রাগী টিচার যখন রোমান্টিক হাসবেন্ড – পর্ব 38

0
1671

#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৩৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–কিরে মিগু তোর ভাবিমনি কোথায়।ওকে দেখছি না যে।
–তুমি কাল সারারাত বাসায় আসো নাই কেনো!ভাইয়া তাই ভাবিমনি রাগ করে বাবার বাসায় চলে গেছে।
–ওর সাহস কি করে হয়।আমাকে না বলে যাওয়ার।একে তো কোনো খোঁজ খবর নেই না আমার।রাগ দেখানোর বেলা ঠিকি দেখায়।থাক আমি তোর বউমনিকে নিয়ে আসতে গেলাম।
–ভাইয়া আমি’ও যাব,তোমার সাথে।আমাকে নিয়ে যাবে।
–তুই’ও যাবি।চল তাহলে যাই।বলেই দুই ভাইবোন মিলে বেড়িয়ে পড়ল।
মুনতাহাদের বাসায় এসে কলিং বেলে চাপ দিতেই মুনতাহার মা এসে দরজা খুলে দিলো।শুভকে দেখে মুনতাহার মা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।কিন্তু জামাই বলে কথা,প্রথম বার বাসায় আসলো,অপমান করা যায় না।তাই তিনি তার রাগটা প্রকাশ করলো না।নিজের ভেতরে দমিয়ে রাখলো।শুভ কোনো কথা না বলে সোজা মুনতাহার কাছে চলে গেলো।মুনতাহা তার মায়ের সাথে রান্না করছিলো।শুভকে দেখে এগিয়ে আসলো।এই সময়টা খুব মিস করছিলো শুভকে।আর শুভ ঠিক সময়ে চলে আসলো।খুব খুশি হলো মুনতাহা।আবার বেশ কষ্ট লাগছে।কি করে শুভকে সবকিছু বলবে।সবকিছু শুনে শুভ যদি আবার ভুল বুঝে।ভেবেই মাথা কাজ করছে না।মুনতাহার।
–কার অনুমতি নিয়ে তুমি এখানে এসেছো।
–কার অনুমতি নেওয়া লাগবে।আপনি সেদিন রাতে কার অনুমতি নিয়ে সারারাত বাহিরে কাটিয়েছেন।
–আমাকে রাগিয়ে দিও না।এর ফল খুব খারাপ হয়ে যাবে।তোমার এত বড় দুঃসাহস হয় কি করে আমার অনুমতি ছাড়া বাহিরে আসার।
–তাহলে আমি কি করবো।কার জন্য ঐ বাসায় থাকবো।আপনার জন্য,যে কি না গিরগিটির মতো রং বদলে ফেলেছে।দুই দিন যেতে না যেতেই অবহেলা শুরু করে দিয়েছে।রাত করে বাসায় ফিরে।আমি কিছু বললে-ই রেগে যায়।আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না।সারারাত বাসার বাহিরে থাকে তার জন্য।
–ভাবি মনি তুমি এসব কি বলছো।তুমি ভাইয়াকে ভুল বুঝছো।তুমি আসলে আমার ভাইয়াকে এখনো চিনো নাই।আমার ভাইয়া যে তোমাকে কতটা ভালোবাসে তুমি নিজও জানো না।আমি ভাইয়া কে বলেছিলাম কয়টা দিন তোমাকে অবহেলা করতে।যাতে তুমি যে ভাইয়াকে ভালোবাসো সেটা নিজের মুখে ভাইয়াকে বলো।ভাইয়া তোমাকে অবহেলা করে তুমি তোমার নিজের অধিকারটা বুঝে না-ও।সেজন্য আমি ভাইয়াকে বলেছিলাম।তুমি ভাইয়াকে অনেক কথা শুনাইতে।ভাইয়াকে মূল্য দিতে না।কাছে টেনে নিতে না।সেজন্য ভাইয়া খুব কষ্ট পাচ্ছিলো।তাই জন্য আমি এসব করতে বলছিলাম ভাইয়াকে।আগে যদি যানতাম তুমি ভাইয়াকে ভুল বুজবে তাহলে কখনোই এমন বুদ্ধি ভাইয়াকে দিতাম না।
