লাভ গেম -Part 21+22

0
220

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২১+২২
আজ পনেরো দিন ধরে রুশা ঘর থেকে বের হয় না। আদ্রিশকেও ওর ঘরে এলাও করে না। একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। সেদিন হসপিটালে সব জানার পরে আদ্রিশের কলার ধরে খুব চিৎকার চেঁচামেচি করেছে, কেঁদেছে, পাগলামি করেছে। বাড়িতে আসার পর শান্ত হয়ে গেছে। আদ্রিশ অনেক চেষ্টা করেছে রুশার সাথে কথা বলার কিন্তু পারেনি। অপরাধবোধে তেমন জোর করার সাহস পায়নি। আদ্রিশ নিজের ঘরে বসে ড্রিংক করছে। নেশায় বুদ হয়ে গেছে। শরীরের ব্যালেন্স রাখতে পারছে না। উঠার শক্তিও নেই। বুকের ভেতরে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। নিজের হাতে নিজের নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করার অপরাধবোধ হয়তো ওর এ জন্মে শেষ হবে না।
“আমি খুনি। আমি আমার বাচ্চাকে খুন করেছি। রুশা তুমি ঠিক বলতে আমি বাবা হওয়ার যোগ্য নই। তুমি এতবার বলার পরেও আমি কি করে এত কেয়ারলেস হতে পারলাম? কেন তোমার প্রতি, আমার বেবির প্রতি আরেকটু যত্নশীল হতে পারলাম না? কেন আগলে রাখতে পারলাম না? ছোট্ট বাচ্চাটাকে আমি ছুতে পারলাম না। আদর করতে পারলাম না। আমি কি করলাম এটা? আমার এত ক্ষমতা আজ নিষ্ফল। আমি সব শেষ করে দিয়েছি।”
আদ্রিশ কাঁদছে। বাচ্চা হারানোর শোকে বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। আজ বুঝতে পারছে সন্তান বাবার জন্য কি। ও ওর বাবার জন্য কি ছিল। মায়ের মৃত্যুর পরে ওর বাবা ওকে খুব যত্ন করেছে, আগলে রেখেছে, কখনো কষ্ট পেতে দেয়নি। কিন্তু ও পারেনি বাবার মতো আদর্শ বাবা হতে।
রুশা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এই কয়দিনে চেহারা অনেকটা পালটে গিয়েছে। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বিষন্নতায় ঘেরা মুখটা দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই ওর জীবনে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেছে।
জীবন থেকে মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে গেছে। কতটা অযত্নে কাটছে দিনগুলো। রুশার তখন চোখ পড়ল পেটের দিকে। ডান হাত দিয়ে আলতো করে পেট স্পর্শ করল। পেট স্পর্শ করতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। পেট থেকে হাত সরিয়ে চোখের পানি মুছে নিজেকে আয়নায় দেখল। নিজের অজান্তেই আলতো হাসল। সে হাসিটা রুশা আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পেল। কত সুন্দর, স্নিগ্ধ সে হাসি। কত মুগ্ধতা ছড়ানো। এমন সুন্দর, পবিত্র হাসি কতদিন পরে হাসলো জানা নেই।
রুশা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। সূর্য পশ্চিমে হেলে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই ধরণীতে অন্ধকার নেমে আসবে। গাঢ় অন্ধকার পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলবে। রুশা চুলগুলো ছেড়ে দিল। মৃদু বাতাস চুলগুলো ছুয়ে গেল।
“আমি পেরেছি আদ্রিশ। তোমার প্রতি কঠোর হতে পেরেছি। তোমাকে আমি এভাবেই কঠোরতার সাথে শাস্তি দিয়ে যাব। তোমাকে আমি তিলে তিলে মারব যেভাবে আমি তিলে তিলে মরেছি। আমি আমার ভাই, ভাবি আর তাদের বাচ্চার প্রতিশোধ নেব। তুমি তাদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছো। নিজের স্বার্থের জন্য নিরাপদ মানুষকে মেরেছো। কি অপরাধ করেছিল ওরা? তুমি এত অমানুষ কেন? এত নিষ্ঠুর একটা মানুষ কি করে হয়? আমিও তোমার প্রতি নিষ্ঠুর হব। তোমার এমন অবস্থা করব যে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে পড়বে।”
.
