জীবনসঙ্গী – পর্ব ৫

0
286

জীবনসঙ্গী
পর্ব ৫
writer Tanishq Tani

শশী নিজের পেটে হাত দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে,,
শশী মা হয়ে যদি অনাগত সন্তানের প্রতি এতো মায়া অনুভব করতে পারে,,তাহলে রিশাদও তো পিতা ওর কেন ঐ সন্তানকে শেষ করতে বলায় কলিজা কাপলো না,,

এ কেমন পিতা,,পিতা কি এমন হয়,,পিতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার সংবাদ শুনে খুশি হওয়ার বদলে রাগ হতে পারে??,,

এমন জীবনসঙ্গী তো চাই নি আমি,,আমি চেয়েছি এমন জীবনসঙ্গী যে আমাকে বুঝবে,,আমার বিপদে পাশে থাকবে,,আমার সন্তানের গর্বিত পিতা হবে,,কিন্তু রিশাদের ভেতর এর একটা গুনও নাই,,,

না চাইতেও রিশাদের উপর প্রচন্ড রাগ হয় শশীর,,,

বিকালের দিকে রিশাদ শশীদের বাড়ি আসে,,,
শশী রিশাদকে ঘরে দেখে পাশ কাটিয়ে যাবে তার আগেই রিশাদ শশীর হাত টা টেনে কোমড় জরিয়ে ধরে,,

রাগ করেছ শশী,,রাগ করো না,,আমার মাথা গরম থাকায় তোমাকে তখন উল্টো পাল্টা কথা বলেছি,,তুমি তো জানোই তোমাকে আমি কতো ভালোবাসি,,,

রিশাদ আমাকে ছাড়ো,,তুমি বসো আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি,,,

না ছাড়বো,,থাকো না একটু কাছে,,কতোদিন পর আসলাম,,

শশীর বলতে ইচ্ছা করছিলো,,, কেন আসছো তুমি,,একা থাকা তো শিখিয়ে দিয়েছো এই ৬ মাসে,,চোখের কোনে জল চিকচিক করে,,

সরি শশী! এই দেখো কানে ধরেছি,,

ছি! কানে ধরছেন কেনো,,,আমার পাপ হবে আপনাকে কষ্ট দিলে,,,কিন্তু আপনার তো আর পাপ হবে না স্ত্রীকে কষ্ট দিলে,,,অভিমান করে বলে,,,

অভিমান করেছে দেখি আমার বউটা,,খুব অভিমান হয়েছো দেখি,,শশীর মুখটা দুহাতে নিয়ে,,
আচ্ছা বসো,, রিশাদ জোর করে শশীকে পাশে বসিয়ে শশীর ঘারে নিজের থুতনি লাগিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে বসে,,

এখনো তোমাকে উঠিয়ে নেই নাই,,এই সময় যদি তুমি গর্ভবতী হও,,আমার আত্নীয় স্বজন শুনলে কি বলবে বলো,,,বলবে কি রে রিশাদ শ্বশুরবাড়ি থেকে দেখি বউয়ের সাথে বাচ্চা ফ্রি নিয়ে এসেছিস,,,তোমার কি তখন ওসব শুনতে ভালো লাগবে বলো,,,তোমাকে নানা কটু কথা শুনতে হবে,,তোমার ভালোর জন্যই তো বললাম

চলো এবোশন টা করিয়ে ফেলি,,পরের মাস থেকে আমরা সন্তানের জন্য আবার চেষ্টা করবো,,প্লিজ লক্ষিটি আমার অনুরোধটা রাখো,,

রিশাদ আমি পারবো না,,আমি যে মা রিশাদ,,ওর জন্য আমি পুরো পৃথিবীর মানুষের সাথে লড়তে পারবো,,একটা মায়ের মন তুমি কেন কোনো পুরুষই বুঝতে পারবে না,,আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে,, তুমি মেনে নাও রিশাদ,,,

রিশাদের রাগে চোয়াল ফুলে ওঠে,,তারপরও নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে,,,

