প্রনয়-পর্বঃ 6+7

0
642

# প্রনয়
# নুসরাত সুলতানা সেজুতি
# পর্ব- ৬+৭
সেজুতিদের বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা এসে গাড়িতে বসেছে রুদ্র।এলাকাটা বেশ নিরিবিলি।বিল্ডিং টার সামনে গাছ লাগানো অনেক।এত গরমে এরকম বৃক্ষ ছায়া শান্তিদায়ক হলেও রুদ্রর সে শান্তি উপভোগ করার সময় নেই।আর না আছে আগ্রহ।সে জানলা আটকে এসি অন করলো।গাড়ি চালাতে চালাতে ভাবলো,
— মেয়েটার বাবার পা নেই.. কোনও কাজ করতে পারেনা,তার মানে মেয়েটাই কিছু না কিছু করছে।
ব্যাপারটা ভাবতে গেলে এটাই বোঝা যায় যে,,, “দে নিডস মানি।অথচ আমার পাঠানো টাকা গুলো ফেরত দিলো।সেটা একবার নয় বরং দু,, দু বারর।কেন?কী কারন? সো কল্ড সেল্ফ রেস্পেক্ট? হাহা..
রুদ্র নিজেই হাসলো।তাচ্ছিল্যের হাসি।
‘আজকাল কার মেয়েদের আবার সেল্ফ রেস্পেক্ট। এরা টাকা ছাড়া কিচ্ছু বোঝে?আর তার উদাহরণতো আমার হোটেলে আসা প্রত্যেকটা মেয়ে।পুরোনো দিনের জমিদাররা নাকী মেয়েদের তুলে নিয়ে যেত।এক রাত রেখে ফেরত দিতো আবার।অনেক মেয়ে সন্মান হারিয়ে আত্মহত্যাও করতো।এরকম মেয়েদের মাথা নুইয়ে সন্মান করা যায়।অথচ এখনকার মেয়েগুলোকে দেখো।তাদের কী তুলে আনি আমি?না।উলটে তারাই এসে ভীড় জমায় আমার সাথে থাকার জন্যে।এক রাত থেকে পাঁচ লাখ টাকা কামানোর মত সুজোগ কোনও মেয়েই হাতছাড়া করতে চায়নাযে!লোভী একেকটা।
আচ্ছা কোনও ভাবে কি এই সেঁজুতি মেয়েটার টাকার পরিমান কম হয়ে গিয়েছে।অভ্র কত টাকা দিয়েছে সেটাতো জানা হয়নি। যদি কম হয় তবে… বাড়িয়ে দেব।ডাবল দেব আমি,কিন্তু কোনও মেয়ের দান নিয়ে রুদ্র রওশন বাঁঁচবেনা।
পরমুহূর্তে মাথায় একটা কথা আসতেই রুদ্র তুষ্ট হাসলো,
ও ওয়াও, মিস সেজুথিকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে হোটেলের সেই মেয়েটার কথা আমার একবারও মনে পড়েনি ব্যাপার টা খুব একটা খারাপ হয়নি।,এমনিতেই সেই মেয়েটা আমার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছিলো। পরের বার পাই,,বারবার আমার সামনে আসা একেবারে ঘুচিয়ে দেবো।রুদ্রকে জ্বলন্ত অগ্নীশিখা।তাকে ধরতে এলে যে নিজেকেই পুড়তে হবে।
হূট করে মাঝরাস্তায় গাড়ি থেমে গেলো রুদ্রর।বার বার স্টার্ট করলেও লাভ হচ্ছেনা।রুদ্র বিরক্ত হয়ে নেমে এলো।গাড়ির সামনের ডিকি খুলেও বুঝে উঠলোনা কিছু।অনেকক্ষন খুটিয়ে খাটিয়ে দেখে বুঝলো ইঞ্জিনের দুরাবস্থা।
— আজকেই ড্রাইভার ছাড়া বেরিয়েছি আর আজকেই এই অবস্থা.. ডিজগাস্টিং!
রুদ্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরালো।অভ্রর নাম্বারে দুবার ডায়াল করার পরে ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করলো সে…
— কোথায় থাকিস তুই,,কতবার কল করতে হয়??
— স্যরি ভাই,,শাওয়ার নিচ্ছিলাম..
,
শোন আমার নিয়ে আসা গাড়িটা খারাপ হয়ে গেছে.
আমি তোর ফোনে লোকেশন পাঠাচ্ছি,ইমিডিয়েট কাউকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দে…
,
ওকে ভাই…. আমি পাঠাচ্ছি।
দশ মিনিট হলো গাড়ি আসার নাম নেই।অবশ্য আসার কথাও নয়।রুদ্রর বাড়ি থেকে সেঁজুতির বাসা অনেকটা দূরে।কিন্তু কড়া রোদে রুদ্রর পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা দুষ্কর।ওদিকে গাড়ির এসিও বন্ধ।ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠছে রোদের তাপে।মেজাজের অবস্থাও দফারফা। এভাবে কারো জন্যে কখনো অপেক্ষা করেছে নাকী? অনেককে করিয়েছে।রুদ্র আবার মুবারক কে কল দিলো।এবারেও তার একই কথা, ‘স্যার আসছি আমি,আর কিছুক্ষন লাগবে.
