#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১০
#Nishi_khatun
আজ অনেকদিন পর রিমশা দাইয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিমশা যে দাইয়ানের সাথে দেখা করতে এসেছে সে কথা কাকপক্ষীও জানে না।
আজ অনেকদিন পর সে তার প্রিয় না অপ্রিয় মানুষটার সামনে দাঁড়িয়েছে। রিমশা কে দেখে দাইয়ান মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চেয়ে থাকে।
দাইয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,” তুমি এখানে কেনো এসেছো?”
রিমশা প্রতিউত্তরে বলে,
“আপনাকে এক নজর দেখে আমার আঁখিদুটির তৃপ্তি মেটাতে। এই বুকের মাঝে থাকা ছোট অশান্ত হৃদয়টাকে কে শান্ত করতে এসেছি। বহুদিন হলো একান্তে আপনাকে এভাবে দেখার সুযোগ হয় না।”
দাইয়ান তাচ্ছিল্যের সাথে উত্তর দেয়,
-“বলো আমাকে উপহাস করতে এসেছো। তুমি সব কিছু যেনে বুঝে কেনো আমাকে এভাবে বিপদে ফেলছো? আমি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি বলতে পারো? না কি তোমার উপকার করেছি দেখে, আমার অপকার করে ফেরত দিচ্ছ?”
রিমশার কন্ঠ দিয়ে কোন আওয়াজ বাহির হচ্ছে না।
সে চেষ্টা করছে তার স্বামীর সাথে তর্ক করতে কিন্তু কেনো জানি কিছুতেই কণ্ঠনালী দিয়ে এখন কোন আওয়াজ বাহিরে আগমন করছে না। সত্যি রিমশা’র অনেক বড় উপকার করেছে সে। আজকের এই দিনটা তৈরি করার পেছনে তার অবদান অনেকটা জুড়ে।
দাইয়ান এবার রাগী কন্ঠে বলে,”তুমি সবকিছু জানো আমার জীবনের উদ্দেশ্য, আমি কেনো এসব করছি। তবুও কেনো আমার লক্ষের বাঁধা হয়ে সামনে এসে দাঁড়াও। কেনো আমাকে আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে দিচ্ছ না? কি চাই তোমার আমার কাছ থেকে? আমি তোমার কাছে কোন কিছুতে দায়বদ্ধ না।”
রিমশা বেহায়ার মতো বলে,
-“আমার আপনাকে চাই! সারাজীবন ভালোবেসে পাশে থাকার জন্য নয়। সারাজীবন আমার কাছ থেকে অবহেলা পাবেন তা ভোগ করার জন্য। আপনি নিজে স্বার্থপরের মতো কাজ করেছেন। তাহলে আমি কেনো আমার প্রতিশোধের তৃষ্ণা মেটাতে স্বার্থপর হতে পারবোনা? আমার #হৃদয়ের_সুখ_আপনি এটা না বুঝলে কিছু করার নাই।
কারণ আপনি শুধুমাত্র আমার স্বামী। আমাদের পবিত্র সম্পর্কটা কে আমি অনাদরে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারি না। আর না কোনদিন আপনাকে ছাড়তে পাড়বো আমি। কেনো পাড়ব না তা আপনি খুব ভালো করে জানেন। কারণ আমার পুরো পৃথিবীটা শুধু মাত্র আপনার মাঝে সীমাবদ্ধ। সেই পৃথিবী একান্ত আমার করার জন্য কখনো আপনার সামনে আত্মসম্মান বিষর্জন দিবো না। আপনার একটু ভুলের জন্য আমার জীবনে আপনার অবদান ভুলে যাবাে না।”
দাইয়ান চিৎকার করে বলে,
-“তুমি চলে যাও আমার সামনে থেকে।
আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছি না।
তোমার জন্য আমার হৃদয়ের মাঝে
রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা তুমি বোঝ না?
নিজের ভালোবাসা, আত্মসম্মান, ভবিষ্যৎ সব কিছু বিষর্জন দিয়েছি আমি শুধুমাত্র আমার লক্ষ পূরণের জন্য। কিন্তু তুমি আমার সে লক্ষ পূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছো।
কেনো করছো আমার সাথে এমন আচরণ? ”
রিমশা’র চক্ষু হতে অশ্রু ঝড়ছে, নিজের অশ্রু নিজেই দ্রুত মুছে। কান্না সিক্ত কন্ঠে বলে,
“আপনি নিজের লক্ষ পূরণের জন্য ভুল পথের পথিক হয়েছেন। আপনার অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে আমার কর্তব্য আমি যেনো আপনাকে সঠিকপথে নিয়ে আসি। সবাই যদি আপনার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে ভালো মন্দের পার্থক্য কে বোঝাবে?”
