পঞ্চভুজ তারা – Part 16

0
198

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ১৬
সবাই ব্যাগপত্র গোজগাজ করে বাসের সামনে দাড়িয়ে আছে মিনি বাস তাই সিট ১২ টা।বাসে উঠেই সব মেয়েরা হুমরি খেয় জানালার সিটে বসে পড়লো। এইদিকে ছেলেরা সবাই জিনিসপত্র বাসে তুলে তারপর উঠে বসলো।মনির বসলো সাদু’র পা পাশে তা দেখে সাদু চেচিয়ে উঠলো,
—-“এই এই আপনি আমার সাথে বসলেন কেন?”
মনির একটা শ্বাস ফেললো এই মেয়েকে অলওয়েজ তেরা উপায়ে বুজানো লাগে মনির সাদুর দিকে খানিক ঝুকে আসলো সাদুও পিছিয়ে গেলো।মনির বলে,
—-” আর একটা কথা বললে ভালো হবে না।নাহলে বিকেলে যা করেছি তা এখানেও করতে আমার সমস্যা নেই।এইবার করবো সবার সামনে।”
সাদু এক ঢোক গিলে মনিরকে ঠেলে সরিয়ে দিলো,
—-” ঠিক আছে ঠিক আছে।”
সাদু আর কথা না বারিয়ে কানে ইয়ারপোড্স গুজে চোখ বন্ধ করে রইলো।

আফরান ধপ করে নূরের পাশে বসে পড়লো।নূর আফরানকে ওর পাশে বসতে দেখে চোখ ছোটছোট করে বলে,
—-” এখানে বসলেন কেন?”
—-” আমার ইচ্ছা!” ভাবলেশহীনভাবে বলে আফরান।”
—-” আপনার ইচ্ছা হলেই আমার পাশে কেন বসবেন? অন্য জায়গায় যান!”
—-” উহু আমি এখানেই বসবো!”
আফরান এর ত্যারামী দেখে নূর বিরক্ত হয়ে বলে,
—-” ঠিক আছে আমিই চলে যাচ্ছি সরুন!”
নূর উঠতে নিলে আফরান নূরকে একটানে সিটে বসিয়ে নূরের গালে চুমু খেয়ে বসলো।নূরের মাথার উপর দিয়ে গেলো সব।হলোটা কি এটা?তার সাথে এটা কি করলো আফরান।গালে হাত দিয়ে আফরান এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।আফরান এক চোখ টিপ দিয়ে বলে,
—-” কি বেবি শক লেগেছে?আরো লাগবে যদি এখন চুপ-চাপ এখানে না বসো তাহলে! সো নো এরগ্যু উইথ মি এগেইন!”
নূর কাদো কাদো হয়ে বলে,
—-” এটা আপনি কি করলেন?”
আফরান ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
—-” কেন? ভালো লাগেনি?(নূরের কানে ফিসফিসিয়ে) কিস দিয়েছি! এখন তো মাত্র গালে দিয়েছি কোনরকম তিরিংবিরিং করলে সোজা (নূরের ঠোঁটে স্লাইড করে) এখানে করে দিবো।”
নূর রাগের চোটে ফোফাতে ফোফাতে বলে,
—-” আপনি একটা অসভ্য!”
—-” থাংক্স আই নো! নাউ চুপ-চাপ থাকো।”
নূর রাগের চোটে আফরান এর হাতে একটা আচড় কেটে দিলো।তারপর জানালা দিক মুখ করে বসে রইলো।”
….
আরিফ সোজা আলিফার পাশে বসে পড়লো।আলিফা আরিফ কে ওর পাশে বসতে দেখে ডিস্কো ড্যান্স দিচ্ছে।আঁড়চোখে আরিফের দিকে তাকাচ্ছে আর কানের পিছে চুল গুজে দিচ্ছে।(লুইচ্চা আলু😒)
—-” আর ইউ ওকে?”
আরিফ এর কথায় আলিফা উত্তেজিত হয়ে নড়তে গিয়েই জানালের সাথে গাতের কুনিয়ে খেলো একটা বারি।
—-” উহুহুহু! আম্মুউ!”
