জীবনসঙ্গী – পর্ব ৪

0
453

জীবনসঙ্গী
পর্ব ৪
Writer Tanishq Tani

সারারাত ঘুমাতে পারে না শশী,,কি করে ঘুমাবে বড্ড অসহায় লাগছে যে নিজেকে,,কেউ নেই পাশে,,

নিজের স্বামীটাই যখন কিছু বুঝলো না তখন অন্যের কাছে কি আর আশা করবো আমি,,,

রিশাদের উপর অভিমান করে মোবাইলটাও অফ করে রাখে,,যদিও শশী জানে রিশাদ আজ আর কল করবে না,,

ভোরের দিকে চোখটা লেগে আসছিলো,,নামাজ টা পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে,,চিন্তায় শরীরটাও দূর্বল লাগছে,,,
কখন যে চোখ দুটো লেগে আসছিলো বুঝতেও পারেনি,,
এতো তো ভালোবেসেছি রিশাদকে,,
আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়ে আজ নিজেই অবহেলায় জর্জরিত করছে প্রতিনিয়ত,,

এই শশী! এখনো ঘুমাচ্ছিস কেন?

ও মা তুমি,,এখন শরীর কেমন মা তোমার?

আমার কথা বাদ দে,,শোন না মোবাইল টা বন্ধ করে রাখছিস কেন? শোভনের মোবাইলে রিশাদ কতো বার কল দিয়েছে তোর মোবাইল খোলার জন্য,,,

দিক কল,,পরে কথা বলবো,,,
চলো তোমাকে ওষুধ খাইয়ে দেই,,,

আমার কিছুই লাগবে না,,তুই রিশাদের সাথে আগে কথা বল,,

বললাম তো বলবো,,মন না চাইলেও কি জোর করে কথা বলতে হবে তার সাথে আমার এখনি,, রেগে বলে,,

বেয়াদব মেয়ে মুখেমুখে কথা বলিস কেন? তোর প্রথম থেকেই এ বিয়েতে মন ছিলো না,,তাইতো আজও রিশাদ কে মেনে নিতে পারলি,,

ভালো যা খুশি কর,,আমি মরে গেলে বুঝবি,,মানুষের কত অপমান গঞ্জনা সহ্য করে তোরে এতো বড় করলাম কিন্তু তুই,, তুই তো বুঝিস ই না আমার কষ্ট,, নিজের মন যা চাই তাই করছিস,,,

আল্লাহ আমারে নেয় না কেন? মরে তোদের মুক্তি দেই,,তখন আর কেউ কোনোকিছু নিয়ে জোর করবে না,,,

এভাবে বলো না মা,,শান্ত হও,,

না হবো না শান্ত,,আমি মরে তোরে শান্তি দিয়ে যাবো রে শশী,,আমার চাপে বিয়ে টা করলি বলে রিশাদের প্রতি তোর এতো অনিহা তাই না,,

না মা তা না,,,তুমি ভুল ভাবছ,,,কাদতে কাঁদতে

আমি ঠিকই ভেবেছি,, আমি এতো কষ্ট করছি শুধু তোর সুখের জন্য,, আর তুই একটা কথা শুনিস না আমার,,,

মা তুমি শান্ত হও,,তোমার শরীর ভালো না মা,,
আমি এখনি কথা বলছি রিশাদের সাথে,,,

তোর যা খুশি তাই কর আমি আর কিছু বলবো না,,,
শশীর মা রাগ করে শশীর ঘর থেকে বের হয়ে যায়,,,

তোমাকে কি করে বোঝায় মা আমার ভেতরটা কিরূপ ভেঙে চুরে যাচ্ছে,,,

তুমি বলো আমি রিশাদ কে স্বামী রুপে মানি নি,,এই বিয়ে মেনে নেই নি,,তাহলে নিজের সব কিছু রিশাদ কে কি করে সঁপে দিলাম,,ভালোবাসি আমি রিশাদকে মা খুব ভালোবাসি,, আমার সমস্ত জুরে এখন শুধু রিশাদের বসবাস,,,

রিশাদের অবহেলা টা তুমি দেখো না মা,,ভালোবাসার মানুষের অবহেলা কি যে কষ্টের তা কি করে বুঝাবো তোমাকে আমি মা,,,

শশী চোখের জল মুছে বুকে কষ্ট নিয়ে রিশাদকে কল করে,,,

কল করা মাত্রই রিশাদ কল রিসিভ করে,,,

হ্যালো শশী! এই কি ব্যাপার মোবাইল টা বন্ধ করে রেখেছিলে কেন তুমি?

