#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৯
#Nishi_khatun
বিয়েরপর শ্বশুর মশাই আমাদের দু’জন কে সঙ্গে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে আসেন। আমি সেখানে এসে দেখি অবাক কান্ড।
ইফা আমার বাবার পায়ের কাছে বসে কুমিরের কান্না করে বলছে,”মামাজান আমার ভুল হয়েছে। আমি রাস্তা ভুল করে ভুল দিকে চলে গেছিলাম। তারপর আমি রিমশা আপুকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না তাই বাড়িতে একাই ফিরে এসেছি। আমাকে মাফ করে দেন আপনারা।”
আমি ইফার এমন নাটক দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
তাদের দৃষ্টি সদর দরজার সামনের পড়তেই তারা আমাকে দেখে ছুটে চলে আসে। বাবা ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
তার বুকে মাথা রাখতেই আমিও কান্নায় ভেঙ্গে পরেছি।
এরপর সকলে একসাথে বাড়ির অন্দরমহলের ভেতরে গমন করি। তারা সকলে ভেতরে প্রবেশ করে সোফাতে বসে।
এরপর বদুরুদ্দিন সাহেব আব্বুর কাছে আমাদের দু জনের বিয়ের কথাটা ব্যক্ত করে। আর সাথে এটাও বলে গ্রামের লোকজন ওদের দুজন কে একসাথে দেখে নানারকম খারাপ মন্তব্য করছিল। যেহেতু ওদের বিয়ে ঠিকঠাক করে রাখা ছিল তা-ই সেই স্থানে আমি দুজনের চার হাত এক করে দিয়েছি। আপনার যদি এভাবে বিয়ে হওয়াতে আপত্তি থাকে তাহলে আবার ওদের অনুষ্ঠান করে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন।
শাওন শেখ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“গ্রামটা আমার মেয়ের জন্য শুভ না। মেয়েটা যখন বসবাস করতে এই গ্রামে আসে! ঠিক সে সময় তার চরিত্রের দিকে সবাই আঙ্গুল তুলতে পিছপা হয় না। দেখুন না, যার বিয়ের জন্য আমি এতো আয়োজন করছি। হুট করে তার এভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো। যাক এক দিক দিয়ে ভালো-ই হলো মেয়েটার সাথে এর থেকেও বেশি খারাপ কিছু হতে পারতো তা তেমন কিছু হয়নি। ”
বদুরুদ্দিন সাহেব জি বলে সম্মতি প্রকাশ করে।
শাওন শেখ আবার বলতে শুরু করে,
“বিয়েটা যেহেতু হয়েগেছে আপনি দয়া করে আমার মেয়েটাকে আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান। আমি চাইছি না মেয়েটা আমার এই অভিশপ্ত গ্রামে আর কিছু মূহুত্ব থাক।”
এরপর সে রাতে শাওন শেখ দাইয়ানের হাতে তার কন্যার সারাজীবনের সুখ-দুঃখের দায়িত্ব তুলে দিয়ে কন্যার বিদায় পর্বের সমাপ্তি ঘটায়।
*
*
বাবার বাড়ি থেকে ভারাক্রান্ত হৃয়দে রিমশা শ্বশুর বাড়িতে আসে। যেহেতু অনেক রাত হয়েছিল তা-ই সে রাতে বাড়িতে কোন রকমের শোরগোল হয়নি। রেহেনা বেগম সদর দরজাতে এসে ছেলের বউকে বরণ করে বাড়ির ভেতরে নিয়ে আসে।
যেহেতু অনেক রাত হয়েছে তা-ই বাসরঘর সাজানো কোন ভাবে সম্ভব না। তাই রেহেনা বেগম রিমশা কে আলাদা একটা রুমে থাকতে বলে।
বদুরুদ্দিন সাহেব তার স্ত্রীর উপর রেগে বলে,
“বাসরঘর কালকেও সাজানো যাবে। ঐ বাসরঘরের জন্য তুমি স্বামী-স্ত্রী দুজনকে আলাদাভাবে থাকতে বলতে পারো না।”
রেহেনা বেগম আর কিছু না বলে রিমশা কে দাইয়ানের ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন পেছন থেকে দাইয়ান মা কে ডেকে বলে,
“মা যেদিন আমাদের বাসরঘর হবে! সেদিন না হয় রিমশা আমার রুমে যাবে। আজকের জন্য আর ঐ ঘরে যাবার দরকার নাই। পাশে ঐ রুমে আজকের রাত না হয় আমরা দু জন এক সাথে থাকবো।”
বাকিরা দাইয়ানের কথাতে সম্মতি প্রকাশ করে দ্রুত প্রস্থান করে।
দাইয়ান রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে রিমশা’র সামনে এসে বলে,
“দেখো আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইছি।
সে সব কথা তুমি মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
কারণ আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কিন্তু অন্ধকার।
ভবিষ্যৎ আছে কি না তা আমি বলতে পারবো না।”
রিমশা দাইয়ানের চোখে চোখ রেখে আশ্বাস দিয়ে বলে,
“আপনার যা বলার আছে বলেন ,তবে এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”
দাইয়ান বলল-
আমাকে গ্রামের সবাই দাইয়ান নামে চেনে। বলতে পারো এটা আমার ডাক নাম। আমার দাদাভাই এর খুব ইচ্ছা ছিলো তার বংশের কেউ ব্যারিস্টার হবে। আমার বাবা লেখাপড়াতে এতো ভালো ছিলোনা। আর ভাইয়া নিজের জন্য আলাদা প্রফেশন বেঁছে নিয়ে ছিল। বাকি রইলাম আমি বাবা এক প্রকার বাধ্য করে আমাকে ব্যারিস্টারি পড়তে। তবে আমার ইচ্ছা ছিলো ডাক্তার হওয়া। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছার জন্য নিজের স্বপ্ন বিষর্জন দিয়েছি। শহরে থেকে ব্যারিস্টারি পড়েছি।
