তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২২

0
204

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ নামাজ পড়ে আসার সময় দেখে তার সাথের একজন যাত্রী যিনি কিনা একজন বৃদ্ধ মানুষ,তিনি সিজদাহ দিয়ে বসার পর আর উঠতে পারছিলেন না কিছুতেই।এদিকে বাসের কন্ডাক্টর চিল্লাফাল্লা শুরু করে দিয়েছে বাস ছাড়বে বলে।রিনির ভয় হলো আসিফকে নিয়ে।এতক্ষণ সময় লাগার তো কথা না,তাই ব্যাগ সব নিয়ে সে একাই বের হয়ে গেলো বাস থেকে। তারপর হাঁটা ধরলো আসিফকে খুঁজতে।রিনি বেরিয়ে যাবার পরেই আসিফ ঐ বৃদ্ধকে নিয়ে বাসে উঠেছে।সে উঠতেই ড্রাইভার জানায় রিনি ওকে খুঁজতে বেরিয়ে গেছে।আসিফ পড়লো মহাবিপদে।এসব শুনে সে আর বাসে দাঁড়িয়ে থাকেনি।নেমে গেছে রিনিকে খুঁজতে।

রিনি কুমিল্লা বিশ্বরোড ধরে হাঁটা ধরেছে যতদূর যাইতে পারে। অনেকদূর আসার পর ত্তার মনে পড়লো আসিফ তো হোটেলের পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে গেছিলো তাহলে সে এদিকে আসছে কেন?এই ভেবে কপালে ঠাস করে চড় একটা বসিয়ে সে উল্টো পথে হাঁটা ধরলো আবার।
রিনির গায়ে ছিল সাধারন একটা থ্রি পিস।ঐ রোডে বড় বড় গাড়ী চলাচল করছিল বলে বাতাসের তোড়ে থাকা যাচ্ছিল না।রিনি একবার ওড়না ঠিক করে আবার ব্যাগ ধরে।রাস্তার কিছু বখাটে ছেলে রিনিকে খেয়াল করে ওর পথ রোধ করে দাঁড়ালো হঠাৎ।

‘কি গো কচি খুকি!কোথায় যাচ্ছো?’

রিনি থেমে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’কি কইছেন?কচি খুকি?আঁরে দেই আন্নের কচি খুকি লাগে হাঁচা??’
[কি বললেন?কচি খুকি?আমাকে দেখে আপনার কচি খুকি লাগে?সত্যি?]

ছেলেরা তিনজনেই অবাক হয়ে রিনির দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়েদের টিজ করে কচি খুকি বললে জ্বলে আগুন হয়ে বলে বেয়াদব কোথাকার।আর এই মেয়ে দেখি খুশিতে লাল হয়ে গেছে।
ছেলেটা এবার একটু এগিয়ে রিনির ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বললো,’খুকি তোমার ঠোঁটটা অনেক সুন্দর’

রিনি তখন দাঁত বের করে বললো,’বেনে কদুর তরকারি খাই আইছি।চান চাই আটকি রইছেনি?খচখচ করতাছে”
[সকালে লাউয়ের তরকারি খেয়ে এসেছি।দেখুন তো আটকে আছে কিনা?খচখচ করতেছে🐸]

ছেলেটা একটু পিছিয়ে বললো,’মেয়েটা বড়ই খাচ্চোর প্রকৃতির’

অন্য ছেলেটা রিনির হাত খপ করে ধরে বললো,’ঐখানে চলো।ঐখানে সুন্দর একটা জায়গা আছে,তোমায় ঘুরিয়ে দেখাবো’

রিনি দাঁত কেলিয়ে ব্যাগ সব গুলে ঐ ছেলের হাতে ধরিয়ে বললো,”আডেন যাই।আঁর জামাই তো ঘুরাইতোনো।আন্নে গো লগেই ঘুরিয়াম’
[চলেন যাই।আমার জামাই তো ঘুরাবেনা।আপনাদের সাথেই ঘুরবো]

ছেলেগুলো বলদের মতন রিনিকে সাথে নিয়ে চললো।হাঁটতে হাঁটতে সেই ছেলেটা রিনির দিকে তাকাতেই রিনি বলে উঠে,’চান না কদু লাগি রইছেনি দাঁতে,হিহি’
[দেখুন না লাউ লেগে আছে কিনা দাঁতে।হিহি]