.
কথা সেজানের জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে ব্রিজের ওপর। স্নিগ্ধ বাতাসে ওর পরনের সাদা সেলোয়ার-কামিজ আলতো দুলছে। আজকে চুলে খোঁপা করেছে। মুখে কোনো সাজগোজ নেই। সাজলে সেজান যদি অন্য কিছু ভাবে তাই লজ্জা আর দ্বিধায় সাজতে পারেনি। কথা ব্রিজ থেকে নিচের দিকে তাকাল। ঢেউয়ের উত্তাল দেখছে। গাড়ি থামার শব্দে কথা ঘুরে দাঁড়ায়। সেজান চলে এসেছে। সেজান গাড়ি থেকে নামল। ওর গায়ে সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। শার্ট ইন করা। সেজান নেমে ধীরে ধীরে কথার সামনে এসে দাঁড়ায়।
কথা জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন?”
“এই তো ভালো। তোমার কি খবর?”
“জি আগের মতোই চলছে।”
সেজান ব্রিজের ওপর বসল। কথার একটু ভয় ভয় লাগছে। এই ব্রিজে গাড়ি চলাচল কম। অনেকেই বিকেল বেলায় এখানে ঘুরতে আসে। প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুরা কিংবা পরিবার নিয়ে অনেকে ঘুরতে আসে। সেজান আশেপাশে দেখল। তারপর কথার দিকে চেয়ে বলল,
“মনটা খুব খারাপ। কাছের তেমন বন্ধু নেই যার সাথে মনের কথা শেয়ার করব৷ তোমাকে ডেকেছি বলে কি রাগ করেছো?”
“জি না। আমি তেমন ব্যস্ত মানুষ নই। তাই রাগ করার কোনো কারণ নেই। এ সময় আমি ফ্রি থাকি।”
সেজান ব্রিজ থেকে নেমে নিচের দিকে তাকাল। তারপর বলতে লাগল,
“আমি খুব একটা ভালো মানুষ নই। খুব একটা বলতে আমি একদমই ভালো মানুষ নই। এ নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। আদ্রিশ ভাই আমার সব। উনার জন্য আমি সব করতে পারি। জীবনটাও হাজির। উনি আমাকে রাস্তা থেকে তুলে আশ্রয় দিয়েছেন। খাইয়ে পড়িয়ে বড় করেছেন। বাড়ি,গাড়ি সব দিয়েছেন। আমি উনার কাছে সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব৷ ভাই আর ভাবীর জীবনে কি ঘটেছে জানোই তো। তারা দুজনেই ভেঙে পড়েছে। ভাই তো অপরাধবোধে মরে যাচ্ছেন। কাউকে কিছু বলছেন না তবে আমি বুঝতে পারছি তার বুকের ভেতরে কি ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কত কষ্ট পাচ্ছেন। ভাবীকে খুব ভালোবাসেন। আমি কখনো ভাবতে পারিনি ভাই কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারবে। ভাবীর সাথে তার দূরত্ব দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। ভাই এই দূরত্ব মেনে নিতে পারছেন না। খুব কষ্ট পাচ্ছেন। ভাবীকেও এত কষ্টে দেখতে পারছেন না। তুমি একটু ভাবীর সাথে কথা বলবে? একটু বোঝাবে প্লিজ। ভাই তো ইচ্ছে করে কিছু করেন নি। এটা একটা দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় কারো হাত থাকে না।”
কথা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আপুর অবস্থাটা আপনি আমি কেউ বুঝতে পারব না। কারণ আপু যে সুন্দর অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছে সেই অনুভূতিটা তার থেকে আল্লাহ ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। বাবা-মার জন্য সন্তান কি তা জানি না কিন্তু সন্তানের জন্য বাবা-মা কি তা অনাথ হয়ে বুঝি। বাবা-মার জন্য যেখানে আমার এত আকুলতা সেখানে বাবা-মা সন্তানের জন্য কতটা আকুল হতে পারে, ছটফট করতে পারে সেটা কিঞ্চিৎ হলেও বুঝতে পারছি। আপু ট্রমার মধ্যে আছে। একটু সময় লাগবে। তবে আমি কথা বলব। আপুকে বুঝানোর চেষ্টা করব। কারণ আমিও চাই আপু এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাক।”
“ওরা ভালো থাকুক। আবারও সন্তানের মুখ দেখুক। সব দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি মোচন হোক। সুখের একটা পরিবার হোক। এটাই চাই।”
“নিজের জন্য কিছু চাই না আপনার?”