চার্জ ছিলো না তাই,,এই প্রথম মিথ্যা বললো,,তা না হলে যদি রিশাদ কষ্ট পাই,,,

ও আচ্ছা! তোমার মোবাইল বন্ধ পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম জানো তুমি,,আর কখনো এমন করবা না,,

শশী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে,,,

কি ব্যাপার হাসলে যে,,,

রিশাদ একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে,,,

এই তোমাকে কতোবার বলেছি না আপনা আপনি করবা না,,তুমি বলে ডাকতে পারো না
আচ্ছা কি বলবা বলো,,,

তোমার মা আমার মা কে বললো তোমাকে নাকি দিয়ে দিয়েছে আমাদের,,,

হ্যাঁ,,, তো?

রিশাদ আমার মা গরিব মানুষ এতো জিনিস কোথায় পাবে বলো,,তুমি একটু বুঝাও না তোমার পরিবারকে,,তুমি তো এখন আমার মায়ের সন্তানের মতোই,,, আমার ঘুম আসে না রিশাদ,,,

এসব কথা আমাকে কেন বলছো শশী,,বড়দের ব্যাপারে আমাকে জড়াবা না,,,তাছাড়া আমাদের সমাজে জামাতাকে কিছু তো দিতেই হয়,,সবাই দেয়,,তাহলে তোমাদের সমস্যা কিসের,,,আমারও তো মানসম্মান বলতে কিছু আছে নাকি?

সবার মতো তো আমরা না রিশাদ,,তুমি তো জানো আমাদের সিচুয়েশান,,, আমার মার পক্ষে এতোকিছু দেওয়া সম্ভব না,,,

এতো কিছু আমি জানি,,দেওয়ার যদি এবিলিটি না থাকে তো আমার মতো বড়লোকের ছেলেকো বিয়ে করেছ কেন?
তোমাদের মতো ছোটলোকরা শুধু নিতেই জানে,,দেওয়ার কথা আসলেই নাটক শুরু হয়,,,

রিশাদ,,,কান্না করে বলে,,

এই চুপ একদম,,মুডটাই নষ্ট করে দিছিস,,,
তোকে যে আমার বউ বানাইছে আমার বাবা মা তাতেই তোর ১৪ গুষ্টির ভাগ্য,,,
তুই শুনে রাখ যা যা বলেছি দিতে পারলে তোকে বাড়িতে নিয়ে আসবো নয়তো না,,,

রিশাদ কলটা কেটে দেয়,,,

রিশাদের হঠাৎ এমন পরিবর্তনে শশীর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়,,,,

এ কেমন জীবনসঙ্গী পেলাম আমি,,তাহলে কি লোকে ঠিকই বলতো,,আমার বাবা আমার মায়ের সাথে যা করেছে আমার সাথেও তাই হবে,,,

না! না একি ভাবছি,,রিশাদ এমন না,,
কিন্তু রিশাদ কেমন তাই তো বুঝতে পারি না আমি,,
একটা মানুষের এতো রূপ কেন,,,

শশীর তো এখন কান্না আসছে না ভয়ে,,চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে,,,কি হবে এখন ওর জীবনে,,,রিশাদ যদি ছেড়ে দেয় কি করে মুখ দেখাবে সমাজে,,মা তো মরেই যাবে কষ্টে,,,

আল্লাহ গো এমনটা করো না আমার সাথে,,আমি যে বড় অসহায় আল্লাহ,, রিশাদই এখন আমার শেষ আশ্রয়,,,

এভাবে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে,,,আর শশীদের বাড়িতে সবার চিন্তা বাড়তেই থাকে,,,রিশাদকে এসব নিয়ে কিছু বললেই খারাপ ব্যবহার করে,,২/৩ পর পর কল করে,,,শশী কল দিলে এখন বেশিরভাগ সময় ফোন ব্যস্ত পায় রিশাদের,,ভাগ্যক্রমে কলটা ঢুকলেও সহজে ধরে না রিশাদ,,যদিওবা ধরে দুর্ব্যবহার করে,,

