তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_২৯

0
180

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসলে সত্যি কথা হলো এই যে রিনি সত্যি সত্যি মেঝেতে শুয়ে পড়েছিল।আর তখন আসিফ তাকে তুলে বিছানায় নিয়ে এসে কম্বল মুড়িয়ে দেয়।
কাজটা সে কখনওই রিনির চোখ খোলা থাকতে করতে পারতোনা।সাহস এবং ইচ্ছা দুটোই গায়েব থাকতো।কিন্তু সেইসময় রিনি গভীর ঘুমে তকিয়ে ছিল বলে আসিফ সুযোগটাকে কাজে লাগায়।রিনি তখনও ভাবছিল আদৌ সবই তার মনের ভুল নাকি সত্যি এইসব কিছু ঘটেছে।অনেক ভাবনাচিন্তা করে এরপর সে উঠে চলে যায় মুখ- চোখে পানি দিতে।হয়ত ঘুমের রেশ কেটে গেলে তার সব মনে এসে যাবে।
আসিফ নাস্তা খেয়ে আর রিনির সামনে আসেনি।বই হাতে ভার্সিটির দিকে চলে গেছে।এখানে থাকলে রিনি তাকে চেপে ধরবে সত্যিটা সত্যিতে প্রমাণ করার জন্য।
——-
বাপ্পি মুখে কলম গুজে ফোন টিপছে আর কিছুক্ষণ পর পর কাগজে কিসের যেন হিসাব করছে।অর্থাৎ সে বোধহয় অফিসের কাজে ব্যস্ত। তটিনি ও আগ বাড়িয়ে কথা বলেনি।
এদিকে শুধু শুধু টিভিতে বোরিং শো গুলো দেখতে দেখতে তটিনির আর সময় কাটেনা।তার মন চাইছে অন্য কিছু।একটু ঘুরে আসবে যদিও কাল অনেক ঘোরা হয়েছিল কিন্তু কক্সবাজার কি মানুষ একদিন ঘুরতে আসে?একদিনে কি সব ঘোরা যায়?তাই ভেবেই বাপ্পিকে ঘুরতে যাবার কথা বলবে বলবে বলে ভাবছিল তটিনি।
তটিনি সচরাচর বাপ্পির দিকে তাকায়না।তাকালেও ওর মুখ বাদ দিয়ে হাত পা পিঠ এইসব তাকিয়ে দেখে।কিন্তু আজ সে সরাসরি বাপ্পির দিকে তাকিয়ে আছে।
বাপ্পি সাথে সাথেই বুঝতে পেরেছে কারণ কাজের সাথে সাথে সে তটিনির উপরও নজর রাখছিল।তটিনি ওর দিকে তাকাতেই সে বলে উঠলো,’কিছু বলবে?’

‘বলছিলাম আর কত বসে থাকবো?’

‘হাঁটো।রুম তো বেশ বড়’

‘সেটার কথা বলছিনা।বাহিরে বের হবেন না আজ?হানিমুনে এসে কেউ অফিসের কাজ করে?’

বাপ্পি মুখ থেকে কলমটা বের করে মাথা তুলে বলে,’হানিমুনে এসে হাসবেন্ড ওয়াইফ মাঝে দুই হাত দূরুত্ব রাখে?’

‘তো কি লেগে বসে থাকবো?’

‘সেটা তোমার ইচ্ছা।বিয়ের পর থেকেই তো তোমার ইচ্ছেতে সব হচ্ছে।এটাও বাদ যাবে কেন!কদিন পর শুনবে আসিফ রিনির বেবি হবে আর আমি এখনও। থাক আর নাই বলি।জীবন যুদ্ধে তোমার কারণে আমি পিছিয়ে রয়ে গেলাম’