তবে হঠাৎ করে আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের কিছু গ্রামে হঠাৎ করে নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রামের মহিলারা কাজের জন্য শহরে যাচ্ছিল তবে তারা কেউ আর বাড়িতে ফিরে আসছিল না। তারা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে কেউ বলতে পারে না। আর নয়তো কিছু মহিলাদের মৃতদেহ ঐ রুপসী খালে পাওয়া যাচ্ছিল।
আমি যেহেতু রাগ করে শহরে লেখাপড়া করছিলাম।
বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না আমার। তাই গ্রামের কোন খোঁজখবর রাখতাম না। ভাইয়া প্রতিমাসে আমার একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিতেন এতেই আমার খরচ হয়ে যেত।
জানো আমার বড় ভাইয়ের একটা মেয়েটা ছিলো।
যে আমাদের বাড়ির প্রাণ ছিলো। তবে কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি চিরদিনের জন্য।
আমি এতোটা অভাগা যে মেয়েটার মৃত্যূর খবর একবছর পরে জেনেছি।
তখন আমার সব শেষ। রিদির শোকে দাদাভাই মারা গেছে। দাদাভাই এর শোকে দাদীমা! আমার পুরো দুনিয়া এক বছরে উজাড় হয়ে গেছে।
এরপর যখন সব কিছু জানতে পেরেছি এক মূহুত্ব দেড়ি না করে, শহরে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আর ক্যারিয়ার ছেড়ে নিজের পরিবার আর গ্রামের মানুষদের জন্য চলে আসি। এখানে এসে এমন সব রহস্যজনক কাহিনী দেখে, আড়ালে তদন্ত করতে শুরু করি এবং এর ফলাফল কিছুটা আমার হাতে। আমি সমস্যার সমাধান করার জন্য এক অন্ধকার জগতের দিকে পা বাড়িয়েছি। সেখান থেকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা সম্ভব না। আমি হয়তো তোমাকে স্বামীর সুখ দিতে পারবো না।
তোমার অনুমতি ব্যতীত হয়তো এমন সব কাজ করবো!
আমার সে সব কাজের জন্য তোমার আত্মসম্মান নষ্ট হতে পারে। আর হ্যা প্লিজ আমার কাছ থেকে ভালোবাস অথবা সুখে সংসারের আশা করিও না। তুমি নিজের জন্য সুন্দর জীবনের দাবিদার। আমার কোন অধিকার নেই তেমার সে সুখের জীবনটাকে বিষাক্ত করার। তুমি অন্য কারো সাথে সারাজীবন সুখে সংসার করতে পারবে। কী দরকার এখানে পড়ে থেকে জীবনটাকে থমকে দেওয়ার তাও আবার আমার মতো একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য?
রিমশা দাইয়ানের হাত ধরে বলে,
“আমি আপনাকে ভালোবাসি এই কথাটা হয়তো মুখে প্রকাশ করার দরকার হবে না। আজ থেকে আমি আপনার স্ত্রী। আপনার জীবনের একটা অংশ। আমিও আপনার সাথে সামাজের নোংরা পরিষ্কারে কাজ করবো। আপনি প্লিজ নিষেধ করবেন না। আপনার আশেপাশে থাকলে আমার হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটাতে পারবো। আমিও আপনার এই নতুন পথের সঙ্গী হতে চাইছি।”
দাইয়ান রিমশা’র থেকে দূরে এসে বলে,
“রিমশা পাগলামি করো না। তোমার ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। তুমি অনেক সাহসী মেয়ে সাথে প্রতিবাদী এক নারী।
তুমি ইচ্ছা করলে নানারকম সামাজিক উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে। নারীদের জাগ্রত করে তাদের ইসলামের সঠিক জ্ঞান সহ সামাজিক জীবনে লড়াই করে টিকে থাকার মন্ত্র শেখাবে। আমি আমার অন্ধকার জীবনের সাথে তোমাকে জড়াতে পারবো না। প্লিজ তুমি আমাকে তোমার মোহ-মায়া তে জড়িয়ে পথভ্রষ্ট করো না দোহাই লাগে। ”
এসব বলে সে রাতে সবার চোখের আড়ালে দাইয়ান বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে চলে যায়।
রিমশা অন্ধকারে খোলা দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। যাকে ভালবেসে দুনিয়া ভুলতে রাজী সে তাকে গ্রহণ করতে নারায। সে কেন বুঝতে চাইছে না আমিও তার দেখানো পথের পথিক হতে চাইছি। আমিও আপনার পিছু এতো সহজে ছাড়ছি না। আমি আপনাকে নিজের আদর্শ মনে করি।
আমার এখন যে আত্মসম্মান সবটা আপনার থেকে শেখা।
আপনার দেখানো পথে চলে আজ নিজেকে এতোটা শক্তপোক্ত করে গড়েছি। এভাবে আপনার সামান্য তাচ্ছিল্য আর অবজ্ঞাতে নিজেকে গুটিয়ে নিবে ভাবলেন কি করে?
আমি জীবনেও আপনাকে আমার থেকে আলাদা হতে দিব না।
( নিরামিষ টাইপের গল্প! এখানে রোমান্স খুঁজলেও পাবেন না। আমি চেষ্টা করছি দ্রুত গল্পটা শেষ করে দিতে। ইন শা আল্লাহ ৩০ পর্বের হবে না গল্পটা আশা করি। )
”
”
”
”
চলবে…..