#গোধূলি_লগ্ন
#Writer_Tabassum_Tajnim
#part_24+25+26
পূন্য চায়ের পানি বসিয়ে দিলো। যতো তাড়াতাড়ি এই লোক আর মেয়েকে এইখান থেকে বিদায় দিতে পারবে ততই ভালো। লোকটার বাজে দৃষ্টি আর মেয়েটার পোশাক, কোনোটাই পূন্যর পছন্দ হয় নি।
ধীর পায়ে মিতু ওর মায়ের রুমে ঢুকলো। চোখ দুটো ছলছল করছে। এই মনে হচ্ছে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়বে। মিতু গিয়ে ওর মায়ের পাশে বসলো। তার জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। নিবিড় দরজায় দাড়িয়ে মিতুর কান্ড দেখতে লাগলো। মিতু কাঁদলে তার কেনো জানি কষ্ট লাগে। কেনো জানি সহ্য করতে পারে না। না, সে আর কখনো মিতুকে কষ্ট দিতে পারবে না, কষ্ট দিবে না।
অনন্যা হসপিটালের বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে, অনেক ভয় করছে, কি জানি রিপোর্টে আসে। বুকের ভিতরে কেমন জানি ধকধক করছে। হাত পা কাঁপছে হাতেই রিপোর্ট আছে, সে চাইলেই খুলে দেখতে পারে কিন্তু দেখছে না, ভয়ের কারনে। কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না। তাকে যে দেখতেই হবে। খাম টা থেকে রিপোর্ট টা কাঁপা কাঁপা হাতে বের করেই চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখ খুলার সাহস হচ্ছে না, যদি তার সন্দেহ সঠিক হয়ে যায়! আস্তে আস্তে চোখ খুললো,, রিপোর্টের দিকে তাকালো। তার চোখ টা রিপোর্টেই স্থির হয়ে গেলো। আর নড়াচড়া করলো না। একটা ঠান্ডা দৃষ্টিতে অনেক্ষণ ধরে রিপোর্টটাকেই দেখতে লাগলো। গলা শুকিয়ে গেছে, চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু এটা হাসপাতাল,, বেঞ্চ থেকে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো। সে কি করবে এখন, কোথায় যাবে? কিছুই বুঝতে পারছে না। অনেক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাড়ালো। রিপোর্ট হাতে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলো। ব্যস্ততম শহরের ফুটপাত ধরে অনন্যা হাটতে লাগলো। গাড়ির হর্ণ ওর কানেই আসছে না, ফুটপাত দিয়ে হাটতে থাকা কিছু কিছু মানুষের সাথে অনন্যার ধাক্কা লাগে। সেদিকে অনন্যার কোনো খেয়াল নেই। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল বাজালো।
পূন্য হলরুমে বসে ছিলো, উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। অনন্যাকে দেখে হাসলো। কিন্তু অনন্যা কোনো কথা না বলে ওর রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। পূন্য কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে রইলো, কি হলো অনন্যার? অন্যদিন তো এসেই গলা জড়িয়ে ধরে, বকবক করতে করতে পাগল বানিয়ে দেয়, আজ কি হলো? ওর চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেনো।
অনন্যা রুমে ঢুকেই কালো ডায়েরি টা নিয়ে বসে পড়লো। কয়েক মিনিটে ডায়েরির কয়েক টা পাতা লিখে ফেললো,, দরজায় কেউ ধাক্কা দিতেই অনন্যা উঠে দাড়ালো। ডায়েরি টা হাঁটুর উপরে থাকায় নিচে পড়ে গেলো। অনন্যার পায়ের ধাক্কায় বিছানার নিচে গেলো ডায়েরি টা। চোখ মুখ মুছে দরজা খুলে দিলো। পূন্যকে কিছুক্ষণ দেখলো, অনন্যার অনেক ইচ্ছে করছে পূন্যকে ওর মনের ভিতর জমে থাকা কষ্টের কথা বলতে, কিন্তু পারছে না, আর না কোনোদিন পারবে। যদি পারতো তাহলে তো ভালোই হতো। অনন্যা হঠাৎ পূন্যকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদতে লাগলো, পূন্য কিছুই বুঝতে পারলো না, ও কেনো কাঁদছে? কি হয়েছে?? পূন্য অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
— কি হয়েছে?? কাঁদছো কেনো? আমাকে বলো,,,
অনন্যা অনেকক্ষণ পর বললো,,
— ভাবি, আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই।
পূন্য ওর রুমে ঢুকে তিয়ানকে দেখলো,
কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে, তিয়ান। কি যেনো করছিলো, পূন্যকে দেখে হাসলো।পূন্যও হেসে বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ালো,, ঐ ছেলেটা আর এখানে বসে না। আগে তো প্রতিদিনেই এখানে বসে থাকতো, এখন আসে না।
অনন্যা জানালা দিয়ে বড় গাছটার দিকে তাকালো, আজকে বড় মিস করছে পুলককে, দেখতে ইচ্ছা করছে। বিড়বিড় করে বললো, “আমাকে মাফ করে দিও, পুলক।”
তিশা শপিং মল থেকে বেরুতেই রূপন্তকে দেখলো। মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলছে। তিশা হেসে দু পা এগিয়ে গেলো। কিন্তু রূপন্তর কাছে গেলো না। সে কেনো যাবে রূপন্তর কাছে। রূপন্ত আসুক তার কাছে। তারপর আবার চিন্তা করলো রূপন্ত তো তাকে দেখেই নি, তার কাছে আসবে কি করে?