তটিনি গাল ফুলিয়ে রাখলো তারপর ভাবলো আসলে বাপ্পি সত্যি বলেছে।সে তো আসিফকে বলেই দিয়েছে সে যেন রিনিকে ভাল বাসে, আদর যত্ন করে।তবে তো ওদের কদিন পর এই সুখবরই আসবে।!তাহলে সে কেন পারছেনা?আসিফের সাথে জেদ ধরে যখন বাপ্পিকে বিয়েই করে নিয়েছে তখন সে কেন আলাদা আলাদা থাকছে?আসিফ তো ঠিকই সব ইঞ্জয় করে চলে!’
——-
রিনি রুটি মুখে দিয়ে বারবার মনে করার চেষ্টা করছে কাল রাতের কথা।কিন্তু তার স্পষ্ট মনে পড়ছেনা।তার সিওর জানা দরকার আসিফ তাকে কোলে নিয়েছে কিনা।জানলে বিছানায় উঠে একটা নাচ দিবে!কারণ কোলে তুলা মানে অনেক অনেক কিছু।আসিফ যে ছেলে জীবনেও স্বীকার করবেনা কিন্তু এইদিকে রিনির ও স্পষ্ট কিছু মনে পড়ছিল না।এরপরে রিনি একটা প্ল্যান করে।
আসিফ বাড়ি ফিরেছে দুপুর আড়াইটার দিকে।এসে দেখে বাড়ির সকলে যে যার রুমে ভাতঘুম দিয়ে থাকলেও কেবল রিনি বাড়ির সামনের সিড়িতে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমায়।
আসিফ শুরুতে ভেবেছিল রিনি হয়ত ভান করছে।কিন্তু মানুষ হা করে তো ভান করে ঘুমায়না।তাই সে ভাবলো হয়ত সত্যি সে ঘুমায় তাই হাতের বইখাতা রেখে রিনিকে আগেরমতন কোলে তুলে হাঁটা ধরে সে।কিছুদূর যাবার পর রিনি চোখ খুলে বলে,’তার মানে কাইল রাইত আন্নে আঁরে কোলে তুলি বিছানায় আইঞ্চেন।আলহামদুলিল্লাহ! ‘

আসিফ এ কথা শুনে থেমে যায়।চেয়ে দেখে রিনি ওর গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি মুচকি হাসে।

‘তুই ঘুমাসনি?’

‘নাহ।নাটক করতাছিলাম।দেখছেন আন্নেও বুঝেন নাই।এই জন্যই আম্মা আব্বারে কইতাম আঁরে এককানা সিনামায় কাম করতো দিতো।’

আসিফ রিনিকে নামিয়ে দিয়ে রাগে কটমট করছিল।রিনি দাঁত কেলিয়ে এগিয়ে এসে আসিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,’এত দরদ লাগে আঁর লাই?’

আসিফ কিছু বলেনা।রিনি তাকে বোবা বানাই দিছে।এভাবে সে কথা বের করবে তা আসলেই সে বুঝতে পারেনি।এখন সে আরও বেশি করে জ্বালাতন করবে।রিনি আসিফকে ছাড়ছিলই না কিছুতে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখে সে নিজেও কিছু বলছেনা আসিফকেও বলতে দিচ্ছেনা।সেসময় ঐশী পানি খেতে ডাইনিংয়ের কাছে এসেছিল।এসেই এই দৃশ্য দেখে জিভ কামড়ে অন্যদিকে ফিরে যায়।
আসিফ ঐশীকে দেখে লজ্জায় লাল হয়ে রিনিকে বুক থেকে সরিয়ে পিছিয়ে গেলো, রিনি জোরজবরদস্তি করে আবারও ওকে ধরে ফেলে।সে তখনও জানেনা ঐশী ওখানে আছে।আসিফ লজ্জায় কি করবে আর ভেবে না পেয়ে রিনির কানে কানে বললো,’ঐশী’

এটা শুনে রিনি আসিফকে ছেড়ে এবার নিজে পিছিয়ে গেছে।

ঐশী বললো,’আমি কিছু দেখিনি ভাইয়া।তোমরা সহজ বোধ করো’

