তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৩০

0
182

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বাপ্পি যেন বিরাট এক সুযোগ হাতে পেয়ে গেলো।নিশ্চয় খারাপ কিছুনা,তবে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু।সে একটু এগিয়ে মুচকি হেসে বলে,’তটিনি!তুই আমায় চিনতে পেরেছিস তাহলে?’

তটিনি চোখের পলক ফেলে কয়েকবার।এরপর ড্যাবড্যাব করে দেখতে থাকে।ঝাপসার বাহিরে সে কিছুই দেখছেনা।চোখটাকে একটু ডলে নিয়ে আবারও তাকায়।এবার তার কাছে আসিফই মনে হলো তাছাড়া বাপ্পি তো ওকে তুই করে বলেনা।চোখপর পলক দ্রুত ফেলতে ফেলতে সে বললো,’হুম চিনেছি।চিনবোনা কেন!’

‘তাহলে জড়িয়ে ধর একবার’

তটিনি ওমনি মাথা ঘুরিয়ে শক্ত চোখে তাকায়।ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,’আজব তো!তোমায় কেন জড়িয়ে ধরবো?তুমি কে হও আমার?’

‘একবার তো ভালবাসার মানুষ ছিলাম’

‘তো কি!জামাই থাকতে তাই বলে তোমায় জড়িয়ে ধরবো?বেশি পকপক না করে এখান থেকে যাও আর আমার বাপ্পিকে এনে দাও’

‘তোর বাপ্পি?’

‘তো কি তোমার বউ রিনির বাপ্পি?আমার বাপ্পি আমারই।যাই হোক তাকে এনে দাও।তাকে ভালবাসবো আজ।হুশ থাকতে বাসতে পারিনা।ভেতর থেকে কেমন একটা বাধা কাজ করো।আজ তাকে ভালবাসবো।মা বলতো বিয়ের পর স্বামীর উপর এমনিতেই মায়া লেগে যায়হোক সে অপছন্দের মানুষ’

বাপ্পির মুখে হাসি ফোটে।চট করে গায়ের টিশার্টটা খুলে সে তটিনির সামনে গিয়ে বসে পিঠ ঘুরিয়ে।তার পিঠ দেখে তটিনির ভ্রু যুগল সমান হয়ে যায়।ঠোঁটের কোণায় হাসি নিয়ে পিঠের মাঝে হাত রাখে সে এরপর ফোলা ফোলা জায়গায় টিপ দিয়ে বলে,’হ্যাঁ।এটাই তো আমার বাপ্পি’

এই বলে তটিনি মুখ ডুবায় তাতে।বাপ্পি মাথা নিচু করে হাসছে।এটা তার কাছে স্বপ্নের চাইতে কম কিছুনা।তটিনি কখনওই এমন কিছু করার মতন মেয়ে নয়।

তটিনি ওর পিঠ থেকে মাথা তুলে বলে,’আহারে ভাইয়ার সামনে এসব কেন করছি!ইশ লজ্জা!’

বাপ্পি তখন বলে,’ তোমার ভাইয়া চলে গেছে’

এটা শুনে তটিনি এগিয়ে এসে আবারও ঝাপটে ধরে বাপ্পিকে।
বাপ্পির দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।তটিনির স্পর্শে সে কাতর হয়ে যায়।এদিকে তটিনি যে হুশে নেই এটা সে বুঝতে পারে,চাইলে সুযোগটা নিতে পারবে কিন্তু তটিনিকে দেয়া কথা সে ভঙ্গ করতে পারবেনা।যত যাই হোক মেয়েটাকে সে সত্যিকারের ভালবাসে,পছন্দ করে।তার অজান্তে এইসব করলে পরে দেখা গেলো হুশ আসার পর সে নিজের উপর খুব রাগ করবে।নিজেকে ঘৃনা করবে।তাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়না বাপ্পি।তাই চুপ করে বসেই থাকলো।তটিনি বাপ্পির পিঠে মাথা ঘষে ঘষে বললো,’আসিফ ভাইয়াকেও এমন উদম দেখছিলাম।তবে কিছু করিনাই।কিন্তু আপনার পিঠ দেখে ছুঁতে ইচ্ছা করে।টান আছে, স্বামী হোন যে তাই’

বাপ্পি শান্ত গলায় বলে,’তোমার কি সত্যি হুশ নেই তটিনি?’

