অবুঝ প্রেম – পর্ব 20

0
356

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২০
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সারা মুখ ভিঞ্চি কেটে চলে যেতে লাগতেই তুর্জ ওর হাত ধরে ফেলে। পিচ্চি একটা মেয়ের এতো রাগ কিভাবে আসে??
দেখুন আমি কিন্তু মোটেও ছোট না। এসএসসি শেষ করেছি। কয়দিন পরে কলেজে যাবো,, আর সব চেয়ে বড় কথা হলো আমার দুটো বন্ধবীর বিয়ে হয়েছে,, হয়তো তাদের কিছুদিন পরেই বাবু হবে। তাহলে বুঝুন আমি সত্যিই ছোট না।
দাড়াও খুব তারাতাড়ি দেখবো তুমি আসলেই কতটা বড়। আজ বাবা আমাদের বিয়ের এনাউন্সমেন্ট নিয়ে কথা বলছিলো খুব তারাতাড়ি আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে husband wife হবো। এখন চলো ঘুমাবে।
তুর্জের অফিসিয়াল কাজ গুলো কে একটু সহজ করতে একজন পিএ রাখা অত্যন্ত জরুরি। তুর্জ অফিসের একজন স্ট্রাফকে বিষয় টা বলতেই সে বললেন তার পরিচিত ছিলেন মেয়ে আছেন, মা নেই, সৎ মায়ের অত্যাচারে সে একটা চাকরি খুজছিলো,, অনেক দিন আগেই নাকি বলেছিল উনাকে, একটা চাকরি যোগাড় করে দিতে। মেয়েটি সুন্দরী শিক্ষিত এবং পর্দাশীল।
আমি নিজেও এমন পরিচিত এবং বিশ্বস্ত কাউকে খুজছিলাম,, তা একদিন নিয়ে আসুন, কথা বলে দেখি।
ঠিক আছে স্যার, আমি আগামী পরশু আসতে বলি তাহলে??
আচ্ছা ঠিক আছে।
সারাদিন অফিস শেষে আজ একটু তারাতাড়ি তুর্জ বাসায় ফিরে। আজকে তুর্জের কেন যেন খুব ভালো লাগছে, তাই সে ভাবে সারাকে নিয়ে আজ বাইরে থেকে ডিনার সেরে আসবে,, রুমে যেতেই দেখে, একটা চেয়ার টেনে আলমারির সামনে নিয়ে আসে এবং তারউপর উঠার পরে আলমারির উপর উঠার চেষ্টা করছে। পুরো রুমের অবস্থা বলার মতো না।
এই মেয়ের মাথায় কি উদ্দেশ্য ঘুরছে,তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন ,, আপাতত ঘাপটি মেরে দেখি, সে কি কি করে। অনেক উঁচু আলমারি হওয়ার জন্য উপরে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। সারা দুই হাতে আলমারির এক সাইড ধরে, চেয়ার থেকে পা সরিয়ে আলমারির সামনের কারুকাজের ফাঁকে আটকে উপরে উঠার চেষ্টা করতেই চেয়ার গেছে উল্টো দিকে পরে। সারা পুরো বাদুড়ের মতো ঝুলে আছে। না পারছে উপরে উঠতে আর না পারছে নিচে নামতে। অনেক চেষ্টা করার পরে ও যখন সারা কোন কুল-কিনারা পেলো না, তখন ওইভাবে ঝুলে থেকেই মা কে ডাকতে শুরু করে,,,,
ওওমায়ায়া মায়ায়া একটু উপরে আসুউউন,,,ময়নায়ায়া কই তুমি প্লিজ উপরে আসোও,, কেউ কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন,,,
