তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২৭

0
183

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৭
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি যেভাবে আগলে রাখে তাতে করে একটা অপরিচিত মেয়েও এক দেখায় প্রেমে পড়ে যাবে সেখানে তটিনি পড়লোনা?কেন পড়লোনা?
এটা বাপ্পি ভাবেনা।ভাবে শুধু তটিনি।সুদর্শন,দায়িত্ববান পুরুষ একটা নারীর স্বপ্ন।অথচ তটিনির কাছে সেই স্বপ্ন সত্যি হবার আনন্দ জাগেনা মনে।বারবার মনে হয় সেই আসিফকেই পেলে হয়ত খুব ভাল হতো।আফসোস থাকতোনা।কিন্তু আসিফ তাকে এই কেয়ার কখনই দিতে পারতোনা যেটা বাপ্পি তাকে দিচ্ছে।তাহলে কোনটা ভাল হলো?
বাপ্পি বালিতে বসে ভেজা বালিতে তার নাম আর তটিনির নাম লিখে ছবি তুলছে তাড়াহুড়া করে।তার নাম লেখার পর তটিনির নাম লেখার আগেই ঢেউ এসে সব মুছে দেয়।তাও সে বিরক্ত হয়না।বারবার লিখে যাচ্ছে আর ঢেউ এসে মুছে দিচ্ছে।
তটিনি ওর ধৈর্য্য দেখে অবাক হয়ে বসে আছে।শেষ পর্যন্ত সে পুরোটা করতে পেরেছে ঢেউ আসার আগেই।করতে পেরে লাফ দিয়ে অনেকদূর দৌড়ে যেতে যেতে বললো,’আজকের কভার পিক হয়ে গেলো!’

তটিনির মুখে অজান্তেই হাসি এসে গেলো।সেও মনে মনে চাইছিল বাপ্পির এত কষ্টের যেন একটা ভাল ফল হয়।

বাপ্পি দৌড়ে অনেকদূর গিয়ে আবার ফেরত চলে আসে তটিনির কাছে।এসে ওর পাশে বসে ছবিটা আপলোড করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।তটিনি ভাবছিল এই মূহুর্তে আসিফ থাকলে সে আসিফের হাত ধরে ভেজা বালি স্পর্শ করে যতদূর মন চাইতো চলে যেতো।হঠাৎ নিজের হাত টানা অনুভব করে ঘোর থেকে বেরিয়ে দেখে বাপ্পি ওকে টানছে ভেজা বালিতে হাঁটার জন্য।
তটিনি রোবটের মতন ওর সাথে হাঁটা ধরলো উঠে দাঁড়িয়ে।কেন বাপ্লি তাকে এত ভালবাসছে!সে তো এর যোগ্য না!
তটিনিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাপ্পি জানতে চাইলো সে কিছু বলবে কিনা।

‘আচ্ছা আমি যদি বলি আসিফ ভাইয়ার কাছে ফিরে যেতে চাই।আপনার উত্তর কি হবে?’

‘পারবেনা’

‘কেনো?যদি পারি?’

‘পারবেনা কারণ তুমি আমাতে মিশে গেছো।হয়ত অতীতের স্মৃতি তোমায় টানছে কিন্তু দিনশেষে তুমি আমার মধ্যেই বাস করো।তোমার অস্তিত্ব আমাতে।বুঝেছো?’

‘না বুঝিনি।যেভাবে বললেন যেন আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি’

‘প্রেমে পড়লেই কি কাছে থাকতে ইচ্ছে হয়?একটা মানুষের প্রতি টান,তার সাথে বৈধ সম্পর্ক থাকলেও ঐ মানুষটাকে ছাড়া যায়না সহজে।যেখানে আসিফ তোমার কেউ ছিলনা সেখানে আমি তোমার স্বামী।এর চাইতে বড় সম্পর্ক আর কি হতে পারে তটিনি?নিজেকে প্রশ্ন করো!আদৌ তুমি আমাকে ফেলে আসিফের কাছে গিয়ে শান্তি পাবে কিনা।আসিফ ও কিন্তু রিনির স্বামী।সে একা নয়।তুমি চাইলেও তার আর রিনির সম্পর্ক অস্বীকার করতে পারোনা।আমি তোমাকে যেতে দেবোনা কারণ তুমি গেলে রিনির মতন একটা মেয়ের সংসার ভাঙবে।আসিফ হয়ত তোমার অবস্থা দেখে রিনিকে ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু আমি তোমায় ছাড়বোনা।’

তটিবি বাপ্পির হাতটা ছাড়িয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে বললো,’আমার বয়ে গেছে আরেকজনের স্বামীর কাছে গিয়ে বলতে,’ প্লিজ আমায় বিয়ে করো।আমি এমনি ভাবছিলাম এসব।ভাবতে তো ক্ষতি নেই’

‘ভাবলেই ক্ষতি।আজব!এইসব কেনোই বা ভাববে তুমি?’