আচ্ছা ঠিক আছে,,আমার বউ যখন চাচ্ছে তাই হবে,,

সত্যি,,, রিশাদকে কাঁদো কাঁদো চোখে জরিয়ে ধরে,,,

হ্যাঁ সত্যি,, চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করে রিশাদ,,,

শশী,,,

অন্য রুম থেকে মায়ের ডাকে রিশাদকে ছেড়ে খুশিতে মায়ের কাছে যায় শশী,,,

বলো মা,,

মেয়ের মুখের হাসি দেখে শশীর মাও খুব খুশি হয়,,সন্তানের মুখের হাসিই তো সব মায়ের কাম্য

যা জামাই কে কাপড় চেঞ্জ করতে বলে খেতে দে,,,তোর বুদ্ধি যে কবে হবে,,,কখন এসেছে আর তুই এভাবে বসিয়ে রেখেছিস,,, রিশাদ দেখেই কিছু বলে না তোকে,,

যাচ্ছি মা,,শশী দৌড়ে রিশাদের কাছে যায়,,

আপনি রেডি রাইখেন সব আমি ওকে নিয়ে ১ ঘন্টার মধ্যে আসছি,,

কোথায় যাবা রিশাদ,,খাবা না,, রিশাদকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে শশী জিজ্ঞেস করে,,,

না খাবো না,,

তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছ রিশাদ,,ভয়ে ভয়ে,,

আরে ধূর পাগলি বউ আমার,,তোমার উপর কি রেগে থাকতে পারি বলো,,তোমাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যাবো তাই ডিনারের জন্য বুকিং করলাম,,বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তো তোমাকে নিয়ে কোথাও বাইরে যেতে পারলাম না আজ তোমাকে নিয়ে যাবো চলো,,

শশীর খুশি যেনো আকাশ ছোঁয়া,,
রিশাদের পছন্দমতো শাড়ি পড়তে চাইলেও রিশাদ শশীকে বোরকা পরতে বলে,,
উঠিয়ে নেওয়ার আগে কারো সামনে স্বামী স্ত্রী হয়ে বেড়াতে চাচ্ছে না রিশাদ,,,

শশীর কাছে এখন এসব কিছুই না,,রিশাদ যে ওর সিদ্ধান্ত মেনে ওকে আজ বাইরে ডিনার করতে নিয়ে যাচ্ছে এতেই শশী খুশি,,,

একটা রিকশা ভাড়া করে দুজন রওনা হলো,,রিশাদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মৃদু হাসে শশী,,এতো ভালো একটা জীবনসঙ্গী পেয়েছি অথচ তাকে নিয়ে কি না কি ভাবছিলাম,,ছি,,আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও,,আমি অনেক ভাগ্যবতী যে তুমি আমাকে রিশাদের মতো একজন জীবনসঙ্গী দিয়েছ,,

হঠাৎ রিকশা থামায় শশীর ঘোর কাটলো,,

নামো শশী!
শশীর রিকশা থেকে নেমে সামনের দিকে তাকাতেই হাসি উড়ে গেলো,,মুখে ঘন কালো মেঘ ছেয়ে গেলো,,
বুকের মধ্যে অজানা আতঙ্ক ছড়িয়ে গেলো,,

রিশাদ আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কেন? তুমি না বললে রেস্টুরেন্টে যাবে তাহলে,,,

দেখো শশী আমি তোমার স্বামী,, আমি যা বলবো করবো তা তুমি শুনতে বাধ্য,,আমি এই বাচ্চা এখন
চাই না,,নতুন বিয়ে হলো এখন হচ্ছে মজা করার সময় এখন বাচ্চা নিলে আমার মজার কি হবে,,,
চলো বাচ্চা এখনি এবোট করবা,,শশীর হাত ধরে টানতে টানতে,,,

রিশাদ প্লিজ এমটা করো না,,তোমার পায়ে পরি,,তুমিও তো পিতা তোমার কি কষ্ট লাগবে এই নিষ্পাপ প্রান টাকে শেষ করতে,,ও তো এখনো পৃথিবীর মুখ দেখতে পারলো না,,আমার বাচ্চা টাকে মেরো রিশাদ,,,ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে,,