রুদ্র রেগেমেগে ফোন কাটলো।আরো খানিকক্ষণ পরে মুবারক কল দিলো তাকে।রুদ্র কিড়মিড়িয়ে বলল,
— কোথায় তুমি ড্যামেট…এভাবে কতক্ষন এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবো আমি??
— স স্যার আ.. আ সলে গাড়ি জ্যামে আটকে গিয়েছে.. আমি রাস্তার উল্টো পাশেই আছি,,কিন্তু জ্যামের কারনে গাড়ি ঘুরিয়ে আনতে পারছিনা।
রুদ্র পেছনে তাকালো।ওইতো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে তার।আসলেই বিশাল জ্যাম।অথচ এই রাস্তায় চলছে।ঢাকা শহরের কী একটা অবস্থা।রুদ্র শ্বাস ফেলে বলল
— ঠিক আছে তুমি ওখানেই গাড়ি সাইড করো,,আমি আসছি।
ফোনের লাইন কেটে রাস্তা পার হওয়ার জন্যে এগোলো রুদ্র।সচরাচর নিজের গাড়িতে যাতায়াত করার কারনে এই অভ্যাস নেই বললেই চলে।শেষ কবে রাস্তা হেটে পার হয়েছে মনে নেই।
তাই খুব একটা সুবিধে করে উঠছেনা।রাস্তার গাড়িগুলো কি স্পিডে ছোটে এই প্রথম আন্দাজ করলো রুদ্র।জান হাতে নিয়ে পার হতে হয় দেখছি। যার একটা ধমকে তটস্থ থাকে গোটা ধানমন্ডি সে কীনা রাস্তা পার হতে রীতিমতো হিমশীম খাচ্ছে?
____
আরে,,এই যে গাড়ি আসছে তো সরে যান,,এই যে শুনতে পাচ্ছেন।
পেছন থেকে অনবরত চেচিয়ে যাচ্ছে সেজুতি।হাতে তার বাজারের ব্যাগ।পুঁইশাকের লতানো ডগা টা বেরিয়ে আছে সেখান থেকে।
ফেরার পথে কাউকে এমন ঝুকিপূর্ণ ভাবে রাস্তা পার হতে দেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো।হুট করে লোকটার অন্য দিক থেকে গাড়ি আসতে দেখেই চেচিয়ে যাচ্ছে তখন থেকে।কিন্তু এই লোকের কান নেই।চেঁচিয়ে গলা ভাঙলেও শুনছেনা।এত গাড়ির শব্দে,, সেজুথির বলা কথাগুলো কান অবধি পৌছাচ্ছেনা রুদ্রর।সেতো রাস্তা পার হতে গিয়ে হাবুডুবু খাওয়ার মতো দশা।রুদ্রর হঠাৎ চোখ পরলো তার দিকে একটি গাড়ি খুব হাইস্পিডে এগিয়ে আসছে।
কিন্তু সরে যাওয়ার আর উপায় নেই।অনেকটা দেরী।তবে কী এখানেই মৃ/ত্যু? রুদ্র রওশন চৌধুরী রাস্তা পার হতে গিয়ে ম/রবে! নিউজ আসবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন রুদ্র রওশন চৌধুরী। সত্যিই মৃ/ত্যূ এভাবে আসবে জানা ছিলো কী?রুদ্র প্রস্তুতি নিলো ম/রা/র।গাড়ি কাছাকাছি আসতেই হুট করে কারো ধাক্কায় রাস্তার পাশে পরলো ছিটকে।পিচের সাথে কপাল ঠুকে গেলো।
টনটন করে উঠলো জায়গাটা।ছিলে গিয়েছে।কপাল চেপে ধরে সামনে তাকালো রুদ্র।কে ধাক্কা দিলো তাকে?সে কী বেঁচে গেলো তবে?তার থেকে খানিকটা দূরে র/ক্তা/ক্ত অবস্থায় পরে আছে একটি মেয়ে।পাশেই সব্জির ব্যাগটা লুটোপুটি খাচ্ছে।ধাক্কা দেয়া গাড়িটাও নিয়ন্ত্রন হারিয়ে কারেন্টের খাম্বার সাথে বাড়ি লেগেছে।তার কী অবস্থা রুদ্র জানেনা।মেয়েটি তাকে বাঁচিয়েছে সেটুকুনিই শুধু ঢুকেছে মাথায়।রুদ্র উদ্ভ্রান্তের মত সেদিকে ছুটে গেলো।ঝাপসা চোখে কাউকে নিজের দিকে ছুটে আসতে দেখলেও স্পষ্ট ভাবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দু চোখের পাতা বন্ধ হয়ে এলো সেজুতির।মনে মনে শুধু প্রার্থনা করলো সে যেন বেঁচে থাকে।নাহলে বাবার কী হবে?
রুদ্র কাছে এসে হাটু মুড়ে বসে সেঁজুতি কে নিজের দিকে ফেরালো।মুহুর্তেই শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে এলো তার।আশেপাশে লোকজনের ভীড়। গাড়িগুলো যেতে না পেরে বিশাল জ্যাম বেধেছে এপাশেও।
‘আরে এটা?? এটাতো সেই হোটেলের মেয়েটা…..
