তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২৮

0
186

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
‘শুন,আমার কাল থেকে এক মাস ব্যাপী ফাইনাল পরীক্ষা চলবে।তুই আজ থেকে ঐশীর রুমে ঘুমাবি।যা এখন,তুই থাকলে পড়ালেখায় মন বসবেনা আমার’

রিনি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আসিফের লেকচার শুনলো।এরপর আসিফ ওর হাতে বালিশ ধরিয়ে দিতেই ঘোর থেকে বেরিয়ে সে বললো,’আঁই তো আন্নেরে কিছু কইত্তাম ন।টুকুস করি হুতি থাইক্কাম এক পাশে।এককানাও জ্বালাতাম ন।’

আসিফ জোর করেও রিনিকে রুম থেকে বের করতে পারে নাই।সে পারতো সোফায় গিয়ে বসতে কিন্তু ওখানে তার পড়ায় মন বসবেনা।তাই রিনির সাথে আর জোরাজুরি না করে বই নিয়ে টেবিলের কাছে বসে পড়া শুরু করে সে।রিনি ও গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।শুয়ে শুয়ে মাথার উপরের ফ্যানটা দেখছে।শীতকাল বলে বন্ধ আছে সেটা।বেশ ধুলাবালি জমা।ছেলেরা নিজের রুমের প্রতি অপরিষ্কার হয় এটা রিনি জানে।কারণ তার বাড়িতেও তার ভাই আছে।ঐ গাধাটাও রুমের বেহাল দশা করে রাখে।অনেকক্ষণ ফ্যানটা দেখা শেষে রিনি ভাবলো সে ফ্যানটা মুছবে।কারণ সেটাতে এত বেশি ধুলা জমে ছিল মনে হয় এই বুঝি খুলে মুখের উপর পপড়বে ময়লাগুলো।বিছানা থেকে নেমে রিনি বাইরে থেকে একটা নেকড়া আর টুল নিয়ে এসে হাজির।আসিফ তখনও জানেনা রিনি কি কার্যকলাপ করছে।
সে টুলে উঠে ফ্যানটা মুছতেছিল স্বাভাবিক ভাবেই।আসিফ বই রেখে পানির বোতল নেয়ার জন্য পেছনে ফিরতেই দেখে রিনি ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে ফ্যান মুছতেছে।নাকে রুমাল বাঁধা।

‘একি!এইসব কি করছিস তুই?’

‘জীবনে তো করেননা।আঁই করমুনা তো কে কইরবো?’

‘তাই বলে এইসময়ে?নাম বলছি!খাটের উপর কেউ টুল রাখে?পড়বি তো!নাম!’

আসিফের ধমকে রিনির ভয় লাগলো,যার কারণে তার পা কাঁপছে সাথে টুলটাও।কাঁপতে কাঁপতে এক সময়ে সে টুল সমেত নিচে পড়ে গেলো দুম করে।পড়ে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো ‘এইন্না নি করে মানুষ?বউ হড়ি গেছে,এককানা ধরতে হারেননো?সিনামাত নায়কেরা যেমনে করে ধরে ওরকম করে ধরতে হারেন ন?’
[এমন করে মানুষ?বউ পড়ে গেছে,একটু ধরতে পারলেন না?সিনামায় নায়কেরা যেভাবে ধরে সেরকম করে ধরতে পারেন না?]

‘তোর আর আমার প্রেম চলে যে আমি তোরে ধরমু?’

‘বিয়া তো হইছে তাই না?’

ওমনি কারেন্ট চলে গেলো।আসিফ রুম থেকে দেয়ালে হাত রেখে রেখে বের হয়ে যায় মোমবাতি আনতে।রাত দুইটা বাজে বলে সকলে ঘুমায়।কারোর মোমবাতির প্রয়োজন নেই।কিন্তু আসিফ তো পড়বে তাই সে মোমবাতির খোঁজে বেরিয়েছে।
মোমবাতিটা ধরিয়ে পেছনে ফিরতেই রিনির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যায় আসিফের।অন্ধকারে মোমবাতির আলোয় ওকে আচমকা দেখে আসিফ প্রথমে ভয় পেয়ে গেছিলো।পরে দম ফেলে বলে,’তুই না পড়ে মাথায় চোট পেয়েছিস?তো এখানে কি করিস?’

‘মনে কইচ্ছি আন্নে হত্তে হত্তে ডরাইবেন।তাই আন্নেরে সাহস দেনের লাই আঁই চলি আইছি🐸’
[ভাবছি আপনি একা একা ভয় পাবেন তাই আপনাকে সাহস দেয়ার জন্য আমি চলে এসেছি ]

‘ আমি ডরাই?নাকি তুই ডরাস!’

