অবুঝ প্রেম – পর্ব 21

0
491

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২১
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
আর খাবোই না,খাওয়ার রুচি হারায় গেছে। মনে মনে মনে কত কি ভাবলাম, সব কিছু ছোট ছোট বলে বলে শেষ হয়ে গেছে। নিজেদের বয়স বেড়ে তালতলা গেছে বলে আমাকে ও বুড়ি বানানোর ইচ্ছে,, এমন শতশত রাগ অভিমানের কথা মনে মনে আওড়াচ্ছে সারা।
তুর্জ অফিসে বসে ল্যাপটপে কি যেন করছিলো। তখন তুর্জের ওই স্ট্রাফ আসেন,,
স্যার আমার ওই কাজিন কে কাল আপনার কথা বললাম। ও শোনার পরে আজকেই চলে আসছে,, যদি আপনি অনুমতি দেন তাহলে আপনার কাছে নিয়ে আসতাম।
ঠিক আছে, নিয়ে আসুন,,,,
কিছুক্ষণ পরেই একটা বোরখা পড়া মেয়েকে সাথে নিয়ে ভিতরে আসেন তিনি। মেয়েটার শুধু মাত্র চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে,, হাত পা সহ সমস্ত শরীর কালো বোরখা আর নিকাব দিয়ে ঘেরা। চোখ দুটো ঠিক যেন জীবনানন্দ দাশের বর্নিত বনলতার মতো। যার চোখ এতো সুন্দর হতে পারে না জানি সে দেখতে কত সুন্দর। তুর্জ নিজের ঘোর কাটিয়ে উনাদের ভিতরে আসতে বললেন। মেয়েটা তার বসন্তের কোকিলের মতো কণ্ঠে বললো,,
আস-সালামু আলাইকুম!!
প্রথমেই চোখের গভীরতায় ডুবে গেছে তুর্জ আর এখন এমন কণ্ঠে মাতোয়ারা হয়ে সালামের জবাব দিতে ভুলে গেছে। মেয়েটা আবারও সালাম দিতেই,,,
ওয়ালাইকুম আস-সালাম, জ্বী বসুন।
কি নাম আপনার??
জ্বী, মেহবুবা জান্নাত রীতি।
আপনার ফাইলটা দেখি?
নিরবে ফাইল টা সামনে এগিয়ে দিলো মেয়েটা,,,,
তুর্জ সিভিতে কি আছে না আছে সেগুলো খতিয়ে দেখার মতো অবস্থায় নেই এখন। তাই সামান্য কিছু সময় পরে বলে,,
আমাদের অফিসিয়াল রুলস গুলো ভালো করে জেনে নিবেন,, যদি রুলস অনুযায়ী চলতে পারেন তাহলে আপনি সিলেক্টেড। আর কবে থেকে জয়েন করতে পারবেন তা উনাকে দিয়ে জানিয়ে দিবেন।
স্যার আমি যে কোন কাজ করতে পারবো,, শুধু মাত্র ইসলাম বিরোধী কাজ গুলো বাদে। আর আমি সব নিয়ম মেনে চলতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। কিছু মনে না করলে আগামীকাল থেকেই জয়েন করতে চাই।
শুনেছিলাম মেয়েটার ফ্যামিলি প্রব্লেম, হয়তো তাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে জইন করতে চাইছে। কেন যেন তুর্জ ও হ্যা বলে দিলো। মেয়েটার কথা বলা হাটাচলা সবকিছু তে ভিন্ন রকম পবিত্রতা কাজ করছে।
সারা বাড়িতে ভিশন মন খারাপ করে বসে আছে। তার ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলে হয়তো তার ভালো লাগবে। কিন্তু আড্ডা দেওয়ার উপায় নেই, কারণ সারার এখনো কোন ফোন নেই। সারার যখন বেশি মন খারাপ হয় তখনই সে নব্বই দশকের বাংলা সিনেমা দেখে। তখনকার সিনেমার নায়িকাদের কষ্টের সাথে সারার কষ্ট গুলো মিলে যায়। আজকেও চুপচাপ সিনেমা দেখছে সারা। কিন্তু কোন সিনেমা বা চ্যানেলে ১০ সেকেন্ডের বেশি সময় থাকতে পারছে না। তুর্জের মা একবার উঁকি মেরে দেখে সারার মন খারাপ, কিন্তু কেন খারাপ তা বুঝতে পারেনি। উনি তুর্জকে ফোন করে বলে,,
আজ বাসায় এসে lunch করবে।
কেন মা, আজ কি স্পেশাল কিছু??
