তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৩৮

0
179

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৩৮
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ রিনির মাথায় পানি দিয়েছে তিনবারের মতন।ওর খালা ফুফুরা অবাক হয়ে আসিফের দায়িত্ববোধ দেখছেন ঘরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে।অথচ এতদিন রিনির মায়ের মুখে শুনে এসেছেন আসিফ ছেলেটা অন্যরকম!রিনিকে চোখে হারায় না!রিনিকে পছন্দ করেনা।ওর মুখ দেখলে সবাই বলতো ওদের বিয়েটা জোর করেই হয়েছে!যার কারণে এতগুলো বছর আসিফ কতদূরে ছিল।ছেলে মানুষ বিয়ে করলে একদিন ও অপেক্ষা করেনা।বউকে সাথে নিয়ে যায় আর নয়ত শ্বশুর বাড়ি এসে বউকে দেখে যায় আর সেই আসিফ কিনা এত গুলো বছর বউহীনা থেকে গেলো!!সে যাই হোক!
আজ তার ব্যবহার অন্য কথা বলছে।সকলকে আশ্চর্যের শেষ প্রান্তে নিয়ে ঘুরিয়ে এনেছে সে।রিনির হাত ছাড়ছেনা কিছুতেই।রিনি অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।কিছু খায়নি এখন অবধি।
কথাটা চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে!রিনির জামাই রিনি পাগল!!
গ্রামের দিকে নতুন বরের এরুপ কার্যালাপ আশানুরূপ হলেও দৃষ্টিকটু!লোকলজ্জার ও একটা ব্যাপার আছে!

ফিসফিস শুনেও আসিফ উপেক্ষা করে রিনির মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।
রিনির জ্ঞান ফেরার পর তাদের রুমে চাচাতো বোন রিনতি আর কুয়াশাকে দেখে সে উঠে বসলো তারপর ওদের বললো রুম থেকে যেতে।ওরা তাই চলে আসলো ওখান থেকে।রিনি আসিফের দিকে ফিরে তাকায়,আসিফের মুখ ও শুকিয়ে আছে।

‘আন্নের হরীক্ষা নাই?’

‘এসবের চেয়ে জরুরি না’

‘চলে যান।আঁই ঠিক আছি’

এটা বলেই রিনির বুক ফেটে কান্না এসে যায়।আসিফকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে চিৎকার করে।আসিফ জানে রিনি এখনও নিজেকে সামলে উঠতে পারেনি।রিনির মাথায় হাত রেখে চুপ করে থাকে সে।
আসিফের মা বাবা খাবারের বন্দবস্ত করছেন রিনিদের বাড়ির সকলের জন্য।সকলে না খেয়ে আছে।আজ চুলা চলবেনা!এটা নিয়ম!
——–
বাপ্পি দূর ক্ষেতের আইল দেখতে দেখতে বললো,’একটা কঠিন সময় না আসলে আমরা প্রিয়জনকে প্রিয়জন হিসেবে বুঝতে পারিনা!সেই সময়টা আসলে সহজেই বুঝে যাই মানুষটা আমাদের কত প্রিয়!’

তটিনি বাপ্পির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে তাকায়।এরপর বাপ্পির ঘামে ভেজা চাপা দাঁড়িতে হাত দিয়ে ঘাম মুছে বলে,’এত রোদে বসে আছি কেন আমরা?’

‘কারণ এরপর পুকুরে নেমে গোসল করবো’

‘আমি সাঁতার জানিনা’

‘আমি জানি!’

এই বলে বাপ্পি উঠে দাঁড়িয়ে তটিনিকে নিয়ে রিনিদের বাড়িতে না গিয়ে আসিফদের বাড়ির দিকে চললো।ঠিকানা একটা ছোট বাচ্চা ছোলেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছে।
তটিনি ওর হাত ধরে যেতে যেতে বলে,’আমরা ঐ বাড়িতে কেন যাচ্ছি?ওখানে তো এখন কেউ থাকার কথানা।বাড়ি ফাঁকা’

‘ফাঁকা বলেই যাচ্ছি!আসিফদের পুকুরে গোসল করে তারপর চলে আসবো রিনিদের বাড়ি’

‘আমরা একজনের মৃত্যুতে এসেছি!এরকম না করলেও হয়!’

‘এভাবে বলতে হয়না তটিনি!গ্রামে আমরা বারবার আসিনা।’

তটিনি আবারও বললো,’ভিজে জামাকাপড় বদলে পরবোটা কি?’