সেজান কথার দিকে তাকাল। কথা কৌতূহল নিয়ে চেয়ে আছে। কথাকে নিরাশ করতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সেজান তাই করল। মৃদু হেসে বলল,
“নিজের জন্য কি চাই সেটা অন্য আরেকদিন বলব। আজ নয়। আজ যাওয়া যাক।”
কথা মৃদু হেসে সম্মতি জানাল।
**
রুশা অনেকদিন পরে আজ ঘর থেকে বের হয়েছে। সিড়ি বেয়ে নিচে নামল। বাড়িটা কেমন নীরব নিস্তব্ধ লাগছে। রুশা কিছুক্ষণ পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘরের দিকে যায়। রুশা উপরে যেতেই আদ্রিশের মুখোমুখি পড়ে। কেউ এই মূহুর্তের জন্য তৈরি ছিল না। রুশা ভাবতে পারেনি আদ্রিশ এই সময় বাড়িতে আছে। দুজনের চোখ আঁটকে গেছে একে অপরের চোখে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। আদ্রিশ রুশার চোখের গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছে। আর রুশা আদ্রিশের ওই ব্যথা ভরা চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। চোখ নামিয়ে নিল। দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে চায় সে কিন্তু আদ্রিশ তা হতে দিল না। আঁটকে দিল ওর হাত ধরে।
রুশা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
“রুশা, প্লিজ। আমার কথা শুনো। একটু দয়া করো। আমার সাথে কেন এমন করছো? তুমি তো জানো বাচ্চাটা আমি চেয়েছিলাম। ওকে হারানোর ব্যথা আমারও আছে। আমিও কষ্ট পাচ্ছি। রোজ চোখের পানি ঝড়াচ্ছি। আমাকে আর শাস্তি দিও না।”
রুশা ঝারা মেরে হাত ছাড়িয়ে বলল,
“কতটুকু শাস্তি পেয়েছো তুমি? কতটুকু শাস্তি আমি দিয়েছি তোমাকে? তুমি যা করেছো তাতে তোমার ফাঁসি হওয়া উচিত। এ তো সামান্য।”
“কি চাও তুমি? কি করলে শান্তি পাবে?”
রুশা হাতজোড় করে বলল,
“আমাকে নিজের মতো একা থাকতে দেও প্লিজ। এটুকু রহম করো আমার উপর।”
“আমি পারছি না। আমি তোমাকে এত কষ্ট পেতে দেখতে পারছি না। তোমার বাচ্চা চাই তো? রুশা আমাদের আবারও বাচ্চা হবে। আমি তোমাকে আবারও বাচ্চা দেব। আর কোনো ভুল করব না আমি। প্লিজ! আমার উপর ভরসা রাখো।”
রুশা চমকে উঠে আদ্রিশের কথা শুনে। রাগ ফুটিয়ে ওর দিকে তাকায়।
“আজকে বাচ্চার কতদিন হতো জানো? তিন মাস আট দিন। প্রতিটি দিনের হিসাব রাখছি আমি। ভুলতে পারব না। ব্রেনে সেট হয়ে গেছে। তুমি কোন মুখে আবারও বাচ্চার কথা বলো? তোমাকে দেখে, তোমার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। তুমি আমার কাছে আসার একদম চেষ্টা করবে না। যদি চেষ্টা করো তবে আমি আত্মহত্যা করব। তুমি একটা খুনি। ঘৃণা করি তোমাকে। অসহ্য লাগে তোমাকে, তোমার প্রতিটি কথা। আমি আর কোনো বাচ্চার খুনি তোমাকে হতে দেব না।”
রুশার এই মুহুর্তে কাঁদা উচিত কিন্তু কান্না আসছে না। তখন মনে করল সেদিনের কথা যেদিন ওর আপনজনের মৃত্যু সংবাদ শুনেছিল। চিৎকার করে কেঁদেছিল। ওর কান্নায় পুরো বাড়ি কেঁদেছিল। কেউ চোখের পানি আঁটকে রাখতে পারেনি। পাগলামি করেছিল প্রচুর। সেদিনের কথা মনে পড়তেই রুশার চোখে পানি চলে এলো। বুকের ভেতরে মৃদু ব্যথা শুরু হয়েছে।
রুশা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলল,
“তোমাকে আমি ঘৃণা করি। ঘৃণা হয় সেদিনের উপর যেদিন আমি তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম।”
রুশা দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে কাঁদতে লাগল। বিরবির করে বলছে,
“আমি ঘৃণা করি তোমাকে, ভালোবাসি না। একটুও ভালোবাসি না।”
আদ্রিশ স্তব্ধ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর চিন্তাশক্তি লোপ পেয়েছে। জীবনটা বিষাক্ত লাগে। এত বিষাদময় জীবন মেনে নিতে পারছে না। রুশার মুখে ঘৃণা করি শব্দটা শুনে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
.
