হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 22

0
441

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২২
#Nishi_khatun
রিদির কাহিনী শুনে রিমশা’র বুঝতে বাকি থাকলো না কেনো দাইয়ান তাকে ইগনোর করছে। দাইয়ান হয়তো রিদির হত্যার প্রতিশোধ নিতে খারাপ পথের পথিক হয়েছে।
তবে কথা হচ্ছে! দাইয়ান নিজে একজন ব্যারিস্টার। সে ইচ্ছা করলেই আসামিদের আইনের অন্তর্ভুক্ত করে শাস্তিদান করতে পারে। তবে সেসব কেনো করছে না?
এরপর একদিন রাতে তাকে আমি নিজের আধিকার বোধ থেকে প্রশ্ন করেছিলাম। কেনো আপনার রিদি হত্যা কান্ডে আইনের পাওয়া কাজে লাগাচ্ছেন না?
দাইয়ান সেদিন বলেছিল, “এদেশে আইনের হাত বাঁধা।
প্রমাণ ছাড়া কোন কিছুর বিচার হয়না। আমাদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ ছিলো না। আর যে কয়জন সাক্ষী ছিলো তা দু মুখো সাপের মত ছিলো। তাদের জন্য আমার পরিবার এই লড়াই হেরে যায়। এরপর আর আইনের দরজাতে কড়াঘাত করার দরকার পড়েনি। নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করেছি।”
রিমশা বলে,”এতো লেখাপড়া করে তাহলে কি লাভ হলো আপনার? যেখানে সামান্য প্রমাণের অভাবে অপরাধীদের শাস্তি দিতে পারেন না।”
দাইয়ান কাঠকাঠ জবাব দেয়,”এটা কোন সিনেমা না! যখন যে ভাবে ইচ্ছা ডাইরেক্টর বলবে। এটা বাস্তব জীবন, এখানে বেঁচে থাকতে হলে কতশত যুদ্ধ করতে হয় তা তুমি বুঝবে না।'”
এভাবে বেশ কয়েকমাস কেটে যায়। তারপর আমি জানতে পারি ইফার সাথে দাইয়ানের বেশ মাখো মাখো সম্পর্কের গুঞ্জন চলছে। প্রথমে সকলে কথায় কান না দিলেও একদিন দাইয়ান নিজে এসে আমার নিকটে সব কিছু প্রকাশ করে।
দাইয়ান সোজাভাবে বলে,”আমি ইফাকে বিয়ে করতে চাইছি। ”
রিমশা তীব্র হুঙ্কার দিয়ে বলে,”আমার মাঝে কিসের কমতি আছে? যে আপনাকে ঐ পতিতা মেয়ে কে বিয়ে করতে হবে? আপনাকে ছাড় দিয়েছি, ছেড়ে দেইনি কথাটা মনে রাখবেন। ”
দাইয়ান বলে,”আমি কোন দরকার ছাড়া ঐ টাইপের মেয়েকে কখনো বউ করতাম না।”
রিমশা – কী দরকার জানতে পারি?
দাইয়ান – ইফা ঐ মেয়ে যে রিদির হত্যার রহস্য জানে। তবে একবার ধোঁকা দিয়েছে আমার পরিবারকে। দ্বিতীয় বার তাকে সুযোগ দিতে চাইছি না।
রিমশা – তাই বলে বিয়ে করার কি দরকার? ইফা কে ধরে নিয়ে আমি। উরাধুরা মার দিলে সব কিছু গড়গড় করে বলে দিবে।
দাইয়ান – ইফা খুব ধুরিবাজ মেয়ে। ঐ সব মার দেখে সে ভয় করে না। তাকে বাঁচানোর জন্য বহুত লোক আছে। তা-ই ইফার করা পাপের শাস্তি বিয়ের পর প্রাপ্য।
রিমশা – বিয়েরপর কী এমন রাজ্যজয় করবেন শুনি? যার জন্য ঐ ডায়নিকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন?
