#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২৪
#Nishi_khatun
দাইয়ান বাড়িতে ফিরে এসে সকলের উদ্দেশ্য কঠোর ভাবে বলল- রিমশা আর এ বাড়িতে আসবে না। সে আছে পাপ-পূণ্যের হিসাব নিয়ে। আরে যারা পাপ করেছে!
তারা শাস্তি পেয়েছে। এতে কার কি? তারা পাপ করার আগে ভাবে নাই। তাহলে অন্যরা তাদের শাস্তি দিতে যেয়ে কেনো ভাব্বে? আমি না কি খুনি? আসলেই আমি খুনি?
আমাকে দেখে তার খুনি বলে মনে হয়? তারা এতোবড় পাপ কাজ করেছে সে সব দিকে তার খেয়াল নেই। অথচ তাদের জন্য আজকে ম্যাডামের দরদ উতলে পড়ছে।”
রাগে এসব কথা গজগজ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
রাইসা তখন শান্ত কন্ঠে বলে,”আজকে এতোশত কাহিনী সব আমার মেয়ের জন্য। সেদিন যদি আমার কলিজা দুনিয়া থেকে বিদায় না নিত তাহলে হয়তো প্রতিশোধের দরকার হতো না। আচ্ছা এই গল্পের শুরুটা কি শুধু আমার মেয়ের জন্য হয়েছে? এভাবে অনেক মেয়ের জীবন ঐ পশু রুপী মানুষ গুলো নষ্ করেছে। আইন যেখানে অন্ধ সেখানে কাউকে তো এদের শাস্তি দিতে হতো। তাহলে যে তাদের শাস্তি দিলো সে কি করে অপরাধী হতে পারে? তাছাড়া এবাড়ির কেউ যে এসবের সাথে জড়িত আছে তার কোন প্রমাণ দিতে পারবে কেউ?”
রেহেনা বেগম এসে রাইসা কে জড়িয়ে ধরে। রাইসা শাশুড়ির বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আসলেই কি রিদির সকল হত্যাকারী শাস্তি পেয়েছে? এই সমাজ কি এসবের জন্য মোটেই দায়ী নয়?
*
*
পৃথীবির বুকে অন্ধকার অনেক আগেই নেমেছে। রিমশা নিজের কক্ষে বিছানাতে একপাস হয়ে মুখটা গোমড়া করে শুয়ে আছে।
এমনসময় হঠাৎ করে কেউ একজন তাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়ে রাখে।
তখন রিমশা অভিমানী কন্ঠে বলে ওঠে,”এখন কেনো এসেছেন? সকালে না রাগ দেখিয়ে চলে গেলেন। এমন একটা ভাব করলেন যেনো আমি আপনার চিরোদিনের শত্রু। আমাকে দিয়ে সবার সামনে এভাবে নিজেকে অপমানিত করে কি পাচ্ছেন আপনি?”
দাইয়ান তখন রিমশা’র শরীরের ঘ্রাণে মাতাল হয়ে বলে,”এখন একটু বউকে আদর করে তার অভিমান গুলাকে বহু দূরে পাঠিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে। তুমি যদি বাঁধা দাও তাহলে আমি কাঁচকলা খেয়ে সুইসাইড করবো। তুমি জানো আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।”
রিমশা অভিমানী কন্ঠে বলে,”বাঁচতে পারবে না!
তাহলে জেনে শুনে এ পথে কেনো আসলেন ?”