কিছুদিন পরের কথা। রুশা আশ্রমে যাচ্ছে কথার সাথে। আদ্রিশই কথাকে বলেছে ওকে যেন আশ্রমে নিয়ে যায় কিছুদিনের জন্য। ঘুরে আসবে মনটা ভালো লাগবে। আদ্রিশ ওর সিকিউরিটির সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করেছে। রুশা আশ্রমে গিয়ে বেশ ভালোই আছে। বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাচ্ছে।
রুশা চার দিন ধরে আশ্রমে গিয়েছে। আদ্রিশ আজ ওকে আনতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে কল করে বলেছে যাতে ও রেডি থাকে। আদ্রিশের প্লান ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে। রাতে ডিনার করে বাসায় ফিরবে। তাই আদ্রিশ একাই এসেছে। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। নিরিবিলি রাস্তা। রাস্তায় তেমন যানবাহন নেই। হঠাৎ করে ওর সামনে পেছনে
কয়েকটা গাড়ি ওর গাড়ি ঘিরে ধরে। তারপর অনবরত গুলি ছুড়তে থাকে। আদ্রিশ সাথে রিভলবার আনেনি। অফিস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে। আদ্রিশ আকস্মিক আক্রমণে দিকশূন্য হয়ে পড়ে। কি করবে বুঝতে পারছে না। গাড়ির গ্লাস ভেঙে ওর উপর পড়ছে। শরীরের বেশ কিছু জায়গায় কাচ বিঁধে রক্ত ঝড়ছে। তবুও ড্রাইভ করছে। হঠাৎ করে জোরে গাড়ির ব্রেক কষলে একটা গাছের সাথে ওর গাড়ি বারি খায়। আদ্রিশের মাথায় আঘাত লাগে। ধীরে ধীরে ওর চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা গোডাউনে ছিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করল। দুহাত, দু’পা বাঁধা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সারা শরীর ব্যথা করছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছে। আদ্রিশ ভালো করে চোখ মেলে আশেপাশে দেখল। ওকে নড়ে উঠতে দেখে রকি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।
অদ্ভুত হেসে বলল,
“হেই ডুড! আ’ম রকি। কি চিনতে পারলে না? আরে আমি হচ্ছি সেই হুডি পরা মানুষটার এসিস্ট্যান্ট।”
আদ্রিশ ছোটার চেষ্টা করছে। রাগে ফোঁসফোঁস করছে। হাত পা যথাসম্ভব নাড়িয়ে বলল,
“কে সেই হুডি পরা লোক? ওকে আমি এতদিন ধরে খুঁজছি। আজ ফাইনালি তার ডেরায়? আই হোপ মুখোমুখি দেখা হবে।”
“অবশ্যই হবে। একটু অপেক্ষা। আর হ্যা সে পুরুষ নয় নারী। একজন সাহসী, বুদ্ধিমান, লড়াকু নারী।”
আদ্রিশ ওর কথা শুনে চমকে উঠে। একটা মেয়ে এতদিন নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে? আদ্রিশ আর কিছু ভাবতে পারছে না।
রকি ওর সামনে দাঁড়িয়ে রুশাকে কল করল।
“হ্যালো পিউ, তোমার শিকার খাঁচায় বন্দী। তোমার সাথে দেখা করার জন্য ছটফট করছে। সে জানেও না আজ তার শেষ দিন। তোমার হাতে আর ওর মৃত্যু হবে।”
আদ্রিশ ওর দিকে চেয়ে গালাগাল করতে করতে বলল,
“একবার আমাকে ছেড়ে দেখ তোদের কি হাল করি। কোনো মেয়ের কাছে আদ্রিশ হার মানবে না। বড় বড় মাফিয়াকে মেরে পুঁতে দিয়েছি আর এ-তো এক নারী। ”
“শালা, এই নারীর কাছেই হেরে বসে আছিস। ও আসুক তোর এই বড় বড় কথা কোথায় থাকে দেখব।”
