তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_১৭

0
219

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
রিনি যে বাড়ি ছেড়ে ব্যাগপত্র গুছিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে একা একা চলে গিয়েছিল তা কেউই জানতোনা বাড়ির। পরে আসিফকে ফোন দিয়ে রিনির নিরুদ্দেশ হবার কথা জানাতে গিয়ে পাল্টা তারা জানতে পারে রিনি আসিফের কাছেই আছে।কথাটা এরই মধ্য সীমাবদ্ধ থাকার কথা কিন্তু রাত দশটার সময় আসিফ আর রিনিকে ফের এখানে দেখে সকলেই এখন বিচলিত।
আসিফ সবার আগে এসেছে রিনিদের বাসায়।সেখানে রিনির বাবা আসিফ আর রিনিকে দেখে প্রশ্ন করলেন ঠিক কি কারণে এত রাতে তারা এখানে।তাদের তো ঢাকায় থাকার কথা।
আসিফ রিনির ব্যাগ রেখে পুরোনো শর্তর কথা মনে করিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলো কিন্তু রিনির বাবা ওকে আজ রাতটা এখানেই থাকতে বলে রিনির মাকে আয়োজন শুরু করতে বললেন।রিনির আর আসিফের বিয়ের পরে আজকেই প্রথম আসিফ এই বাড়িতে রাতে থাকবে।
আসিফকে কিছু বলতেই দেয়া হলোনা।ফুফার কথার বাহিরে বিয়ের আগেও যায়নি সে,এখন বা কোন দুঃখে যাবে।চুপচাপ তাকে রিনির রুমটা দেখিয়ে দেয়া হলো।
আসিফ ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে ঢুকতেই রুমের ভেতরের দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছে।দেয়ালে টাঙানো টাইগার স্রোফের ছবি।ছবিটা দেখতে দেখতে সে বিছানায় বসে।মেয়েলি মেয়েলি গন্ধ ভাসছে পুরো রুমে।যেন পাউডার আর শ্যাম্পুর ছড়াছড়ি। রিনি এরইমধ্যে ওখানে পৌঁছে গেলো।দাঁত কেলিয়ে বললো,’যানের আগে আন্নেগো বাইত যাইতেন ন?’
[যাবার আগে আপনাদের বাড়িতে যাবেন না?]

‘তোর তাতে কি?’

‘আঁই ও যাইয়াম’

‘যাইস।কিন্তু এটা ভাবিস না যে তোকে আবার ঢাকাও নিয়ে যাব।যতদিন না আমি চাকরি পাচ্ছি তোকে আর কোনোদিন আমি ঢাকায় নেবোনা,আর তুই ও যাবিনা’

রিনি কিছু না বলে মায়ের কাছে চলে এসেছে।রিনিদের বাড়িটা সম্পূর্ণ টিনের।তাদের রান্নাঘরটা বাড়ির থেকে দশ কদম পেছনে আরেকটা ছোট করে একচালা টিনের ঘরের মতন।সেখানে এসে রিনি দেখে ওর মা মুরগীর মাংসের পাতিল চাপিয়েছেন চুলায়।রিনি মোড়া টেনে পাশে বসতেই ঠাস করে একটা চড় খেলো মায়ের হাতে।চড়টা খাবার পর মায়ের দিকে চেয়ে দেখে মা আবার চামচ নিয়ে মাংস নাড়তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

‘মাইচ্ছো কা?'[মারছো কেন?]

‘তুই আমাগো কাউরে না কইয়া ঢাকাত দিকে চলি গেছত কা?’
[তুই আমাদের কাউকে না বলে ঢাকার দিকে চলে গেছিলি কেন?]

‘আঁই কিত্তাম আর!এমিগার জরিনা/সখিনা বেজ্ঞুনে জামাই লই ঢং করে হত্তিদিন! আর আঁই কোন কালে বিয়া করিও জামাইর লগে বনের সুযোগ সময় এক্কানাও হাইতাম না।তোমরাও দেও না হেয়াল্লাই আঁই হত্তে হত্তে চলি গেছি’😎

[আমি কি করতাম আর!এদিকের জরিনা/সখিনা সবাই জামাই নিয়ে ঢং করে প্রতিদিন!আর আমি অনেক আগে বিয়ে করেও জামাইর সাথে বসার সুযোগ সময় একটুও পাইতাম না।তোমরাও দিতানা,তাই আমি একা একা চলে গেছি]

‘তোর কি লজ্জাশরম নাই রে রিনি?মানুষ কি কয় জানোস?’