রূপন্ত কথা বলতে বলতে পিছনে ঘুরলো,, তারপর আবার সামনের দিকে তাকালো,, হঠাৎ মনে হলো অপরিচিতাকে দেখলো, আবার ঘুরে দেখলো, হুম তাই তো। ও এখানে কি করছে?
রূপন্ত এগিয়ে এলো তিশার দিকে। তিশা এমন একটা ভাব ধরলো যেনো ও রূপন্তকে এই মাত্র দেখলো। তিশা মৃদু হেসে জিগ্যেস করলো,,
— কেমন আছেন?
— ভালো। আপনি কেমন আছেন?
— ভালো। এইখানে কি করছেন?
— এই তো একটা কাজে এসেছি। আপনি কি করছেন এখানে??
— শপিং করতে এসেছিলাম।
রূপন্ত কিছু বলতে যাবে তার আগেই তৃপ্তি এসে দাড়ালো। তৃপ্তি তিশাকে দেখে বললো,
— কে ওনি?? রূপন্ত
রূপন্ত তৃপ্তিকে দেখে বললো,
— ও তিশা,, ওর সাথে আমাদের কক্সবাজার পরিচয় হয়েছিল।
— আচ্ছা,, চলো, আমার শপিং হয়ে গেছে।
রূপন্ত তিশার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,,
— আচ্ছা তাহলে আসি।
রূপন্ত তৃপ্তির হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে হাটতে লাগলো। তিশা এক দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকলো,, সে বুঝতেই পারলো না কি হলো এটা! রূপন্তর সাথে এই মেয়েটা কে! রূপন্ত কি ঐ মেয়েটাকে ভালোবাসে? না তা কি করে হয়। রূপন্তকে তো আমি ভালোবাসি।
তৃপ্তি কিছুদূর আসার পর রূপন্তর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— মেয়েটা কে তুই ভালোবাসিস???
রূপন্ত তৃপ্তির দিকে তাকালো না,,, তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলো। কারন তৃপ্তিকে বলা ঠিক হবে না। তৃপ্তি পিছন থেকে ওর হাত ধরে বললো,,
—বল না,,, এই মেয়েটা কে তুই ভালোবাসিস?? মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর।
এবার রূপন্ত হাসলো। তৃপ্তির থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নিলো। তৃপ্তি ও হেসে বললো,,
— প্রেম করছিস,, আর ট্রিট দিবি না!! তা কি হয়
— আমি তোকে একবারও বলেছি যে আমি প্রেম করছি? সব সময় আমার পকেট খালি করার ধান্দা।
তিশার মনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে, বারবার ইচ্ছা করছে রূপন্ত কে কল দিয়ে জিগ্যেস করতে, এই মেয়েটা কে? কিন্তু পারছে না। কারন তার তো কোনো অধিকার নেই জিজ্ঞাস করার। তিশা রিক্সায় বসে, মোবাইল টা বের করলো। রূপন্তর নাম্বার টা লিখে আবার মুছে ফেললো।
নিবিড় মিতুর হাত ধরে হাটছে, নদীর পাড় নিবিড়ের অনেক প্রিয়। প্রায় সময়ই নিবিড় এই জায়গায় বসে থাকে। মন ভালো হয়ে যায় এইখানে আসলে। আগে সব সময় তার সাথে পূন্য থাকতো। কিন্ত আজ মিতু সাথে, ওর মন ভালো করার জন্য। খারাপ লাগছে না, মিতুর সাথে হাঁটতে। নিবিড় নদীর ঢালু পাড় টাই বসে মিতুকে ইশারা করলো বসতে। মিতু ওর পাশে বসলো। নিবিড় নদীর পানির দিকে তাকালো। আকাশ টা নদীর পানিতে দেখা যাচ্ছে। কমলা, হলুদ, লাল, কালো রং ধারন করেছে। অনেক সুন্দর লাগছে, নিবিড় আকাশের দিকে তাকালো। অনেকদিন পর এমন আকাশ দেখলো।
গোধূলি লগ্ন,, প্রেম লগ্ন। প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য ভালো একটা সময়। গোধূলি বেলা, নদীর তীর দুটোর সংমিশ্রণে প্রকৃতিটা একটা অন্যরূপ ধারণ করে, রোমান্টিকতা বেড়ে যায়।
নিবিড় মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,,
— কি, মন ভালো হয়েছে???