আদ্রিশ আর রকির এরকম কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রকি ওকে বেশ মারধর করে মনের রাগ, ক্ষোভ, ডিপ্রেশন মিটিয়ে নেয়। রুশা যাকে ও ভালোবাসে সে ওর সন্তানের মা হয়েছিল বিষয়টা ওকে অনেক কষ্ট দেয়। হাত-পা বাঁধা থাকায় মার খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না আদ্রিশের। আদ্রিশ ভাবতে থাকে কে হতে পারে এই পিউ। ওর শরীর হেলে পড়েছে। ব্যালেন্স রাখতে পারছে না। নাক, ঠোঁটও ফেটে রক্ত ঝড়ছে। শরীর থেকেও সমান তালে রক্ত পড়ছে। অফিসের সাদা শার্টে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। আদ্রিশের চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছে না।
তখনই রকি জোরে জোরে বলল,
“পিউ, এসো পড়েছো তুমি? দেখো ওর কি হাল করেছি।”
আদ্রিশ ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রুশা( রুশা বলেই সম্বোধন করি) কয়েক হাত দূরে আদ্রিশের বরাবর এসে দাঁড়াল। আদ্রিশ আধো আধো চোখে রুশার দিকে তাকাল। ও চোখগুলো বন্ধ করে আবারও তাকাল। রুশার মুখ কেন দেখতে পাচ্ছে বুঝতে পারছে না। আবারও চোখ বন্ধ করে তাকাল কিন্তু না ও ভুল দেখছে না। এটা রুশাই। জিন্সের সাথে শর্ট টপ্স, গলায় স্কাপ প্যাচানো, চুলগুলো উঁচু করে ঝুঁটি করা, পায়ে হাই হিল। চোখ মুখে আগুন। আদ্রিশের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। স্থির, খুব শান্ত দৃষ্টিতে রুশার দিকে চেয়ে আছে। কিছুক্ষন আগে বাঁচার যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল তা দুমড়ে মুচড়ে গেল। এ দৃশ্য দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই সুখের ছিল। রুশাকে হারানোর চেয়ে ওর হাতে মৃত্যুই বেশি মধুর।
শান রকির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর আদ্রিশের দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকাল।
রুশার দিকে চেয়ে বলল,
“পিউ, আজকে আমাকে তুই সেরা উপহার দিয়েছিস। গত বছর এই দিনটায় আমরা সব হারিয়েছি আর আজ সব ফেরত পাব। ওয়েল ডান মাই ডেয়ার সিস্টার।”
আদ্রিশ শানকে চিনতে পেরেছে। ওকে আগে থেকেই চিনে। রুশা শানের বোন সেটাও ক্লিয়ার। এতদিন রুশা ওকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে গেছে ভেবে রাগে, ক্ষোভে নিজেরই মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
শান একটা রিভলবার রুশার দিকে ছুড়ে মারে। রুশা সেটা ক্যাচ ধরে।
“শুট হিম পিউ।”
রুশা আদ্রিশের দিকে একবার তাকাল। ও অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে। তারপর রিভলবারের দিকে চেয়ে সব প্রস্তুতি নিল শুট করার। রিভলবার আদ্রিশের দিকে তাক করে আছে। হাত কাঁপছে। চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বড় করে একটা শ্বাস নিল। অস্থির অস্থির লাগছে। চোখ খুলে আদ্রিশকে একবার দেখল। ট্রিগারে ওর আঙুল। আরেকটু বাঁকা করলেই কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে আদ্রিশের বুক ঝাঁঝরা করে দিতে
পারে।
চলবে….
(আগামী পর্বে সব জট খুলবে। সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। এখন প্রশ্ন রুশা কি আদ্রিশকে মারবে?)