ওহ শীট আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজেই গাড়ির নিচে পরে গিয়েছে।
মুবারক কোনও মতে গাড়ি নিয়ে আসতে পেরেছে।রুদ্রর গাড়ির নিচে পরতে পরতে বেঁচে যাওয়ার দৃশ্য দেখেই সে গাড়ি নিয়ে এক প্রকার উড়ে এলো।
— স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?

রুদ্র উত্তর দিলোনা।সেজুতির গাল গলা হাত সব কেটেছে।সেখান থেকেই রক্ত পরছে অনর্গল। অচেতন সেজুতিকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠলো রুদ্র।,সেজুথির মাথা নিজের কোলে রেখে মুবারক কে বলল,
‘এখানেই যে হাসপাতাল টা আছে সেখানে চলো…
গাড়ি অনেক দ্রুত ড্রাইভ করছে মুবারক,,
আর রুদ্র এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সেজুথির দিকে।সেঁজুতির চোখের পাতা মৃদূ কাঁপছে।মাথার এক পাশ থেকে চুইয়ে চুইয়ে র/ক্ত পরছে।তবে যতটা পরার কথা ততটা নয়।মেয়েটির গায়ে বোধ হয় র/ক্ত কম। কেমন ফ্যাকাশে হাত পা।মেয়েটা আজ তাকে বাচালো।নাহলে এখানে এই অবস্থায় এতক্ষনে তার থাকতে হতো।রুদ্র চোখ বুজে সিটের সাথে মাথা এলালো।মনে মনে চাইলো মেয়েটি বেঁচে যাক।তার ঋন না থাকুক।এত বড় ঋনের বোঝা সে বইতে পারবেনা।গাড়ি ব্রেক করায় ধ্যান ভাঙলো রুদ্রর
আবারও সেজুথিকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকলো।এত বড় বিজনেস ম্যান কে এ অবস্থায় দেখে সেদিকে এগিয়ে এলো হাসপাতালের কজন।ওনাদের চোখে কৌতুহল। মেয়েটি কে? রুদ্রর কোলেই বা কেন?এত প্রশ্ন তাদের।রুদ্র চোখ মুখ দেখেই বুঝে নিলো।বিরক্ত হলো।র
— এক্সিডেন্ট কেস,,ইমিডিয়েট স্ট্রেচার নিয়ে আসুন..যান।
তবুও ঠায় দাঁড়িয়ে তারা।
‘যেন চাক্ষুশ সিনেমার দৃশ্য। রুদ্র এবার জোরে চেঁচিয়ে বলল,
— আরে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন,, যাস্ট গো।
— যাচ্ছি স্যার যাচ্ছি
বাইরে চেঁচামেচির শব্দ।হাসপাতালে এমন ষাড়ের মতো কে চেঁচায়?কান্ডজ্ঞান নেই নাকী!চেম্বার ছেড়ে উঠে এলো হোসাইন।পথিমধ্যে একজন নার্সকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে নার্স..এত চিৎকার কিসের?
মেয়েটি তাড়ায় ছিলো।তাড়াহুড়ো কন্ঠেই বলল,
— স্যার বিজনেস ম্যান রুদ্র রওশনের কোনও রিলেটিভ এর এক্সিডেন্ট হয়েছে.. সে জন্যেই
উনি.. হাইপার হয়ে চিৎকার করছেন।
রুদ্রর নাম শুনে চিনতে সময় লাগেনি তার।গতবার এর অপারেশন হোসাইন করেছিলো।তার ওপর এত বিখ্যাত একজন ব্যাবসায়ী। না চিনে উপায় কী।
— পেসেন্ট কোথায়??
— পেশেন্ট করিডোরে,, স্ট্রেচার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
হোসাইন রেগে বলল,
— আরে এখনো হচ্ছে মানে কি?যান তাড়া দিন..আর এক্সিডেন্ট কেস এর ট্রিটমেন্ট এ ভারপ্রাপ্ত কে আছেন?
— ড: রাতুল স্যার..
— ঠিক আছে ওনাকে খবর দিন..
নার্স মাথা নেড়ে চলে যেতেই করিডোরের বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলো হোসাইন।
রুদ্রর কোলে সেজুথি কে চোখে পরতেই দৌড়ে এলো সে।বিচলিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো একের পর এক।রুদ্রর সেসবে কান নেই।সে তাকিয়ে আছে দূরের স্ট্রেচারের দিক।ইতিমধ্যেই স্ট্রেচার নিয়ে হাজির হয়ে গেছেন ওয়ার্ড বয়।
রুদ্র তড়িঘড়ি করে কোল থেকে নামিয়ে সেখানে শুয়িয়ে দিলো সেজুথি কে।
মুহুর্তে তাকে নিয়ে আই সিইউ তে ঢূকলো।
ডাঃ হোসাইন এর মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।সেও হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলো স্ট্রেচারের পিছু পিছু।
রুদ্র একবার ভাবলো হাসপাতালে তো নিয়ে এসেছি এবার বরং চলে যাই।পরক্ষনেই আবার তার মানবিকতা তাকে বাধা দেয়ায় সেখানে রাখা চেয়ারে বসে পরলো।এসেছে যখন একবারে জেনেই যাবে মেয়েটি কেমন আছে?আধ ঘন্টা পর ড: রাতুল সহ, ড: হোসাইন কে বের হতে দেখে উঠে দাড়ালো রুদ্র,
— ইজ সি ওকে ড:??