দাইয়ান বলে,”আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না, তুমি ভালো করে জানো। ঠিক সেভাবে আমাকে ছাড়া যে,
তুমি এক মূহুত্ব বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করবে না তা আমি জানি।”
রিমশা দাইয়ানের দিকে ফিরে ওর বুকের মাঝে বুক লুকিয়ে বলে,
“সব কিছুই তো আপনি জানেন! তাহলে কেনো এতো বড় গেম খেলছেন। জানেন আপনার বাড়িতে সবার সামনে স্বামীর ছেড়ে দেওয়া নারীর ভূমিকা পালন করতে কতোটা কষ্ট হয়েছে আমার? উঁহু জানেন না! ”
দাইয়ানের হাত নিজের বুকের উপর রেখে বলে,
–“এই যে দেখেন বুকের বা পাশের ঠিক এখানে ব্যাথা করে। কিসের জন্য জানেন? উঁহু জানেন না। আপনি আর আমি সকলের চোখে ছাই দিয়েছি। সকলে জানে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমি আর আপনি তো জানি আমাদের সম্পর্ক কতোটা গভীর? ইফা যখন রাতে আপনার রুমে ঘুমিয়ে থাকত। তখন আপনি আমার রুমের পেছনের দিকের দরজা দিয়ে রোজ রাতে আমার কাছে আসতেন। আমাকে আলিঙ্গন না করে আপনার চোখের পাতায় ঘুমের আসতো না।
আর আপনার বুকে মাথা রেখে আমিও রোজ রাতে শান্তিমত ঘুমা দিতে অভস্থ। তবে এসব কথা কেউ জানে না।
এমনকি আপনার পরিবারের কেউ না। বাড়ির সকলে অনেক বোকা। যে ছেলে নিজের ঘরে থাকে না! সে ছেলে রাতে কোথায় থাকত? তার খবর কেউ রাখতো না। সবাই জানে আপনি আমার সাথে অন্যায় করছেন। তবে আমি তো জানি আমার স্বামী কেমন। সে কোনদিন ও আমার সাথে অন্যায় করতে পারে না।”
দাইয়ান বলে,
–“সবার জানার বাহিরেও অনেক কিছু আছে তা-ই না রিমশা!”
রিমশা :-
হ্যা! আমার আর আপনার বিয়েটা ইফার করা কোন প্লানিং ছিলো না। আমাদের দু জনের প্লানিং ছিলো। আপনি আমাকে এই গ্রামের সকল সমস্যা সম্পর্কে অনেক আগে থেকেই অবগত করেছিলেন। সেদিন আমরা দুজনে নিজেদের কাছে ওয়াদা বদ্ধ হয়েছিলাম। এ গ্রামের সহজ সরল মানুষদের সাথে যে বা যারা অন্যায় করছে তাদের জনগণের সামনে নিয়ে আসবো। সেই মোতাবেক প্লানিং করি। তবে আপনার সাথে শ্বশর বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল এটা আমাদের প্লানিং এ ছিলো না। তবে আপনার বাবাকে দেখে মনের মধ্যে খুশির লাড্ডু ফুটছিল। তা-ই তো একটু মন খারাপের ভান করে হ্যা বলেছিলাম। এরপর আমার বাবা যেদিন আমাদের শহরে কেনাকাটা করতে নিয়ে গেলো সেদিন আমরা আমাদের প্রথম প্লানিং সাকসেসফুল করি। বাবার আমার প্লানিং সম্পর্কে কিছু না জানলেও আমাদের ভুল করে হলেও সাহায্য করেছিল।
আমাদের প্লানিং মুতাবেক ইফা আমাকে আপনাদের আড্ডা খানাতে নিয়ে যায়। জানতাম খুব সহজেই ঐ চালাক ডায়নী আমাদের পাতা ফাঁদে পা দিবে না। তবে এতে করে কার কি হলো? আমি উপস্থিত হওয়াতে বাকিরা তাদের কাজ করে। লোকজন জড়ো করে আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে।
‘আহা সেদিন তার কি ভাব! আমি রিমশা কে বিয়ে করবো না। এদিকে উনি আমাকে বিয়ে করে সারাজীবন নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছিল। তা কেউ জানে না। সেদিন আপনার অবস্থা এমন ছিলো, মুখে তিতা অন্তরে লাড্ডু।’
এরপর বিয়ে হয়ে আপনাদের বাড়িতে আসলাম।
তারপর বাড়ির লোকদের চোখের সামনে একটা পর্দা সৃষ্টি করা হলো। যেখানে আপনি আর আমি কেউ সুখি দম্পতি না। অন্যদিকে লোকচক্ষুর আড়ালে আমরা পারফেক্ট সুখি দম্পতি।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলছিল তারপর আমাদের দ্বিতীয় প্লানিং অনুযায়ী আপনি ইফাকে মিথ্যা বিয়ে করে আনলেন।
জানেন মিথ্যার বউ হলেও ঐ ডায়নী কে আপনার আশেপাশে দেখে আমার গা জ্বালা করত। কিন্তু কি আর করার ঐ ডায়নিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আপনাকে ওর সাথে মধূর মতো ব্যবহার করতে হলো।
অন্যদিকে সবার সামনে আমাকে অবহেলা করার নাটক।এভাবে চলছিল তারপর তৃতীয় প্লানিং!