দাইয়ান মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে,”আমি চাইনা তুমি আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকো। কারো দরকার নেই আমার। আমার জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট। আমি যে পথে চলছি সে পথের সঙ্গী তোমাকে করতে পাড়বো না। আমি কোনদিন ও তোমাকে কষ্টে দেখতে পারি না, এটা তুমি খুব ভাল করে জানো। প্লিজ সোনা এসব বাচ্চামি বাদ দিয়ে নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে সাজাও। আমাকে আমার মতো চলতে দাও। মুক্তি দাও আমাকে তোমারও থেকে।”
রিমশা প্রতিউত্তরে আবারো বলে,
-“সুন্দর করে জীবনটাকে আপনার সাথে সাজাতে চেয়েছি। তবে আপনি কি করলেন? আমার হক, আমার অধিকার নষ্ট করে দিলেন। আমার বিনা অনুমতিতে আমার জন্য সতীন নিয়ে চলে আসলেন? তাও আবার নিজের লক্ষ পূরণের জন্য। কেনো আমার উপর একটু বিশ্বাস ছিলো না। আমাকে বললে হয়তো আপনার দ্বিতীয় বিয়ে করা লাগতো না। আপনি এমন কিছু করবেন, এমনটা আপনার থেকে আশা করি নাই।
আপনার কাছ থেকে এই প্রাপ্তি বাকি ছিলো?”
দাইয়ান -যখন দেখলে তোমাকে তাড়ানোর জন্য সতীন এসেছি। তখনও কেনো চলে গেলে না আমার জীবন থেকে? কেনো আঠার মতো লেগে আছো এই নষ্ট মানুষটার পেছনে?”
রিমশা ‘র ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখা ফুঁটিয়ে বলে,”আপনি খুব ভালো করে জানেন। আমি আমার সাথে করা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানি। সেখানে স্বামী মহাদয় আমার জন্য সতীন আনবে তাকে এমনিতে ছেড়ে দিব? এতো ভালো আমাকে ভাবার দরকার নেই।”
দাইয়ান চিৎকার করে বলে,
“তুমি চলে যাবে না কি আমি চলে যাবো দুনিয়া থেকে?”
রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”আপনি মরবেন না, তা আমি খুব ভালো করে জানি। আচ্ছা থাক আপনাকে আর ডিস্টার্ব না করি। আজকের মতো এটুকু প্রেম-আলাপ যথেষ্ট। ”
এরপর মনের প্রশান্তি নিয়ে দাইয়ানের সামনে থেকে রিমশা প্রস্থান করে।
দাইয়ান নিজের সামনে থাকা দেয়ালে হাত দিয়ে জোড়ে
বারি দিয়ে বলে,
–
“কেনো তোমার আগমন আমাকে বারবার পোড়ায়? কেনো তোমার আগমন আমাকে বারংবার কাঁদায়! বলতে পারবে? তুমি কেনো এলে আমার অন্ধকার জীবনে? কেন জড়ালে নিজেকে এই সম্পর্কে? এর উত্তর জেনেও অজানা রইলো।”
*
*
এদিকে সকালে বাবার বাড়িতে যাবার নাম করে বেড়িয়ে ছিল রিমশা। তবে সে বাবার বাড়িতে যাবার পথিমধ্যে দাইয়ানের সাথে দেখা করেছে। সে যেহেতু বাবার বাড়ির নাম করে এসেছে তা-ই সে এখন বাবা- মা’র সাথে দেখা করবে।
‘সন্ধ্যাবেলা ফিরে যাবে ঐ নীড়ে,
যে নীড়ে তার হৃদয়ের মানুষের স্মৃতি দিয়ে সাজানো। ‘
বাবার বাড়িতে এসেই বাবাকে আলিঙ্গন করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রিমশা। পাশেই তার মা দাঁড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বু্লিয়ে দিচ্ছে।
রিমশা নাক টেনে বলতে থাকে,”তোমরা কতোটা স্বার্থপর ভাবা যায়?”
রিমশা’র বাবা মা ভেবেছে এতো ঘটনা ঘটে গেছে তবুও তারা ঐ বাড়ি থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে যায়নি দেখে হয়তো এভাবে কান্না করছে।
তবে রিমশা বাবা- মা কে অবক করে দিয়ে বলে,
-“এতোদিন পর মেয়ে বাড়িতে এসেছে তাকে বাড়ির সদরদরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছ। মনে হচ্ছে আমি ভিক্ষুক! আমাকে কিছু দান করে বিদায় করবে।”
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে তারা দুজনে খুব অবাক হয়ে যায়। তাদের মেয়ে এমন পরিস্থিতি তে এভাবে কথা বলবে তারা আশা করে নাই।
এরপর রিমশা কে নিয়ে বাড়ির অন্দরমহলে প্রবেশ করে তারা। আজকে রিমশা’র পছন্দমত সব কিছু রান্না করেছে তার মা। এদিকে রিমশা খাবার খেতে বসে ওর মা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“মা আমার জন্য যত আইটেম রান্না করেছ সব কিছু টিফিন বক্সে ভরে দাও। ভাবী আর দুই ছোট বোনের জন্য নিয়ে যাব।”
রিমশা’র মা অবাক হয়ে বলে,
“বক্সে ভরে দিব মানে কী? তুই কতদিন পর বাড়িতে এসেছিস! কিছুদিন থাকবি না এখানে?”