— ইয়াহ,,এখন সুস্থ…. মাথায় চোট পেয়েছিলো কিন্তু
আল্লাহর রহমতে সেটা খারাপ ভাবে হয়নি.. যার কারনে সিভিয়ার কিছু হওয়া থেকে বেচে গিয়েছেন উনি… ( ড: রাতুল)এমনিতে হাতে পায়ে চোট আছে।পিচের রাস্তায় পরেছেন তো তাই কে/টে/কুটে গিয়েছে।তবে তাতে চিন্তার কিছু নেই।পেন কিলার নিলে ঠিক হয়ে যাবে কদিনে।
ভেতর থেকে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো রুদ্রর..
“যাক মেয়েটা বেচে গেছে।
ডা: রাতুল চলে গেলো।আপাতত তার কাজ শেষ। কিন্তু হোসাইন গেলেন না।সে এক ভাবে তাকিয়ে থাকলেন রুদ্রর দিকে।রুদ্রর হাসফাস বুঝে উঠলেন না তিনি।
— মিঃ রওশন ?? ওকে আপনি কোথায় পেলেন??
আর ওর এই অবস্থাই বা কি করে হয়েছিলো?
রুদ্র ভ্রু ক্রুটি করে বলল,
— ওনাকে আপনি চেনেন?
— হ্যা আমার বন্ধুর মেয়ে…
রুদ্র ছোট করে বলল,
— ওহ।
আসলে আমাকে বাচাতে গিয়ে নিজেই গাড়ির নিচে পরে গিয়েছিলো।
হোসাইন মাথায় হাত দিয়ে বলল,
— ও মাই গুডনেস!কত টা রিস্ক নিয়ে ফেলেছিলো মেয়েটা।আমিতো ভাবতেই পারছিনা।
এই মেয়েটার এই একটাই সমস্যা।কখনও নিজের কথা ভাব্বেনা।সব সময় অন্যের ব্যাপারে ভাবছে।
এই যে দেখুন আপনাকে চেনেনা,জানেনা অথচ এই নিয়ে দুবার আপনাকে বাচালো মেয়েটা।
রুদ্র সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার মতন তাকালো।

— দুবার?
চলবে….
#প্রনয়
#নুসরাত সুলতানা সেজুথী
#পর্ব-০৭
রুদ্রর জানার ইচ্ছে দেখে হোসাইন যেন আগ্রহ পেলেন অনেকটা।আগের থেকেও উদ্বেজনা নিয়ে বললেন,
‘হ্যা সেই যে আপনার গুলি লেগেছিলো?ব্লাড দরকার হয়েছিলো? তখন তো ওই আপনাকে ব্লাড ডোনেট করলো।কি আর বলব বলুন,আপনার ভাই তো নিতেই নারাজ।হাসপাতালের ব্লাড ব্ল্যাংক গুলোও বেশ দূরে বিধায় সেঁজুতিই আপনার ভাইকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করালো।ভাবতে পারছেন? চেনেনা জানেনা অথচ আপনাকে রক্ত দেয়ার জন্যে যেচে এগিয়ে এলো মেয়েটা।আজ আবার বাঁচালো।সত্যিই! এখন কার দিনে মানুষের অভাব নেই,কিন্তু এরকম ভালো মানুষের সত্যিই বড় অভাব।
রুদ্র এতক্ষন বিহ্বল হয়ে শুনছিলো।তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে বোধ হয়।অস্পষ্ট আওয়াজে বলল,
,ইনিই সেই মেয়ে?
হোসাইন ঠিক শুনতে পেলেন না।তবে ঠোঁট নাড়ানো দেখে বুঝলেন রুদ্র কিছু বলল।নিশ্চিত হতে বলল,
,
,কিছু বললেন মিস্টার রওশন?