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
২২.
রুশা আবারও জোরে শ্বাস নিল। শানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“সরি, ভাইয়া।”
তারপর রিভলবার নিজের মাথায় ঠেকায়। এমন কিছুর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। রকি
আর শান দু’জনেই হকচকিয়ে যায়। ওরা দুজন ওর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে রুশা বলল,
“কেউ আমার কাছে আসবে না।”
রকি আর শান থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আই কান্ট। এর চেয়ে সহজ নিজেকে খুন করা। আমি ওকে মারতে পারব না। সে শক্তি আমার নেই।”
শান বলল,
“পিউ, রিভলবারটা নামা বোন। গুলি বেড়িয়ে যাবে। ওটা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। তুই নিজে এ-সব প্লান করেছিস। আমরা শুধু হেল্প করেছি। তাহলে আজ কেন এমন পাগলামি করছিস?”
“হ্যাঁ, সব প্লান আমার ছিল। কিন্তু এই কাজটা আমি করতে পারব না। আমাকে মাফ করে দিও ভাইয়া।”
রকি আদ্রিশের প্রতি রুশার দূর্বলতা দেখে রেগে গেল।
“পিউ, ওকে গুলি করো। মেরে ফেলো। তুমি না পারলে আমাকে বলো।”
রুশা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“খবরদার! আদ্রিশের গায়ে একটা আঁচড়ও দেবে না।”
রকি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,
“পিউ তুমি কি ওকে…?”
রুশা চিৎকার করে বলল,
“আমি ওকে ঘৃণা করি। খুব ঘৃণা করি। ও আমাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখো। যে মেয়ে বিদেশে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে দেশের সেবা করতে চেয়েছে সে আজ রিভলবার হাতে তুলে নিয়েছে মানুষ খুন করার জন্য। ও আমার সহজ সরল জীবনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। ওকে আমি ঘৃণা করি।”
রুশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আদ্রিশ ওদের কাহিনি দেখছে। কিছুই বুঝতে পারছে না। রুশার এমন করার কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।
রকিও চিৎকার করে বলল,
“যাকে ঘৃণা করা যায় তাকে মারাও যায়। ঘৃনার যোগ্য ব্যক্তির জন্য নিজের মাথায় রিভলবার ঠেকানো যায় না। নিজেকে মারা যায় না।”
“কিছু কিছু মানুষকে ঘৃণা করা গেলেও মারার কথা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবা যায় না। কিছু ঘৃণা মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”
শান এতক্ষণ চুপ থাকলেও ওর কথা শুনে বলল,
“ভুলে গেলি সব? তোর প্রতিজ্ঞা, তার কি হবে?”
রুশা চুপ করে আছে। রকি এগিয়ে এসে বলল,
“সেটা আমি পূরণ করে দিচ্ছি।”
“নাহ, রকি তুমি বাড়াবাড়ি করছো?”
“তাহলে তুমি বলো কেন ওকে মারতে চাইছো না। কি কারণে হঠাৎ ওর উপর তোমার এত দয়া চলে এলো?”
রুশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“শুনতে চাও? তাহলে শোন! আমি আমার বাচ্চাকে পিতৃহীন করতে পারব না। আমি আমার সন্তানের সাথে এত বড় অন্যায় করতে পারব না।”
বাচ্চার কথা শুনে রকি, শান অবাক হলো। সাথে আদ্রিশও। আদ্রিশ বুঝতে পারছে না রুশা সত্যি বলছে না আবার কোনো বড় খেলা খেলছে। ও নিজে রুশাকে ওয়াশরুমে খুব খারাপ অবস্থায় দেখেছে। ডাক্তার বলেছে ওর মিস ক্যারেজ হয়ে গেছে। রুশার এত কান্নাকাটি, কষ্ট পাওয়া এসব কি ছিল? নাটক! না এখন যা করছে তা নাটক। এক দিনে কত সত্যের মুখোমুখি হবে ও।
রকি অস্ফুটস্বরে বলল,
“বাচ্চা!”
রুশা পেটে হাত দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ বাচ্চা। আমার বাচ্চা।”
শান বাকরুদ্ধ। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।
“তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস? এই খুনির বাচ্চা লালন-পালন করছিস?”