আরিফ তড়িঘড়ি করে আলিফার হাত ধরে দেখে সামান্য ছিলে গেছে,
—-” ডাফার দেখে নড়াচড়া করবে না পেলে তো একটা ব্যাথা। উফফ তুমি কি এখনো বাচ্চা কবে বড় হবে?”
আরিফ বকতে বকতে নিজের ব্যাগ থেকে যাবতীয় সব বের করে আলিফার হাত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো।এরকম আচড়ন করছে যেন সে ব্যাথা পেয়ছে।আলিফা একধ্যানে তাকিয়ে ওর দিক। হঠাৎ বলে উঠে,
—-” আমার কেটেছে আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?”
আরিফ রেগে বলে ফেলে,
—-” তুমি ব্যাথা পেলে আমার যে কষ্ট লাগে!”
—-” কেন লাগে?”
—-” কারন…” হঠাৎ খেয়াল হলো ও কি বলতে চাচ্ছিলো চুপ করে রইলো আরিফ।আলিফা আবার জিজ্ঞেস করে,
—-” কিহলো বললেন না কেন আপনার কষ্ট লাগে?”
আরিফ কিছু বলছে না চুপ করে রইলো। তা দেখে আলিফা মন খারাপ করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলো।
—-” ভালোবাসা কি আমি জানি না! তবে যদি কারো ঠোঁটের খিলখিল হাসির শব্দে বুকে উত্তার ঢেউ উঠাকে ভালোবাসা বলে তবে আমি ভালোবাসি।যদি কারো বাচ্চামো মুগ্ধ নয়নে দেখাকে ভালোবাসা বলে তবে আমি ভালোবাসি।যদি কারো কষ্টে বুকে ব্যাথা উঠাকে ভালোবাসা বলে তবে আমি ভালোবাসি। হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি আলিফা।”
আরিফ এর মুখে ” ভালোবাসি” কথা শুনে স্তব্দ হয়ে আছে আলিফা। কি বলবে বুজতে পারছে না।চোখ ভিজে আসছে আলিফা’র।আরিফ যে ওকে ভালোবাসে সে কল্পনাও করেনি।ছোট থেকে তো ওই ভালোবেসে আসছে আরিফ কে।
—-” কাদছো কেন? ভালোবাসি বললে কেউ কাদে?”
আরিফের বলা মাত্রই আলিফা ঝাপিয়ে পড়লো আরিফের বুকে। কাদতে লাগলো। আরিফ মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।আজকে কাদুর এর পর থেকে আর কাদতে দিবে না সে তার আলুকে।
….
মেরাজ ফোন টিপতে টিপতে সামনে আগাতে নিলেই হঠাৎ বাস চালু হয়ে যাওয়ায় ধরাম করে একটা সিটে বসে পড়ে।
—-” উফফ! মাগো গন্ডার টা আমার হাত ভেংগে দিলো রেএএ!”
মেরাজ তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়াতেই আবারো তাল সামলাতে না পেরে বসে পড়ে। ততোক্ষনে মিম হাত সরিয়ে নিয়েছে।মিম রেগে বলে,
—-” চোখ কোথায় নিয়ে হাটেন?হ্যা! আপনার এই দামড়া শরির নিয়ে আমার উপর পড়লে আমি কি বেচে থাকবো?”
—-” আমি দামড়া হুয়াট দ্যা হেল?”
—-” হেল আপনি নিজেই! দেখে হাটতে পারেন না!”
—-” আমার কি দোশ ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়েছিলো বলেই তো আমি তাল সামলাতে না পেরে পরে গেছি।”
মিম আরো রেগে বলে,
—-” আমি দেখি নাই আপনি ফোন চাপছিলেন?”
মেরাজ আমতা আমতা করতে করতে বলে,
—-” ওই আরকি! জুইয়ের মেসেজ এর রিপ্লায় দিচ্ছিলাম!”
—-” হ্যা জানি আপনার থার্ড ক্লাস চোখ আর আপনার থার্ড ক্লাস গার্ল্ফ্রেন্ড।”
মেরাজ এইবার দ্বিগুন রেগে বলে,
—-” তোমার সমস্যা কি জুইকে নিয়ে?”
—-” কারন আমি… কিছুনা চুপ করে বসে থাকুন!”
