পঞ্চভুজ তারা – Part 15

0
213

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৫
” নাহ আমি যাবো না! কিছুতেই যাবো না!” সাদু চিল্লাচ্ছে কারন সে কিছুতেই যাবে না নুহাসপল্লি।কেউ ওকে রাজি করাতে পারছে না।যখন থেকে শুনেছে ওরা নুহাসপল্লি যাবে আর ওকেও নেওয়ার প্লান করেছে তখন থেকে রুমের ভীতর ঘাপটি মেরে বসে আছে। সাদু’র মা এতো করে বললো কিন্তু ও কিছুতেই যাবে না।গুটিশুটি মেরে কম্বলের নিচে সুয়ে আছে।হঠাৎ দরজা লক করার আওয়াজ আসলো তাও ও কম্বলের ভীতর থেকে মুখ বাহির করলো না।কিছুক্ষন পর অনুভব করলো কেউ কম্বলের ভীতর ডুকে ওকে জড়িয়ে ধরেছে আর তার হাত ওর টি-শার্ট ভেদ করে পেটের উপর স্পর্শ করছে।সাদুর সারা শরীর শিরশির করে উঠলো।কেপে উঠে পেটের উপরের ওই হাতটি শক্ত করে চেপে ধরলো।যখন ধ্যান ফিরলো আর পিছনে কে আছে দেখার জন্যে পিছনে ঘুরতে নিলেই ভারি কণ্ঠ স্বরে একজন বললো,
—-“হুসস! পিছনে ঘুরবে না।”
—-“আপনি!!!” বলেই সাদুর পিছনে ঘুরে গেলো।দেখে মনির দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।
—-“আপনি এখানে কি করছেন?বের হোন আমার রুম থেকে!”
সাদুর কথায় মনির সাদুকে হেচকা টানে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো,
—-” বের তো হবো জানেমন বাট তোমাকে নিয়ে! ”
মনির সাদুকে এইভাবে ঝাপটে ধরায় ওর যেন নিশ্বাস আটকে গেছে।ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে কারন মনির শুধু জড়িয়ে ধরে নিয়েই তার হাত ব্যস্ত সাদু’র পেটে বিচরণ করতে।সাদুর বার বার কেপে উঠছে।
—-“ক..কি ক..করছেন আ..আপ..আপনি?”কাপা গলায় বলে সাদু।
মনির সাদুকে আরো শক্ত করে ধরলো এইবার মনে হয় সাদু বেচারি দম আটকে মরেই যাবে।
—-“কি করলাম?আমি কি কিছু করতে পারি?”
সাদু কোনরকম শ্বাস নিয়ে মনিরকে ধাক্কাচ্ছে,
—-” দেখি ছাড়ুন আমাকে আমার দম আটকে কি আপনি মেরে ফেলবেন?ছাড়ুন বলছি আর আমার রুমে ডুকার পার্মিশন আপনাকে কে দিলো? ”
মনির সাদু’র দিকে নিজের মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসলো সাদু সাথে সাথে নিজের মুখটা ঘুরিয়ে নিলো।মনির মুচকি হেসে বলে,
—-” তোমার রুমে ডুকতে আমার পার্মিশন লাগে না!”
—-“অবশ্যই লাগবে কারন এটা আমার রুম।”
—-” আর এই আস্তো তুমি টা আমার! তাহলে তোমার রুম কেন তোমার সব কিছুই আমার।”
—-” আমি আপনার কোনদিনও না ফালতু কথা ওফ করুন।”
—-“ইয়েস তুমি আমার আর আমি তোমার স্বামি তোমার সব কিছুতে আমার অধিকার আছে।”
সাদু চিৎকার করে বলে,
—-“কিসের স্বামি?কার স্বামি? আমি আপনাকে স্বামি হিসাবে মানি না।”
মনির রেগে বললো,
—-“দেখো উম্মি আমাকে রাগিও না ফলাফল ভালো হবে না!”