—না,,, আপনাকে বললাম থাকি,, আপনি চলে এলেন
— আমি তো বললাম, তুমি থাকো। থাকলে না কেনো?
— আপনি থাকলেন না তো, তাই
নিবিড় হাসলো। পাগলী মেয়ে,, ভালোবাসে অনেক।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে, চারদিক নিকষ কালো, অনন্যা জানালা দিয়ে সেই বড় গাছটার দিকেই তাকিয়ে আছে। পুলক কে খুব মিস করছে।
পুলক অফিস থেকে বাসায় এসে শুয়ে পড়লো। পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে অনন্যার নাম্বারে লেখলো, “Miss you” লিখে পাঠালো।
তারপর হাসলো, সত্যিই অনেক Miss করছে অনন্যা কে।
অনন্যা মোবাইলটা টুং করে একটা শব্দ হলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে মেসেজটা দেখলো। তারপর অনন্যা লিখলো,
“সরি”
পুলক মেসেজটা দেখে যতোটা না খুশি হলো তার থেকেও বেশি অবাক হলো। খুশি হলো কারন এই প্রথম তার মেসেজের রিপ্লে দিলো। আর অবাক হলো কারন ও সরি কেনো বললো??
অনন্যা মোবাইল টা রেখে বাসার ছাদে গেলো। সাদা রংয়ের জামা পড়া, গায়ের সাথে মিশে লেগে আছে। সামনের চুলগুলো পিছনে একটা কাটা দিয়ে বাধা। ছাদের রেলিং এর উপর উঠে দাড়িয়ে গেলো ছাদের ভিতরের দিকে মুখ করে দাড়ালো,পিঠ টা বাইরের দিকে দিলো ,, হাত দুটো পাখির ডানার মতো মেলে দিলো।
তিয়ান অনেকক্ষণ ধরে বসে কাজ করছে, এখন একঘেয়ে লাগছে, একটা কফি হলে ভালো হতো। তাই পূন্যকে বললো,
— পূন্য, কফি এনে দাও তো।
পূন্য উঠে দাড়ালো, এতক্ষণ গল্প পড়ছিলো শুয়ে শুয়ে। রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে মগে ঢেলে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য,, হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে পূন্যর পা থেমে গেলো। মনে হলো ভারী কিছু পড়ে গেছে উপর থেকে।
#গোধূলি_লগ্ন
#Tabassum_Tajnim
#part_25+26
পূন্য উঠে দাড়ালো, এতক্ষণ গল্প পড়ছিলো শুয়ে শুয়ে। রান্না ঘরে গিয়ে কফি বানিয়ে মগে ঢেলে পা বাড়ালো যাওয়ার জন্য,, হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দে পূন্যর পা থেমে গেলো। মনে হলো ভারী কিছু পড়ে গেছে উপর থেকে। কৌতুহল বশত পূন্য রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিলো,, তারপর এক দৌড়ে বাইরে গিয়ে অনন্যার মাথাটা ওর হাটুর উপরে রাখলো, মাটিতেই বসে পড়লো। পাশে মোর্শেদা বেগম আর তিয়ান ও এসে বসলো।
চুলে লাগানো কাটা টা মাথায় ঢুকে গেছে। অনন্যা কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু বলতে পারলো না। অনন্যার দৃষ্টি টা স্থির হয়ে গেলো, মোর্শেদা বেগম চিৎকার দিয়ে অনন্যার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। পূন্য উঠে দাড়িয়ে গেলো,, নীল রংয়ের শাড়িটা তে রক্ত লেগেছে। নীল আর রক্তের রং মিলে কেমন একটা রং হয়ে গেছে। শাড়ির নিচের দিকে তাকাতেই মনে হলো পূন্য বমি করে দিবে। মাথা কেমন জানি করছে, বারবার অনন্যার ঠান্ডা স্থির দৃষ্টিটা চোখে ভাসছে,, পূন্য ওর হাতটা দেখলো,, হাতটা অনন্যার মাথার নিচে ছিলো,,, রক্তে লাল হয়ে গেছে। পূন্য আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না, গলগল করে বমি ছেড়ে দিলো,, মাথাটা ঘুরে পড়ে গেলো,,
পূন্য পড়ে যাওয়ার আগেই তিয়ান ধরতে চেয়েছিলো,কিন্তু পারলো না তিয়ান পূন্যকে পাজা কোলে তুলে নিলো।
মোর্শেদা বেগম তিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন, — ভিতরে নিয়ে যাও। চোখের সামনে এমন প্রথম দেখেছে তো তাই নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি।