তটিনি আর কিছু বলেনা।
চুপচাপ হাঁটতে থাকে।হাঁটার গতিটাও কমিয়ে দিয়েছে।সে চায় বাপ্পির পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলতে।

হাওয়ায় তটিনির শাড়ীর আঁচল ভাসছিল।বাপ্পি ও নিরবই আছে তবে নিরব হয়ে সে ঐ উড়ন্ত আঁচলটা দেখতে মত্ত ছিল।দুজনে আর কথা বলেনি।হেঁটে অনেকটা পথ চলে এসেছে যেখানে একটা কাকপক্ষী ও ছিলনা।এখন তারা যে আবার হেঁটে ফিরবে সেটাও সম্ভব না।কারণ হাঁটাই হয়েছে এক ঘন্টার উপরে।আবার হেঁটে ফেরার মতন শক্তি দুজনের গায়েই নেই।বাপ্পি রোডে এসে একটা গাড়ীর অপেক্ষা করছিল,হোটেল অবধি পৌঁছানোর জন্য।তটিনি বাপ্পির পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে।আগে আসিফের পিঠ দেখলে তার মন চাইতো গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।আসিফকে দেখলেই ওর জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা কাজ করতো।কিন্তু বাবার ভয়ে সে কখনওই এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারে নাই।আর আজ বাপ্পির পিঠ দেখে তার একই ইচ্ছা কাজ করছে।তফাত হলো আসিফ তার কেউ ছিল না।আর বাপ্পি তার স্বামী।সে যদি এখন এই জায়গায় বাপ্পির পিঠ জড়িয়েও ধরে একটা মানুষ ও এসে তাকে বাধা দেবেনা,এমনকি বাপ্পিও না।কিন্তু সে কেন ধরবে!মানুষটাকে তো সে পছন্দই করেনা।
বাপ্পি পেছনে তাকাতেই দেখে তটিনি ওর পিঠ নিয়ে গবেষনা করছে।ওর পেছনে এসে একেবারে আর একটুর জন্য গায়ে লেগে পড়েনি।চোখ বড় বড় করে বাপ্পির গায়ের টিশার্টের পিঠের অংশে লেখা Don’t follow me তে নজর দিচ্ছে।বাপ্পি ওমনি ওর দিকে ফিরে বলে,’এত কি দেখছো?পিঠে কিছু লেগে আছে আমার?’

‘আপনাকে কখনও কেউ জড়িয়ে ধরেছে?’

‘অনেকেই ধরেছে’

‘মেয়ে?’

‘উমমমম ভাবতে হবে।হ্যাঁ ধরেছিল।ক্লাস টেনে থাকতে র‍্যাগ ডের দিন একটা মেয়ে পিঠে নাম লিখে জড়িয়ে ধরেছিল,সেটা অবশ্য আমার ইচ্ছেতে না।আমি জানতাম ও না সে যে আমায় ধরবে,আকস্মিক ছিল”

তটিনি চিন্তিত হয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,’তাহলে কি সে পিঠ জড়িয়ে ধরেছিল?’

‘পিঠ কেন ধরবে?হাত জড়িয়ে ধরেছিল’

‘ওহ।’

এটা বলে তটিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।বাপ্পি পালটা জিজ্ঞেস করে সে কেন এটা জানতে চাইছে।
তটিনি আবারও চুপ হয়ে যায়, কিছু বলেনা।মূলত সে অপেক্ষা করছিল কখন বাপ্পি মুখ ঘুরিয়েনদাঁড়াবে আর সে পেছনে ওর পিঠ দেখবে।কথামতন বাপ্পি আবারও ঘুরে দাঁড়ায় গাড়ীর অপেক্ষায়।আর তটিনি অনেকক্ষণ ধরে দেখে পিঠটা।আসিফের পিঠ একেবারে ফ্ল্যাট ছিল।আর অপরদিকে বাপ্পির পিঠ ফুলা ফুলা।সে নাকি কখনও জিমে যায়নি।তবে এমন ফুলা ফুলা দেহ বানাইলো কি করে!
পরে মনে আসলো বাপ্পির মা তো ওরে কোলে নিয়ে ভাত খাওয়াইতো।ডিম,দুধ, কলা খাওয়াইতো তাই হয়ত এত সুন্দর শরীর বানাইছে।