না, তবে মনে হচ্ছে কোন কারণে সারার মন খারাপ,, অনেক দিন হলো মেয়েটা বাইরে যায় না। বিকালে ওকে নিয়ে শিশু পার্কে যাবি।
সারা হঠাৎ করে দেখে, নায়িকা রোজিনা তার শাড়ির আঁচল অনেক লম্বা করে ছাড়িয়ে দিয়ে বনের ভেতর দিয়ে হেটে যাচ্ছে আর গান গায়ছে,,,,
সারা নিজের দুঃখ ঘুচানোর আইডিয়া পেয়ে যায়,, এখানে তো আর বন জঙ্গল নেই তাহলে কোথায় সে এভাবে আঁচল ছাড়িয়ে কষ্ট গুলো বিলীন করবে। ঠিক তখনই ফিলিপ্স বাত্তির মতো একটা বুদ্ধি মাথায় জ্বলে উঠে। সারা এক দৌড়ে রান্না ঘরে বলে,
মা সুই সুতা আছে বাসায়??
আছে তো!! হঠাৎ করে সুই সুতা দিয়ে কি করবে,,
দাওয়া না, একটু দরকার আছে।
উনি একটা কৌটা থেকে সুই সুতা বের করে দিয়ে আবারও রান্নার কাজে মনযোগ দিলেন। আজাইরা বুদ্ধির রানী সারা দুটো ওড়না এক সাথে সেলাই করে অনেক বড় বানিয়ে নিজের কাঁধের উপর আটকে দেয়।
তারপর পা টিপে টিপে বাইরের বাগানে চলে আসে,, চারিদিকে সারিসারি বিভিন্ন রকম ফুলের টব এবং মাটিতে লাগানো গাছ,,কিছু কিছু ফুল গাছে কাঁটাও আছে। সারা নিজের চুল গুলো নায়িকা রোজিনার মতো এলোমেলো করে ফুলের বাগান দিয়ে হেলেদুলে হাটছে,, আর বারবার পিছনে তাকিয়ে দেখছে তার ওড়না টা সেই ভাবে বিছিয়ে আসছে নাকি। এইসব কিছু করার প্ল্যান করতে এবং বাস্তবায়ন করতে করতে কখন সারার দুঃখের কথা ভুলে গেছে বুঝতেও পারে নি। দুঃখ ঘুচানোর প্ল্যান টা এতো কাজে দিবে সারা বিশ্বাসই করতে পারছে না। সে এখন মহা খুশি। তার ভালো লাগছে এভাবে হাটতে,, তাই দুরন্ত চঞ্চল টুনটুনি পাখির মতো বাগানের এক লাইন থেকে অন্য লাইনে ফুরুত ফুরুত করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তুর্জ বাসায় আসতেই সারার এমন উদ্ভুত পোশাক দেখে থেমে যায়। ঘটনা টা পুরো বুঝতে সে একটা ফুলের গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কাহিনির মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে সারার সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,
কাল তোমাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবো,, রেডি থেকো?