তুর্জ এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,, মা এবং ময়না না আসা পর্যন্ত সে ভিতরে যাবে না। সারার এমন বাদড়ামি দেখা প্রয়োজন সবার। প্রায় ৫মিনিট গলা ফাটানোর পরে মা এবং ময়না ঘরে আসে,,, ঘরের এমন অবস্থা দেখার পাশাপাশি সারাকে এইভাবে ঝুলে থাকতে দেখে সবার চোখ কটোর থেকে বের হওয়ার উপক্রম।
দেখো তোমার আদরের বউমার কাজকর্ম!! ভবিষ্যতে আর্মিতে জব নেওয়ার পুর্ব প্রস্তুতি হিসেবে এখন থেকেই ঝুলাঝুলি শুরু করেছে।
আপনার কথা গুলো বন্ধ করে আগে আমাকে নামান প্লিজ,, হাত জ্বলছে আমার,, ওও মা প্লিজ আমাকে নিচে নামান।
ময়না তারাতাড়ি করে চেয়ার ঠিক করে দেয় তারপর তুর্জের মা আর ময়না ধরে নিচে নামিয়ে আনে। ফর্সা হাত একদম লাল হয়ে গেছে। তুর্জ এখনো দূরে দাঁড়িয়ে ঘরের অবস্থা দেখছে আর কাহিনি টা বুঝতে চেষ্টা করছে। তুর্জকে এভাবে থাকতে দেখে তুর্জের মা ময়না কে বলে,, তারাতাড়ি রান্না ঘরে চল,, রান্না পুড়ে গেলো মনে হয় এতোক্ষণে।
খালাম্মা চুলায় তো কোন রান্না নেই!!
সাথে সাথে চোখ পাকানিতে ময়না কাহিনি বুঝতে পারে,, তারপর দুজনেই চলে যায়।
সারাও ওদের পিছু পিছু হাটা শুরু করছিলো কিন্তু তুর্জ খপ করে সারাকে ধরে ফেলে আর ফিসফিসিয়ে বলে তুমি কই যাও??
ইইয়েএ ওই যে রান্না দেখতে,,,,,,
তুর্জ দরজা টা হালকা লাগিয়ে দিয়ে বলে,,,,
এবার তারাতাড়ি বলো,,এই বাদুড় হওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য কি??
কিইসের উদ্দেশ্য,, আয়ামি এইসব উদ্দেশ্য নিয়ে ককাজ করি না। এমনই ময়লা পরিষ্কার করছিলাম হুহ্।
তাই — আমার রুমে কোথাও ময়লা জমে থাকে এমন টা তো হয় না কখনো। তুমি কি ভালোই ভালো বলবা, আমার সমস্ত বই, ফাইল, আলমারির ভিতরের জিনিসপত্র, ওয়ারড্রব সহ সব কিছুতে এমন চিরুনি তল্লাশি চালানোর কি দরকার ছিল?? আমার কোন গার্লফ্রেন্ড এর কোন স্পেশাল গিফট পাও নাকি এটা খুজছিলে??
আয়াহহা এইভাবে কেউ এতো সহজে সত্য কথা বলে?? আয়াপনি কিভাবে বুঝলেন?
তোমার সাথে থাকতে থাকতে এ কদিনে আপাতত এতো টুকু বুঝতে পারছি, এইসব উদ্ভাবনের চিন্তা ছাড়াও তোমার এই ফাঁকা মাথায় অন্য কোন বুদ্ধি নাই।
সারা বারবার নিজের এক হাত দিয়ে অন্য হাতের তালু কচলিয়ে যাচ্ছে,, ভিষণ জ্বালা করছে,, তুর্জ হাত দুটো ধরে ওয়াশরুমে গিয়ে পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বলে,,,
সারা!! তনিমার পাশাপাশি ওর দেওয়া সমস্ত কিছু ছুড়ে ফেলে দিয়েছি অনেক আগেই। আমার কাছে বেঈমানীর কোন ক্ষমা নেই। তনিমা কে যতটা ভালোবাসতাম এখন তারচেয়ে বেশি ঘৃণা করি।
ওইদিন আমার 1স্ট এক্সামের সময়,আপনার নিউ গার্লফ্রেন্ড কে দেখলাম, উনার দেওয়া কোন গিফট নাই।
খুঁজে পেয়েছো কি কিছু??
এতো গুলো পোশাকের মধ্যে কিভাবে বুঝবো কোনটা উনার দেওয়া?
কেন? ন্যাপকিনের প্যাকেট কি শেষ,, আনতে হবে??