“হ্যা, আমি মিথ্যা বলেছি। সব আমার নাটক ছিল। এই বাচ্চা আদ্রিশের এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে এই সন্তানের মা আমি। কোনো মা তার সন্তানকে মারতে পারে না। মারা তো দূর ভাবতেও পারে না। যারা পারে তারা অন্তত মা নয় পিশাচিনী। আমার পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমার বাচ্চা আরেকদিকে। আমি বাধ্য হয়েছি ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা বলতে। তুমি আমাকে বাধ্য করেছো। তুমি আমার ভাই হয়ে কি করে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলার কথা বলতে পারো? এর চেয়ে ভালো তো আমাকে মেরে ফেলো। মা আর সন্তান এক সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেব। যেভাবে আমাদের ভাবি তার সন্তান নিয়ে বিদায় নিয়েছিল।”
শান মাথা নিচু করে নিল। আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাল। ও ভাবলেশহীন। রকি বাচ্চার জীবিত থাকার কথা শুনে আরো রেগে যায়। ওর মাথায় খুন চেপেছে।
শান কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে কি উচিত আর কি অনুচিত বুঝতে পারছে না।
“কিন্তু আমি মনে করি, এই রকম বাবা থাকার চেয়ে পিতৃহীন হয়ে জন্ম নেওয়া ভালো। তুই বাচ্চা চাস তো? ঠিক আছে আমি এ নিয়ে আর একটা কথাও বলব না কিন্তু আদ্রিশ…
রুশা চোখ মুখ শক্ত করে মাথায় শক্ত করে রিভলবার ধরে বলল,
“তাহলে ওর সাথে আমি আর আমার সন্তানও বিদায় নেব। তুমি আমাকে খুব ভালো করে জানো। নিজেকে মেরে দেব। আই মিন ইট।”
রকি আদ্রিশকে সহ্য করতে পারছে না। শানকে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি কি করবে জানি না আমি আদ্রিশকে আজ বেঁচে ফিরতে দেব না।”
শান ফিসফিস করে বলল,
“পাগল হয়েছো? পিউ কি বলছে শুনো নি? ও নিজের ক্ষতি করে দেবে। ওর চোখ মুখ দেখো। ভুলেও এ কাজ করবে না।”
“আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।”
“পিউয়ের কিছু হলে আমিও সহ্য করতে পারব না। তোমার একটা ভুলের জন্য আমার বোনের যদি কিছু হয় তাহলে ভালো হবে না।”
“তাহলে আদ্রিশকে ছেড়ে দেব?”
“পিউ যদি চায় তবে তাই হবে।”
রকি আদ্রিশের দিকে কটমট করে তাকাল। তারপর রুশাকে মিনতি করে বলল,
“পিউ, তোমার বাচ্চার দায়িত্ব আমার। কিন্তু আদ্রিশকে ছাড়তে পারব না।”
রুশা মৃদু হেসে বলল,
“তাহলে আমার হাতে মরার জন্য প্রস্তুত হও। নিজেকে মারার আগে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিয়েই যাব।”
রকি সামনে থাকা চেয়ারে লাথি মারল। আদ্রিশ রুশাকে দেখছে। শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য ওকে বাঁচানোর এত আকুলতা,এত চেষ্টা? না অন্য কারণ আছে? যে কারণই থাকুক আদ্রিশ আর বাঁচতে চায় না। রকি ওকে মেরে দিক তাতেই ওর শান্তি।
আদ্রিশ ঠোঁট নাড়াতে পারছে না। অনেক কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
“কিল মি।”
সবাই ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকাল। রুশা অশ্রুসিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকাল। আদ্রিশ কেন এটা বলছে তা অজানা নয়। রুশা দ্রুত মোবাইল বের করে সেজানকে কল করল। সেজান আগে থেকেই রুশার বলা জায়গায় প্রস্তুত ছিল। রুশা ওকে একটা ঠিকানা দিয়ে বলেছিল দলের লোক নিয়ে সেখানে প্রস্তুত থাকতে। সেজান এটা শুনে অনেক প্রশ্ন করেছিল রুশা শুধু বলেছে সময় হলে জানতে পারবে। সেজানের অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না।
রকি আর শান রুশাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে যদি শেষ পর্যন্ত রুশা মেনে নেয়। কিন্তু না রুশা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিল। সেজান ভেতরে এসে রুশাকে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। কোনো প্রশ্ন করার আগেই রুশা বলে,
