তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_১৯

0
213

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি এক পাশ হয়ে ঘুমাচ্ছে,এদিকে তটিনি বসে বসে পাহারা দিয়ে চলেছে বাপ্পিকে।তার চোখে ঘুম এসে টইটুম্বুর অথচ সে ঘুমাবেনা।যদি বাপ্পি তাকে ঘুমের মধ্যে জড়িয়ে ধরে? না না!!কিছুতেই তা হতে দেয়া যাবেনা।
তটিনি রাত আড়াইটা পর্যন্ত বাপ্পিকে পাহারা দিয়ে শেষে ঘুমের সাথে হেরে ঘুমিয়ে গেছে নিজের জায়গাতেই।তার আর পাহারা দেয়া হলোনা,দেখা হলোনা বাপ্পি তাকে ঘুমের ঘোরে স্পর্শ করে কিনা।বাপ্পি আসলে ঘুমায় নাই।এমনিতেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।তার ভোররাত ছাড়া ঘুম হয়না এটা তটিনি জানেনা,হয়ত শুনেছে কিন্তু ভুলে গেছে।তটিনি ঘুমিয়ে পড়তেই বাপ্পি উঠে বসলো।ল্যাম্প শ্যাডের হলুদ আলোয় তটিনির মুখখানা কমলা রঙের ধারণ হয়েছিল।শোয়ার আগে সে মুখে ভালমতন ফেসওয়াশ ডলে ধুয়ে শুয়েছে যার কারণে মুখটা ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছিল।বাপ্পি গালে হাত দিয়ে মনযোগ সহকারে ওকে দেখছে।যেদিন তটিনি ওকে মেনে নিতে পারবে সেইদিনটা ওর কাছে খুব আনন্দের দিন থাকবে।সে জানেনা দিনটা কবে আসবে তবে সে প্রহর গুনে যাবে ঐ দিনটা আসার।তটিনি রাগ করবে তা জেনেও বাপ্পি হাতটা বাড়িয়ে ওর মাথার চুলের উপর রাখে।বকুল আপু তটিনির মাথায় বেলি ফুলের মালা গুজে দিছিলেন।মালাটা এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেও কিছু কিছু বাসি ফুল এখনও চুলে আটকে আছে,বেলি ফুল বাসি হলেও ঘ্রাণটা থেকেই যায়।এই ফুল বাপ্পির অসম্ভব প্রিয় একটা ফুল।সে আর লোভ সামলাতে পারেনি।ফুলটা তার প্রিয় এবং ফুলটা যেখানে এখন গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই স্থান টাও ওর প্রিয়।মুখ এগিয়ে তটিনির চুলে ডুবালো সে।কি যে মুগ্ধতা কাজ করছে সারা শরীর জুড়ে যদি তটিনি একটিবার জানতে তবে অবহেলার চাদরে মুড়তো না কখনও।
———-
রিনি তার শাড়ী ধরে এলোমেলো ভাবে হেঁটে দরজার ফাঁক দিয়ে বাহিরে দেখলো কোথাও আম্মা আছে কিনা।কারণ এই শাড়ী আর তার পক্ষে পরে থাকা সম্ভব নাহ।কিন্তু তার পোড়া কপাল।সেখানে আম্মা আর আব্বা বসে বসে গল্প করছেন।তার মানে ওর বের হওয়া মুশকিল।তাই সে আবারও আসিফের কাছে ফিরে আসলো।আসিফ এতক্ষণ স্বস্তির দম ফেলছিল, কিন্তু রিনিকে আবার ফেরত আসতে দেখে তার দম আবার আটকে গেছে।রিনি শাড়ীটা এক হাতে ধরে রেখে কাছে এসে বললো,’আঁই বুইজ্জি তটিনি বইন আন্নের সামনে জীবনে শাড়ী হড়ে নো।যদি হইড়তো তাইলে আন্নে আঁরে দেই এরকম ডরাইতেন না।যেন জীবনে শাড়ী হিন্দিন্না কোনো মাইয়া হেতেন দেয় ন! এগিন কইরলে অইবো?আঁই আন্নের বউ ন?মাইনসে বউয়ের লগে এইন্না করে বুঝি?’
[আমি বুঝেছি তটিনি বোন আপনার সামনে জীবনে শাড়ী পরে নাই।যদি পরতো তাহলে আপনি আমাকে দেখে এরকম ভয় পেতেন না।যেন জীবনে শাড়ী পরা কোনো মেয়ে উনি দেখেন নাই।এগুলা করলে হবে?আমি আপনার বউ না?মানুষ বউয়ের সাথে এমন করে বুঝি?]

আসিফ কপাল কুঁচকে বলে ‘শোন!তোর সাথে আমার এখনও সেই সম্পর্কটা তৈরি হয়নি।আমরা বিয়ের পর থেকে এখনও সেভাবে সময় কাটাইনি তাহলে আমি এক মূহুর্তে কি করে সব এডজাস্ট করে নিব?’