ডক্টর এর কাছে কেন?? কি হয়েছে আমার?? আমি কি আর বেশি দিন বাঁচবো না?? এখনো ছেলেপুলে নাতিনাতনি কিচ্ছু হয় নি,, খোদা এতো তারাতাড়ি আমাকে তোমার কাছে নিও না,,,,
আরে তোমাকে পাবনা নিয়ে যাবো,, তোমার যে রোগ তার একমাত্র চিকিৎসা পাবনা না গেলে ভালো হবে না।
কেন? কি হয়েছে আমার,, কিভাবে আপনি বুঝলেন আমার এতো বড় অসুখ হয়েছে?? তাহলে আমি কেন বুঝতে পারছি না আমার শরীর খারাপটা? ওওওও এই জন্যই মামুনি বলতো, তার বাবা মানে আমার নানু নাকি বুঝতে পারেন নি তার কি হয়েছিল তারপর তিনি নাকি একদিন রাতে হঠাৎ করে মারা যান। তাহলে কি আমিও অবেলায় ওইভাবে মারা যাবো,, ওহ আল্লাহ বাঁচাও মোরে,, ওগো চলুন না,, আজই যায় ওখানে,,,,
তুর্জের সারাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার সখ মিটে গেছে। এই মেয়ে বাড়িতেই স্থীর থাকে না, পার্কে সবার সামনে কি কি করবে তার ঠিক নেই।
I’m sure এই মেয়েকে পাবনা নিয়ে গেলে ওখানকার অন্যান্য রোগীর ডক্টর বলে আর কেউ থাকবে না। সবাই রোগী হয়ে যাবে।
কি বলেন এইসব,, আমার কি কোন ছোয়াচে রোগ হয়েছে। ওমা গো আমার কি তাহলে করোনা হলো, উহুক্ক উহুক্ক উহুক্ক ওমা কাশিও তো হচ্ছে,,,,
হয়েছে বোন, মাফ চাই,, আর কখনো তোর সাথে কথা বলবো না,, এবার অন্তত রোগ ক্যাসেট অফ কর,, প্লিজ!!
সারাকে রেখে তুর্জ হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেছে। সারা সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবছে,, নির্ঘাত উনি, পাগল হয়ে গেছেন,, নয়তো এমন উল্টো পাল্টা কথা বলবে কেন? কতটা পাগল হলে বউকে বোন বলে?? উনাকে কি পাবনা মেন্টাল হসপিটালে,,,,,,, আরেএএ কিইই!! পাবনায় কি হসপিটাল —- তারমানে উনি এতোক্ষণ আমাকে………. আমি পাগল হুম,, ও পাগল, ওর সব প্রেমিকা পাগল ওর চোদ্দগুষ্টি পাগল হুহ্
রীতি প্রতিদিন খুব সুন্দর করে হিজাব দিয়ে মুখ ঢেকে বোরখা পড়ে অফিসে আসে।অফিসের অনেক মেয়ে স্ট্রাফ ইদানীং রীতিমতো রীতি কে হিংসা করে চলেছে। একে তো তুর্জের সাথে লাইন মারতে অনেক সুন্দরী স্ট্রাফ রা সুযোগ খুঁজে। কেউ কেউ আবার জাস্ট একবার তুর্জের একান্ত কাছে যাওয়ার জন্য আফসোস করে। কিন্তু তুর্জের এটিটিউট দেখে ভয়ে কেউ চোখ তুলে কথা বলার সাহস পাই না। রীতি এমন পোশাক অনেকের ভালো লাগলেও বহুজনের কাছে এক্সট্রা ন্যাকামি মনে হয়। তুর্জ আর রীতি একই রুমে বসে। তুর্জ কাজের ফাঁকে ফাঁকে রীতির দিকে লক্ষ্য করে,, মেয়েটা অনেক শান্ত, প্রয়োজন ছাড়া একটা কথাও বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলেও শুধু সেটা উত্তর ছাড়া অতিরিক্ত কথাও বলে না।
তুর্জের কেন যেন খুব ইচ্ছে করে রীতির পুরো ফেস দেখার, কিন্তু কিভাবে বলবে তা বুঝতে পারছে না। অনেক বার এক সাথে lunch or dinner করার জন্য অফার করতে গিয়েও নিজের পার্সোনালিটির জন্য বলতে পারে নি।
চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here