হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 12

0
431

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১২
#Nishi_khatun
রিমশা সুন্দরি খালপাড়ের সামনের মেইন রোড দিয়ে বাড়িতে আসছিল। হঠাৎ করে দেখে কয়েকটা ছেলে মেয়ে খালের পাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছে। দূর থেকে দেখে বুঝতে বাকি থাকে না তারা কি করছে সেখানে।
রিমশা ভ্রু কুঁচকে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বলে,
-“এই খালপাড় বনভোজনের স্থান কবে থেকে হলো?
তাও আবার যেখানে লোকদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে।
হ্যা মানছি খালপাড়ের আশেপাশে বড় বড় গাছপালা দিয়ে ভরা। এখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুন্দর, তা-ই বলে যে কোন স্থান কে লোকদের মনোরঞ্জনের পরিবেশ বানানো উচিৎ না। তার আশেপাশে বসবাস কারী লোকদের সমস্যা হতে পারে।”
রিমশা বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে এসে ইলমা আর ঝর্ণা কে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা রুপসী খালপাড় কী বনভোজন করার জন্য উন্মুক্ত? ”
ঝর্ণা আর ইলমা দু’ জনে অবাক হয়ে যায়।
রুপসী খালের এই নতুন কাহিনী শুনে।
ইলমা বলে,
-“কী যে বলেন না ভাবী! সদর থেকে কিছুটা দূরে আমাদের গ্রাম তার মানে এই নয় যে আমাদের গ্রামটা একদম গ্রাম্য গ্রাম। আমাদের গ্রাম সদরের মতো উন্নত না হলেও এখানে সদরের মতো করে সবাই মোটামুটি জীবনযাপন করতে চেষ্টা করে। আর রুপসী খালপাড় গ্রামের সবার বেড়াতে যাবার স্থান ছিলো। তবে দু বছর আগে একটা দূর্ঘটনার পর থেকে সবাই সেখানে যাওয়া কমিয়ে দিয়ে। তার মানে এই নয় যে রুপসী খালপাড় সদরের মানুষদের বিনোদনের স্থান। হয়তো তারা নিজে থেকেই খালপাড় কে বিনোদনের স্থানে পরিণত করতে চাইছে। ”
রিমশা বলে,
-“আমি কিন্তু দু বছর আগে এই খালপাড়ে অনেকে-ই দেখেছি। দু বছর আগে খালপাড়ের দুর্ঘটনার সময় আমি আমাদের গ্রামে ছিলাম। আমি যেদিন ফিরে যাচ্ছিলাম সেদিন দেখেছিলাম সেখানে কিছু মানুষকে আর্তনাদ করতে। তবে দূরে থাকার জন্য ওখানে কী হয়েছিল তা বুঝতে পারি নাই। তবে কিছুটা সময়পর রাস্তা থেকে যা বোঝার দেখার দেখতে পেয়েছিলাম।”
ইলমা ভ্রু কুঁচকে বলে,
-“ভাবী তুমি না তোমার বিয়ের কিছুদিন আগে গ্রামে এসেছিলে? তাহলে দু বছর আগে কেনো এসেছিলে?”
রিমশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-“আমার বড় ভাইয়ের বিয়েতে এসেছিলাম। বড় ভাইয়ার এক কথা ছিল। আমার বোন যদি এ গ্রামে আমার বিয়েতে উপস্থিত না থাকতে পারে। তাহলে সে গ্রামে থেকে সে বিয়ে করবে না। তা-ই ভাইয়ার মন রাখতে বাবা আমাকে মামা বাড়ি থেকে আনতে গেছিলো। আমাদের গ্রামে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। আশার পথে এই খালপাড়ে কিছু তরুণ যুবক ছেলেদের আড্ডা দিতে দেখেছি। তারপর বাড়িতে গেলাম। ভাইয়ার বিয়ের আনন্দ উপভোগ করলাম। বিয়ের সকল অনুষ্ঠান শেষে মামা-মামীর কাছে ফিরে যাবার দিন খালপাড়ের দূর্ঘটনা দেখলাম।
পরে মা’র কাছ থেকে সবটা শুনেছিলাম। ঘটনা শুনে কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠেছিল। তার এক বছর ছয় মাস পর গ্রামে ফিরে আসি। গ্রামে ফিরে আসার কিছুদিন পরেই তোমার ভাইয়ের সাথে আব্বা বিয়ে দিয়ে দেন। তারপর থেকে জীবনটা বদলে গেলো। এই ছয় মাসে গ্রামে কতো কাহিনী হলো, আবার আমার জীবনেও নানারকম সমস্যা বেড়াতে এসেছে। সব কিছুই হাসি মুখে মেনেছি আর ভবিষ্যৎ এ মেনে যাব।”
ইলমা’র মুখটা হঠাৎ করে বিষাদের কালো ছায়াতে ঢেকে যায়।রিমশা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ভাবী আমার কাজ আছে আমি আসছি।”
ঝর্ণা ইলমার পেছনে পেছনে চলে যায়।
সেদিন সারাদিন আর ইলমা বা ঝর্ণার সাথে রিমশা’র কথা হয়নি। রিমশা একটু ব্যস্ত ছিলো কারণ চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে এসেছে। তার সাথে কিছু আলোচনা করতে ব্যস্ত ছিলো।
রাতে ঘুমাতে এসে রিমশা পড়েছে বিপদে কিছুতে চোখে পাতায় ঘুম পরীদের দেখা মিলছে না। সে জানালার বাহিরের ঐ দূর আকাশের প্রাণে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। পুরো আকাশে আজ তারার মেলা বসেছে। অন্ধকার আকাশের বুকে হাজারো তারা মিটমিট করে জ্বলছে।
এসব দেখে রিমশা’র অতীতের কথা মনে পড়ছে।
রিমশা তার অতীতের পাতায় ডুব দেয়……..