একদম চুপ করে থাক,,আমি পিতা আমার দরকার নাই ওকে এখন তাই ও আসবে না,,আমার ইচ্ছায় সব হবে,,
তুই যদি না শুনিস তোকে এখনি দাড়িয়ে ডিভোর্স দেবো,,বল কি চাই তোর,, আমাকে না তোর পেটের সন্তানকে,,শশীর বাহু জোরে চেপে ধরে,,

আমার দুজনকেই চাই রিশাদ,, কান্নাজরিত স্বরে,,,রিশাদ বাহু চেপে ধরায় প্রচন্ড ব্যথা লাগে শশীর

এমন কেন করছ শশী,,যা বলছি শোনো না,,লক্ষি বউটা,,আবার তো হবেই আমাদের,,,

প্লিজ রিশাদ,,দয়াকরো আমার সন্তানের উপর,,তুমি তো পিতা এতো নিষ্ঠুর হয়ো না,,রিশাদের পা ধরে কাদে,,,

ঠিক আছে থাক তুই তোর সন্তান নিয়ে,, আমি চিরকালের জন্য চলে যাচ্ছি,, দেখি তোর সন্তান কার পরিচয়ে বড় হয়,,আমি তো আজকের পর থেকে তোকে বউ হিসেবে অস্বীকার করবো,,কি বলবি সমাজকে,,কার সন্তান তোর পেটে,,

রিশাদ,,আতঙ্কিত স্থির চোখে বলে শশী,,

চল বলছি,,

শশী রিশাদের কথা শুনে সব জবাব ভুলে যায় এতো নিষ্ঠুর হতে পারে কেউ,,পশুও তো নিজের সন্তানকে জীবন দিয়ে বিপদমুক্ত রাখে তবে রিশাদ কি পশুর থেকে অধম,,

শশীকে টেনে এবোশন করার জন্য নিয়ে যায়,, শত কাকুতি মিনতি করেও রিশাদের মন গলাতে পারে না শশী,,

দেহের অসহ্য কষ্ট আর ব্যথাকেও হার মানায় শশীর মমত্বের আর্তনাদ,, জীবন্ত লাশ হয়ে যায় শশী,,মা হয়ে নিজের সন্তানকে বাচাতে পারলো না,,

ডাক্তার বলেছে ওষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবা,,চলো,,
রাশেদ শশীর গায়ে হাত দিতেই গা ঘিনঘিন করে শশীর,,
মনে হয় শশীর সন্তান যেনো বলছে মা আমার খুনিটা তোমাকে ছুতে চাই মা,, দূরে যাও মা দূরে যাও,,

শশী নিজের হাত সরিয়ে নেয় রিশাদের হাত থেকে,,কিন্তু বেড থেকে উঠতেই মাথা ঘুরে পড়তেই রিশাদ ধরে ফেলে,,

বেশি তেজ দেখাইয়ো না,,বউদের এতো তেজ ভালো না,,রিশাদ জোর করে আবার হাতটা টেনে রিকশায় উঠিয়ে নিয়ে যায়,,

বাসায় এসে রিশাদ শশীর মাকে বলে শশী ব্যথা পেয়েছে ওষুধগুলো যেন ঠিকমতো খাইয়ে দেয়,,সাথে কিছু টাকাও দেয় শ্বাশুড়িকে রিশাদ,,

শশীর মার তো জামাতার এতো দায়িত্ববোধ আর মেয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখে মনটা খুশিতে ভরে ওঠে,,জামাতাকে ছেলে বানাতে গিয়ে মেয়ের কষ্ট ঢাকা পড়ে যায় শশীর মায়ের চোখে,,

এসব কথা যেন কাকপক্ষিও টের না পাই,,যদি পাই তাহলে শশীর জন্য তা মোটেও ভালো হবে না,, এসব বলে শশীকে আচ্ছা মতো শাসিয়ে যায় রিশাদ,,

শশী এখন চিৎকার করে কাঁদে না,, কেন কাদবে কার কাছে কাঁদবে,, কেউ তো নেই শশীর কষ্ট বোঝার মতো,,দুচোখ দিয়ে শুধু অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ে,,,জাহান্নামের আগুন রিশাদ যাকে আকড়ে এখন শশীকে বাঁচতে হবে,,শশী তো রিশাদের কাছ থেকে নিস্তার পাবে না,,