—-” কি করবেন কি আপনি?আমাকে কি মগেরমুল্লুক পেয়েছেন? ”
মনির দাতেদাত চেপে বললো,
—-” লাস্ট বার বলছি তুমি যাবে কি না?”
সাদু’র শক্ত কণ্ঠ,
—-” নাহ যাবো না!”
সাদু’র এই একটা কথায় মনির এর রাগ সাত আসামানে উঠে গেছে মনির নিজে উঠে সাদু’কে ডিরেক্ট কোলে তুলে নিলো। সাদু চেচিয়ে উঠলো,
—-” আরে আরে কি করছেন কি আমাকে নামান নামান বলছি বজ্জাত পোলা,এনাকন্ডার নাতি নামান আমাকে আমি যাবো না কোথাও? ভাইয়াআয়ায়ায়ায়া!”


—-” হেই ব্রো পিকু চিল্লাচ্ছে কেন? মনির আবার রেগে মেগে আমার বোনকে ব্যালকনি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে না-কি?”
নিবির এর আহাম্মক মার্কা কথায় আফরান কপাল চাপড়ে বলে,
—-” তোর কি মাথায় বুদ্ধি হবে না।তুই আর পিকু কবে বড় হবি?তোদের দুটোকেই সামলাতে পারি না।আবার যদি একে(নূরকে দেখিয়ে) বিয়ে করি তাহলে তিন তিনটা বাচ্চা আমাকে পালতে হবে তারপর আমার বাচ্চা কবে পালবো আমি?”
আফরান এর কথায় মুহূর্তেই নূর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে,
—-” এই এই বজ্জাত আফ্রিকান পান্ডা কোথাকার আমাকে দেখে আপনার কোন এংগেল দিয়ে বাচ্চা মনে হয়?”
আফরান নূরের উপর থেকে নিচ ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে বলে,
—-” তুমিতো বাচ্চাই শুধু হাইটে একটু বড় হইছো।”
—-” আবার্রররররররররররর!”
আফরান এইবার দাত কেলিয়ে নূর এর কাছে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
—-” ওহ তাহলে তুমি যেহেতু নিজেকে বড় ভাবো তো চলো তোমাকে বিয়ে করে নেই। তারপর ঠাস করে বাসর ঘরে ডুকে যাবো তোমায় নিয়ে তারপর ঠুস করে পরেরবছর বাচ্চার মাম্মাম বানিয়ে দিবো!”
নূরে’র পশম দাড়িয়ে গেছে আফরান এর ফিসফিসানো আওয়াজে।কিন্তু পরিমূহূর্তে আফরান এর বলা কথাগুলো বুজতে পেরে চোখ বড় বড় করে তাকালো তারপর আফরান কে এক ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিয়ে আফরানকে বকতে বকতে চলে গেলো। এইদিকে আফরান হাসতে হাসতে শেষ।
—-” আর কতো আমার থেকে পালাবা! আমি জানি তুমি আমায় অনেক ভালোবাসো।আর তোমার মনে জমা এই একরাশ অভীমানের মেঘ আমি জলদি সরিয়ে দেবো আমার শ্যামবতী!” কথাগুলো আনমনে বলে মুচকি হাসলো আফরান।
পাশ থেকে আলিফা শুনে আফরান এর পেটে গুতো দিয়ে বলে,
—-” তাহলে আমাদের ট্রিট টাও দিয়ে দিয়েন!”
আফরান বিষ্ময় নিয়ে তাকালো আলিফা হেসে বলে,
—-” আমি শুনে ফেলেছি!”