*
*
মামা-মামীর দুই পুত্র সন্তান ছিলো তাদের কোন কন্যা সন্তান ছিলো না। তারা রিমশা কে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করতো। রিমশা’র মামার অবস্থা ভালো ছিলো। শহরে তাদের চারতলা বিল্ডিং বাড়ি ছিলো। শুরুতে রিমশা’র মামা-মামী নিচ তলাতে থাকত। পরে তাদের দুই ছেলে লেখাপড়া করার জন্য বাড়ি থেকে দূরে চলে গেলে, তারা তাদের বিল্ডিং এ দোতলায় শিফট করে। দোতলাতে রিমশা কে পূর্বদিকে এটার্চ বারান্দা যুক্ত রুম দেয়।
রিমশা’র সেখানে পরিচিত কেউ ছিলো না। তার উপর সে মেয়ে মানুষ দেখে মামী আশেপাশে কারো সাথে তাকে সেভাবে মিশতে দিত না। যে দিনকাল পড়েছে। আপন মানুষকে বিশ্বাস নেই। সেখানে পরের বাড়িতে সে মেয়ের যাতায়াত পছন্দ করত না।
তা-ই লেখাপড়া নিয়ে রিমশা ব্যস্ত ছিলো। রিমশা রাত জেগে পড়তে ভালোবাসত। একদিন রাত দুই টা বাজে। সামনে ক্লাস টেনের প্রথম সাময়িক পরিক্ষা। সেই পরিক্ষার টেনশনে তার ঘুম আসছিল না। কি করবে ভাবছিল, হঠাৎ মনে হলো আমার রুমে বারান্দা আছে। সেখানে রাতে কখনো যাওয়া হয়নি আজকে না হয় উদ্বোধন করি। যেই ভাবনা সেই কাজ।
বারান্দাতে আসতেই দেখে তাদের পাশের বিল্ডিং বারান্দার একদম সাথে প্রায় হাত দিলেই স্পর্শ করা যাবে। বারান্দার সামনে একটা রুমের জানালা খোলা। জানালার সামনে টেবিল চেয়ারে বসে একজন যুবক লেখাপড়া করছে। হঠাৎ করে তার রুমের সামনে এমন সুদর্শন যুবকের দেখা পাবে ভাবতেই পারে নাই। এদিকে রুমের পাশে সুপুরুষ ছেলের রুম ভাবতেই বুকের মাঝে ধুকধুক শব্দ করে ওঠে।
ঐ রুমের আলোতে পড়ুয়া ছেলেটাকে মুগ্ধ নয়নে রিমশা দেখতে ব্যস্ত। হঠাৎ করে ছেলেটা জানালার বাহিরে দৃষ্ট পাত করতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। তার জানালার সামনে মেয়ে কোথায় থেকে আসলো? সে হুট করে মাঝ রাতে তার জানালার বাহিরে কোন বালিকা কে কখনোই আশা করে নাই।
ছেলেটা বিরক্তিবোধ করে বলে,
“এই মেয়ে কে তুমি? এতো রাতে ভুতের মতো বারান্দায় এভাবে আমার জানালার সামনে দাঁড়ায় আছো কেন?
যে কেউ তোমাকে এভাবে দেখে হার্ট এটার্ক করবে।”
রিমশা প্রতিউত্তরে বলে,”আমার নাম রিমশা। আর আমি বারান্দার আলো জ্বালিয়ে এসেছি । যাতে কেউ আমাকে এভাবে দেখে ভয় না পাই। এখানে আমি নিজের রুমের বারান্দাতে আছি কারো রুমের জানালার সামনে নয়।”
ছেলেটা বলে,
“রিমশা নামের মানে কি? এইসব নাম রাখে কেন? তাছাড়া তুমি আমার জানালায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছ দেখে বোঝা যাচ্ছে। ”
রিমশা বিরক্তিবোধ করে বলে,”Rimsha নামের অর্থ সফল বা বিজয়ী নির্দিষ্ট করে। বাবা মা তাদের নামের সাথে মিলিত করে আমার নাম রেখেছে রিমশা। বাবার নাম শাওন হোসেন আর আম্মুর নাম রিমঝিমি। আম্মুর নামের প্রথম দুই অক্ষর রিম আর বাবার প্রথম অক্ষর শা দিয়ে হয়ে গেলো রিমশা আর রিমশা নামের অর্থ সুন্দর। তাই তাদের আদুরের মেয়ের নাম রিমশা রেখেছে। ”
ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বলে,”আমাদের এলাকাতে শাওন হোসেন নামের কেউ নেই। আর তুমি এখানে কি ভাবে আসলে?”