যদি এই সমাজের মানুষগুলোকে নিজের কষ্টের কথা শুনাতে যাই,,
তারা বলবে,,স্বামীর তো যুবক বয়স,,এমন করবেই,,ধৈর্য ধর ঠিক হয়ে যাবে একসময়,,
এই একসময় আসতে আসতে অনেক গৃহবধূর জীবনের সময় ফুরিয়ে যায় অকালে,,,

আচ্ছা যারা বলে ধৈর্য ধরতে,,
তারা কি পারবে ধৈর্য ধরতে,,পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ অন্যকে জ্ঞান দেওয়া,,
ঐ পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ বুঝতে পারবে জ্ঞান দেওয়া আর ধৈর্য ধরার মধ্যে কি তফাৎ,,,

এভাবে কেটে যায় দিন,, শশীকে রিশাদরা উঠিয়ে নেয়,,না পারে না শশীর মা রিশাদকে বাইক দিতে,,কারন ওতো টাকা তার মতো স্বামী পরিত্যক্তা মহিলার কাছে যোগার করা অসম্ভব,, যদিও শশীর মামীর কথা উপেক্ষা করে মামা তার আদরের ভাগনীর সুখের জন্য নিজের জমানো টাকা থেকে ২ লাখ টাকা রিশাদকে দেয়,,,

কিন্তু রিশাদ ও তার পরিবার যে এই টাকাতে খুশি হয় নি তা কিছুদিন পর তাদের আচরন থেকে শশী বুঝতে পারে,,

দিনে বাড়ির ছোটবড় সব কাজ শশীকে করতে হয়,,
আর রাতে শশীর উপর চলে রিশাদের পৈশাচিক শারীরিক অত্যাচার,,,
প্রায় প্রতি রাতে নেশা করে বাড়ি ফেরে রিশাদ,,
বোবা পুতুলের মতো বিছানায় পড়ে থাকতো শশী,,,

সব মুখ বুঝে সহ্য করে শশী,,কারন মা এবাড়িতে পাঠানোর সময় বলে দিয়েছিলো মেয়েরা লালশাড়িতে শ্বশুরবাড়ি যায় আর সাদা কাফনে বেড়োয়,,, তাছাড়া কই যাবে আর শশী,,মামাবাড়ি গিয়ে তো মামার বোঝা হতে পারবে না আর,,,

রান্না ঘরে দুধ জ্বাল দিচ্ছিলো আর ভাবছিলো শশী,,

ভাবি মন কই আপনার,, আরেকটু হলেই তো দুধ সব পড়ে যেতো,,তারপর আবার খালাম্মার গাইল শুনতে হতো আপনার,,,

আপনি জানেন ভাইজানের আগের বউটাও খালাম্মার ব্যবহারে টিকতে না পেরে গেছে গা,,
কাজের মেয়ের কথায় চমকে ওঠে শশী,,,

আগের বউ মানে,,, কি বলো শিউলি,,

না! না! কিছুনা,,

দাড়াও শিউলি,, আমার কসম লাগে তুমি আমার ধর্মের বোন হও,,দয়াকরে বলো কি বলছিলা,,শিউলির সামনে হাত জোর করে,,,

ভাবি কাওরে কইয়েন না,,আসলে রিশাদ ভাইয়ের আগে একটা বিয়ে হইছিলে,,রিশাদ ভাই নিজেই পছন্দ করে একা একা বিয়ে করছিলো,,কিন্তু খালা আর খালু ঐ মাইয়ারে পছন্দ করে নাই,,করবো কেমনে সারাদিন ক্লাব পার্টি করতো খালা খালুরে মানতো না,,আবার তার বাপেও কিছু দেয় নাই তারে,,
তাই খালা খালুর জোড়াজুড়িতে ভাইয়া তারে ছাইড়া দেয়,,আমার কি মনে হয় জানেন ভাবি ভাই তারে এখনো ছাড়ে নাই,,নইলে আপনাগো ১ বছর হয়ে গেলো এখনো বাচ্চা হয় না কেন,,,আবার কেমুন কেমুন ব্যবহারও করে আপনার লগে,,,স্বামী কি এমন হয়,,আমাগো স্বামী আছে না???

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here