“সেজান ভাই, সময় কম। তাড়াতাড়ি আদ্রিশকে বের করুন।”
সেজান তাই কোনো প্রশ্ন না করে আদ্রিশের বাঁধন খুলতে শুরু করে। দু’জন লোক ওকে ধরে বাইরে বের করে নেয়। রুশা একবার শান আর রকির দিকে তাকায়। ওরা দু’জনেই অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তারপর সেজানের সাথে বের হয়ে যায়। আদ্রিশকে গাড়িতে না তোলা পর্যন্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে গাড়িতে তুলে সেজান রুশাকে বলল,
“ভাবি তাড়াতাড়ি আসুন।”
রুশা শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমি যাব না সেজান ভাই। এ পর্যন্তই আমার দায়িত্ব ছিল। ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। আর হ্যা কড়া সিকিউরিটিতে রাখবেন। সুস্থ হওয়ার পর একা ছাড়বেন না। ও স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওর সঙ্গ দিবেন। আর সব সময় এভাবেই পাশে থাকবেন।”
সেজান ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশার কথা, আচরণ কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না।
“ভাবি আপনি এসব কি বলছেন? এখানে কি হচ্ছে, আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে একটু খুলে বলবেন?”
“আদ্রিশ সুস্থ হলে সব জানতে পারবেন।”
“আপনি যাবেন না? আমি আপনাকে এখানে ফেলে যেতে পারব না। ওরা আপনার জন্য ডেঞ্জারাস।”
রুশা মৃদু হেসে বলল,
“ওরা আদ্রিশের শত্রু আমার নয়। ওরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না। এখন প্লিজ ব্রেনে প্রেসার না দিয়ে আদ্রিশকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।”
“কিন্তু ভাবি…!”
“আমার নাম রুশা নয়, আমার নাম পিউ। পিউ চৌধুরী। আর ওরা আমার আপনজন। আই থিংক বুঝতে পেরেছেন। শত্রু আমি আপনাদের।”
রুশা শূন্যে দৃষ্টি দিল। এসব না বললে সেজান যাবে না। তাই বলে দিল। ওর চোখ ছলছল করছে। সেজান ওর কথা শুনে বাকরুদ্ধ। কেন জানি রুশার কথা ঠিক মনে হচ্ছে। নয়ত ওরা এভাবে ওদের ছেড়ে দিতো না। রুশাকে আজ অনেক অচেনাও লাগছে।
সেজান রুশার দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিলে রুশা গাড়ির দিকে তাকায়। যতদূর গাড়ি দেখা গেছে চেয়ে ছিল। ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল।
শান আর রকি এক সাথে বের হয়ে এল। শান রুশাকে বলল,
“তোকে কি বলব, কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। নিজেই দাবার কোটে সৈন্য সাজিয়ে, দীর্ঘ সময় লড়াই করে টিকে থেকে জেতার আগ মুহুর্তে পুরো কোট এলোমেলো করে দিলি। কিছু বলার নেই তোকে। তুই কি চাইছিস আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটুকুই বলব তোর এই আচরণে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। এমন ছেলেমানুষী না করলেও পারতি।”
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে ওঠে বসে। রুশাকে রেখেই চলে যায়। কারণ ও ভালো করে জানে রুশা যাবে না ওর সাথে।
রকি রুশাকে বলল,
“আমার সাথে চলো।”
“তোমার সাথে কেন যাব?”
“তাহলে কোথায় যাবে? আদ্রিশের কাছে যেতে পারবে না আর শানও তোমাকে নিয়ে গেল না।”
“আমার যাওয়ার অনেক জায়গা আছে। লিভ মি এলোন।”
রকি যাচ্ছে না তাই রুশা উঠে হাঁটা দিল। ও গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটছে। ওর এখন একটাই চিন্তা একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সত্যি জানার পর আদ্রিশ ওকে পেলে ছাড়বে না। তাই ভাবছে আবার লন্ডন চলে যাবে। বাচ্চাটাকে এসব থেকে দূরে রাখবে। সেখানেই মানুষ করবে। রুশা বর্তমান গন্তব্য ঠিক করে নিল। এখন কবরস্থানে যাবে।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here