আসিফ পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরে।রিনিও ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,’এত শীত! আইয়েন না ঘুমাই।’

‘তোর ঘুম আসলে ঘুমা।আমি সারারাত জেগে পড়বো’

‘আন্নেরে ছাড়া আঁর ঘুম আইতোনো’
——–
বাপ্পি উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছিল।তটিনি দূরে বারান্দায় বসে তার বেস্ট ফ্রেন্ড কাশপিয়ার সাথে কথা বলছে।তার মনে যে ইচ্ছা ঘুরপাক খাচ্ছিল তারই সলুশান সে কাশপিয়ার কাছে চাইছে।
সে কাশপিয়াকে জানায় বাপ্পির পিঠটা দেখে তার কেমন কেমন যেন লাগছে।আসিফের বেলায় ও এমন হতো।কিন্তু বাপ্পির বেলায় বেশি হচ্ছে।মন চাইছে ওরে জড়িয়ে ধরতে।
কাশপিয়া শুরুতে অট্টহাসিতে লুটিয়ে পড়ে এরপর হাসি থামিয়ে বলে এটাই স্বভাবিক।স্বামীর প্রতি স্ত্রীরই তো আকর্ষণ বাড়বে।এটাতে ভয় পাবার কি আছে।

‘ভয় পাবো না?আমি তো ওনাকে ভালবাসিনা’

‘না বাসলে ভাইয়ার প্রতি এত টান লাগছে কেন তোর?’

‘তাও কথা।কিন্তু বিশ্বাস কর।আসিফ ভাইয়ার প্রতি এরকম ফিলিংস কাজ করলেও কখনও এতটা গাঢ় হয়নি সেটা’

‘হয়নি কারণ আসিফ ভাই তোর হাসবেন্ড ছিল না’

তটিমি মাথায় হাত দিয়ে বললো,’কথা সেটা না!আমার কেন!!’

এই বলে সে পেছনে ফিরতেই বাপ্পির সাথে লেগে গেলো।বাপ্পি মাথা নিচু করে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তটিনি ফোনটা কান থেকে নিচে নামিয়ে হ্যাং হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাপ্পি ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলো ওমনি।কাশপিয়া বলছে’শুন।তুই আর ইতিউতি না ভেবে ভাইয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধর।বাকিসব ভাইয়াই করবে।আর পিঠ দেখিস না।এটা লজ্জাজনক,ভাইয়া তোকে উজবুকও ভাবতে পারে। সামনে আপেল কেটে রাখা আর তুই আপেলের খোসা ঘন্টার পর ঘন্টা দেখবি।এটা আপেলের কেমন লাগবে?’

বাপ্পি বললো,’আপেলের খুব খারাপ লাগবে’

এটা বলে সে ফোন রাখে।
তটিনি ঢোক গিলছে।কাশপিয়া কি বলেছে কে জানে।সে ভয়ে ভয়ে পিছোচ্ছিল।তখনই বাপ্পি তার হাতটা ধরে টান দিয়ে সামনে নিয়প এসে বলে,’তোমার বান্ধবী বলে কাটা আপেলের খোসা না দেখে আপেলটা খেয়ে নিতে নাহলে আপেলের খারাপ লাগবে।এবার বলো কি করবে তুমি?বলছে তুমি না পারলে যেন আমিই করি’

তটিনি আবারও ঢোক গিলে হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বাপ্পি ছাড়ার মতন না।সে আরও শক্ত করে ধরেছে ওকে।
——
আসিফ পড়তে পড়তেই টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছিলো।রিনি ওর গায়ে চাদরটা পরিয়ে দিয়ে ওর সামনে বরাবর চেয়ারে এসে বসে।আসিফ না ঘুমানো পর্যন্ত সে আসিফের মুখের দিকে মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে থাকতে পারেনা।আসিফ হাজারটা কথা বলে।যেন মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটাই অপরাধ।
এখন দেখো!কেউ কিছু বলছেনা।কি শান্তি চারিদিকে।মনমত আসিফকে দেখতে পারছে সে।তটিনি পছন্দ আছে!এত সুন্দর ছেলে দেখলে পাগল হবারই কথা।অবশ্য ওনার স্বামী ও কম না!বরং বেশিই সুন্দর!হয়ে যাবে!একদিন না একদিন তাদের ও প্রেম হয়ে যাবে।শুরুতে এরকম অপছন্দ থাকেই!মানিয়ে নিতে কতক্ষণ! এই বেডাও তাকে একদিন ঠিক মেনে নেবে।
——–
তটিনি কিছু বলছেনা দেখে বাপ্পি ওর হাত ধরে রুমে নিয়ে আসে,এরপর বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আবারও জানতে চায় সে কিছু বলবে কিনা।