কথাটা শেষ করে নিরবে অনন্যার দিকে তাকুয়ে দু পোটা পানি ফেললো। তিনি ভাবতেও পারছেন না এই মেয়েটাও কেনো এমন করলো। কি করান থাকতে পারে এই মেয়েটার আত্মহত্যা করার পিছনে। কেনো তিশানের মতো এই মেয়েটাও নিজেকে শেষ করে দিলো। অনন্যার মৃত্যু তার চোখে সামনে বারবার তিশানের মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করছে, বার বার ভেসে উঠে তিশানের সেই নিথর নীল বিষাক্ত দেহটা,, মুখ দিয়ে গড়িয়ে পরা ফেনার শুকনো অংশ। মোর্শেদা বেগমের বুক ফেটে আর্তনাদ আসতে চাইছে, কিন্তু আসতে দিচ্ছে না। এমনিতেই ছেলের বৌয়ের এই অবস্থা।
তিয়ান পূন্যকে বালিশে শুইয়ে দিলো। নরম গলায় ডাকলো,
— পূন্য, পূন্য,,
পূন্য কোনো সাড়া না দেওয়ায় তিয়ান আর ডাকলো না। ওর রক্ত মাখা হাত, আর শাড়ি দেখে খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলো। বুক চিরে একরাশ কষ্ট বেরিয়ে এলো। সবাই সবার কষ্ট কারো না কারো সাথে শেয়ার করতে পারে, কিন্তু সে পারে না। পূন্য ও পেয়ে গেছে কারো বুকে মাথা রেখে কাঁদার মতো জায়গা। শুধু আমিই পেলাম না, আমি কার বুকে মাথা রেখে কাঁদবো!! আরো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গামছা ভিজিয়ে পূন্যর হাতে লেগে থাকা রক্তটা মুছে দিলো। শাড়ি টা পাল্টাতে হবে। আর তো কেউ নেই, তাকেই এখন শাড়িটা পাল্টে দিতে হবে। কিন্তু তার হাত পূন্যর শাড়ি অব্দি যাচ্ছে না। বড়ো অদ্ভুত লাগছে,, এই শাড়ির আঁচল কতোবার পূন্য শরীর থেকে টেনে খুলেছে,, কিন্তু আজ পারছে না কেনো?? তারই স্ত্রী। আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তাকে স্পর্শ করার। কিন্তু পূন্য!!! না সে কখনো নো আমাকে বাধা দেয় নি। সে তার কর্তব্য পালন করেছে আমার প্রতি।কিন্তু এখনো ভালোবাসতে পারে নি।
কিছুক্ষণ পূন্যর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর শাড়ির আঁচলের দিকে হাত দিলো।
মিতু ফুচকার দোকানটা দেখে এক দৌড়ে ফুচকার দোকানের কাছে গিয়ে থামলো। নিবিড় মিতুর পিছু পিছু গেলো। মিতু নিবিড়কে একবার দেখে তারপর ফুচকাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বললো,,
— মামা, দুই প্লেট ফুচকা দেন তো।
নিবিড় বেশ অবাক হলো,, এই মাত্র রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে বেরিয়েছে আর এখন দুই প্লেট ফুচকা!! ভাবতেই নিবিড়ের কেমন জানি লাগলো। মিতু নিবিড় কে বললো,
— আপনার জন্যও কি দুই প্লেট অর্ডার দিবো?
মিতুর প্রশ্ন শুনে নিবিড় চমকে উঠলো, এই ফুচকা জিনিসটা তার একদম প্রিয় না। এর থেকে দশ হাত দূরে দূরে সে থাকে। নিবিড় অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
— না,, আমি খাবো না। তুমি খাও।
মিতুর কিছু বললো না,, পিছনে রাখা একটা বেঞ্চে বসে পড়লো। তারপর ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে একটার পর একটা ফুচকা মুখে দিতে লাগলো। নিবিড় পাশের দোকান থেকে চা নিয়ে মিতুকে দেখতে লাগলো। কিভাবে খাচ্ছে এগুলো? অবশ্য ফুচকা খাওয়ার সময় ওকে খুব সুন্দর লাগছে। মিতুর এই চেহারা নিবিড়কে আবার প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে। মিতুকে দেখতে দেখতে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। ঠোঁট চেপে ধরলো। পুড়ে গেছে,, ছ্যাকা খেয়েছে। কয়েকবার কাপে ফু দিয়ে আবার চুমুক দিলো।
এক কাপ চা শেষ করতে করতে মিতু দুই প্লেট ফুচকা শেষ করে ফেলেছে। খাওয়া শেষ হতেই মিতু উঠে নিবিড়ের কাছে এলো। তারপর বললো,,
— চলেন, খাওয়া হয়েছে গেছে।
নিবিড় ফুচকাওয়ালা কে টাকাটা দিয়ে মিতুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো।
মিতু কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বললো,,
— এভাবে কেউ হাত ধরে!! লাল হয়ে গেছে একেবারে।
নিবিড় গাড়িতে উঠে গাড়িটা স্টার্ট দিতেই আবার মিতু বললো,,
— পানি খাবো,, ঝাল লেগেছে,,, পানি ই ইইইইই
— আবার পানি কেনো??