–কাকে কি বলছিস মিহু।যে,কি না এখনো আমার ভালোবাসা-ই বুজলো না।তাকে এসব বলে লাভ নেই।আসলে আমার কপাল টাই খারাপ।এমন একজনকে ভালোবেসেছি।যে আমি খেয়েছি কি না তার জানার প্রয়োজন মনে করে না।নিজে খেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে যায়।যার সাথে মন খুলে মনের কথা বলতে পারি না।কিছু বললে-ই অপমান করে।রাগ করছি কেনো,কথা শুনি না কেনো।তা জানার প্রয়োজন মনে করে না সে,রাত করে বাসায় ফিরি একবারো জোর খাটিয়ে বলে না।আমি থাকতে তোমার এত রাত করে বাসায় ফেরা লাগবে না কেনো।সারাটা রাত আমি বাসায় ফিরলাম না।একটা বার ফোন করে জানার চেষ্টা সে করেছে।বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি।অনেক হয়েছে।জোর করে কোনো সম্পর্ক তৈরি করা যায় না।আজ থেকে তুমি মুক্ত মুনতাহা।তোমাকে আর আটকে রাখবো না।তুমি তোমার ইচ্ছে মতো চলতে পারো।আমি তোমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিব।বলেই চলে যেতে লাগলো শুভ।
ডির্ভোসের কথা শুনে মুনতাহার বুকের ভেতর টাই ব্যাথা করতে শুরু করলো।সত্যি নিজের প্রতি খুব রাগ,ঘৃণা দুটোই হচ্ছে।সবকিছু নিজের হাতেই শেষ করে দিচ্ছে সে।আমি তো এমনটা চাই নাই।তাহলে এমনটা কেনো হচ্ছে।
–দেখলি কেমন বেয়াদব ছেলে।আমি আগেই বলেছিলাম এ ছেলে ভালো না।
–মা তুমি থামবে।উনি রাগ করে বলছে।উনি এতটা খারাপ না।উনি নিজের কষ্ট থেকে কথা গুলো বলছে।দোষ তো আমারো কম না।এক হাতে কোনোদিন তালি বাজে না মা।আমিও ওনাকে কখনো ভালোবাসার সুযোগ দেই নাই।কোথায় কোথায় অপমান করেছি।স্ত্রী হয়ে উনার প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করি নাই আমি।
–আরে ভাবিমনি,তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে দেখবে না-কি ভাইয়াকে আটকাবে।যা-ও গিয়ে ভাইয়াকে তাড়াতাড়ি ধরে আনো।মিহুর কথা মতো মুনতাহা দৌড়ে বাহিরে চলে গেলো।শুভ গাড়ির দরজা খুলতে যাবে।তার আগেই মুনতাহা শুভর হাত ধরে ফেললো।কারো হাতে স্পর্শ পেয়ে,পেছনে তাকিয়ে দেখলো মুনতাহা,তার হাত ধরে আছে।শুভ অন্য দিকে হয়ে বললো।
–কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমার হাত ছাড়ুন।আমাকে স্পর্শ করলে আপনার সুন্দর হাত নষ্ট হয়ে যাবে।
–তুমি আমার সাথে এমন করে কথা বলছো কেনো।ভেতরে আসো তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে।
শুভ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল।
–যাহ বলার এখানেই বলতে পারেন।মুনতাহা এবার শুভকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
–দয়া করে আমাকে ছেড়ে যাবে না।আমি খুব একা হয়ে যাব।তোমাকে আমার খুব দরকার।আমাকে মাফ করে দাও।শেষ একটা সুযোগ দাও।কথা দিলাম একজন আদর্শ বউ হয়ে দেখাবো।
–কথা বলা শেষ হয়েছে।আমি তাহলে যেতে পারি।মুনতাহাকে সরিয়ে দিয়ে বলল।
–তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।বলে শুভর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
–আমাকে ছাড়ো বলছি।তোমার সাহস কম না।আমার হাত ধরে টানছো।জানো আমি কে।
–মুনতাহার একটা মাত্র গুলুমুলু বর তুমি।
–আরে..