রুদ্র চমকালো।
,হ্যা? না।
রুদ্র থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক পছন্দ হলোনা হোসাইনের।এরকম কথা শুনে কেউ এমন নির্বাক, থাকে কি করে? সে হলেতো কৃতজ্ঞতায় লুটিয়ে পরতো।
‘ ওকে মিস্টার রওশন,আমি তাহলে আসি এখন।বিশ মিনিটের মাথায় সেঁজুতির জ্ঞান ফিরে আসার কথা।আপনি চাইলে দেখা করে নেবেন।
রুদ্র ভদ্রের মত মাথা ঝাকালো।হোসাইন ঢুকে পরলেন চেম্বারে।রুদ্র তখনও স্তম্ভের মতোন দাঁড়িয়ে।তার মাথায় এখনও কিছুই ঢুকছেনা।ঘুরেফিরে সব গোলক ধাঁধার সমাধান এই মেয়েতেই হলো?এই সেই হোটেলের মেয়ে যে কীনা টাকার বিনিময়ে তার সাথে রাত কাটালো।আবার এই মেয়েই তাকে রক্ত দেয়ার দৌলতে পাঠানো টাকা ফেরত পাঠালো।কেন? ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় উপন্যাসের মতোন হয়ে গেলো না?রুদ্রর একটু খারাপ ও লাগছে এখন
‘এই মেয়েটাই তাকে দু বার সেফ করলো,অথচ মেয়েটাকে নিয়ে কি নিম্ন মানের চিন্তাভাবনাই না ছিলো তার!অবশ্য! তার এতে কি দোষ,মেয়েটা যা করেছে তাতে তার জায়গায় থাকলে যে কেউ এসব ই ভাববে।রুদ্র পায়চারি করলো খানিকক্ষন।এই একটা মেয়ে গত দুদিন যাবত তাকে পাগল করে দিচ্ছে কেউ কী জানে?সব হিসেব মিলিয়েও একটা জায়গায় আটকে যাচ্ছে রুদ্র,
যে মেয়ে বারবার হাতে টাকা পেয়েও নিচ্ছেনা,,সে মেয়ে কেনো টাকার বিনিময়ে আমার সাথে হোটেলে থাকতে গিয়েছিলো?কি এমন দরকারে!
নাহ কিচ্ছু আসছেনা মাথায়,,বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে মাথাটা।তার মন বলছে কিছু একটা ব্যাপার আছে…কিন্তু কি?তার কী জানা উচিত? না কেন?এটা সম্পূর্ন সেই মেয়ের ব্যাপার। সে কেন মাথা ঘামাবে?কিন্তু মাথা না ঘামিয়েও যে শান্তি পাবেনা।হ্যা তার জানা উচিত।সব টা জানা উচিত।নিজের শান্তির জন্যে হলেও।কিন্তু কিভাবে জানবে?মেয়েটাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেই কি মেয়েটা তাকে বলবে?কখনওইনা।উল্টে মেয়েটি যদি তার ভাবনার মতো অন্যরকম হয় তবে তাকে দেখে অস্বস্তি বোধ করবে।তাহলে এখন সে করবে টা কি?
_____
হাসপাতালে একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে অভ্র।মুবারকের থেকে জেনেছে এক্সিডেন্টের ব্যাপারে।পুরোটা না শুনেই ছুট লাগিয়েছে ছেলেটা।প্রান প্রিয় ভাই তার।সে কীনা গাড়ির তলায় পরতে যাচ্ছিলো?অভ্র দুঃখে শোকে শেষ প্রায়।কি দরকার ছিলো রুদ্রর একা বের হওয়ার,তাও ড্রাইভার ছাড়া।মনে মনে রুদ্রকে কড়া শাসন করতে মন চাইলেও সে সাহস তার এখনও হয়নি।
হাসপাতালে এসেই করিডোরে এসেছে অভ্র।পথে অবশ্য একজন কে জিজ্ঞেস করেছিলো রুদ্রর কথা।সেই দেখিয়ে দিয়েছে রুদ্র কোথায়।
রুদ্র চেয়ারে বসে আছে।ভাবছে কিছু।হাটুর ওপর ঝুঁকে হাত ঠেকিয়েছে থুতনীতে।আশেপাশে খেয়াল নেই তার।পরনের আকাশী রংয়ের শার্টে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ এখনও। অভ্র ঘাঁবড়ালো।এমন রক্ত কোত্থেকে এলো?দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে অভ্র।কাঁধের ওপর হাত ছুইয়ে আস্তে করে ডাকে,
ভাই??
স্পর্শ পেয়ে ধ্যান ভাঙলো রুদ্রর।ঘাঁড় ফেরাতেই অভ্রকে দেখে অবাক কন্ঠে বলল,
— একি! তুই এখানে?
অভ্র রুদ্রর পাশের চেয়ারে বসলো।বলল,
— মুবারকের থেকে জানতে পারলাম তোমার এক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছিলো।তুমি হাসপাতালে,,তাই আর থাকতে পারিনি,,চলে এসেছি,,তুমি ঠিক আছো ভাই??
— হুম..
অভ্র খেয়াল করলো রুদ্র গভীর চিন্তায়।এখন কী আর কিছু বলা ঠিক হবে?অভ্র চুপ করলেও রুদ্র বলে ওঠে,
‘ ঠিক থাকতাম না হয়ত,যদি না মেয়েটি আমাকে বাঁচাতো।
অভ্র অবশ্য এটুকু শুনেছিলো মুবারকের কাছে।তাই আর অবাক হয়নি।তবে বুঝলো এত রক্ত নিশ্চয়ই মেয়েটির।ছোট করে শুধালো,
এখন তার কি অবস্থা??
রুদ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোজা হয়ে বসলো।
‘ভালো।জানিস এই মেয়েটা কে??
‘কে??