আসিফ হালকা কাশি দিয়ে এক প্রকার ছুটেই তার রুমে চলে গেছে।রিনি মাথা চুলকে সেও চলে গেলো পিছু পিছু।ঐশী হাসছে শুধু।এর আগে ওদের দুজনকে দেখে মনো হত পৃথিবীর দুই প্রান্ত।দুজনের সাথে দুজনের কোনো মিল নেই।আর আজ তার দৃশ্যই বদলে গেছে।
—–
বাপ্পি কাজ শেষ করে তটিনিকে নিয়ে কাছে ধারে ঘুরতে বের হয়।আজ তারা মার্কেটে এসেছে ফেরার পথে সবার জন্য গিফট নেবে বলে।বাপ্পি শুরুতে বকুল আপু আর বুসরার জন্য যা কেনার কিনে নিয়েছে কারণ তাদের পছন্দ নিয়ে তটিনি অবগত না।এরপরে তটিনির বাড়ির লোকদের জন্য সে নিজে পছন্দ করে নেয়।বাপ্পি বলেছে গিফট দিলে সবাইকে দিবে।তটিনিও তাই খুশিমনে সবার জন্য উপহার কিনে হাত ভর্তি করে ফেললেও তার নিজের জন্য কিছু কিনেনা।মোট কথা সে ভুলে গেছে নিজের জন্য কিছু কেনার কথা।
কিন্তু বাপ্পি ভোলেনি সে লুকিয়ে তটিনির জন্য একটা কিছু কিনেই ফেলেছে।তটিনি বুঝতেই পারেনি।এদিকে তটিনিও বাপ্পির জন্য কিছু কিনে নিয়েছে।দুজনে দুজনের অগোচরে গিফট নিয়েছে অথচ তারা কেউ এখনও জানেনা।
হোটেলে ফিরে ব্যাগগুলো রাখতেই তটিনি বললো সে ঘুরতে যাবে সমুদ্রে।শপিং করলে তো আর ঘোরাঘুরি হয়না।
বাপ্পি তটিনির কথামতন তাকে নিয়ে এই রাত আটটার সময় সমুদ্রে আসে।আগেকার মতন সে এমন একটা নির্জন জায়গায় এনেছে যেখানে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে।বাপ্পি তো এটাই ভেবে এনেছিল।কিন্তু তার ভাবনায় ছেদ ঘটালো এক দল যুবক যুবতীর মহড়া।
দূরে ডেকোরেশন করে তাদের হুইহুল্লড় শোনা যাচ্ছিল বেশ।
বাপ্পি সেদিকে যেতে না চাইলেও তটিনি লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটলো।তারা ওখানে এসে দেখে এটা একটা প্রোপোজ পার্টি ছিল।যে কাপল এই আয়োজন করেছে তারা সবাইকে ইনবাইট করেছে।ওখানে বাপ্পি আর তটিনিকে দেখে তারা আমন্ত্রণ জানালো যেন তাদের সাথে যুক্ত হয়।লাউড মিউজিক চলছিল।ইংরেজী গান সাথে কেউ গিটার বাজাচ্ছে,গলা মেলাচ্ছে কেউ বা ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে নাচছে।তবে তাদের সবাইকে দেখে বাপ্পির সন্দেহ হচ্ছিল যে ওরা হয়ত সবাই নেশাগ্রস্থ।
সে তটিনিকে সাবধান করতেই যাবে তার আগেই চেয়ে দেখে একটা মেয়ের হাত থেকে গ্লাস নিয়ে সে খেয়ে নিয়েছে যেটা খাওয়ার।
বাপ্পি জানতো ওটাতে ভুলভাল কিছু মেশানো আছে কিন্তু সে তটিনিকে জানানোর আগেই তটিনি খেয়ে একদম সাবাড় করে ফেলেছে।
বাপ্পি ওর কাছে আসা ধরতেই দুটো ছেলে ওকে আটকে বললো ওদের সাথে নাচে তাল মেলাতে।তারা কিছুতেই বাপ্পিকে তটিনির কাছে আসতে দিচ্ছিল না।এদিকে তটিনি এক গ্লাস খেয়ে হেব্বি মজা পেয়ে এখন আরও খাচ্ছে।এই দেখে বাপ্পি আর ওখানে থাকেনি।ছুটে এসে ওকে আরও খাওয়া থেকে আটকালো।।
তটিনি ঠোঁট মুছে দাঁত কেলিয়ে বললো,’আমি জানি হয়ত মদ জাতীয় কিছু খেয়েছি।আগে থেকে বলে রাখি খবরদার আমায় টাচ করবেন না।আমি যদি ইচ্ছাও পোষণ করি তাও না।একদম না!’

বাপ্পি হাসলো ওর কথায়।তারপর ওর হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসলো।তটিনি হাঁটছেনা ভালমতন,সে বারবার ঐ জায়গায় আবার ফিরতে চাইছে।কিন্তু বাপ্পি কিছুতেই তাকে ওদিকে আর যেতে দেবেনা।
হোটেলে আসার পর ঠিক সেটাই হলো যেটা তটিনি মানা করে দিছিলো।
তটিনি বাপ্পিকে ছাড়ছেনা।আকড়ে ধরে রেখেছে।চোখের সামনে আসিফের মুখটা বাপ্পির মুখের বদলে দেখছে সে।অনেকক্ষণ যাবত দেখে বললো,’তুমি আসিফ ভাইয়া?তাহলে ধরবোনা।তুমি তো আমার হাসবেন্ড নাহ”

এই বলে তটিনি পিছিয়ে গিয়ে বিছানায় ধপ করে বসলো তারপর বললো,’আমার বাপ্পি হাসবেন্ডকে পাঠাই দাও।তাকে ধরবো।তারে ধরলে গুনাহ হবেনা।তারে এনে দাও।’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here