—-” ওরে দুষ্টু!” আফরান আলিফার নাক টেনে দিলো।আলিফা খিলখিল করে হেসে উঠলো।আরিফ আলিফার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে বুকে হাত দিয়ে বিরবিরিয়ে বলে,
—-” উফ! এই মেয়ের হাসি উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আমার বুকে আছড়ে পড়ে।বুকটা ধরাস ধরাস করছে এখনো।উফ! আমাকে এই মেয়ে মেরেই ফেলবে।”
—-” কিরে কি বিরবিরাচ্ছিস?” মেরাজ খোচা দিয়ে কথাটা বললো।
আরিফ আলিফা’র দিকে তাকিয়ে বলে,
—-” প্রেমে পড়েছি! ”
মেরাজ চোখ বড় বড় করে বলে,
—-” হুয়াট সত্যিইইই!”
আরিফ মুচকি হাসলো। মেরাজ জিজ্ঞস করলে আরিফ আলিফাকে দেখিয়ে দেয়।মেরাজ তা নিয়েই আরিফ কে পিঞ্চ করতে লাগলো।
এদিকে নূর আফরানকে বকতে বকতে হনহনিয়ে কিচেনে এসে পড়লো।সেখানে সাদু’র মা টিফিন রেডি করছে ওদের দেওয়ার জন্যে যদি পথে খুদা লাগে।নূরকে এইভাবে বকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
—-” কিরে! কাকে এতো বকছিস?”
নূর মুখ ফোসকে বলে ফেলে,
—-” আফ্রিকান পান্ডাকে!”
—-” এ্যাাাা! আফ্রিকান পান্ডা কে?”
নূর কি বলবে নিজের কাজে নিজেই ফেসে গেছে এখন নিজেকে নিজে বকছে কেনো বলতে গেলো।’সব ওই পান্ডার দোশ’ বলে দাত কেলিয়ে তাকালো সাদু’র মায়ের দিকে। সাদু’র মা ভ্রু-কুচকে বলে,
—-” কিরে বললি না?কে সে?”
নূর কাদো কাদো করে নিলো ফেসটা তারপর বলে,,
—-” মামনি গো!!”
—-” কি হয়েছে এখন আবার কাদছিস কেন?”
—-” তোমার ছেলেই আফ্রিকান পান্ডা দেখো না ওলওয়েজ সাদা আর কালা পড়ে থাকে।”
সাদু’র মা হেসে দিলেন,
—-” তা আমার ছেলেকে বকছিস কেন?”
—-” তোমার ছেলে আস্তো খাটাস আমাকে জ্বালিয়ে মারে।”
সাদু’র মা মুচকি হেসে বলে,
—-” তোকে ভালোবাসে বলেই তো জ্বালায়।”
মূহুর্তেই নূর লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সাদু’র মা জোড়ে হেসে দিলেন! বলে,
—-” হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না আমি জানি সব।(নরম কণ্ঠে) আর কতো অপেক্ষা করাবি আমি জানি তুই ও আমার ছেলেকে ভালোবাসিস বলে দে!”
সাদু’র মায়ের কথায় নূর একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
—-” হুহ্ আমার বয়েই গেছে তোমার ছেলেকে বলতে তোমার ছেলের মুখে কি আঠা লাগানো সে বলতে পারে না।আমি কেন বলবো?”
—-” আচ্ছা বলিস না! এখন আমাকে এইগুলা প্যাক করতে একটু হেল্প কর।”
নূর আর কথা না বাড়িয়ে হেল্প করতে লাগলো।
;;
ওয়াসরুমে শাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে আছে সাদু আর মনির।পুরো শরীর ভিজে চুপচপে হয়ে এক্সআছে দুজনের।মনির সাদু’কে ঝাপটে ধরে আছে।
—-” তুমি রেডি হবে না-কি আমি রেডি করাবো তোমায়?”
মনির এর কথায় সাদু সরে যেতে চাইলেও পারলো না বলে,
—-” প্লিজ আমি কোথাও যাবো না ছাড়ুন আমায়!