‘ সেই মেয়েটি।যে তোর পা ভাঙার হুমকি দিয়েছে।
অভ্র তঁড়াক করে লাফিয়ে উঠলো।গোল গোল চোখে চেয়ে বলল,
কি? ওই ঝগড়ুটে মেয়েটি?মানে আগের বারও যে তোমাকে…
রুদ্রর মুখের গম্ভীর ভাবখানা দূর হলো।অভ্রের চোখমুখ দেখে কেমন হাসি পেলো তার।কি নাম দিলো মেয়েটির? ঝগড়ুটে? মেয়েটি কি আসলেই তাই?অভ্রর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রুদ্রর।অভ্র কেমন টেনে টেনে বলল
‘ও গড।মেয়েটা তো বলতে গেলে তোমার জন্য এঞ্জেল হয়ে গেলো ভাই।নাহলে তুমিও বারবার বিপদে পরছো আর ওই বাঁচাচ্ছে তোমায়।হ্যা রক্ত দেয়ার ব্যাপারটা নাহয় একটু স্বাভাবিক। কারন অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্ত দান টান করে।কিন্তু আজকের বিষয় টা অনেক গভীর।কেউ এমন রিস্ক নিয়ে গাড়ি ভর্তি রাস্তায় কাউকে বাঁচাতে যাবেনা।মরার ভয় সবার থাকে।
অভ্র বিরতি নিতেই রুদ্র মাথা দুলিয়ে হাসলো।বিদ্রুপের হাসি। ছেলেটা কী বলল,
‘ এঞ্জেল?? হাহ,,রুদ্রর আবার এঞ্জেল।পৃথিবীতে সব থেকে মজার কৌতুক হয়ত এই কথাটাই।
,
মেয়েটার সাথে দেখা করেছো ভাই??
রুদ্র এবার সিরিয়াস মুখ করলো।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। এতক্ষন বসে বসে অনেক কিছু ভেবেছে।প্ল্যানিং ফুল কমপ্লিট।তার অনুমান সত্যি হলে এভাবে মেয়েটার সামনাসামনি যাওয়া ঠিক হবেনা।ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কাজ করায় অবশ্য রুদ্রর জুড়ি মেলা ভাড়।
রুদ্র পকেটে দুহাত ঢুকিয়ে বলল
‘তুই গিয়ে দেখা করে আয়।
অভ্র দুই ভ্রু ওপরে তুলে বলল
‘ আমি? আমি গিয়ে কি বলব ভাই?
ছেলেটার কথাটা একটু বোকা বোকা শোনালোনা?লম্বায় বাড়লেও বুদ্ধি হয়েছে কী?রুদ্র চোখ ছোট করে বলল,
‘ যে মেয়ে তোর ভাইকে বাঁচালো তাকে দেখতে যাওয়া তোর দায়িত্ব নয়?
অভ্র মাথা নাড়লো।হ্যা দায়িত্ব তো।রুদ্র আবার বলল
‘ বলবি ও যাকে আজ বাঁচালো তুই তার ভাই।বোঝা গেলো?
অভ্র এবারেও মাথা দোলায়।রুদ্র যেতে নিয়ে আবার ফিরে তাকালো।বলল,
‘শোন,মেয়েটার সামনে আমার নাম বলবিনা।ভুলেওনা।
ঠান্ডা ভাবে বললেও অভ্রর মনে হলো রুদ্রর হুমকি দিলো তাকে।যদিও রুদ্রর ভালো কথাও এমন।শুনলেই মনে হয় ধমকাচ্ছে।
— কিন্তু তুমি?
,
আমি আসছি…
_______
বেডের ওপর আধশোয়া হয়ে আছে সেজুতি।মাথায় ব্যান্ডেজ করা।পা গুলোও ভীষণ ব্যাথা করছে।সমস্ত গা ভারী ভারী লাগছে।ম্যাজম্যাজ করছে। ডাক্তার বলেছে পায়ে তেমন কিছু হয়নি।শুধু পেশিতে টান পড়ায় ব্যাথা হচ্ছে।দুই একদিন বাদেই ঠিক হয়ে যাবে।আজ তার টিউশনি দুটোর বেতন নিতে গিয়েছিলো। সেগুলো থেকে বাজার নিয়ে ফেরার পথেই এত কিছু ঘটে গেলো।বাবা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন?? ভীষণ চিন্তাও করছেন।হোসাইন আঙ্কেল কি বাবাকে জানিয়েছে কিছু?আল্লাহ যেন না জানায়।জানালেই বাবা ছটফট করবেন।নিজেকে দোষারোপ করবেন।না না প্লিজ আঙ্কেল! কোথায় যে গেলেন উনি?আমি কী এখন বাড়ি যেতে পারব জানা দরকার? কিন্তু একা যাবই বা কি করে! পায়ে তো খুব ব্যাথা।মাটি ছুঁতে পারব কীনা সন্দেহ।আঙ্কেল সেই যে এলেন আর দেখা নেই।ডাক্তার মানুষ ভীষণ ব্যাস্ত।কিন্তু আমিও এভাবে বসে থাকব কতক্ষন।আমার তো সিভিয়ার কিছু হয়নি যে দু তিন দিন হাস্পাতালে থাকা প্রয়োজন। আঙ্কেল এলে একবার জেনে নিতাম,সেই লোকটা কেমন আছে? উনিই কী আমায় হাসপাতালে এনেছিলেন? হবে বোধ হয়।নাহলে হোসাইন আঙ্কেলের তো জানার কথা নয় রাস্তায় কি ঘটেছে।উনিতো খুব রেগেছিলেন।ধমক ও দিয়েছেন আমাকে।কিন্তু আমি কি করব?কারো বিপদ দেখলে সাহায্য না করে থাকা যায় নাকী? আমিতো পারিইনা।শরীরের মধ্যে কেমন নিশপিশ করে আমার।অবশ্য এত কিছুর মধ্যে একটা জিনিস ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে লোকটার কিছু হয়নি।বাঁচাতে পেরেছি তাকে।কিন্তু ওমন দাঁমড়া লোক রাস্তা পার হতে পারেনা? কেমন বাচ্চাদের মতো করছিলো।কে ছিলেন লোকটা?আঙ্কেল তো কিছু বললেন না এ ব্যাপারে। শুধু ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি না নেই যাতে তার জন্যে হম্বিতম্বি করে গেলেন।
,
আসতে পারি?হ্যালো মিস শুনতে পাচ্ছেন? আসব কী ভেতরে?