তটিনির ভাবনার মাঝেই তারা একটা গাড়ী পেয়ে যায়।সে গাড়ী করেই তারা হোটেলে ফিরে আসে।
পানিতে ধপাধপি করায় বাপ্পির টি শার্টের ভেতর দিয়ে অনেকখানি বালি ঢুকে গেছে।এখন সে বালি ঢুকে খচখচ করছে অনেক সময় ধরে।তাই হোটেলের রুমে ফেরত এসেই সে ঢুকতে ঢুকতে চট করে গায়ের টিশার্ট খুলে ফেললো তটিনির সামনেই।তটিনি তখনও ওর পিঠই দেখছিল।টি শার্ট খুলে ফেলায় তার সামনে দৃশ্যমান হলো বাপ্পির উদম পিঠ।
তটিনি ঢোক গিলে আরও মনযোগ দিয়ে দেখছে।বাপ্পি টিশার্ট ফেলে পিঠ চুলকাতে গিয়ে আয়নায় চোখ রেখে দেখে তটিনি হা করে ওর পিঠ দেখছে।ওমনি সে টিশার্ট টা তুলে পিঠ ঢেকে বললো,’তোমার কি হয়েছে বলোতো?আমার পিঠ দেখছো কেন বারবার?’

‘কেন?আপনার কি তাতে কোনো সমস্যা আছে?’

‘আমি যদি তোমার পিঠের দিকে এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে থাকি তোমার কি অস্বস্তি লাগবেনা?’

‘না লাগবেনা।কারণ আমার পিঠ এত অাকর্ষণীয় না’

‘ওহ আচ্ছা, তার মানে আমার পিঠ আকর্ষনীয়?’

তটিনি থতমত খেয়ে বললো,’নাহ।ভুল।’

এটা বলে সে বিছানায় বসে টিভিটা অন করে মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করে।বাপ্পি বুঝে গেছে সবকিছু,চোখের সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেলো।সব বুঝতে পেরে সে মিটমিট করে হাসতে হাসতে গিয়ে গোসল করে আসে।
পিঠ তখনও উদমই ছিল, এসে সে তটিনির সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে মুখ মুছতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
তটিনি তখন টিভি দেখা বাদ দিয়ে বাপ্পির ভেজা পিঠ দেখছিল আবারও।
সে এখন যদি এই পিঠ জড়িয়ে ধরে বাপ্পি তাকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববেনা।বলবে এই মেয়ে পাগল!বলে আসিফের কাছে ফিরে যাবে আসলে সে জড়িয়ে ধরতে চায় বাপ্পিকে।নিজেও জানেনা তার কি চাই!
এগুলো ভেবে সে চোখ ফেরায়।চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা।তার চোখ আর মন বলছে যা তটিনি গিয়ে তোর স্বামীটাকে জড়িয়ে ধর।সম্পর্ক গড়ে যাবে সহজেই।জড়িয়ে ধরলে মনে মনে মিল ঘটে!
তটিনি এইসবই ভাবছিল সেসময় বাপ্পি এসে ওর পাশে বসে টিভি দেখতে লাগে।ওর পিঠটা এবার তটিনির এত কাছে যে বাপ্পি যে সাবান দিয়ে গোসল করেছে সেই সাবানের তীব্র গন্ধ এসে তটিনির নাকে লাগছে।
তটিনি যে ড্যাব ড্যাব করে ওর পিঠ দেখছে তা বাপ্পি বেশ ভাল বুঝতে পারে।চ্যানেল বদলাতে গিয়ে সে হুট করে বলে দিলো,’মন চাইলে জড়িয়ে ধরতে পারো।আমি কিছু মনে করবোনা’

এটা শুনে তটিনি চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,”বয়ে গেছে’

‘তবে যদি আর একবার হা করে আমার পিঠ দেখেছো, তো এবার আমি তোমায় জড়িয়ে ধরবো’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here