‘আঁই কি প্রেমিকের লগে হলাই গেছিলাম?আঁই তো পলাইছি আঁর জামাইর লগে তাইলে মাইনসে কিছু কয়বো কা?’

‘মাইনসে কি আর জানে তুই তোর জামাইর কাছে গেছোস?’

‘কিল্লাই জানে না?’

‘উফ!তোর সাথে কথা বলা মানে সময় নষ্ট।যা তো!সামনে থেকে যা।আমাকে শান্তিতে রান্না করতে দে।এক কাম কর,আসিফের লাই শরবত আর বিসকুট চানাচুর লই যা’
—–
রিনি সেটা করতে চলে আসলো বাড়িতে।সেই সময় আসিফ রিনির বিছানায় শুতে যেতেই কাঠ ভেঙ্গে ভেতরে চলে গেলো।ভেতরে বলতে একেবারে খাটের তলায়।এতক্ষণ মাথার উপরের ফ্যানটা যতটা উপরে লাগছিল এখন আরও উপরে লাগছে।মাথার পেছনটা প্রচণ্ড আকারে টনটন করছিল।সেটা ঘঁষে ঘঁষে ওঠার জন্য বৃথা চেষ্টা করছিল আসিফ।তাও পারছিলো না।এদিকে চুরমারের আওয়াজ পেয়ে আসিফের ফুফা আর তার ছোট ছেলে কারিম ছুটে এসেছে।এসেই আসিফকে এমন অবস্থায় দেখে তারা দুজনে ওকে তুলে দাঁড় করালো।কারিম হাসি আটকাতেই পারছেনা।খিলখিল করে হেসেই চলেছে।পাশের রুম থেকে রিনি এতক্ষণ খাট ভাঙ্গার আওয়াজ না পেলেও অট্ট হাসির আওয়াজ পেয়ে এগিয়ে আসলো।এসে এই অবস্থা দেখে সে নিজেও ফিক করে হেসে দিয়েছে।আসিফ কোমড়ে হাত রেখে আ উুঃ করতে করতে রুমের এক কোণায় গিয়ে টিনের বেড়ায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো।
ফুফা রিনিকে ধমকে বললেন ও যেন হাসি বন্ধ করে, এরপর গরম ছ্যাঁক দেয়ার ব্যবস্থা করতেও বললেন।
———-
ডিভান চলে যাওয়ায় যেন তটিনির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।মানে এই অচেনা ছেলেটির সাথে তার একই বিছানায় ঘুমাতে হবে?জীবনে সে কারোর সাথে বেড শেয়ার করে নাই সেখানে আজ করতে হবে!
তটিনি চোখ বড় করে রেখেছে দেখে বাপ্পি টুপ করে বালিশ টালিশ সব রেখে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো।এবার তটিনির মনে হলো উজবুক ছেলেটা না জানি বলে বিছানায় সে একাই শোক,সে বরং সারারাত দাঁড়িয়ে থাকবে।ওমনি তটিনি বলে ফেললো ‘আপনি এখানেই শোন,সমস্যা নেই’

বাপ্পি মুচকি একটা হাসি দিয়ে রুম থেকে চলে গেছে।তটিনি ঘড়ি দেখে বাপ্পির রুমে আবারও হাঁটাচলা শুরু করতে করতে ওর আলমারির কাছে এসে থমকে যায়।ডানে বামে তাকিয়ে দরজাটা ধীরে খুলতে গিয়ে আবারও টাস্কি খেলো।কারণ এটাও লক করা।কি আজব!
আলমারির ভেতরটা দেখতে হলে বাপ্পির থেকে চাবি চাইতে হবে তারপর সে লেকচার শুরু করবে—” তুমি হয়ত আমায় লাইক করো তাই না তটিনি!!”’