সেঁজুতির টনক নড়লো এতক্ষনে।কেবিনের দরজায় চেনা পরিচিত লোকটিকে দেখে বিস্মিত হলো।
আরে! আপনি?? এখানে?আসুন।
অভ্র ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
‘কি করবো বলুন,,ঘুরেফিরে আপনার সাথেই দেখা হয়ে যাচ্ছে।তা এত কি ভাবছিলেন বলুন তো,আমি সেই কখন থেকে ডাকছিলাম।
সেঁজুতি লজ্জ্বা পেলো।সে জান প্রান দিয়ে ভাবছিলো বলে কোনও কিছুই কর্নকুহর হয়নি।ইশ! লোকটা কি ভাবলেন।
সেঁজুতির মুখ দেখে হাসলো অভ্র।বলল
,আমি কিছু মনে করিনি।
সেঁজুতি মুচকি হেসে বলল ‘ধন্যবাদ।তবে আপনি..
অভ্র কথা কেড়ে নিয়ে বলল
— আমি এখানে কেনো তাই ভাবছেন তো..
—জ্বি
অভ্র টুল টেনে বসলো।বলল,
,
না না।ভাববেন না যে আবারও টাকা দিয়ে আপনাকে অপমান করতে এসেছি।আমার পা ভাঙার ভয় আমার আছে।
সেঁজুতি হেসে ফেলল শব্দ করে।
‘আসলে ঐদিন এত রাগ হয়েছিলো তাই বলে ফেলেছি।কিছু মনে করবেন না।টাকা পয়সার ব্যাপারে আমার একটু এলার্জি আছে।
‘ আমি কিছু মনে করিনি।
কথাটা মুখে বললেও অভ্র মনে মনে বলল,
‘ করেছি অনেক কিছু মনে করেছি।আপনি আমার পা ভাঙবেন আর আমি কিছু মনে করবনা এত উদার আমি নই।
সেঁজুতি প্রশ্ন করলো,
কিন্তু আপনি এখানে কেন বললেন না।
অভ্র লম্বা শ্বাস ফেলে বলল
আসতে তো হতোই।না এসে উপায় আছে বলুন? কারন আজকেও আপনি যে লোকটাকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাচিয়েছিলেন,তিনি আমার ভাই।
সেঁজুতি হা করে বলল
‘উনি আপনার ভাই ছিলেন? মানে সেই লোকটা?
,
জ্বি আমার সেই ভাই… যাকে আগের বারেও আপনিই বাচিয়েছেন।
সেঁজুতি এবার চোখ নামিয়ে বলল
,.বারবার এভাবে বাঁচানো কথাটা উল্লেখ করবেন না।বাচানোর একমাত্র মালিক আল্লাহ।আমি ওসিলাহ মাত্র।বাঁচা মরা সব ওনার হাতে।
এই প্রথম সেঁজুতির কথায় মুগ্ধ হলো অভ্র।না মেয়েটি ভালোই।
তখনি কেবিনে ঢুকলেন হোসাইন।অভ্রকে দেখে হেসে বললেন
— আরে মিঃ চৌধুরী যে…আপনি কখন এলেন?
অভ্র উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো হোসাইনের সাথে।চমৎকার হেসে বলল,
‘ আমার ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে যার এক্সিডেন্ট। তাকে দেখতে আমি আসবনা?