তটিনি মাথা তুলে।তারপর আবারও মাথাটা নিচু করে চুপ করে থাকে।কিছুই বলেনা।
বাপ্পি হাতটাকে পেছনে নিয়ে তটিনির মাথায় রেখে বলে,’কাউকে ভালবাসলে তাকে না পেলে পরের মানুষটাকে নতুন করে ভালবাসা অপরাধ না তটিনি।তুমি হয়ত এই ভেবে দ্বিধা করছো!আমি পর কেউ না।তোমার বিয়ে করা বর!এইসব চিন্তা কোনো লজিক রাখেনা’

তটিনি বাপ্পির পিঠে আঙ্গুল দিয়ে কিসব লিখতে লিখতে বলে,’বিয়ের চারদিনের দিন একটা মানুষকে আপন করে নেয়ার মনমানসিকতা আমার নেই।আরও, আরও সময় লাগবে!শরীরে চাহিদার বাইরে মন বলে একটা শব্দ থাকে।মনের সাথে চাহিদার সম্পর্ক নেই।’

তটিনি সরে বসে আবার।বাপ্পি উঠে রুমের আলো নিভিয়ে বারান্দাতে চলে যায়।
তার ঠিক কিছুক্ষণ পর তটিনি এলোমেলো ভাবে হেঁটে এসে বাপ্পির পাশে দাঁড়ায়।এরপর রেলিংয়ে হাত রেখে বলে,’আমার হুশ আছে!প্রথমে ঝাপসা দেখলেও এখন ক্লিয়ার দেখছি!’

এই বলেই সে হঠাৎ পড়ে যাওয়া ধরলো, বাপ্পি সামনের দিকে তাকানো অবস্থায় তটিনিকে এক হাতে ধরে ফেললো তখনই।

‘তোমার হুশ নেই’

‘আপনি ও খাইতেন।ভাল হতো’

‘তোমাকে ধরতো কে এখন? ‘

‘বসবেন চেয়ারে?’

বাপ্পি কিছু বলেনা।সামনে একটু দূরে চোখ বুলালেই সমুদ্রের ঢেউ নজরে আসে।সেদিকটাই দেখছে সে।চেয়ারে বসলে এগুলা দেখা যায়না বলেই দাঁড়িয়ে আছে সে।কিন্তু তটিনির নেশার চোখে এতোদূরের সমুদ্র দেখা গেলোনা।সে বারবার বাপ্পিকেই দেখছিল।
বাপ্পির বিষন্ন চেহারা তাকে ভাবিয়ে তুললো।আসিফের কারণে সে এখনও বাপ্পিকে মেনে নেয়নি।নিবেও কিনা সেটার নিশ্চয়তা নেই।অথচ বাপ্পি টু শব্দ ও করেনা এটা নিয়ে।তাকে পেয়ে গিয়েই যেন বাপ্পি সব পেয়ে গেলো।কিন্তু সে কি ওর সাথে ঠিক করছে আদৌ?’

‘আপনি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দেন’

‘কেনো?’

‘আমি আসিফ ভাইয়াকে এত সহজে হয়ত ভুলতে পারবোনা’

‘তাই বলে ডিভোর্স? আমি সব জেনেই বিয়ে করলাম।কোনো অভিযোগ তো নেই’

‘অভিযোগ না দেখালেও আমি দেখি।বুঝতে পারি,আমার জায়গায় অন্য একটা মেয়ে হলে আপনায় মাথায় করে রাখতো,সেটাও জানি’

‘তবে কি সে আমার মনের মতন হতো?যতটা তুমি”

‘মনের মতন দিয়ে আর কি হলো?’
———-
রিনি রুমে ফিরে দেখে আসিফ বই পড়তে বসেছে।কাল রাত সহ দুবার কোলে ওঠা হয়েছে বলে রিনির এখনও মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় ভাসছে।দ্যা গ্রেট আসিফ যে কিনা তটিনির ক্রাশ সে ওকে কোলে তুলেছে তাও দুবার!ভাবা যায়!না ভাবা যায়না।হুট করে সূর্য ওঠার দিক বদলে গেলো কেন!রিনিকে কি আজকাল বেশি সুন্দর লাগে?
আয়নার সামনে এসে নিজরে পেট, গলা, মুখের চারপাশ হাতিয়ে রিনি ভাবছে তাকে কি তটিনির চেয়ে বেশি সুন্দর লাগে!নাহলে কোলে নেয়ার মানে কি হতে পারে!
ঠোঁটে হাত রেখে রিনি কল্পনা করছে তটিনির ঠোঁট কেমন।
কি সুন্দর চিকন ঠোঁট তটিনির!!বাপ্পি ভাই কয়বার যে ছুঁয়েছে সেটাই ভাবছিল রিনি ওমনি হাত থেকে চিরুনি পড়ে গেলো।শব্দে আসিফ মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে রিনি তড়িগড়ি করে চিরুনি তুলছে নিচ থেকে।
আসিফ আবারও পড়ায় মন বসায়।রিনি এবার নিজের জামা একটু সরিয়ে পেট দেখছে।বিয়েরদিন তটিনির শাড়ীর ফাঁকে ওর পেট দেখছিল হালকা করে।মুখের চাইতে পেট সাদা চারগুন!!এমনি এমনি ওর বিবাহিত বর তটিনির জন্য পাগল হয়নি।আর ওর পেট দেখো!যে দুই বাচ্চা জন্ম দেয়া শেষে।
পেটের ভুড়ি টিপ দিয়ে রিনি বিরক্ত হয়ে বলে,”আইচ্ছা মাইয়াগো কোন জিনিস কান হোলাগো বেশি বালা লাগে?’
আচ্ছা মেয়েদের কোন জিনিসটা ছেলেদের বেশি ভাল লাগে?’