‘সব ভেবে রেখেছি!আসিফের পাঞ্জাবি পরবো আমি,আর তুমি আসিফের বোনের শাড়ী কিংবা জামা পরে নিবা’

এই বলে দুজনে আসিফদের টিনের গেট সরিয়ে ভেতরে ঢোকে।পুরো বাড়িটা নিশ্চুপ হয়ে আছে।কোথাও কোনো শব্দ নেই।
বাপ্পি মুখে হাসি ফুটিয়ে তটিনিকে নিয়ে সোজা পুকুরপাড়ে চলে আসে।পুকুরটাও ফাঁকা।তটিনি ভয়ে ভয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।
বাপ্পি শেষ সিঁড়িতে পা রেখে তটিনিকেও বললো পা রাখতে।তটিনি ধীরে ধীরে পা রাখে এরপর জয়ের হাসি দিয়ে বাপ্পির দিকে তাকায়।

‘শোনো!এখন আমার হাত ধরে এক পা এক পা করে নামবা।ভয় পেও না।নিচে আরও সিঁড়ি আছে!’

এই বলে বাপ্পি তটিনিকে টেনে নিচে নিয়ে আসে।একটু পর তটিনি হঠাৎ বাপ্পির হাত খাঁমছে ধরে দাঁড়িয়ে যায়।

‘কি হলো?ভয় পেলে?’

‘নিচে তো মাটি!সিঁড়ি নাই দেখছি!’

‘মাটি হলো আসল!কাদা মাটিতে পা রাখতে ভীষণ মজা।পা রাখো।কিছু হবেনা’

‘না না!যদি পোকা বের হয় ওটা থেকে?’

‘হবেনা।দেখোইনা ট্রাই করে’

বাপ্পির কথায় তটিনি চোখ বন্ধ করে পুকুরের মাটিতে পা রাখে।তার হাত পা কাঁপছে ভয়ে।বাপ্পি ওকে আরেকটু জ্বালাতে বললো,’সাপ!’

এটা শুনে তটিনি চট করে কাছে এসে বাপ্পির পায়ের উপর পা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরলো ভয়ে।

বাপ্পি এটা কল্পনাও করেনি,সে ভাবলো তটিনি হয়ত উঠে চলে যাবে।

বাপ্পির ভেজা জামার উপর দিয়ে মুখ রাখতেই তটিনির শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো কিঞ্চিত। এর আগে এমনটা হয়নি।
বাপ্পি নিজেও তটিনিকে আগলে রেখেছে।অনেকক্ষণ এভাবে কেটে যাবার পর বাপ্পি তটিনিকে ধীরে বললো,’দম বন্ধ করো।ডুব দিব একসাথে’

এই বলে সে তটিনির হাত ধরে ১,২,৩ বলে একসাথে দুজনে ডুব দেয়।তটিনি ডুবে পানি খেয়ে নিছে অনেকটা।তার অভ্যাস নেই।তবে বাপ্পির আছে কারণ সে তার নানুর বাড়িতে গেলে গোসল পুকুরেই করতো।
দুই তিনটা ডুব দিয়ে কাশি দিতে দিতে তটিনি বাপ্পির হাত ধরে পুকুর ঘাটের উপরে চলে আসে অবশেষে।দুজনে সোজা আসিফদের বাড়িতে ঢোকে।গ্রামের দিকে এই একটা বিষয়!তারা ভাবে চোরে চুরি করবেনা।তাই শুধু ছিটকিনি দিয়ে আরেক বাড়িতে দৌড় দেয়।বাপ্পি মুচকি হেসে ছিটকিনি খুলে ভেতরে প্রবেশ করে।
অনেক খুঁজে আসিফোর রুম পায় বাপ্পি,তটিনিও আসিফের বোনের রুমটা খুঁজে পেলো।দুজনে দুই রুমে ঢুকে এখন চেঞ্জ করছে।আসিফের বোন ছোট।তারা একটা জামাও তটিনির গায়ে লাগছেনা।মনে হয় জোর করেও পরা যাবেনা, এত টাইট!শেষে ভেজা জামায় সে রুম থেকে বেরিয়ে আসিফের মায়ের রুমে এসে হাজির হয়।উদ্দেশ্য সেখান থেকে একটা শাড়ী নিয়ে পরবে।এসে দেখে খাটের উপরে দড়ি টানানো টিনের চাল বরাবর। সেখানে সব জামাকাপড় টাঙানো।
তটিনি এই ভেজা শরীর নিয়ে খাটে উঠবেই বা কি করে!আর শাড়ী নিবেই বা কি করে!এইসব ভাবছিল আর শীতে কাঁপছিল।

ততক্ষণ বাপ্পির পাঞ্জাবি বদলানো হয়ে গেছিলো।সে তটিনিকে খুঁজতে এসে দেখে সে এই রুমে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁপছে।

‘কি হলো তটিনি?এখনও জামা বদলালে না?’