দাইয়ান -বলছি তো প্রতিশোধ নেওয়ার আছে ইফার থেকে।
রিমশা – না কোন প্রতিশোধ পূরণের জন্য আপনাকে বিয়ের অনুমিত দিতে পারবোনা। আমি আমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। কেনো দিতে যাব? যেখানে এখন পর্যন্ত আমি নিজের স্ত্রী হাওয়ার অধিকার পায়নি।
দাইয়ান – তুমি অনুমিত না দিলেও আমি ইফাকে বিয়ে করবো।
রিমশা – আপনি আমার অনুমিত ব্যতীত ইফাকে বিয়ে করলে আপনাকে এর ফল ভোগ করতে হবে। আপনাকে শাস্তি দিতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে একবারের জন্য পড়বো না।
দাইয়ান বলে,”আচ্ছা তুমি যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমি কোন প্রতিবাদ না করে তা মেনে নিবো।”
সেদিনের পর কয়েকদিন সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে চলছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন উনি ইফাকে বউয়ের সাজে চেয়ারম্যান বাড়ির সদরদরজার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে রাখে।
সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে এটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হচ্ছিল। তবে তার চোখের ভাষাতে ছিলো অন্য কথা।
আমি সেদিন রাতে তাকে কিছু বলি নাই! তবে পরেরদিন রাতে তার কাছে নিজের স্ত্রীর অধিকার দাবি করেছিলা। আমি উনার চোখে ভালোবাসা দেখেছি। সেখানে কখনো ছিলো না কামুকতা। তাহলে হুট করে উনি কিভাবে ইফার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে পারলেন? ইফা না কি এতো খারাপ তাহলে কেন উনি ঐ খারাপ মেয়েটা কে নিজের বিছানাতে স্থান দিলো?
সেদিন কেউ উনি বলেছিল আমার উপর বিশ্বাস রাখো আমি তোমার অধিকার কাউরে দেয়নি। না তোমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছি। আমি যেমন নিজের কর্তব্য পালন করতে পারি ঠিক তেমন ভাবে আমি নিজের ভালোবাসাকে সম্মান করতে পারি। আমার স্ত্রী কে কখনো আমি তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো না।
উনি সেদিন রাতে আমাকে কিছু সময়ের জন্য আপন করে নিয়েছিল। কিছু মূহুত্বের জন্য আমি তার মাঝে বিলিন হয়েছিলা
তারপর! তারপর উনি আমার কাপালে চুমা দিয়ে বলেন,”আমার উপর বিশ্বাস যদি থাকে তাহলে সব কিছু চুপচাপ সহ্য করবে। সময় হলে আমি নিজে তোমাকে অবগত করবো। তোমাকে অনেকবড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেদিন কিন্তু একদম পিছপা হবে না? আমি যেমনটা করতে বলবো তুমি ঠিক তেমন ভাবে কাজ করবে!”
আমি সেদিন নিরব থাকি। উনি আমার নিরবতাকে তার কথার সম্মিত ভেবে চলে যান।
এরপর!
এরপর একদিন রাতে উনি আবার আসেন আমার রুমে।
এসে আমাকে কিছু কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
কাজ হচ্ছে তাকে দ্বিতীয় বিয়ের অপরাধে পুলিশে ধরিয়ে দিতে হবে। তার কথা অনুযায়ী আমি তাকে পরেরদিন সকালে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলাম।
এরপর তার সাথে দেখা করে সব সত্যি জানতে চেয়েছি।
তবুও উনি নিরবতাকে অবলম্ব করে আমাকে এড়িয়ে গেছে।
আজকে তাকে আদালতে নিয়ে গেছে। আমিও সেখান এসেছি।
আদালত কক্ষে দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আজ আমার কোন কাজ নেই।
আমার থেকে কিছুটা দূরে ইফা বসে আছে। ইফাকে দেখে আমার বুকের মাঝে খুব চাপা কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে দুই পক্ষের আইনজীবী তাদের মতামত জর্জ সাহেবের সামনে তুলে ধরেছে।
আমি নির্বাক হয়ে সব যুক্তি তর্কের মার প্যাঁচ দেখছিলা। হঠাৎ করে দাইয়ানের পক্ষের উকিল বাবু বলে উঠলেন, “জর্জ সাহেব আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা। সে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তার প্রমাণ কোথায়? আমাদের দেশে মুসলিমদের বিয়ে হলে কাবিন করে রেজিস্টারি করা হয়। কিন্তু দাইয়ান আর ইফার বিয়ের কোন কাবিন নামা নেই।”