আপনাকে জেলে রেখে আসা। এরপর ইফারে দিয়ে ঐ সমস্ত স্বীকারপত্রে সাইন করানো চারটে খানিক কথা ছিলো না। আপনি কায়দা করে জেলখানাতে ইফাকে ডেকে এনেছেন। তারপর বিয়ের রেজিস্টারি পেপারে সাইন করে নিয়েছেন। পুলিশদের সাথে কথা বলে রেখেছিলেন। তা-ই তো ইফা সাইন করার সময় পুলিশেরা এতো তাড়া দিয়েছে যে ডায়নী কাগজের লেখা পড়ার সময় পায়নি। এরপর আর কি আদালত কক্ষে প্রবেশের আগে তার কাছে ঐ ফাইলটা গছিয়ে দিলেন। ইফা আপনাকে এতো বিশ্বাস করেছে যে, ফাইলের কাগজপত্র চেক করার সময় পায়নি।”
দাইয়ান ‘হুম’ বলে রিমশা কে জড়িয়ে ধরে ,
“অনেক হয়েছে চোর পুলিশের খেলা। এই গ্রামের শয়তানের মাথা গুলোকে শাস্তি দিতে চেয়েছি। তারা সঠিকডোজ পেয়েছে। এদের দেখে তাদের শীর্ষদের বোঝা উচিৎ! পাপ কাজ করলে পাপের বিনাশ অনিবার্য। ”
রিমশা বলে,”আচ্ছা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো তাদের জনসম্মুখে প্রমাণ সহ তাদের হেনস্তা করা। কিন্তু তাদের খুন করার প্লানিং কিন্তু আমাদের ছিলো না। তাহলে গ্রামের এই সমস্ত খুন গুলো কে করেছে? দেখুন আপনি কিন্তু আমাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব প্লানিং এর কথা বলেছেন। তাহলে এই খুনের কথা কেনো বলেন নি? আচ্ছা ওদের এভাবে খুন করলেন কি করে?”
দাইয়ান রিমশা কে জড়িয়ে ধরে বলে,”দেখো বিবিজান এসব আমাদের প্লানিং ছিলো না। তাই বলতে পারছি না খুন গুলো কে করেছে। এখন এসব বাদ দাও। আমি আর তুমি আমাদের লক্ষ পূরণ করেছি। তাই আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। আমারা এখন সুখী দম্পতির মতো রোমান্স করবো। তারপর একগাছা পোলাপান নিয়ে ফুটবল খেলার দল গঠন করবো।”
রিমশা দাইয়ান বলে,”এসব কথা বলতে একটু মুখে বাঁধে না আপনার? লজ্জা শরম সব বেঁচে খেয়েছেন?”
দাইয়ান বলে,”যাহ বাবা! বউয়ের কাছে লজ্জার কি আছে? এমন ঠোঁটকাটা কথা অন্যের বউয়ের কাছে বলতে গেলে ঝাড়ু পেটা করবে। তখন তোমার জামাই কে চরিত্র হীন বলবে সে সব ভালো লাগবে?”
রিমশা বলে,”না না আমি মোটেই চাইনা কেউ আমার স্বামী কে ঠোঁটকাটা অথবা চরিত্র হীন ভাবুক। আপনি যেমনি হোন না কেন আমার হৃদয়ের সুপুরুখ আপনি। আপনার সান্নিধ্যে যে সুখ আছে তা অন্য কোথাও কল্পনাতীত। বুঝলে জামাই মশাই।”
এভাবে তারা সে রাতে সুখের সাগরে ডুব দেয়।
(সামনে কী হবে মনে হচ্ছে? সবার মন্তব্য আশা করবো)
”
”
”
চলবে….