‘আঁই কি কইছি অনই আর কোলে বাচ্চা আনি দেন?আঁই কইছি আঁরে আপন করি নেন।অনেক অপেক্ষা কইচ্ছি আন্নের লাই।’
[আমি কি বলেছি এখনই আমার কোলে বাচ্চা এনে দিতে?আমি বলেছি আমাকে আপন করে নিন।অনেক অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য]

আসিফ একটু পিছিয়ে বললো,’শোন!এখন এইসবের সময় না।ঘুমা,আমায় ও ঘুমাতে দে।কাল ভোরে উঠতে হবে’

রিনি দাঁত কেলিয়ে আরও এগিয়ে শরবতটা এগিয়ে ধরলো।এমনিতেও রিনির এইসব কার্যকলাপ দেখে আসিফের গলা শুকিয়ে গেছিলো।তাই সে শরবতটা নেয় ওর হাত থেকে।নিয়ে এক ঢোক খেয়ে বললো,’চিনি দেস নি?’

‘না দি “”””ন”””।আঁই নিজেই এত মিডা যে আন্নের আর কোনো কিছুতে মিডা লাইগদোনো😌’
[না দিই নাই।আমি নিজেই এত মিষ্টি যে আপনার আর কোনো কিছুতে মিষ্টি লাগবেনা]

আসিফ শরবতের গ্লাসটা রেখে বললো,’সব শেষ হবে যখন আমি চলে যাব।।।বুঝবি তখন’

রিনি কথাটা যেন শুনেই নাই।শরবত বাকিটুকু সে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলেছে।
এরপর শাড়ী ধরে গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলো আবার।

আসিফ হাসছে।রিনি যে এতটা চঞ্চল তা সে জানতোনা আগে।শুধু মায়ের কাছে শুনেছিল রিনি নাকি এলাকা কাঁপায়!ওর দুষ্টামির কথা সে খবর পেয়েছিল মানুষজনের কাছে।কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখেও নিলো।
মানুষ কেন যে খুব জলদি দুটো মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়!তারপর তাদের আলাদা করে দেয়!!
এই কারণে যাকে আমার বোঝা উচিত ছিল, দেখা উচিত ছিল,অনুভব করা উচিত ছিল তার সাথে কিছু না হয়ে,,, হয়ে গেলো অন্য একজনের সাথে।কি অদ্ভুত নিয়তি আমাদের!!
“””অথচ সব বৈধ এই মেয়েটির সাথেই,তার পরেও তাকে নিজের করে নিতে পারছিনা।মনের ভেতরের সেই অনুভূতিটা আমায় কষ্ট দিচ্ছে,বাধা দিচ্ছে।মনে বসাতে পারছিনা রিনিকে!!!”

‘আঁই আই গেছি😎’

আবারও রিনিকে দেখে আসিফ চমকে উঠলো।রিনি এবার আঁচলে সেফটিপিন লাগিয়ে এসেছে।আসিফের পাশে পা তুলে বসে সে বললো,’আম্মা রাঁধা শেষ অইলে খাইতে ডাইকবো।আঁর রুমের খাটটা ঠিক করা অইতাছে।আরও কিছুক্ষণ বই থান একুলে’

‘তুই যা। আমার কাছে এসেছিস কেন?’

‘তো কার কাছে যাইয়াম?বউ জামইর কাছে না আইলে কার কাছে আইবো?লেদা হোলাইনের মতন কথা কন কা?’
[তো কার কাছে যাব?বউ জামাইর কাছে না আসলে কার কাছে আসবে?বাচ্চাদের মতন কথা বলেন কেন?]

‘তুই বড় পাকনা হয়ে গেছিস তাই না?’

‘জামাই সব জানিও না জানার ঢং করলে বউরে তো পাকনা হতেই হবে’

‘আমাদের বিয়ে হবার পর তো একাই ছিলি এতদিন।কতটা প্রেম করছিস বল?’

‘অজ্ঞাও না।আন্নের ছবি লই ঘুম যাইতাম।আঁর মতন বউ আন্নে আর অজ্ঞা হাইতেন ন।আন্নেরে লই কত স্বপ্ন আঁই দেখছি যদি আন্নে যাইনতেন তাইলে এইসব তটি /মটিরে ছাড়ি আঁর কাছি দৌড়ি চলি আইতেন!!’
[একটাও না।আপনার ছবি নিয়ে ঘুমাতাম।আমার মতন বউ আপনি আর একটাও পাবেন না।আপনাকে নিয়ে কত স্বপ্ন আমি দেখছি যদি আপনি জানতেন তাহলে এইসব তটি/মটিরে ছেড়ে আমার কাছে দৌড়ে চলে আসতেন]

‘তটিনিকে নিয়ে কিছু বলবিনা’

‘একশোবার কইয়াম।আন্নের সাবাস তো কম না!আন্নে আরে থুই আরেক মাইয়ার লগে প্রেম করেন!কইতাম নি বেকেরে?’