— ফুচকাতে ঝাল দিতে বলেছিলাম। এখন ভীষণ ঝাল লাগছে। পানির সাথে মিষ্টিও নাহলে আইসক্রিম নিয়ে আসবেন। তাড়াআআতাড়িইইই,,
নিবিড় গাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের একটা দোকানে ঢুকলো। একটু পর পানির বোতল নিয়ে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে মিতুর দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিলো।
মিতু পানির বোতল টা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেক বোতল পানি খেয়ে নিলো। তারপর নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— মিষ্টি কোথায়?
— মিষ্টি এইখানে পাওয়া যায় না। পানি খাও।
“কিপটা মানুষ,, মিষ্টি আনলো না”
মিতু বিড়বিড় করে বললো।
নিবিড় কিছু বলতে গিয়েও বললো না। গাড়ি স্টার্ট করলো, এখন বাসায় যেতে হবে। নাহলে বাসায় মা খন্ড যুদ্ধ বাধিয়ে দিবে।
আয়েশা আক্তার সেই কখন থেকে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে,, সন্ধ্যা হয়ে গেছে, এখনো আসে নি। নিবিড় একা গেলে এতো টেনশন করতো না সাথে বউ আছে, তাই টেনশন করছে। সোফায় বসে সাত পাঁচ ভাবছিলো, ঠিক তখনি কলিং বেল বাজলো। তিনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন মিতুর কথা বলার আওয়াজ, হাসির শব্দ। তার কেনো জানি রাগ উঠে গেলো।
নিবিড় বারবার মুখে আঙুল দিয়ে মিতুকে নিরব থাকতে বলছে। কিন্তু মিতু শুনছেই না।
আয়েশা আক্তার দরজা খুলে দিলেন। মিতুর দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে থাকালেন,,, খানিকক্ষণ পর বললেন,,
— এত হাসি কিসের?? এত দেরি করে বাসায় আসলে কেনো? এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে?? আর মাথায় কাপড় দেও নি কেনো?? ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ
মিতুর মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। চোখ দুটো ভিজে উঠলো। শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথায় কাপড় টেনে নিলো।
আয়েশা আক্তার সেদিকে খেয়াল না করে বললো,
— যাও,, হাত মুখ ধুয়ে একটু জিরিয়ে নাও।
মিতু রুমে চলে এলো। পিছন থেকে নিবিড় ওর কাঁধে হাত রাখলো, মিতু নিবিড়ের দিকে ঘুরে দাড়ালো,,
নিবিড় বললো,
— মন খারাপ হয়েছে মায়ের কথায়?