রিমশা’র সোজাভাবে উত্তর দেয়,”উঁহু! আমার এতো সময় নেই। তাছাড়া আমি অনেক ব্যস্ত, আমার ব্যস্ততা তোমরা বুঝবে না।এখন যা বলেছি তা-ই করো।”
রিমশা’র বাবা বলে,”আজকের রাতটা না হয় এখানে থেকে যা!”
রিমশা -কি দরকার বাবা? আমি যদি এখানে থাকি তাহলে দেখবে আবার কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে। আমি এ গ্রামে থাকা মানে বিপদে পরা। ছোট বেলায় বনবাসী হয়েছিলাম, আর বড় বেলায় বিয়ে করে যাবজ্জীবন কারা ভোগ করছি দাইয়ানের কারাগৃহে।”
রিমশা’র বাবা- মা দু’জনে মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
তখন রিমশা বলে,”তা মা তোমার ছেলে আর বউমা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসবে না? না মানে সেই যে বিয়ের পর বউ নিয়ে শহরে গেলো তারপর আর কোনদিন বাবা- মা’র সাথে দেখা করতে আসার প্রয়োজন বোধ করলো না।”
রিমশা’র মা বলে,”দেখা করতে না আসলেও রোজ দু’জনে কয়েকবার ফোন করে খোঁজ-খবর নেয় আমাদের।
মাসে মাসে আমাদের জন্য হাত খরচের টাকাও পাঠিয়ে দেয়। আমাদের দু’জনেকে ওদের সাথে যেয়ে থাকতে বলে। ”
রিমশা নরম কন্ঠে বলে,”আচ্ছা মা টাকাপয়সা কি সব? বাবা- মা এই বয়সে তাদের সন্তানদের সাথে কিছু সময় কাটাবে এটাই তো তাদের ইচ্ছা তা-ই না?”
তারা দু’জনে আর কোন কথা বলে না কিছু সময় নিরবতা পালনের পর রিমশা’র মা বলে,
“তুই তো জানিস তোর ভাই তোকে কতোটা ভালোবাসে।
তোর সাথে এখানে এতো কাহিনী ঘটেছে দেখে সে গ্রামটা কে ঘৃণা করে। আর মনের বিতৃষ্ণার জন্য সে গ্রামের বাড়িতে আসতে আগ্রহ বোধ করে না। তা-ই আমরাও জোড় করি না।”
রিমশা জানে তার ভাই সত্যি তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে।
তা-ই তাদের সাথে আর কোন বাড়তি আলোচনা করে না।
এবাড়ির কেউ তাকে শ্বশুরবাড়ির কথা জিজ্ঞাস করে না।
কারন তারা জানে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যদি ভালো না হতো, তাহলে তাদের মেয়ে কোনদিন ও ঐ বাড়িতে এভাবে পড়ে থাকত না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে রিমশা ঐ বাড়িতে সবার সাথে আনন্দে আছে।
রিমশা’র বাবার বাড়ি থেকে বেড়ুতে রাত হয়ে যায়। তাকে এতো রাতে একা ছাড়তে চাইনি তবুও সে জোড় করে একাই বেড়িয়ে পড়ে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে।
*
*
চেয়ারম্যান বাড়িতে রিমশা অনেক রাতে প্রবেশ করে।
ইলমা রাত জেগে লেখাপড়া করছিল, তখন সে বুঝতে পারে রিমশা এসেছে। কারণ সে ইলমার কাছে ফোন করে দরজা খোলার জন্য। তাই সে বাড়ির মেইন দরজা রিমশা’র জন্য খুলেদেয়।
ইলমা তখন বলে,”ভাবী এতো রাতে বাড়িতে না আসলেই পারতে। কী দরকার ছিলো বলে একা রিস্ক নিয়ে রাতে এভাবে আসার।”
রিমশা বলে,”ও তুমি বুঝবে না। রাতে না আসলে সকালের মজা নিবো কি করে? তা-ই বলে ইলমা’র সামনে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলে, খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে দাও। কাল সকালে সবাই মিলে খাবো। আম্মা সবার জন্য পাঠিয়েছে। যেহেতু অনেক রাত হয়েগেছে আজকে আর খাওয়া হলো না।”
ইলমা শপিং ব্যাগ হাতে খাবার ঘরের দিকে চলে যায়।
এদিকে সদরদরজা বন্ধ করে রিমশা নিজের রুমে চলে যায়।
”
”
”
চলবে…….