রিমশা মুখ ভেঙ্গচি দিয়ে বলে,
“এই বিল্ডিং টা আমার মামার। আমি আজমল সাহবের
একমাত্র বোনের মেয়ে। দিন পনেরো হলো নিচ তলা থেকে তারা উপরতলাতে শিফট করেছে। ”
ছেলেটা বলে,”ওহ আচ্ছা তুমি আজমল আঙ্কলের ভাগ্নি।
কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”
-ক্লাস টেনে পড়ি, সামনে বছর এসএসসি পরিক্ষা দিবো।
ছেলেটা এবার গম্ভীর কন্ঠে বলে,”একদম পিচ্চি মেয়ে।
যাও অনেক রাত হয়েছে নিজের রুমে যেয়ে ঘুমিয়ে পড়।”
রিমশা বলে,”আপনিও তো রাত জেগে আছেন!
আগে নিজে ঘুমাতে যান তারপর অন্যকে জ্ঞান দিবেন। ”
-তুমি আচ্ছা ফাজিল মেয়ে তো। দেখছ না আমি লেখাপড়া করছি। এখন ঘুমবার সময় নেই আমার। লেখাপড়া করাটা আমার জীবনের মূল উদ্দেশ্য। এই লেখাপড়া করে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। অন্যের উপকার করে নিজের নাম উজ্জ্বল করবো।”
রিমশা জিজ্ঞাস করে,” তা আপনার না কি?”
ছেলেটা ভ্রু কুঁচকে বলে,”আমার নাম জেনে তোমার কাজ কি?”
-আপনি এতো সময় ধরে আমাকে এতো প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর দিতে ত্যাড়ামি করেছি? তাহলে আপনি কেন উত্তর দিবেন না? আমার প্রশ্নের উত্তর দিয়ে হিসাব সোজাসুজি করেন।
‘আহীদ হক আমার নাম! আর কিছু জানার থাকলেও বলতে বাধ্য না। আর মাঝ রাতে পরপুরুষের সাথে বেশি কথা বলতে নেই বুঝলে মেয়ে।
রিমশা বলে,
-“মাঝরাতে বাচ্চা মেয়েকে একা পেয়ে প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসার সময় মনে ছিলোনা? ”
বলেই নিজের রুমের ভেতরে গটগট প্রবেশ করে। কি দরকার অজানা মানুষের সাথে রাতদুপুরে কথা বলার। আশেপাশে কেউ দেখলে খারাপ ভাবতে পারে। নানারকম আজেবাজে কথা সৃষ্টি হতে পারে। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি ঝগড়া করাটা।
তবে এই জ্যোৎস্নাময় রাতে ঐ লোকটার সাথে কথা বলে ভালোই লেগেছে। বহুদিন পর কারো সাথে একটু প্রাণ খুলে কথা বলেছি। তবে পুরুষ মানুষদের সাথে কথা বলতেও ভয় করে। সবাই যদি রতন স্যারের মতো হয়? আচ্ছা পুরুষ মানুষ মানেই কি খারাপ ব্যক্তি? কই আমার বাবা মামা তাদের দৃষ্টি তো এমন নয়! তাহলে কিছু খারাপনজরের জন্য নিজেকে কেনো গুটিয়ে নিতে হয়?
সেদিন রাতে আর ঘুমটা হলো না। তা-ই মাঝরাতে তাহাজ্জত নামাজটা আদায় করে বসেছিলাম তার কিছু সময় পর ফজরের আজান দিলো নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
(অনেকেই বলছেন গল্পটা দ্রুত শেষ করতে। আমার থেকে আপনাদের তাড়া বেশি গল্পটা দ্রুত শেষ হওয়া নিয়ে। খুব দ্রুত গল্পটা শেষ করে দিবো চিন্তা করবেন না। আমি ১০০/২০০ পর্বে গল্প লেখি না। তাই এই গল্পটা কত পর্বের মধ্যে ইতি টানবো তা আগেই ভেবে রাখা আছে।
যারা দ্রুত শেষ করে দিতে বলছেন তাদের একটা কথা বলবো যে কোন গল্প পড়ার জন্য ধৈর্যশীল হতে শিখুন।এমন মন্তব্য করবেন না যাতে রাইটারের গল্প লেখার ইচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যায়।)



চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here