সারা রাগে দুঃখে বিরবিরিয়ে বলে,, ইয়ায়া মাবুদ, আর কতদিন এই কথা শুনতে হবে,,
ওইদিন যে মেয়েকে আমার সাথে দেখছো সে আমার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড,, হঠাৎ করে ওইদিন ওর সাথে দেখা হয়,, বহুদিন পরে দেখা তাই নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে পারে নি। আর আমি ওইদিন তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম, আমার কোন কাজিন ছিলো না। আর তুমি সেই সামান্য কথা মনে নিয়ে থেকে আমার রুমে চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে দিলে,,,
সারার কেন যেন সব সময় মনে হয় তুর্জ একসাথে ৪/৫ টা প্রেম করে।উফ এতো কিউট ছেলে প্রেম না করে থাকে এটা বিশ্বাস করতেই পারে না। সারাক্ষণ ফাকফোকড় খুঁজে কোন ক্লু বের করার জন্য । কিন্তু রেজাল্ট সেই আগের মতো শুন্য।
আজ সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় তুর্জের বাবা ছিলেন,, ভেবেছিলাম তোদের ব্যাপার টা এনাউন্সমেন্ট করে সবাই কে জানাবো। কিন্তু তা আর মনে হয় হলো না।
তুর্জ খেয়ে খেতে বাবার দিকে শুধু এক পলক তাকিয়ে আবারও খাওয়াতে মনোযোগ দিলো। তুর্জের বাবা আবারও বলতে শুরু করে,,
আমার বন্ধু এডভোকেট নিজামের সাথে কথা বলছিলাম, কথাই কথাই এই বিষয় টা তুলতেই সে বলে,, দেখ দোস্ত, প্রাপ্ত বয়স্ক কোন নারী বা পুরুষ বাল্য বিবাহ করলে তা একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে এবং তার জন্য তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ে অনধিক ৩ (তিন) মাস কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। তুই যে ভাবে চাচ্ছিস তেমন কিছু করতে গেলে বিভিন্ন প্রেস মিডিয়া উপস্থিত হবে এবং মেয়েটার বয়স কম এটা নিয়ে ঝামেলা হবে।
উউউরিই আল্লাহ রে,,,,আবারও বলে আমি ছোট °° উউফফ ইচ্ছে করছে এই গরম গরম পরোটার সাথে এই পন্ডিত শশুর আব্বাকেও খেয়ে ফেলি। আমার দুই তিন টা বান্ধবীর বিয়ে হয়ে বাবু হওয়ার উপক্রম, তবুও তাদের কিচ্চুটি করতে পারেনি বাংলাদেশ আইন,, আর আমার জন্য করতে গেলেই জেল হবে ফাসি হবে হাতি হবে ঘোড়া হয়ে আন্ডা হবে ডিম হবে,,,,, উউহ সামনে দিম ভাজি টা পরোটার সাথে লাগিয়ে খায়,, দেখি রাগ কন্ট্রোল হয় নাকি,,, (মনে মনে ভাবছি) ঠিক তখনই আমার দিল দরদী শাশুড়ী আম্মার বলেন,,
আমিও এমন কিছু চাইছিলাম,, মেয়েটা আরেকটু বড় হোক, ভালো মন্দ বুঝতে শিখুক,, এখনো ছেলেমানুষী করে বেড়ায়। কাল আলমারির উপর উঠতে গিয়ে বানরের মতো ঝুলে ছিলো।
কি বলো!! তুমি আলমারিতে উঠতে চাইছিলে কেন??
কি উত্তর দিবো ভাবছিলাম ঠিক তখনই আমার একমাত্র বর বলে,, আসলে আগের জন্মের অভ্যাস, চাইলেই কি ভুলা যায়??
উউহঃ আবারও মনে করিয়ে দিলো আমি আগের জন্মে বানর ছিলাম। হে আল্লাহ তুমিও না। কেন আমার মতো এমন মিষ্টি শান্ত একটা মেয়েকে বানর বানিয়েছিলে। আর খাবোই না,,
চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here