–কি হয়েছে জামাই জান।
–আমাকে ছেড়ে দাও।
–শুনো ডং করবে না।ডং একদম ভালো লাগছে না।তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। আমি একটা খুব বড় অন্যায় করে ফেলছি।
–এমন করে কথা বলছে আমি ওর দশ বছর সংসার করা জামাই।
–আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এর থেকে বেশি বছর সংসার করবো।যদি তুমি রাখো।
বাবা মহারাণী তুমি করে বলছে।আবার অধিকার’ও ফলাচ্ছে।আগেই জানি তাহলে ঔষধটা আগেই কাজে লাগিয়ে দিতাম।
–এই তো ভাবি মনি।ভাইয়াকে ধরে এনেছে।
–মা আমাকে খেতে দাও।অনেক ক্ষুদা লেগেছে।এই সব নাটক দেখতে আর ভালো লাগছে না।
–আরে আয়াশ তুমি।
–মিহু তুমি।
–তুমি এখানে কি করছো।
–আমার বাসায় আমি কি করবো।
–এটা তোমাদের বাসা।
–হ্যাঁ আয়াশ আমার ভাই।তোমারা আগে থেকে দুইজন দু’জনকে চিনতে নাকি।
–আরে হ্যাঁ ভাবি মনি।আয়াশ আমেরিকাতে থাকতে আমাকে খুব সাহায্য করেছে।
–কিরে আয়াশ,কোনোদিন তো বলিস নাই মিহুর কথা।যা তোর গল্প কর তোর ভাইয়ার সাথে আমার কি জরুরী,কথা আছে।আয়াশ আর মিহু গল্প করতে করতে চলে গেলো।
মুনতাহা শুভকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।সেই তখন থেকে চুপ করে আছে কিছু বলছে না।
–কি হলো কথা বলছো না কেনো।ডেকে এনে চুপ করে বসে আছো কেনো।
–আগে বলো আমাকে ভুল বুজবে না।
–আরে বাবা বলবে তো কি হয়েছে।
–আমি একটা খুব বড় অন্যায় করে ফলছি।মাথা নিচু করে বলল।
–আসল কথাটা বলবে নাকি আমি চলে যাব।
–যাবে না।প্লিজ আমি সবকিছু বলছি।তারপরে মুনতাহা শুরু থেকে সবকিছু বলল শুভকে।সবটা শুনে শুভর মাথায় হাত।
–এটা তুমি কি করেছো মুনতাহা।তোমাদের এভাবে বলা উচিৎ হয় নাই।আমি মানছি শখের সত্যি কথা জানার অধিকার আছে।তাই বলে এভাবে না বললে’ও পারতে।ইস শখ আয়ান ভাইয়াকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দেয়।সব হয়েছে আমার জন্য।কেনো যে তোমার সাথে এমন করতে গেলাম।
–সত্যি আমার এমনটা করা উচিৎ হয় নাই।রাগের বসে।দয়া করে আমাকে ভুল বুজবে না।
–শখ কোথায় আয়ান ভাইয়ারা এখন কোথায়।
–আমি জানি না।শখের সাথে সাথে বাবা আর স্যারও ওর পেছনে পেছনে গেছে।
–ঠিক আছে।আমি ওদের কাছে যাচ্ছি।আর একটা কথা আয়ান ভাইয়া আর শখের কথা মিহু মনের ভুলেও যেনো জানতে না পারে।আমি আসছি।
–কেনো মিহু জানলে কি হবে।
–যদি শখের ভালো চাও।তাহলে বলবে না।অনেক উপকার করলে শখের আর নতুন করে মেয়েটার জীবনে অশান্তি এনে দিও না।আমি তোমাকে সবকিছু পরে খুলে বলবো।
–আমি’ও যাব তোমার সাথে।
–আমার সাথে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই তোমার।
–শুভ।
–যেদিন আমাকে মন থেকে ভালোবেসে গ্রহন করে নিতে পারবে,সেদিন আমার কাছে আসবে।যেদিন আমাকে স্বামীর সন্মান দিতে পারবে।সেদিন আমার কাছে আসবে এর আগে ভুলেও আসবে না।পরিনাম খুব খারাপ হয়ে যাবে।বলেই শুভ চলে গেলো।
এদিকে শখ দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে রাস্তায় মাঝখানে চলে এসেছে।সেদিকে তার খেয়ালই নেই।সে শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছে।সবাই বেইমান।সবাই আমার সাথে বেইমানি করছে।আমি শখ কারো দয়া নিয়ে বাঁচবো না।হঠাৎ করে একটা ট্রাক দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে।রাস্তার লোক শখকে সরতে বললে।শখ তাদের কথার কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।গাড়িটি শখের খুব কাছে চলে আসলে।শখের এবার হুস আসলো শখ সরতে যাবে তার আগেই…..
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here