মধ্যবিত্ত – Part 7

0
179

#মধ্যবিত্ত
#নুসরাত_রিতু
#পর্ব_৭
সারে বারোটার দিকে জাফর সাহেবের অপারেশন শেষ হলো। ডাক্তার বের হয়নি তখনো। প্রথমে জাফর সাহেবকে বের করে স্পেশাল কেবিনে দেয়া হয়েছে। ডাক্তার বের হলো তার কিছুক্ষণ পর।
রাহি ডাক্তারকে দেখেই তার দিকে দৌড়ে এলো। পিছনে পিছনে সেলিনা চৌধুরীও আসলেন।
রাহি: বাবার এখন কেমন অবস্থা ডক্টর? সব ঠিক আছে তো?
ডাক্তার: মোটামুটি বড় এক্সিডেন্ট করেছেন তিনি। ড্রাঙ্ক হয়ে গাড়ি চালানোর ফল। এখন তিনি আউট অফ ডেঞ্জার। ডান হাত আর ডান পা ফ্র্যাকচার হয়েছে। অন্য কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জ্ঞান ফিরলে বলা যাবে।
সেলিনা চৌধুরী : জ্ঞান ফিরবে কখন?
ডাক্তার: এখনি বলা যাচ্ছে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে বুঝবো অন্য কোন সমস্যা। তাই অপেক্ষা করুন কখন জ্ঞান ফেরে।
এই বলে ডাক্তার বিদায় নিলেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন সেলিনা বেগম। রাহি কেঁদে চলছে সেই আসার পর থেকে। এতোক্ষণ রাফি নিশ্চুপ ছিলো। এখন ভাবছে সে কি করবে! যা বোঝা যাচ্ছে আজ সবার হসপিটালে থাকতে হবে। তারও উচিৎ থেকে যাওয়া। বাবাকে ফোন করে জানাতে হবে তাই পকেট থেকে ফোনটা বের করলো। ফোন বের করে দেখে ৮৭ মিসড কল আর ২৩ মেসেজ। মেসেজগুলো রিমি পাঠিয়েছে আর কলগুলো সবাই মিলে করেছে।
রাফি সাথে সাথে তার বাবাকে কল করলো। ততক্ষণে টেনশনে তার গলা শুকিয়ে গেছে। বাসায় কোন বিপদ হলো নাতো!
________________________________
ফোনটা হাতেই ছিলো জামান সাহেবের। রেনু বেগম নামাজে দাড়িয়েছে। রিমি মন খারাপ করে বসে আছে বেতের একটা চেয়ারে। রাফির বন্ধু খুবই কম। তাদের সবাইকেই কল করেছেন জামান সাহেব। কেউই যখন কিছু বলতে পারলো না তখন সে স্তম্ভ হয়ে বসেছিলেন আর আল্লাহকে ডাকছিলেন।
এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। রাফি ফোন করেছে দেখেই সাথে সাথে রিসিভ করলেন তিনি
জামান সাহেব : “কোথায় তুমি? এতোরাত পর্যন্ত বাইরে কি করো? ফোন কেন ধরছিলেনা?” কন্ঠে তার রাগ আর কান্না দুটোই বোঝা যাচ্ছে। এতোক্ষণ পর ছেলের ফোন পেয়ে তার চোখ পানিতে টলমল করে উঠেছে। তার কথা শুনে রিমি বুঝলো তার ভাই ফোন দিয়েছে দৌড়ে ভিতরে গিয়ে মাকে জানালো সেই কথা।
রাফি: আমি হাসপাতালে বাবা।
জামান সাহেব : “হাসপাতালে মানে? কি হয়েছে তোমার?” রেনু বেগম আর রিমি তখন পাশে এসে দাড়িয়েছে। ঢুকরে কেঁদে দিলেন রেনু বেগম।
রাফি: আমার কিছুই হয়নি বাবা। আমি ঠিক আছি।
জামান সাহেব রেনু বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো, “আহ্ থামো তো। রাফির কিছুই হয়নি ও ঠিক আছে। কথা বলতে দেও আমাকে।”
এবার রাফিকে বললো, “তাহলে হাসপাতালে কেন গিয়েছো? কোন সমস্যা হয়েছে?”