‘নাহ!কিছু বলার নেই আমার’

বাপ্পি আজ আর আচ্ছা বলে কথা শেষ করেনি।বরং এক টান দিয়ে তটিনিকে বসা থেকে আবার উঠে দাঁড় করিয়ে বলে,’জড়িয়ে ধরো দেখি।কেমন ধরতে পারো’

‘আআআআআমি কেন ধরবো?কিসের প্রয়োজন?’

‘প্রয়োজন আছে, আগে ধরো তারপর বলছি।আসিফকে যেভাবে ধরতে সেভাবে না কিন্তু’

‘তো কিভাবে?’

‘আমি শিখিয়ে দিচ্ছি’

বাপ্পি তটিনির একটা হাত নিজের গলার সাথে লাগিয়ে ধরলো আরেকটা বাপ্পির কোমড়ে এরপর তাকে মাথা ঠেকাতে বললো বাপ্পির বুকে।
তটিনি সেরকমই করেছে।বাপ্পি মুচকি হেসে বলে,’কিরকম লাগছে?’

‘অদ্ভুত!’

‘আসিফকে ধরলে কেমন লাগতো?’

‘মনে নাই।তবে আপনাকে ধরে মনে হচ্ছে এর আগেও ধরেছি’

‘সব বুঝে গেলাম’

‘কি বুঝে গেলেন?’

‘বুঝলাম এই যে তুমি আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো।আসিফের প্রতি যে ফিলিংস ছিল তোমার সেটা আসলে আবেগ ছিল।যদি সত্যি সেটা খুব গভীর প্রেম হতো তবে এত জলদি তুমি এই অবধি পৌঁছাতে পারতেনা।প্রাউড অফ ইউ!’

তটিনি বাপ্পিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,’মজা করছেন?জড়িয়ে ধরা নিয়ে এতকিছু বলার কোনে লজিক নাই।আমাকে বোকা বানাচ্ছেন কেন!’

‘অবশ্যই আছে আর তা হলে আসিফের সাথে তুমি সেইসব করতেনা যেটা আমার সাথে করতেছো।তার মানে আমি জিতে গেছি আর তুমি হেরে গেছো।’
——
রিনি আসিফকে দেখতে দেখতেই টেবিলে ঘুমিয়ে পড়েছিল।এরপর যখন সে চোখ খুললো তখন নিজেকে পেলো বিছানায়।তাও কম্বল মুড়ি দেয়া।তার মানে কি হয়েছে বুঝতে পারছেন?
রিনি এক চিৎকার করে উঠে বসে বলে,’আঁর জামাই আঁরে রাইত কোলে করি টেবিলের তন উডাই খাটে লই আইনছে!কুনমি যাইতাম খুশিতে’😇
[আমার জামাই আমায় রাত কোলে করে টেবিলের থেকে উঠিয়ে খাটে নিয়ে এসেছে।কোথায় যাবো খুশিতে!]

আসিফ তখন গোসল করে বের হয়েছিল ওয়াশরুম থেকে।রিনিকে বকবক করতে দেখে সে বললো,’এ্যাহ!ভাল করে মনে করে দেখ!রাতে মশার কামড়ে ধরাম করে টেবিলের থেকে মাথা নিয়ে নিচে পড়ে গেছিলি।পরে আমিও জেগে গিয়ে তোকে ধমক দিছিলাম এরপর নিজে নিজে গিয়ে বিছানায় শুয়েছিস।আমার বয়ে গেছে তোকে কোলে করে বিছানায় দিয়ে আসার।এত খুশির কিছু নাই’

রিনি মনে করার চেষ্টা চালাচ্ছে আসলেই কি এইসব ঘটেছিল!অনেক ভেবে তার আবার মনে আসলো কালকে রাতের ঘটনা।সে ঘুমে থেকে টেবিলের উপর থেকে হাত পিছলে চেয়ার থেকে পড়ে গেছিলো নিচে। এরপর মেঝেতেই ঘুমিয়ে পড়ে।পরে আসিফ তাকে কোলে তুলে বিছানায় এনে রাখে এরপর বলে,’বাচ্চা একটা মেয়ে’!

‘এই আঁর মনে আইছে।আন্নে কইছেন বাচ্চা একটা মেয়ে!!’

আসিফ ততক্ষণে পগারপার।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here