মনির শক্ত চোখ তাকিয়ে বলে,
—-” এতো তেজ কেন তোমার? আমি এখন যা করবো তার জন্যে সম্পূর্ণ দ্বায়ী তুমি!”
সাদু কাপা গলায় বলে,
—-” ক..কি করব….”
আর বলতে পারলো না কারন মনির ঠোঁট দুটো ক্রমশেই সাদুর গলায় বিচরণ করছে কিছুক্ষন পর পর শব্দ করে চুমু খাচ্ছে।সাদু মনির এর শার্টের কলার শক্ত করে খামছে ধরলো।মনির মুখ উঠিয়ে দেখে সাদু চোখ বন্ধ করে আছে।ঠাণ্ডায় সাদু’র ঠোঁট দুটো কাপছে।যা মনির’কে পাগল করে দিচ্ছে।মনির আসতে আসতে ওর মুখটা সাদু’র মুখের সামনে নিতে সাদু চোখ খুলে সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,ম
—-“প্লি..প্লিজ স..সরুন আ..আপনি!”
মনির নেশাভরা চোখ কতোক্ষন তাকালো তারপর সাদুর গলা আর ঘাড়ের মাঝবরাবর নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিতেই সাদু এইবার ভূমিকম্পের ন্যায় কেপে উঠলো।মনির সাদু’র ভেজা চুল গুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে নেশাভরা কণ্ঠে বলে,
—-” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।তুমি বুজতে পারছো না তোমাকে এইভাবে দেখে আমার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।যদি দ্বিতীয়বার আবার আসা লাগে তাহলে আমি আর নিজেকে কোন্ট্রোল করতে পারবো না।”
মনির এর কথায় সাদু ঝটকা মেরে মনির এর থেকে দূরে সরে গেলো।উল্টো দিকে ফিরে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলতে লাগলো।মনির মুচকি হেসে সাদুর কাছো আসলো তারপর কানে কানে বলে,
—-” বাই দ্যা ওয়ে,ভেজা কাপড়ে তোমাকে দেখতে অনেক হট লাগে।”
সাদু চোখ বড় বড় করে তাকালো।মনির বাহিরে যেতে যেতে আবার চেচিয়ে বলে,
—-” ডু ফাস্ট ওয়াট আই সেইড।এরপরেও যদি আমাকে আশা লাগে তাহলে তো বুজোই।”
বলে মনির চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো।
মনির চলে যেতেই সাদু বকতে বকতে শাওয়ার নিতে লাগলো,
—-” ঠাডা পরবো তোর উপর বজ্জাতের হাড্ডি। আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিলো।সব কটাকে দেখে নেবো। সাদুকে জ্বালানোর স্বাদ হারে হারে টের পাবে।”
তারপর শাওয়ার শেষে রুমে এসে রেডি হতে লাগলো আর বকছে সবাইকে,
—-” হারামির দলেরা আমাকে কুরবানির গরুর মতো টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে। দেখে নেবো সবকটাকে। আমার ভাই গুলাও এখন আমার শত্রু দুটোই এখন ওর বন্ধু কম ভাই বেশি ওই খাটাসটার পক্ষ নেয় দেখে নেবো।বজ্জাতের দল।”
তারপর হুংকার দিয়ে উঠলো,
—-” ভাইয়ারায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া তোদের দুটোর রক্ত খাবো আমিইইইই।”
এদিকে আফরান সবে মাত্র জুস খেতে নিচ্ছিলো বোনের এমন চিৎকারে বেচারি বিষম লেগে গেলো।আর নিবির খাচ্ছিলো দই। আহা! কতো শখ করে খাচ্ছিলো সেও দইয়ের বাটি নিয়েই সোফা থেকে ধরাম করে পড়ে গেলো।পল্টি খেয়ে মুখ গিয়ে পড়লো দইয়ের বাটির উপর।সব দই বেচারার মুখে।এদিকে সবাই দুভাইয়ের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।বেচারারা আহারে!
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here