এবার রাফি শুরু থেকে সব বললো আর এও বললো তাদের সাথে কোন পুরুষ লোক নেই। এই রাতে দুজন মেয়েকে এখানে রেখে যেতে বিবেক সায় দিচ্ছে না। সেও সাথে থাকতে চায়।
জামান সাহেব : আচ্ছা ঠিকাছে। তুমি থাকো। টাকা আছে তোমার কাছে? তাহলে বাইরে থেকে কিছু এনে খেয়ে নেও তাদেরকেও খাওয়াও।
রাফি: জি বাবা টাকা আছে।
জামান সাহেব: আমি কিছু টাকা তোমায় বিকাশ করছি। বিপদের সময় হাতে টাকা রাখা ভালো। আজ তার বিপদে তুমি পাশে থাকো কাল তোমার বিপদে সে পাশে থাকবে।
রাজি: আচ্ছা বাবা। রাখি তাহলে? তুমি মাকে বুঝিয়ে বলো যেন চিন্তা না করে আর তোমরাও খেয়ে নিও।
জামান সাহেব: আচ্ছা
রাফি: আসসালামুআলাইকুম বাবা
জামান সাহেব : ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
কল কেটে জামান সাহেব সবাইকে বুঝিয়ে বললো কেন রাফি ফোন ধরেনি। তারপর টেবিলে খাবার দিতে বললো। রেনু বেগম খাবেন না জানালেন। তার ছেলেটা না খেয়ে আছে তার গলা দিয়ে খাবার নামবে না। জামান সাহেব সে কথা মানলো না। জোর করে সবাইকে খাওয়ালো। তারপর শুয়ে পরলো।
_________________________________
রাফি ফিরে এসে দেখে রাহি এবং সেলিনা চৌধুরী করিডোরের চেয়ারে বসে বসে কাঁদছে। সে তাদের কাছে গিয়ে বসে তাদের সামনে দুইটা খিচুড়ির প্যাকেট ধরে বললো, “অনেক কান্নাকাটি হলো আন্টি। এবার একটু খেয়ে নিন। অনেক রাত হয়েছে এখনো কিছুই খাননি। বাইরে খিচুড়ি ছাড়া কিছুই পেলাম না। এখন এইটুকু খেয়ে নিয়ে কেবিনে গিয়ে রেস্ট নিন”
রাহি: আমি খাবো না। খেতে ইচ্ছে করে না।
সেলিনা চৌধুরী : “আমারো খেতে ইচ্ছে করছে না বাবা। তুমি আর রাহি খেয়ে নেও বাবা।” রাহির দিকে তাকিয়ে বললো, “তুই খেয়ে নে মা। তোর বাবার জ্ঞান ফিরে যদি শোনে তুই খাওনি তাহলে অনেক রাগ করবে।”
রাহি: আমি খাবোনা মা। আমার ইচ্ছে করছে না।
রাফি: না খেয়ে থাকলে আংকেল সুস্থ হয়ে যাবে না রাহি। খেয়ে নেও।
অনেক জোর করিয়ে রাহি আর সেলিনা চৌধুরীকে খাওয়ালো রাফি। তারপর তিনজনই করিডোরে অপেক্ষা করছে।
সবাই দোয়া করছে জাফর সাহেবের সুস্থতার জন্য। কিন্তু সেলিনা চৌধুরী আর রাহি একই সাথে ভাবছে জাফর সাহেব তো ড্রিংক করে না। এতো এতো পার্টিতে যায় সে কখনো তো ড্রিংক করেনি। তাহলে হঠাৎ ড্রিংক করার কারন কি?
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here