শশী না পারে সয়তে না পারে কাওকে বলতে,,সারারাত শুধু চোখের জলে বালিশ ভিজাই,,,
জানটা মনে হয় গলা পর্যন্ত এসে থেমে আছে,,

আপু রিমি আসছে,,,

ভেতরে আসতে বল শিমু,,

আচ্ছা,,,

কিরে নতুন বউ,,এতো চুপচাপ কেন? তোর বিয়ে আর তোর ভেতরি কোনো আমেজ নাই,,

এমনি রে,,বস,,,

কি হয়েছে শশী তোর কি হাল করেছিস নিজের,,আয়না দেখেছিস নিজেকে,,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে,,মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,,কি হয়েছে তোর দোস্ত,,,

শশী রিমিকে জরিয়ে ধরে ঢুকরে কেদে ওঠে,,

রিমির বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে ওঠে,,এভাবে কাদছে কেন শশী,,,

কি হয়েছে বল আমাকে,,শশীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে রিমি,,,

কিছু না রে,,তোদের ছেড়ে এই সব কিছু ছেড়ে চলে যাবো কিছুদিন পর তাই কান্না আসছে,,,চোখ মুছে,,

সত্যি বলছিস? রিমির কেন যেন শশীকে ঠিক লাগছে না,,

হ্যাঁ রে,,

তারপর বল,,শরীরের এমন অবস্থা কেন? খাওয়া দাওয়া কি শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আনন্দে ভুলে গেছিস?,,

আরে না! এমনিতেই কিছু খেতে ইচ্ছা হয় না,,বমি বমি লাগে,,মাথাটা ঘোরে হঠাৎ হঠাৎ,,

ডাক্তার দেখিয়েছিলি?

না রে,, বিয়ের ঝামেলায় হয়ে ওঠে নি দেখানো,,

পিরিয়ড কি ঠিকমতো হচ্ছে?

না রে গত ৩ ধরে বন্ধ,,

কি বলিস? তার মানে তো সুখবর আসছে,,আমি মনে আন্টি হবো দোস্ত,, শশীকে খুশিতে জরিয়ে ধরে রিমি,,,

শশীর খুশি হওয়ার কথা হলেও অজানা আতঙ্ক মনে জেগে ওঠে,,

তারপরও রিমিকে দেখানোর জন্য জোর করা হাসি দেয়,,

রিমি অনেকটা সময় শশীর সাথে কাটিয়ে সন্ধ্যার একটু আগে চলে যায়,,

শশীর ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে রিমির সংকেতে,,
সত্যি কি ও মা হতে চলছে,,,

নিজের অজান্তেই হাতটা পেটের উপর রাখে,,মাতৃত্বের অজানা টান অনুভব করে,,,
এতো কষ্টের মধ্যেও খুশি হয় শশী,,
খুশিতে সব ভুলে যায়,,রিশাদকে কল করে বসে আনন্দের সাথে,,,

হ্যাঁ বলো,,রিশাদ কঠিন স্বরে বলে,,

রিশাদ আমি মনে হয় মা হতে চলেছি,,, বাঁধন হারা খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে ওঠে কথাটা বলে,,

হোয়াট,,,রেগে ওঠে রিশাদ,,

তুমি খুশি হও নি,,,আনন্দের মাত্রা পরক্ষনেই চিন্তা আর ভয়ে রূপ নেয় শশীর,,,

এটা কোনো খুশির খবর বললে তুমি,,এটা কোনো সময় হলো বাচ্চা নেওয়ার,,, এখন আমার বাচ্চা চাই না,,এবোশন করে ফেলো,,

কি বলছ তুমি? এটা আমাদের প্রথম সন্তান রিশাদ,,আমি পারবো না শেষ করতে ওকে,,,,,
কেঁদে দেয় শশী,,,

ওপাশ থেকে রাগে গজগজ করতে করতে কল কেটে দেয় রিশাদ

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here