‘কত উপরে শাড়ী।নাগাল পাচ্ছিনা তো!খাটে উঠলে তোষক ভিজে যাবে’

বাপ্পি দ্রুত বিছানায় উঠে দড়ি থেকে শাড়ী, ব্লাউজ সব নামিয়ে দিয়ে বললো,’আসিফের মা মাশাল্লাহ দিলে যে স্বাস্থ্যবান দেখলাম!ওনার ব্লাউজ তোমার গায়ে থাকবে তো?’

তটিনি ব্রু কুঁচকে বললো,’ঠাট্টা না করে আসিফের বোনের রুম থেকে সেফটিপিন খুঁজে আনুন!খুব তো বলছিলেন সব ম্যানেজ হবে!এখন আমি তো কোনো কিছুরই বিহিত দেখছিনা’

বাপ্পি মিটমিট করে হাসতে হাসতে আসিফের বোনের রুম খুঁজে বের করে সেখানে পিন খুঁজতে থাকে।বেশ অনেকক্ষণ পর সে পিন খুঁজে পায়!এরপর ছুটে এসে দেখে তটিনি শাড়ী পরে এখন পিঠে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

‘নিন ম্যাম,আপনার পিন’

‘যান এখন!’

বাপ্পি মুচকি হাসি দিয়ে বের হলো রুম থেকে।ওখান থেকে উঠানের দিকে যাবার পথে তটিনি তাকে ডাক দেয় আবার।সে থেমে আবারও আসলো ওখানে।তটিনি অসহায় মুখ নিয়ে চেয়ে বলে,’আমি পারছিনা পিন লাগাতে’

‘জানতাম!কিন্তু তুমিই তো বের করে দিলে’

এই বলে বাপ্পি কাছে এসে তটিনির পিঠে সেফটিপিনটা ঠিক করে লাগিয়ে দিলো।তটিনির ভেজা চুলগুলো ওর হাতে লাগছিল বারবার।বাপ্পির জন্য কাজটা এত সহজ ছিল না মোটেও।কাঁপা হাতেই কাজটা সারছে সে।এরপর দুজনেই বের হয়ে যায় ঘর থেকে।আগের মতন ছিটকিনি লাগিয়ে গেটের দিকে যাওয়া ধরতেই লিচু গাছটার তলা থেকে একজন বৃদ্ধার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো।

ভয় পেয়ে ওরা দুজন থেমে যায়।ভয়ে ভয়ে বামে তাকায়।লিচু গাছ তলায় আসিফের দাদি বসে আছেন,এর আগেও ছিলেন।কিন্তু ওরা দুজনের একজনেও খেয়াল করেনি।দাদু ওদের হাত দিয়ে কাছে ডাকলেন।
বাপ্পি ভয়ে ভয়ে তটিনিকে সাথে নিয়ে ওনার সামনে এসে দাঁড়ায়।
বাপ্পিকে এতক্ষণ দেখে এবার তিনি তটিনিকে দেখছেন।

‘এই লম্বা করে ধলা হোলারে আঁই চিনি না তবে এই গোলগাল মেয়েটারে চিনছি।তুমি তটিনি না? ‘

‘জ্বী।আমাকে চিনলেন কি করে?’

‘সে অনেক কথা!এই ধলা ছেলেটা কে হয় তোমার?’

‘স্বামী’

‘ওহ তাহলে ঠিক আছে।আমি তো ভাবতাছি যুবক যুবতী দুইটা একা ঘরে ঢুকে এতক্ষণ কি করে!পায়ের ব্যাথা না থাকলে উঁকি দিয়ে দেখতাম।যাই হোক!তোমরা রিনিগো বাড়িত যাও নাই?’

‘গেছিলাম।গোসল করার জন্য এখানে এসেছি’

দাদি চশমা মুছতে মুছতে বললেন,’হ বুঝছি!জামাই বউ একসাথে গোসল করতে এতদূর আসলে!তোমাগোই সময়!এখন কত কি মন চাইবো!
কয়েক বছর পর একসাথে ভাত ও খাইতে মন চাইবোনা!যাই হোক যাও যাও।ঐ বাড়িতে এখন খাবার দিবে।দুপুরের খাবার খাইতে দেরি করিওনা’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here