— না,,,ওনি সবসময় এমন করেই কথা বলেন। আর ওনি তো সব ভালোর জন্যই বলেন।
নিবিড় মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো,, হুম ভালোর জন্যই করে বটে। নিবিড় বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। একরাশ ক্লান্তি এসে ভর করলো।
পূন্য চোখ মেলে উঠে বসলো। শাড়ি চেঞ্জ করে দিয়েছে কেউ, হাতে লেগে থাকা রক্ত টাও মুছে দিয়েছে। এলোমেলো পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলো। পায়ে থাকা নুপূর গুলো বাজছে। শেষ সিড়ি টার কাছে যেতেই মোর্শেদা বেগম ওকে ধরে ফেললো। তারপর বললো,
— তুমি নিচে নামতে গেলে কেনো? শরীরের এই অবস্থা নিয়ে।
—না, আমি ঠিক আছি।
চোখ পড়লো, তিয়ানের পাশে বসে থাকা লোক আর মহিলাটার উপর। মহিলা টা আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে। লোকটা চুপ করে আছে কিন্তু চোখ দিয়ে পড়ছে।
নিরবতা ভেঙে লোকটা বললো,
— বাজান,, আমার মাইয়্যার যাতে পোস্টমর্ডেম না হয়। বাজান তোমার দুইডা পায়ে ধরি,, আমার মাইয়্যা ডারে যাতে ওরা কষ্ট না দেয়।
তিয়ান কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বললো,,
— দেখুন, এটা পুলিশের আওতায় চলে গেছে। এখন তো,,,
কথাটা শেষ করতে পারলো না, তার আগেই অনন্যার বাবা বললো,,
— বাজান,, আমি তোমার দুইডা পায়ে পরি বাজান,, মরার আগে তো আমার মেয়েডারে বাঁচাইতে পারি নাই। অহন মরার পড়ে ওরে না বাঁচাইতে পারলে, আমি নিজেরে মাফ করতে পারমু না।
তিয়ান উঠে দাড়ালো, মোবাইলটা বের করে ওর ফুপার কাছে কল দিলো। তিনি রাজনৈতিক মানুষ, তিনি অবশ্যই পারবেন।
চলবে
#গোধূলি_লগ্ন
#Tabassum_Tajnim
#part_26
তিয়ান উঠে দাড়ালো, মোবাইলটা বের করে ওর ফুপার কাছে কল দিলো। তিনি রাজনৈতিক মানুষ, তিনি অবশ্যই পারবেন।
দীর্ঘ চার ঘন্টা হাসপাতাল আর পুলিশি ঝামেলা পার করে অনন্যাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসা হলো। পোস্টমর্টেম করতে দেওয়া হয় নি। ডাক্তার শুধু বলেছেন, চুলের কাটা টা মাথায় ঢুকে যাওয়ার কারনেই মৃত্যু হয়েছে। শেষবারের মতো অনন্যাকে বাসায় আনা হলো। মাথায় ব্যান্ডেজ করা অনন্যার মুখের উপর থেকে সাদা কাপড় টা সরাতেই পূন্য চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। কেনো করলো এমন? কি এমন হয়েছিলো যার জন্যে অনন্যা আত্মহত্যা করলো?
তিয়ানের শরীর না চললেও যেতে হলো ওদের সাথে। সারারাত না ঘুমুতে পারার ক্লান্তি তে কিছুই ভালো লাগছে না, অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজটা মারাত্নক ভাবে কানে লাগছে। নিজের গাড়ির স্পিড টা আরো বাড়িয়ে দিলো।
অনন্যার লাশ ওর গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেলো। পূন্য রুমে এসে চোখ বন্ধ করলো, কিন্তু চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে অনন্যার সেই শীতল চাহনি,, কথা বলার চেষ্টা কিন্তু বলতে না পারা, মুখে সেই চাপা কষ্ট, তারপর,,, পূন্য উঠে বসলো। চারদিকে অনন্যার হাসি অনন্যার কথা বলার শব্দ। পূন্য কান চেঁপে ধরলো। কিছুই ভালো লাগছে না।
সারারাত জেগে ছিলো সবাই। তিয়ান ওদের সাথে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো। সকাল দশটায় ওখান থেকে এসে লম্বা শাওয়ার নিলো। সারারাতের ক্লান্তি এক নিমিষেই চলে গেলো, পূন্যর হাত থেকে কফির মগটা নিতেই। কেউ কোনো কথা বলছে না, রুমের এক প্রান্তে রাখা সোফায় বসে কফি খাচ্ছে তিয়ান, আর বিছানায় শুয়ে আছে পূন্য। সারারাত সে নিজেও ঘুমুতে পারে নি। শাশুড়ির কাছে বসে ছিলো। এই মাত্রই রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
তিয়ান দূর থেকে পূন্যকে দেখলো। পূন্যর কাছে এসে বললো,,
— তুমি ঠিক আছো তো?
পূন্য তিয়ানের বুকে মুখ লুকালো, ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তিয়ান কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু পূন্যর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। অনেকক্ষণ পর আপনা আপনিই পূন্যর কান্নার বেগ কমে এলো। একেবারে নিরব হয়ে গেলো। কোনো শব্দ হচ্ছে না। পূন্য জ্ঞান হারিয়েছে। পূন্যকে বিছানায় শুইয়ে দিলো, চোখে পানির ঝাপটা দিতেই চোখ খুললো। বারবার কেনো জ্ঞান হারাচ্ছে পূন্য!