মেরাজ ও রেগে লাল হয়ে বসে রইলো।কারন এখন আর উঠা যাবে না বাস চলছে তাই আবারো উঠতে চেষ্টা করলে আবার মিমের উপর পড়ার সম্ভাবোনা আছে।
….
—-” হেই ব্রো আমি এখানে বসবো না এই ড্রাইভার এর পাশে! এইখানে কি ঠান্ডা লাগে! হেই ব্রো আমি এইখানে বারবার পড়ে যাচ্ছি!”
মনির চেচিয়ে বলে,
—-” তাহলে পিছনে চলে আয়!”
—-” পিছনে একটা সিট খালি তাও ওই আলিশার পাশে আমি ওখানে বসবো ইম্পসিবল।”
আলিশা এই কথায় রেগে বলে,
—-” আমি কি আসতে বলেছি আপনাকে খাটাস একটা।”
নিবির কিছু বলতে নিবে ধরাম করে পড়লো নিচে। কোনরকম কোমড়ে হাত দিয়ে খুরিয়ে খুরিয়ে বাকি সিট গুলো ধরে ধরে আলিশার পাশে বসলো।তা দেখে আলিশা মুখ ভেংচিয়ে বলে,
—-” এখন আবার আমার পাশে বসলেন কেন?”
—-” হেই লিসেন! আমি ইচ্ছে করে আসিনি। ওইখানে বসলে আমি পড়ে যাই তাই এসেছি নাহলে তোমার সাথে কখনোই বসতাম না।”
—-” হুহ্ আমি মনে হয় সেধে সেধে বলেছি আমার পাশে এসে বসেন যতোসব।” আলিশা বিরবির করে নিবির কে গালি দিতে লাগলো।
….
বাস চলছে নিজ গতিতে অনেকক্ষন ধরে সবাই চুপচাপ করে যে যার যার সিটে বসে আছে।নূর হঠাৎ চিল্লিয়ে বললো,
—-” ভাইইইইই শুনছিস?”
মনির হাত উঠিয়ে বলে,
—-” হ্যা বল!”
—-” একটা গান গা না ভাইই!”
আলিশাও তাল মেলালো,
—-” হ্যা ভাইয়া প্লিজ এই রাতের অন্ধকারে আপনার কন্ঠের গান উফফ জাস্ট ওয়াও।”
মনির মৃদু হাসলো সাদু’র দিকে তাকিয়ে বলে,
—-” কি ম্যাম গাইবো গান একটা!”
সাদু ভেংচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।মনির হালকা হেসে পিছন থেকে আফরান কে গিটার দিতে বললো।
মনির গিটারে টুংটাং আওয়াজে সুর তুলছে।সুর মেলাতেই গাইতে লাগলো
চাই না মেয়ে তুমি অন্য কারো হও
পাবেনা কেউ তোমাকে তুমি কারো নও(২)
তুমিতো আমারি, জানোনা
এ হৃদয় তোমারি …. ওওও
তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার।। তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার।।
হৃদয়ের নীল আকাশে স্বপ্ন আমার ওড়ে ভেঙে যায় আমারি মন অভিমানী ঝড়ে(২)
তুমিতো আমারি, জানোনা
এ হৃদয় তোমারি … ওওও
তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার।।
সুখেরি প্রদীপ জ্বলে মনের উঠোন জুড়ে দুচোখে বৃষ্টি নামে থাকো যদি দূরে(২)
তুমিতো আমারি, জানোনা
এ হৃদয় তোমারি … ও ও ও
তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার তোমাকে ছাড়া আমি বুঝিনা কোন কিছু যে আজ পৃথিবী জেনে যাক তুমি শুধু আমার।।
পুরোটা গান মনির সাদুর দিকে তাকিয়ে গেয়েছে।সাদু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কি সুন্দর কন্ঠ দীর্ঘ ৩ বছর পর মনিরের গান শুনলো সাদু।চোখের পলক ফেলতে সে ভূলে গেছে সে।বাকিরা হাত তালি দিতে সাদুর ধ্যান ভাংগে।পরক্ষনে মনির যে গান টা ওকে উদ্দেশ্য করে গেয়েছে ভাবতেই কেমন যেন একটা ভালোলাগার শিহরন বয়ে গেলো। হঠাৎ কি হলো কে জানে! সাদুর মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে মনির এর গান শুনে।
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here