‘আমি প্রেম করি নাই’

‘অবশ্যই করছেন।তা নাহলে ভেঁ ভেঁ করি কাইনতেন না।আঁই সব দেখছি।যাই হোক!অতীত লই টানাটানি কইত্তাম ন।আঁই আসি গেছি এবার আঁরে থুই যদি আবার কারোর লাই হাগল হইছেন তো চাইয়েন কিয়ারি আঁই”
[অবশ্যই করছেন।তা নাহলে ভেঁ ভেঁ করে কাঁদতেন না।আমি সব দেখছি।যাই হোক!অতীত নিয়ে টানাটানি করবোনা।আমি এসে গেছি এবার আমাকে রেখে যদি আবার কারোর জন্য পাগল হয়েছেন তো দেখিয়েন কি করি আমি]
———–
সকাল নয়টা বেজে গেছে, আজ দরজা লক করা ছিল বলো বাহিরের কোনো আওয়াজ রুম অবধি পৌঁছায়নি।তটিনিও ঘুমায়,বাপ্পি ও ঘুমায়।কিন্তু তটিনি তো বাপ্পির মতন দেরি করে ওঠার মানুষ না তাই ওর চোখ খুলে গেলো নয়টার দিকে।চোখ খুলতেই চোখের সামনে বাপ্পির বিশাল আকারের হাতটা নিজের গায়ের উপর দেখে সে যেন আকাশ থেকে পড়লো।এরপর পাশে চেয়ে দেখলো তার চুলের উপর মাথা রেখে বাপ্পি ঘুমাচ্ছে।তটিনি ওকে সরিয়ে নিজের চুল ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো।শেষে বাপ্পির হাতে একটা চিমটি কেটে ওর ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করলো সে।কিন্তু বাপ্পি তখন গভীর নিদ্রায় ছিল।তার পরেও চিমটি খেয়ে সে চুল থেকে সরে গেছে বলে তটিনি হাঁপ ছেড়ে উঠে বসলো।বাপ্পির হাত সরিয়ে বিছানা থেকে নেমেও গেছে।কাল সারারাত লোকটা এমন করে ঘুমিয়েছে নাকি!

অনেকক্ষণ বাপ্পির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থেকে তটিনি তার কালকের আনা জামাকাপড় থেকে একটা থ্রি পিস নিয়ে পরে দরজা খুললো বাহিরে বের হবে বলে ওমনি সামনে পড়লো বকুল আপু।বকুল আপু আজ চলে যাবে।তাই চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।তটিনিকে থ্রি পিস পরা দেখে তিনি কাজ রেখে ছুটে আসলেন ওর সামনে।এরপর বললেন,’একি অবস্থা তটিনি?নতুন বউ বিয়ের ৩য় দিন থ্রি পিস পরে??যাও তোমার থার্ড শাড়ী পরে আসো।’

এই বলে তটিনির চুল ধরে বললেন,”গোসল করো নাই?কি দেখাচ্ছো এইসব!নতুন বউ গোসল না করে বের হয়??যাও গোসল করে আসো!’

তটিনি মুখটা গম্ভীর করে আবার চলে আসলো রুমে।বাপ্পিকে আরামে ঘুমাতে দেখে তার রাগ হলো তাও কিছু করলোনা।আবারও শাড়ী নিয়ে পরে আসলো।গোসল করবেনা মানে করবেনা তাই পানি এক মগ নিয়ে চুলের আগাটা ভিজিয়ে নিলো সে তারপর তোয়ালে পেঁচিয়ে বের ও হলো।

তটিনি এবার বের হয়েছে অনেকটা শান্তিতে।নাস্তা বানাতে নাকি আরও কিছু সময় লাগবে তাই সে বাগানের দিকে গেলো ঘুরে আসতে।এরই মধ্যে বাপ্পি ও উঠে গেছে।কাল যে টি-শার্ট পরে ঘুমিয়েছিল এখনও সেটাই আছে শুধু মুখ ধুয়ে সে বেরিয়ে গেলো।বুয়ার ডাক পড়লো নাস্তা রেডি হয়েছে তাই বাগান থেকে চলে আসলো তটিনি।ডাইনিংয়ে এসে বসতেই ওর পাশে বাপ্পি ও বসে।তটিনি প্লেট ঠিক করতে করতে বাপ্পির চুলের দিকে তাকায়।তারপর মুচকি হাসলো।আজ বাপ্পিকে সে ফাঁসিয়ে দিবে।দাঁত কেলিয়ে ও উঁচু গলায় বলে,’একি আপনি গোসল করেন নাই?😱’

‘নাহ।কেন করবো?’

এই কথা শুনে ওখানে থাকা সবাই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো বাপ্পির দিকে।বাপ্পি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।বকুল আপু ওর কান টেনে ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বললেন,’যা গোসল করে আয়।বেয়াদব!’

‘গোসল কেন করবো বুঝতেছিনা আমি”

‘তুই যা গোসল কর তারপর বোঝাবো তোকে’

‘আমার ইচ্ছে করছেনা এখন!কেমন শীত পড়েছে দেখছো?’

‘তো শীতকালে বিয়ে করেছিস কেন রে উজবুক??লাজলজ্জা সব খাইছে আবার বলে গোসল করবেনা।যা গোসল করতে নাহয় মার খাবি’

তটিনি খিকখিক করে হেসে চলেছে।বাপ্পি ওর হাসির মানে বুঝলোনা তাও জোরপূর্বক গোসলে চলে গেলো।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here