মধ্যবিত্ত – Part 24

0
162

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_২৪
#নুসরাত_রিতু
সেলিনা চৌধুরী রাহিকে সাজিয়ে রেখে নিজে হিজাব নিকাব পরে নিয়েছেন।
একটা মেরুন রঙের লেহেঙ্গা পরেছে রাহি। গলায় মায়ের হালকা একটা নেকলেস, কানে হালকা কানের দুল এই তার সাজ। মুখে খুব বেশি প্রসাধনীর ব্যাবহার লক্ষ করা যাচ্ছে না। তবুও চোখ ফেরাতে পারছেন না সেলিনা চৌধুরী।
সেলিনা চৌধুরীর সাজানো হলে রাহি হিজাব পরে নিলো, লেহেঙ্গার ওড়না টাকে চাদরের মতো পেচিয়ে নিয়েছে সে। এমন সময় উপস্থিত হলেন রবিনের মা। তাড়াহুড়ো করে শুধু দু একজনকেই ডাকতে পেরেছে তারা। জাফর সাহপবের দু একজন বন্ধু আর রবিনের মাকে বাদে কেউকে জানাতেও পারেনি।
কাজি সাহেবকে নিয়ে জাফর সাহেব ও জামাল সাহেব যখন আসলেন তখন রাহি খিমার পরে নিয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কবুল বললো রাহি। চুড়ি-রাফির অপছন্দ সকল কথাই সে বেমালুম ভুলে বসেছে। শুধু শুকরিয়া আদায় করছে তার দোয়া কবুল হওয়ার।
সাক্ষার করে কলমটা রাখতেই হন্তদন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করলো রাফি। তাকে দেখে সবাই চমকে গিয়েছে। এখানে যে সে আসবে এটা কেউ আশা করেনি।
রাফি দেখে রাহির সামনে কলমটা রাখা। সে বুঝতে পারলো না বিয়ে হয়েছে কিনা।
কোন সংকোচ ছাড়া বলে ফেললো, “বিয়ে কি হয়ে গিয়েছে?”
রবিনের মা হাসি চেপে রাখতে পারলো না। রুমের সবাই মুখ লুকিয়ে হাসছে। জামান সাহেব একটু গলা ঝেড়ে বললো, “হ্যা, কিছু বলবে?”
রাফি অসহায় চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কতোদিন ধরে নিরবে ভালোবেসে এসেছে সে রাহিকে। কিন্তু বলার সাহস করেনি। আজ যখন বাবা বিয়ের কথাটা বললো তখন চমকে গেলেও পরে ঠিকই খুশি হয়েছিলো সে। কিন্তু রাহি যদি অন্য কেউকেই ভালোবাসে তাহলে বিয়ের মানে কি? কেন হ্যা বললো রাহি? এই প্রশ্ন গুলো এখন তাকে ভিতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে।
জাফর সাহেব: আহা ভাই, কিছু বললে তবেই কি আসতে হবে? এমনে আসতে পারে না? বসো বাবা মিষ্টি মুখ করো।
রাফি বসেনি শুধু একবার তাকিয়েছে রাহির দিকে। রাহি তখন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মূলত সে বোঝার চেষ্টা করছে হঠাৎ করে কি হলো। আর তখনই তার মনে পরলো চুড়ির কথা। তবেকি রাফি সত্যি অন্য কেউকে পছন্দ করে? বাবার মুখের উপর তখন কিছু বলতে পারেনি তাই এখন এসেছিলো বিয়ে আটকাতে? অথচ বিয়ে তো হয়ে গেছে। সব জেনেও রাহি কেনো বিয়েটা আটকায়নি এটা ভেবেই অপরাধ বোধে ভুগছে সে। ঐ এক সেকেন্ডের চোখাচোখিতে রাহি রাফির চোখে যেনো একরাশ অসহায়ত্ব দেখতে পেলো।
রাফি দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো, “আসলে খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিলাম। ”
জামান সাহেব : খাবো তো সবাই অবশ্যই। আগো ঘরের বউকে ঘরে তুলি।
সেলিনা চৌধুরী : আজই কি রাহিকে নিয়ে যাওয়া হবে?