,নিশ্চয়ই। হোসাইন এবার সেঁজুতির দিক ফিরলেন।বেশ গুছিয়ে বললেন,
‘আমির কে আমি ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি তুমি আমার কাছে আছো।এটুকু শুনতেই সেঁজুতি চোখ কপালে তুলল।হোসাইন বুঝতে পেরে বলল,
‘ ভয় পাওয়ার কিছু নেই।এক্সিডেন্টের কথা জানাইনি।শুধু শুধু
চিন্তা করবে।তাই বলেছি দেখা করতে এসেছো।
সেঁজুতি নিশ্চিন্তের শ্বাস ফেলল।হেসে বলল,
— এটুকুতেই হবে আংকেল,,অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
হোসাইন মুখটা গোমড়া করে বললেন,’ সাহায্য টা রোজ রোজ পাবেনা।সেটাও মনে রেখো।
সেঁজুতি মুখটাকে চোরের মতো করে নামিয়ে ফেলল।হোসাইন ছোট্ট শ্বাস ফেলে হাতের কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল
— তোর প্রেস্ক্রিপশন। ডাঃ রাতুলের থেকে নিয়ে এলাম,,সব ওষুধ সময় মতো খাবি।
সেঁজুতি হাত বাড়ানোর আগেই অভ্র হোসাইনের হাত থেকেনিয়ে নিলো। দুজন তাকাতেই বলল,
,আপনি তো অসুস্থ।আপাতত আমি রাখছি।এটুকুর জন্যে নিশ্চয়ই পা ভাঙবেন না?
সেঁজুতি হোসাইনের দিকে তাকালো।সে কিছুই বোঝেনি।কথা বেশিদূর গড়াতে পারে ভেবে আস্তে করে বলল’ আচ্ছা রাখুন।
‘ ওনার তবে রিলিজ তাইনা,,
‘জ্বি।
হোসাইন এসে সেঁজুতির মাথায় হাত বোলালো।
‘মাথা ব্যাথা করছে?
সেঁজুতি দুপাশে মাথা নাড়লো।
‘তুই একটু অপেক্ষা কর,আমি কজন পেশেন্ট দেখে তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবো।
পাশ থেকে অভ্র হৈহৈ করে বলল,
না না আপনার যেতে হবেনা।আমি ওনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো।
সেঁজুতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
‘সেকি আপনি কেনো যাবেন?
‘প্লিজ! এটা তে না করবেন না।প্লিজ!তাছাড়া ড: হোসাইন আপনাকে দিয়ে আসার সময় টুকুতে অনেক পেশেন্ট কেই দেখতে পারবেন তাইনা?? কত লোক সিরিয়াল ধরে আছে,,তাদের কষ্ট টাও কমে যাবে। অভ্র খুব ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছে তার ট্রিক্স কাজে লাগবে।সেঁজুতি নিশ্চয়ই এটা শুনে রাজি হবে।
সেঁজুতি খানিক ভেবে বলল
‘ঠিক আছে।
অভ্র মুখ ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল।সে ঠিক তাই তাই বলল,যা রুদ্র শিখিয়ে পড়িয়ে গিয়েছে।ঠিকমতো বলতে পেরেছেতো? ভাই আবার ঝাড়ি না মারলে হয়।
‘আমি একটু আসছি বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে রুদ্রকে কল দিলো।
,
হ্যা বল।
,ভাই এবার কী করব? পৌঁছে দেবো?
“না তোকে যেতে হবেনা।
‘ তাহলে কে যাবে?
,সময় হলে দেখবি।
,কিন্তু তুমি কোথায়?
‘আসছি….
রুদ্র লাইন কেটে দিয়েছে।অভ্র আবারও কেবিনে ঢুকলো।সেঁজুতি এবার পা ঝুলিয়ে বসেছে বিছানায়।
অভ্রকে দেখতেই বলল
‘এবার তাহলে যাই আমরা?আমার বাবা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে…
অভ্র কি বলবে খুঁজে পেলোনা।চট করে মিথ্যে সে বলতেও পারেনা।আমতা-আমতা করে বলল,
— আসলে হয়েছে কি, আমি যেতে পারবনা।প্লিজ কিছু মনে করবেন না।ভাই বললো ওই আপনাকে পৌঁছে দেবে…
‘উনি আবার শুধু শুধু কেনো যাবেন?,ইনফ্যাক্ট আপনার ও যাওয়ার প্রয়োজন ছিলোনা।
আমি কিন্তু ম্যানেজ করে নিতে পারতাম..!
— হ্যা সে হয়তো আপনি পারতেন ম্যানেজ করতে।কিন্তু আপনাকে পৌছে দিতে যাওয়াতে আমরা যে একটু হলেও শান্তি পাবো সেটা কি হাতছাড়া করা যায় বলুন…?আপনি যাস্ট দু মিনিট বসুন,ভাই এক্ষুনি এসে পরবে..
সেঁজুতির আর কিছু করার নেই।হোসাইন অলরেডি বেরিয়ে গেছেন ওটির উদ্দেশ্যে।ছোট করে বলল, ‘ঠিক আছে।
সময় যেতে না যেতেই রুদ্র এসে কেবিনের সামনে দাঁড়ালো।প্রথমেই চোখ পরলো সেঁজুতির দিকে।কপালে ব্যান্ডেজ।গালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ।পড়নে নীল রঙের থ্রি পিস।মেয়েটিকে কি সুন্দর লাগছে?রুদ্র নিজের কাছেই প্রশ্ন করলো।কিন্তু উত্তর এলোনা অনেকক্ষনেও।
পরমুহূর্তে নিজের চিন্তায় নিজেই মুখ থুঁবড়ে পরলো সে।মেয়েটিকে সুন্দর লাগলেই বা! তার কি?
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here