তটিনি অনেকক্ষণ বসে থাকার পরেও বাপ্পি আসছেনা দেখে সে রুম থেকে বের হতে নিলো ঠিক সেসময় ওর মনে আসলো সে যদি বের হয় বাপ্পি বুঝে যাবে তটিনি ওকেই খুঁজতে বেরিয়েছে তাই সে আর বের হলোনা।

নিজের ফোনটা বিয়ে বাড়িতে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে।নতুন একটা ফোন দরকার।এদিকে বাবার শরীরের কথা জানার জন্য বাপ্পির কাছে ফোন চাইতে হয় বারবার।
——-
‘বাপ্পি শোনো,তটিনি হয়ত এত জলদি তোমার সাথে আমাদের কাউকেই মানিয়ে নিতে পারবেনা,এর পেছনে অবশ্য কারণ ও আছে।বিয়েটা তাড়াহুড়োতে হয়ে গেছিলো।যে এক মাস সময় লাগলো তাতেও সে কোনোদিন এ বাড়িতে আসেওনি,কারোর সাথে পরিচিত ও হয়নি।বকুল থেকে শুনলাম সে তোমার উপর রেগে আছে।কেন রেগে আছে জানিনা।তবে চেষ্টা করবে ওর রাগটা সারাজীবনের জন্য কমিয়ে ফেলতে।কারণ রাগটা সবসময় ওর মাথাতে রাখলে তুমি ওর কাছে ছোট হয়ে থাকবে সারাক্ষণ।যেটা আমরা সহ্য করতে পারবোনা।আমরা নিশ্চয় চাইবোনা আমাদের ছেলে তারই স্ত্রীর কাছে ছোট হয়ে থাকুক।তাই বলছি সে যে বিষয়ের উপর রেগে আছে সেটাকে একেবারে দূর করে দাও।তোমার মাকে বিয়ে করার পরেও আমি একই কাজ করেছিলাম।তারপর থেকে দেখেছো আমাদের কোনোদিন বড় কোনো ঝগড়া হতে?’

বাপ্পি চুপ করে থেকে বাবার পাশে বসে পা নাড়ছে।বাবা আবার বললেন,’তটিনিকে তুমি অনেক পছন্দ করো এটা আমি ১ম দিনেই বুঝতে পেরেছি।তাই তুমি হয়ত চাইবে ও সব সুখ পাক এখানে।তাই বলে এই না যে তুমি সবসময় ওর সামনে ছোট হয়ে থাকবে।সম্পর্কে তুমি ওর স্বামী হও।দায়িত্ব অধিকার পালন করার আগে তোমার নিজের ও কিছু অধিকার আছে তটিনির থেকে।সেটা আদায় করে নেবে ‘

বাপ্পি মাথা নাড়িয়ে ফেরত চলো আসছিল রুমের দিকে, তখনই ওর মামাতো ভাই ফুয়াদ ছুটে এসে ওর হাতে একটা বক্স দিয়ে বললো,’ভাইয়া ধরো তোমার পার্সেল।আমি গিয়ে নিয়ে এসেছি’

‘থ্যাংক ইউ সো মাচ!’

‘র‍্যাপিং করে এনেছি।ভাবীকে দেবে তাই না?’

‘হ্যাঁ’…’

তটিনি কান পেতে রুমের কোণা থেকে গিফট দেয়ার কথা শুনে দৌড়ে গিয়ে বিছানায় উঠে বসে গেলো।বাপ্পি কিছুক্ষণ পর রুমে ঢুকতেই তটিনি ওকে দেখে বলে উঠলো,’আমার হীরা যহরত কিছু লাগবেনা।এত শখ নাই আমার ওসবের প্রতি’😇

‘আমি ওগুলা দিচ্ছি ও না’

‘তাহলে বক্সে!’

এটা বলেই তটিনি মুখে হাত দিয়ে অন্যদিকে ফিরে গেছে।বাপ্পি ওর কাছে বক্সটা রেখে বললো,’তাহলে সবই শুনেছো।তবে নিশ্চয় এটা শুনোনি যে এটার ভেতরে কি আছে?এটাতে সেই জিনিসটাই আছে যেটা তোমার এখন প্রয়োজন।’

‘ফোন?’
——–
রিমি গরম পানি নিয়ে তাতে তোয়ালে চুবিয়ে পানি চিপে বের করে তোয়ালেটাকে নিয়ে আসিফের কোমড়ে ছ্যাঁক দিচ্ছে আর আসিফ মাথায় হাত দিয়ে অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে।অন্যরকম অনুভূতি বিরাজমান সেখানে।রুমে তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।
মাঝে মাঝে দরজার পর্দার আড়াল সরিয়ে বাহিরে থেকে রিনির মায়ের ফিসফিসিয়ে আওয়াজ শোনা যায়।তিনি বলছেন,’বেজুইন্না মাইয়া!!!ডক করি ছ্যাঁক দে।’
[বেজুইন্না—এটার মানে আমি নিজেও জানিনা,তবে আমার আম্মু,নানু আমার কাজ সুন্দর না হলে আমাকে এটা বলে🐸🙂]

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here