তিয়ান বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো, তার কিছুই ভালো লাগছে না। অফিস যেতে পারলে ভালোই হতো। তিয়ান রেডি হয়ে নিলো,, কিছুক্ষণ বসে থেকে কি যেনো ভাবলো, তারপর আবার চেঞ্জ করে নিলো। এখন অফিসে যাওয়া ঠিক হবে না। পূন্যর এই অবস্থায় ওকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না।
মোর্শেদা বেগম দুপুরে খাওয়ার টেবিলে বসলেন,, পূন্যও পাশে বসে আছে, ভাত একদম খেতে পারছে, বারবার অনন্যার মুখ ভেসে উঠছে।
একটা দিন অনন্যাকে ছাড়া কেটে গেলো। অনন্যা কেনো চলে গেলো, সেটা এখনো জানা হলো না।
শিউলি বেগম এইসব কাহিনী এর পরদিন শুনে সাথে সাথেই পূন্যর শশুড়বাড়ি যান তৃপ্তি কে সাথে নিয়ে। পূন্য মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলো। শিউলি বেগম মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে পূন্যকে বললেন,,
— মা ভয় পাস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না,, বেয়ান আমাকে বললো!
পূন্য মাথা ভাসিয়ে বললো,,
— করি তো।
পাশে বসে থাকা মোর্শেদা বেগম বললো,,
— একদম মিথ্যে কথা। খাওয়ার প্রতি ওর কোনো খেয়াল নেই।
প্রায় তিন চার ঘন্টা মেয়ের সাথে কাটানোর পর যাওয়ার পালা। শিউলি বেগম তার বেয়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। তৃপ্তিকে রেখে গেলো পূন্যর কাছে। তৃপ্তি থাকলে পূন্য অনন্যার মৃত্যু শোক থেকে যদি একটু বেরিয়ে আসতে পারে।
তৃপ্তি পূন্যর রুমটা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। একটা কলম হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে বললো,
— বুবুন,, এক গ্লাস পানি দাও। গলা শুকিয়ে গেছে।
পূন্য লক্ষ করলো রুমে পানি নেই। তাই নিচে গেলো পানি আনতে।
মোর্শেদা বেগম পান চিবোচ্ছিলেন। পূন্যকে দেখে বললেন,,
— বৌমা, তৃপ্তির জন্য অনন্যার রুমটা ভালো করে গুছিয়ে দিতে বলি!! ও ঐখানেই থাকুক?
পূন্য মাথা নেড়ে হ্যা বললো,,গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে বললো,
— মা, রুম টা আমিই গুছিয়ে দিচ্ছি। বুয়া বরং অন্যকাজ গুলো করে নিক।
— তোমার শরীরটা তো ভালো না। তুমি পারবে না।
— না,, আমি ঠিক আছি।
— ঠিক আছে।
পূন্যর তৃপ্তিকে পানির গ্লাসটা দিলো। তারপর বললো,
— অনন্যার রুমে থাকলে কি তোর কোনো প্রবলেম হবে??
তৃপ্তি হেসে বললো,,
— না, প্রবলেম হবে কেনো!
—তাহলে, তুই বাসাটা ঘুরে দেখ, আমি রুমটা গুছিয়ে আসি।
তৃপ্তি হেটে মোর্শেদা বেগমের রুমে ঢুকলো। মোর্শেদা বেগম বারান্দায় বসে তখন অনন্যার আর তার ছোটছেলের কথা মনে করে কাঁদছে। তৃপ্তিকে দেখে চোখের পানি মুছে ওকে কাছে ডেকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিলো ওর কাছে। তৃপ্তি চেয়ার টা কাছে টেনে বসলো।
পূন্য অনন্যার রুমে ঢুকে প্রথমেই পড়ার টেবিলে গেলো। বইগুলো একটা একটা করে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো। কোথায় সেই ডায়েরি টা। এইখানেই তো দেখেছিলাম। বিছানার দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো মোবাইল টার উপর। পূন্য মোবাইলটা হাতে নিলো। মোবাইল প্যার্টান লক করা। প্রথম বার ট্রাই করতেই লক খুলে গেলো। পূন্য অনেকবার দেখেছিলো অনন্যাকে মোবাইলের প্যার্টান খুলতে, তাই অনুমানে ঢিল ছুড়তেই লেগে গেলো। পূন্য একটা মেসেজ দেখে পূন্য মেসেজ টা পড়তে লাগলো,
“বাহ্ বা,,, আজ আমার প্রেম সার্থক হয়েছে,, ম্যাডাম আমাকে রিপ্লাই দিয়েছে। কিন্তু ম্যাডাম সরি বললেন কেনো??”