‘উমমমমম!চোখ,আমার কাছে’

রিনি চোখে হাত দিয়ে এক লাফ দিয়ে বললো,’আঁর চোখ তটিনি বুবুর তন ও বেশি ডক।হেয়াল্লাই হয়ত হেতেন আঁরে দুইবার কোলে লইছেন ক্রাশ খাই’
আমার চোখ তটিনি বুবুর চাইতেও বেশি সুন্দর তাই হয়ত উনি আমায় দুবার কেলে নিছেন ক্রাশ খেয়ে’

আসিফ নোট লিখতে লিখতে আবার বললো,”চুল ও’

রিনি এবার নিজের চুলে হাত রেখে বলে,’ওহ
তাইলে এই বুঝি কারণ!’

চুলের ক্লিপটা খুলে চুলগুলোকে ছেড়ে রিনি আসিফের পাশে চেয়ার নিয়ে বসে চুল নাড়তে থাকে হাত দিয়ে।আসিফ রিনির চুল নাড়ানাড়ির জন্য পড়ায় মন বসাতে পারছেনা।একটা সময়ে বাধ্য হয়ে সে বলে,’তোর কি সমস্যা? চুল ছিঁড়ে ফেলবো একদম।হাত সরা চুল থেকে’

‘কিল্লাই?আঁর চুল আন্নেরে কিচ্ছে?’

‘কিচ্ছে?পড়াতে মন বসাতে পারছিনা’

‘ক্যান?আঁর চুল কি আন্নেরে টাচ করতাছে নাকি ইভটিজিং করতাছে?’

আসিফ বইটা তুলে রুম থেকে চলে গেলো।সোজা একেবারে ছাদে।সেখানে এসে শান্ত মনে পড়তে বসলো।কিন্তু সমস্যা হলো রাতের ছাদে যে বাতিটা থাকে সেটা নষ্ট। এই অন্ধকারে পড়া অনেক মুশকিল!
চিলেকোঠার দরজা খেলার আওয়াজে আসিফ মাথা তুলে তাকায়।রিনি চুলগুলোকে হেলিয়েদুলিয়ে আসছে আসিফের কাছে।পাশের বাড়ির ছাদের বাতির আলোয় তাকে আবছা দেখা যায়।রিনি আসিফের সামনে এসে বলে,’বিবাহিত পুরুষদের জন্য রাত পড়বার নয়!হয়ত শুরুতে বই পড়বার কিন্তু শেষ রাত বউয়ের।’

রিনি কখনও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেনা।এখন বললো বলে আসিফ অনেকটাই অবাক।

আসিফ ওর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ধরে কিন্তু রিনি বইটা ধরে ফেলে বলে,’চলেন তারা গুনি’

আসিফ কিছু বলেনা।বইটা রিনির কাছে রেখেই চলে যায়।সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় রিনি উপর থেকে বললো,’বাপ্পি ভাইয়া তটিনি বুবুকে না পেয়ে নাকি হার মাইন্না গেছে।কিন্তু আঁই হেতেনের মতন না।আঁই আদায় করা জানি।আইতেছি রুমে!’

আসিফ ভয় পেলোনা শুরুতে কিন্তু করিডর দিয়ে যেতে যেতে হালকা পাতলা ভয় হলো।রিনি কি করবে এসে?এইসব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল ওমনি রুমের দরজা বন্ধের আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকায় আসিফ।রিনি চুলে খোঁপা করতে করতে আয়নার কাছে গিয়ে বইগুলো ড্রেসিং টেবিলে রাখে।এরপর আয়নায় চোখ রেখে আসিফকে দেখতে লাগলো সে।
আসিফ বইটা সেখান থেকে তুলে নিতে চাইলো কিন্তু রিনি হাত দিয়ে আটকে বলে,’অনেক পড়ছেন।আজ আর পড়তে দিব না।হ্যাঁ,বই না পড়েন।আমাকে পড়তে পারেন।আমাকে পড়া উন্মুক্ত আপনার জন্য।’

‘এতসব শুদ্ধ ভাষা কে শেখালো?’

‘তটিনি বুবুর ডায়েরী থেকে লাইন নিয়ে কাট,কপি,পেস্ট করছি’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here