ছেলেটা আবারও সরে দাঁড়ায়।বিষয়টা বিরক্তিকর!! ঐদিকে যে ছেলেটা রিনির হাত ধরেছিল সে ব্যাগ টানতে গিয়ে হাঁপিয়ে গেছে।ব্যাগগুলো এত ভারী!
———
বাপ্পির পা সম্পূর্ণ ভাল হয়ে গেছে যার কারণে তারা এখন কক্সবাজার যাবার জন্য তৈরি হবে।
তটিনি তার বাবাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো আগেই,হাতে বেশি সময় নেই।বাপ্পি নাকি নিজে ড্রাইভ করবে,ব্যাপারটা অনেক সুন্দর হবে তা বোঝাই গেলো।
তটিনির মন খারাপ,কারণ কাল রাতে খেতে বসে বাপ্পির আম্মু ওকে আরও এক ধাপ ঝাড়ি দিয়েছেন কলার খোসা নিয়ে।তটিনি শুধু রাগে কটমট করতে করতে বাপ্পির চেহারা দেখছিল।
বাপ্পি তটিনিকে নেয়ার আগেই গাড়ী নিয়ে একবার বের হয়েছিল।কি কারণে বের হয়েছিল তা তটিনি কিংবা বাড়ির কেউই জানেনা।প্রায় আধা ঘন্টা-পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর সে গাড়ী নিয়ে এসে তটিনিকে বের হতে বলে।
জাকির কাকা ব্যাগপত্র সব গাড়ীতে তুলে দিয়ে গেছেন।তটিনি গিয়ে বাপ্পির সাথে না বসে পেছনের সাইডে বসলো। সে বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে।
বাড়ির এরিয়া ছাড়িয়ে যাবার পর বাপ্পি তার কাছে থাকা ব্যাগটা তটিনির কাছে দিয়ে মেইন রোডে গাড়ী ওঠালো।তটিনি ব্যাগটা হাতে নিয়ে দেখছে।ব্যাগ দেখে মনে হয় এটা তার জন্য গিফট।হুট করে তটিনির মনে পড়ে গেলো কয়েক বছর আগে আসিফের সাথে রাগ করায় আসিফ তাকে এক গুচ্ছ পদ্মফুল এনে হাতে দিয়েছিল।দুটো মানুষের মধ্যে কত তফাৎ!
কেউ ফুল দেয় আর কেউ দামী গিফট!!
কথাটা শেষ না করতেই ব্যাগ হাতিয়ে তটিনি অনেকগুলো লাল গোলাপ খুঁজে পেলো।বাপ্পি ও তাকে ফুলই দিয়েছে।এর জায়গায় দামী গিফট হলে হয়ত সে খুশি হতোনা।কিন্তু ফুল পেয়ে এখন তার খুশিই আর ধরছেনা কোথাও।
বাপ্পি লুকিং গ্লাসে তটিনির ঠোঁটে মিষ্টি হাসি দেখে স্বস্তি পেলো।খুশিতে গাড়ীর স্পীড বাড়িয়ে দিলো সে।তটিনি ফুলগুলো ব্যাগ থেকে বের করে হাত দিয়ে ছুঁয়ে ছুয়েঁ দেখছে।তারপর হঠাৎ বাপ্পির উপর রাগের কথা মনে আশায় গালটা আবার ফুলিয়ে ফেলে সে।
———-
ছেলেগুলো রিনিকে একটা নির্জন জায়গার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক ঐ সময় আসিফ এসে থামলো ওদের সামনে।রিনি ওকে দেখে খুশি ওর কাছে এসে বললো,”জানেননি আন্নেরে কত টোগাইছি!কোনাই আছিলেন?’
[জানেন আপনাকে কত খুঁজেছি।কোথায় ছিলেন?]

‘আগে বল তুই আমাকে না বলে বাস থেকে একা একা নেমে গেছোস কেন?একা ঘুরার অনেক শখ না তোর?’

ছেলেগুলা ব্যাগ রেখে উধাও হয়ে গেছে।রিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখে বললো,”দুলাভাইরা বেকে কুনমি গেছে, আঁরে বলে ঘুরাইতে লই যাইবো।অন হেতারা কোনাই’
[দুলাভাইরা সবাই কোনদিকে গেছে?আমাকে নাকি ঘুরাইতে নিয়ে যাবে।এখন তারা কোথায়? ]

‘এই সন্ধার সময় কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে ঘুরাইতে নিয়ে যায়?ইজ্জতের দাম নাই তোর?’

রিনি কপাল কুঁচকে বলো,’তাহলে আন্নে আঁরে কোনাই নেন কন চাই।আন্নেও কি আঁর ইজ্জত লই যাইবেন?তবে হুনি রাখেন, আন্নের লাই আর ইজ্জত ফ্রি ফ্রি ফ্রি😌!!’

আসিফ রিনির কান টেনে ধরে রাস্তার অন্যপাশে নিয়ে আসলো।ঢাকাগামী একটা বাস ধরতে হবে, আগেরটা ওদের জন্য ওয়েট করতে করতে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে।
রিনি আসিফের হাতটা জড়িয়ে ধরে রাখলো হঠাৎ করে।
——-
তটিনির রাগ যায়নি বলে বাপ্পি আরেকটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো ওর হাতে।মানে সে শুধু একটা ব্যাগ কিনেনি।অনেকগুলো কিনেছে।এই ব্যাগে ছিল একটা শাড়ী,তাতে আবার আবদার করা একটা চিঠি।যাতে লেখা আছে যে দিনটাতে বাপ্পির প্রতি তটিনি মুগ্ধ হবে ঠিক সেদিনটায় যেন গায়ে এই শাড়ীটা পরে।’