পূন্য অনেকটা সময় নিয়ে প্রত্যেকটা মেসেজ পড়লো। বুঝতে চেষ্টা করলো ছেলেটা কে! সেই বড় গাছের নিচে বসে থাকা ছেলেটায় যে এই ছেলেটা সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। এই ছেলেটা এখন কি করবে? আচ্ছা এই ছেলেটা কি জানে অনন্যা আর নেই। পূন্য মোবাইলটা রেখে বিছানা উল্টিয়ে দেখলো, বিছানার নিচে ডায়েরিটা আছে নাকি। বিছানার নিচে ডায়েরি নেই। আলমারির সব কয়টা কাপড়ের ভাজ চেক করে নিলো, কিন্তু পেলো না। তাহলে অনন্যা ডায়েরিটা কোথায় রাখলো। ভাবতে লাগলো, দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তিয়ান দাড়িয়ে আছে।
তিয়ান একটু আগে এসে দরজার কাছে দাড়াতেই দেখলো, পূন্য হন্য হয়ে কি যেন খুজছে আলমারি তে টেবিল আর বিছানাতেও তল্লাশি হয়েছে তা বুঝায় যাচ্ছে। টেবিলে রাখা বই গুলো, বালিশ বিছানার চাদর ফ্লোরে পরে আছে। কি খুঁজছে পূন্য,,,
তিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,
— কি খুজছো, সব কিছু উলট পালট করে!
— কি খুজবো! তৃপ্তি এসেছে, ও এই রুমে থাকবে তাই রুমটা গুছিয়ে দিবো।
পূন্য তিয়ানকে দেখলো, কথাটা বিশ্বাস হয় নি মনে হয় তিয়ানের।
তিয়ান হাসলো,, সে ভাবলো পূন্য কিছু খুঁজছে, কিন্তু পূন্য তো রুম গুছাচ্ছে তৃপ্তির জন্য। ও গলার টাই টা ঢিলে করে রুমের দিকে গেলো। এই একদিন একরাত তারপর দিয়ে কি গেছে সে নিজেও জানে না। অফিসে গিয়েও মন ঠিকলো না, তাই বাসায় চলে এলো। রুমে ডুকে কোনোমতে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে পড়লো। গত দুই রাত ধরে ঘুমাতে পারে না সে। চোখ বন্ধ করলো।
সবকিছু আবার আগের মতো রাখলো,, বিছানার নতুন চাদর পাতলো। মোবাইলটা টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে নিচে পড়ে গেলো। নিচু হয়ে মোবাইলটা তুলার সময় চোখটা বিছানার নিচে গেলো, একটা সাদা পাতার একাংশ বেরিয়ে আছে। পূন্য এগিয়ে গিয়ে পাতা টা টান দিলো। ওপাশটা ভারী লাগলো, আস্তে আস্তে করে টেনে বের করলো। চোখে মুখে আনন্দের ঝলক খেলে গেলো। এইতো সেই কাঙ্ক্ষিত ডায়েরি। পূন্য ডায়েরিটা আর মোবাইল টা ঐ রুমের আলমারি তে জামাকাপড়ের ভাজে রেখে দিলো। তারপর আলমারি টা লাগিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রাত সাড়ে বারোটা,,
তৃপ্তি গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে, তারপরেও মুখের উপর হাত নাড়িয়ে শিউর হয়ে নিলো পূন্য। না ঘুমিয়েই আছে। উঠে ডায়েরি টা বের করলো। টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে ডায়েরিটা মেললো। হাতের লেখা খুব সুন্দর। এই ডায়েরি পড়বে বলেই আজ তৃপ্তির সাথে থাকলো।
ডায়েরির প্রথম কয়েকটা পাতা খালি ছিলো। পরের পাতা গুলোতে লেখা আছে।
১০.০১.২০১৮
নতুন জায়গা, নতুন মানুষ, মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে । কিন্তু কি আর করা, পড়ালেখার জন্য এখানে থাকতে হবে। ওরা সবাই খুব ভালো। মা বাবা যদি এখন আমার সাথে থাকতো তাহলে খুব ভালো হতো।
১৫.০১.২০১৮
প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেললাম,, কিন্তু আমার এ ভালোবাসার কোনো মূল্য হয়তো তার কাছে নেই। তাতে কি! আমি ভালোবেসেছি, আচ্ছা ভালোবাসা কি এমনি হয়! তার কাছে যেতেই হার্টবিট বেড়ে যায়। তার চোখের দিকে তাকাতেই কেমন যেন লজ্জা লাগা।
২১.০১.২০১৮
মানুষটা আমার বড্ড কেয়ার করে। আমি সঠিক মানুষের প্রেমেই পড়েছি, ভূল করিনি। তার কাছ থেকে ভালোবাসা না পেলেও, তাকে ভালোবেসে যাবো। এমন মানুষকে ক জনেই বা ভালোবাসতে পারে।
০৬.০২.২০১৮
তার চোখেও আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। সে ও আমাকে ভালোবাসে। আমার বড্ড ইচ্ছে করছে তাকে চিৎকার করে বলতে আমি ও তোমাকে ভালোবাসি।
colbe