাজছে। সানাহ্ তেমন একটা হিন্দি গান শুনে না। আজকাল সব অটো টিউন দেওয়া ধুম তানানা গান তাই ওসব তার ভালো লাগে না। তবে পুরনো দিনের গানগুলো তার বড্ড ভালো লাগে। এখনও সে এরকমই পুরনো এক গান শুনছে।

Abhi na jao chhod kar ke dil abi bhara nahi
Abhi na jao chhod kar ke dil abi bhara nahi
Abhi abhi to aayi ho, abhi abhi to
Abhi abhi to aayi ho, bahar banke chhayi ho

Hawa zara mehak to le, nazar zara behak to le
Yeh shaam dhal to le zara
Yeh shaam dhal to le zara
Yeh dil sambhal to le zara
Main thodi deir jee to loon….

‘ মানুষ বাসর রাতে রোমান্টিক গান শুনে আর আমার বউ পুরনো দিনের স্যাড টাইপের সং শুনছে। এই ছিল কপালে। মনে হয় বিবাহিত জীবন বিরহে বিরহেই কাটবে আমার। ‘

সানাহ্ মন দিয়ে গান শুনছিল। সে একেবারে হারিয়ে গেছিলো গানে। তবে ফারহানের কথা শুনে বাস্তবে ফিরে এলো। গানের ঘোর কাটিয়ে উঠলো। পাশ ফিরে দেখলো ফারহান রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি তার স্থির। ফারহানরা আজ এখানেই থেকে যাবে সেটা আগেই কথা হয়েছিল। যেহেতু আজকের রাতটা ওদের প্রথম রাত তাই বড়রা ওদের একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ দিয়েছে। কাল থেকে আবার দুজনে আলাদা হয়ে যাবে।

এবার সানাহ্ খানিকটা ঠোঁট কামড়ে ফারহানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো ‘ এটা স্যাড সং না। একটা আলাদা কিছু আছে এই গানে। আমি হিন্দি গান শুনিনা তবে এই গান আমাকে টানে। ‘

‘ বাহ্ তোমার এই গান পছন্দ ? তাহলে তো আমারও একে পছন্দের তালিকায় যোগ করতে হচ্ছে। বাই দ্যা ওয়ে তোমার জন্য একটা গিফট এনেছি। দেখতে চাও ? ‘ ফারহান সানার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো।

‘ আপনার ইচ্ছে করলে দেখান। আমিও গিফট এনেছি। আই থিঙ্ক সেটা আপনার খুব পছন্দ হবে। ‘ সানাহ্ বললো।

‘ বাহ্ তুমিও এনেছ ? তাহলে তো দেখতেই হয়। তবে আগে আমারটা দেখাই তারপর তুমি দেখাবে। ঠিক আছে ? ‘

ফারহানের কথায় মাথা নাড়ল সানাহ্। ফারহান ওর ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো। সানাহ্ এতক্ষণে খেয়াল করলো ফারহানের গাঁয়ে রাতের সেই পাঞ্জাবি নেই। সেটা বদলে ট্রাউজার আর টিশার্ট আছে। তারমানে সে আগেই ঘরে এসে জামা কাপড় বদলেছে।

বক্সটা খুলতেই অবিকল ফারহানের হাতে থাকা প্লাটিনামের রিংয়ের মতো সেম একটা রিং চোখে পড়লো সানার। সে অবাক হয়েছে বটে তবে সেটা চোখে মুখে প্রকাশ পেতে দিলো না। ফারহান ওর নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় আংটির দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে বললো ‘ সুন্দর না ? আমার হাতে হালকা রিং আর আমার বউয়ের হাতে এত ভারী রিং থাকবে সেটা কি মেনে নেওয়া যায় ? আমার বউয়ের কষ্ট হলে আমারও তো কষ্ট হয় তাইনা ? ‘

~ চলবে ইনশাআল্লাহ্….

ছবিয়াল: পিন্টারেস্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here