ইফা এমন কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠে বলে,”আমার কাছে আছে বিয়ের কাগজপত্র! তা-ই বলে সামনে থাকা উকিকবাবুর নিকটে তার কাছে থাকা সকল কাগজপত্র তুলে দেয়।”
উকিকবাবু সে সব কাগজ পেশকারের কাছে দেন।
পেশকার জার্জের নিকটে পেশ করে।
জর্জ সাহেব কিছু সময় সে সব কাগজপত্র মনোযোগ দিয়ে পড়ার পর রেগে জোড়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন,” আপনারা সকলে মিলে আদালতকক্ষ তামাশা শুরু করেছেন? এই কাগজপত্র বিয়ের না। এটা ইফা নামের মেয়ের স্বীকারপত্র।”
আদালতকক্ষে উপস্থিত সকলের মাঝে ফুসুরফাসুর শুরে হয়ে যায়।
জর্জ সাহেব সকল কে চুপ থাকতে বলে আবারো বলেন,” এখানে লেখা আছে, আমি ইফা আহমেদ গ্রামের নারী পাচারকারী চক্রের একজন সদস্য। গ্রামের সহজসরল মেয়েদের কাজের কথা বলে তাদের আমাদের এজেন্টের লোকেদের মাধ্যমে পাচার করে দেওয়া হয়। গ্রাম থেকে পাচার করা নারীদের মধ্যে কিছু জনের স্থান হয় পতিতালয়ে, আর কিছু জন কে বিদেশে পাঠানো হয়। এসব চক্রের কাজে সাহায্যদান করতে গ্রামের মানুষদের নানারকম ভাবে মন মানুষিক অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যেমন দু বছর আছে তিনটা বাচ্চা মেয়ে গ্যাং রেপ করে তাদের হত্যা করে রুপসী খালের পাড়ে ফেলে রেখে যায়। সে খুনের সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত না থাকলেও জানতাম এমন কিছু হবে।
আমাকে এসব কাছে যারার সাহায্য করতো তাদের মধ্যে কয়েকজনের অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে খুন হয়েছে। তবেঁ সে কথা সহ এই স্বীকারপত্রে আমি নিজের সকল গুনাহ স্বীকার করে নিচ্ছি। এখন আইন আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি তা-ই মাথা পেতে নিতে রাজী।”
জার্জের স্বীকারপত্র পড়া শেষ হতেই ইফা চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে,”এসব কিছু মিথ্যা কথা। আমার স্বামী আমাকে ফাঁশিয়ে দিয়েছে। কাগজে যে কোন কিছুই লেখা যায়। এসবের কোন প্রমাণ নেই আমার স্বামীর কাছে। তা-ই আমাকে মিথ্যাঅপবাদ দিয়ে আসামী বানাবেন না।”
এসব আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়াতে আদালতের কার্যক্রম পরেরদিনের জন্য স্থগিত করে রাখা হয়।
দাইয়ান কে পুলিন নিয়ে যাবার সময় ইফা পুলিশের সামনে দাইয়ান কে বলে,”এই ছিলো আপনার মনে? আমাকে বিয়ের রেজিস্টারির কাগজ বলে এমন মিথ্যা স্বীকারপত্রে সাইন নিতে একটু বিবেকে বাধল না আপনার?”
দাইয়ান অট্ট হাসি দিয়ে বলে,” মিথ্যাবাদী কে তা তুমি ভালো জানো। তবে তুমি আসামী না হলে আসামী কে? নিজের নির্দোষ হাওয়ার প্রমাণ নিয়ে আসিও নয়তো কাল থেকে গারদের ঐ পারে থাকবে।”
ইফা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,” আমি আসামী তার কোন প্রমাণ আছে আপনার কাছে? জানি নাই! আর আদালত কখনো শুধুমাত্র একটা কাগজের লেখার উপর ভরসা করে আমাকে আসামী ঘোষনা করবে না।”
এরপর দাইয়ান কে নিয়ে চলে যায়।
এই সমস্ত ঘটনা দেখে রিমশা’র মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। কী হচ্ছে এসব? সত্য কোনট?
এসব কিছু ভেবে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।
অতিরিক্ত টেনশনের জন্য এমনটা হয়। বদুরুদ্দিন আর দিরহাম মিলে রিমশা কে তুলে সুস্ত করে বাড়িতে নিয়ে আসে।
(রিচেক করা হয়নি ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন)



চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here