তটিনি শাড়ীতে হাত বুলিয়ে ব্যাগটা এক পাশে রেখে দেয়।বাপ্পি গান চালু করে এবার গতি কমিয়ে দিয়েছে গাড়ীর।গানটা ছিল’Tuhi e mujko bata de’

গানের সাথে সাথে সেও গলা মিলাচ্ছিল।আর তটিনি জানালার সাথে মাথা লাগিয়ে বাইরের অন্ধকার রাস্তাটার দিকে বিনাকারণেই তাকিয়ে ছিল।গানটা উপভোগ করার জন্য জানালা নামিয়ে নিল সে।সাথে সাথে ঠাণ্ডা হাওয়া সব এসে গায়ে লাগতে লাগলো।তটিনির চুল উড়ছে তাতে।শীত ও লেগে উঠলো তাও সে জানালা ওভাবেই খোলা রেখে দিয়েছে।তটিনি এক কোণায় চলে যাওয়ায় লুকিং গ্লাসে আর তটিনিকে দেখা যাচ্ছিল না।
তটিনিকে না দেখতে পেয়ে বাপ্পির ভাল লাগা বন্ধ হয়ে গেছে।তাই সে সুইচ ক্লিক করে কারের সবগুলা জানালা অটো বন্ধ করে দিলো।জানালা বন্ধ হয়ে গেছে দেখে তটিনি জানালা খোলার বৃথা চেষ্টা করেও পার পায়নি বলে আবার আগের জায়গায় এসে বলে,’জানালা বন্ধ হলো কেন বুঝলাম না’

‘জানালার সাথে ঝগড়া করেছো কিনা ভেবে দেখো’

‘আপনি জানালা বন্ধ করেননি তো?’

‘ওটা তো আমার পাশের জানালা না।আমি কিভাবে বন্ধ করবো?’

‘সেটাই তো কথা।কত ভাল বাতাস খাচ্ছিলাম।সুখ সহ্য হয়না কারোর!

তটিনি মুখ বাঁকিয়ে সেই ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো,অন্ধকার চারিদিক,কেবল কারের ভেতর অরেঞ্জ লাইটের আলো,সামনে সদ্য বিয়ে করা স্বামী ড্রাইভ করছে আর পেছনে সে বসে বসে আজগুবি চিন্তায় মত্ত।
ভেতরে রোমান্টিক অনুভূতিটা তটিনি মনে করেও দূরে ঠেলে দিলেও বাপ্পি ঠিকই অনুভব করে নিয়েছে।কিছুদূর গিয়ে সে কার থামালো।তটিনি জানতে চাইলো কি কারণে থামিয়েছে।বাপ্পি ছোট্ট করে একটা হাসি দিয়ে বলে গেলো’কফি’

তটিনি কফির কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে কার থেকে নেমে বললো,’আমি কফি খাইনা।আমার জন্য চা আনবেন”

বাপ্পি কিছুদূর গিয়ে হোটেল থেকে চায়ের ওয়ানটাইম কাপ এনে তটিনির হাতে দিয়ে কারের ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে পেছনের সিটের দরজা লক করে আবার তটিনির পাশে এসে দাঁড়ালো।
চা খেয়ে তটিনি যখন দরজা টানলো তখন আর খুলতে পারলোনা।কি আজব!এই গাড়ীটা তার সাথে শত্রুতা শুরু করলো কেন!বাধ্য হয়ে সে বাপ্পির পাশেই বসেছে এবার।
বাপ্পির খুশি আর ধরে কই।
তটিনি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো এই সিট দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসবে।তাই করার জন্য সে উঠে বসে পেছনের সিটের দিকে যাওয়া ধরতেই বাপ্পি তার বাম হাত দিয়ে ওর পথ রোধ করে ফেললো।

‘এটা কি?আমি পেছনে যাব’

‘না যাবেনা’

‘কেন?’

‘আমার সাথে বসতে বলেছি,বসবা।এমন ব্যবহার করতেছো যেন আমি এক অপরিচিত মানুষ”

“সেটা বললেও কম হবে আপনাকে।এখন অবধি আমি চিনতেই পারিনি’

‘একসাথে বসলে মরে যাবানা।চুপচাপ বসো’

‘আমি বসবোনা’

এই বলে তটিনি জোরাজুরি করে বসতে চাইলে কিন্তু বাপ্পির এক হাতের শক্তির সাথে পেরে উঠলোনা সে।তাই আবার আগেরমতন বসে গাল ফুলিয়ে রাখলো।বাপ্পি হাতটা ঐরকমই রেখে ড্রাইভ করছে।

‘আমি আপনার পাশে বসলে কি হয় আপনার?’

‘মনে মনে ভাল লাগা কাজ করে,শক্তি পাই যেটা কিনা রাতের মধ্যে ড্রাইভ করতে হেল্প করবে।ও তুমি বুঝবেনা।তোমার তো ফিলিংস সব আসিফকে নিয়ে।বাপ্পিকে নিয়ে ভাবতে তোমার নিজেই নিজের মনকে ট্যক্স দিতে হয় মনে হয়।সেই ট্যাক্স দেয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছ রীতিমত।মনে রেখো খুব জলদি মামলা খাইবা’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here