জামান সাহেব: জি ইনশাআল্লাহ আপা। এক মেয়েকে ঘরে তুলে অন্য মেয়েকে বিদায় দিবো ইনশাআল্লাহ।
জাফর সাহেব: কিন্তু ভাই এমন ভাবে মেয়ে বিদায় দিতে মন সায় দিচ্ছে না। কোন আয়জনই হলো না।
জামান সাহেব : যে বিয়েতে খরচ যতো কম সে বিয়েতে রহমত তত বেশি। তাই এসব নিয়ে ভাববেন না তো।
রাহির চোখে ইতিমধ্যে পানি টলমল করছে। যেকোনো সময় গড়িয়ে পরা শুরু করবে। একেতো অপরাধবোধের যন্ত্রণা তার উপর বাবা মাকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। সেলিনা চৌধুরীও কেঁদে ফেললেন। তারপর সবাই মিলে নিয়ে গেলো রাহিকে রাফিদের বাসায়। রাফি আগেই সাদে গিয়ে মেহমানদারিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে।
এটাই হয়তো প্রথম মেয়ের সাথে মেয়ের পুরো পরিবার মেয়ের শশুর বাড়ি এসেছে। রেনু বেগম সস্নেহে রাহিকে বরন করে নিলেন। তাকে বসানো হলো রিমির ঘরে রিমিরই পাশে। রাহিকে দেখেই রিমি জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। কি হলো না হলো কিছুই বুঝতে পারলো না সে। সে কখনো এমন বিয়ে দেখেনি। হুট করে বিয়ে হুট করে বউ ঘরে তোলা। সবটাই তার কাছে নতুন। রিমি জানে রাহি কেউকে ভালোবাসে। আবার ঐদিন থেকে এটাও সন্দেহ যে তার ভাইয়ের জীবনে কেউ আছে। কিন্তু তবুও কিছু করতে না পারার যন্ত্রনায় সে কাতর হয়ে আছে।
রিমি রাহির পাশে ভির জমে গেলো মুহুর্তেই। রিমি আজ গাড়ো খয়েরি রং এর একটা কাতান শাড়ি পরেছে। ফরসা রং এর রিমিকে খয়েরি রং এ চোখ ধাধানো সুন্দরী লাগছে। হালকা গহনাও পরানে হয়েছে তাকে। রিমিও হিজাব পরে আছে। রুমে আপাতত ছেলেরা কেউ আর আসবে না তাই নিকাব খুলে রেখেছে সে। রাহিরও খিমার খুলে ফেলা হলো।
তাদের পাশে বসে হাসিঠাট্টা করছে আশেপাশের সবাই। রিমিরা যেই বাসায় ভাড়া থাকে সেই বাসার প্রায় সবাইকে দাওয়াত করেছেন জামান সহেব। সব বাসার মেয়ে বউরা মিলে লজ্জা দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। কিন্তু কিছুই উপভোগ করতে পারছে না রাহি ও রিমি। রিমি এতোক্ষণ খুশি খুশি থাকলেও বিয়ের খবর শোনার পর থেকেই মিয়িয়ে গেছে। যখন মেয়েদের খেতে ডাকা হলো তখন মুহুর্তেই রুম খালি হয়ে গেলো।
রিমি দ্রুত রাহির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে ক্ষমা করে দেও রাহি। আমি কিছুই জানতাম না বিশ্বাস করো। আমি যদি জানতাম যেকোনো ভাবে বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করতাম।”
রাহি করুন চোখে তাকালো রিমির দিকে। চোখের পানি লুকিয়ে বললো, “আল্লাহর উপর ভরসা রাখো রিমি। জানিনা কি হচ্ছে, কেনো হচ্ছে। তবে যাই হোক না কেনো তোমার জীবনে এই দিনটা বার বার আসবে না। আমার কথা ভেবে মন খারাপ করে দিনটাকে মাটি করো না। আল্লাহ কপালে যা রেখেছে তাই হবে। তিনি যদি আমার কপালে না থাকেন তাহলে তাকে চাওয়া তো আমারই ভুল তাইনা।”
রিমির কাছেই আসছিলো রাফি। রিমিযে রাফিকে রাহির কথা বলে দিয়েছে সেটা রাহিকে জানাতে নিষেধ করবে বলেই এখানপ আসা তার। কিন্তু এসপ রাহির শেষ কথা গুলো শুনে পেলো সে। ভিতরপ যে রাহিও আছে সেটা জানা ছিলো না রাফির। রাহিও রাফিকে দেখে চুপ হয়ে গেছে।
রিমি রাহির দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললো, “কিছু বলবে ভাইয়া?”
রাফি: সবাইকে খেতে ডাকতে এসেছিলাম। হয়তো সবাই চলে গেছে। তোদের খাবারও পাঠিয়ে দিচ্ছি। খেয়ে নিস।
এক নজর রাহির দিকে তাকিয়ে রুম ত্যাগ করলো রাফি। রাফির চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ছেলেদের কাঁদা নিষেধ। তার উপর আজ তার একমাত্র ছোট বোনের বিয়ে। কাঁদার সময় নেই তার।
রাহির চোখে পুনরায় টলমল করছে পানি। রিমি ছলছলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রাহির দিকে।
ইশ কোন ভাবে যদি তারা বুঝতে পারতো যে জন্য তারা এতো কষ্ট পাচ্ছে সেই পুরে বিষয়টাই একটা ধোয়াসা!
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here