তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৪১

0
175

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
বকুল আপুর কথা শুনে তারা দুজন বোবা হয়ে গেলো। কোনো কথা নেই শুধু ড্যাবড্যাব করে আপুকে দেখে চলেছে।যেন এর আগে এই মানবীকে তারা দেখেনি।
মাথায় মোটা বেনি করা,গায়ে সুতির শাড়ী।কানে ছোট্ট সোনার কানের দুল।গলায় চিকন একটা সোনার হার আর হাতে দু জোড়া বালা।যেন বাপ্পির মায়ের জোয়ান ভার্সন।
বাপ্পি বকুল আপুর ছায়ায় মাকে দেখছিল আর তটিনি দেখছিল তার মাকে।তার মাও এরকম রণচন্ডী রুপ ধারণ করতেন।
ওদের দুজনকে এরকম চুপ থাকতে দেখে বকুল আপু চলে গেলেন,যাবার সময় কেবল বলে গেলেন আর একবার এরকম কান্ড দেখলে দুটোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়া হবে।
আপু যেতেই তটিনি বাপ্পিকে ধীরে একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,’আপনার জন্য আমাকে কতবার করে লজ্জা পেতে হলো।আমি এসেছি একটা কাজে আবার আপনি আসতে গেলেন কেন?’

‘তুমি এসেই হারিয়ে গেছো তাই দেখতে এলাম কিছু হলো কিনা’

তটিনি বিড়বিড় করতে করতে রুমে ফিরে আসে। বাপ্পি ও পিছু পিছু আসলেও বিয়ের আগের তটিনির সেই অগ্নি রুপ দেখে সে আর কোনো কথা বলেনি।শুধু কানিয়ে কানিয়ে দেখছিল তটিনি করে টা কি।
সে দেখলো তটিনি বিছানায় হাত বুলিয়ে উঠে বসে আছে কিন্তু ঘুমাচ্ছেনা।অথচ তখন রাত আড়াইটা বাজে।এর মানে দাঁড়ায় সে কিছু বলবে আর নয়ত কিছু একটা করতে চায়।
বাপ্পি রুমের আলো নিভিয়ে ওর পাশে এসে নিজেও বসে থাকে।
নিরবতা বিধ্যমান।বাপ্পি তার হাতটা নিয়ে তটিনির পিঠের উপর দিয়ে খাটের যে স্ট্যান্ড আছে তাতে লাগালো।তটিনি টের পেয়েছে তাও কিছুই বলেনি শুধু একটু নড়ে উঠেছে সে।

বাপ্পি কিছু একটা বলতে চাইলো কিন্তু সে বলার আগেই তটিনি একটু একটু করে ওর সাথে লেগে বসে পড়ে।বাপ্পি মাথা ঘুরাতেই তটিনির মাথার সাথে ধাক্কা খায়।তটিনি লম্বা করে পা দিয়ে বাপ্পির পায়ে খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বলে,’মন ছুঁয়েও কিছু মানুষ শরীর ছুঁতে পারেনা….
আর কেউ!মন ছুৃয়েই শরীরটা ছোঁয়ার অধিকার নিয়ে নিতে পারে!
তাহলে কিছু যারা মন ছোঁয় তারা কেন শরীর ছুঁতে পারেনা?’

বাপ্পি নিজের পা দিয়ে তটিনির পায়ে এবার নিজেও একটা খোঁচা দিয়ে বললো,’যার মন ছোঁয় সে মানুষটির মন অন্য কোথাও বেঁধে থাকলে সেই মন ছুঁয়েও শরীর ছোঁয়া যায়না!মন বলে দেয় এই সেই শরীরটা যাকে তুমি মনে জায়গা দিচ্ছো ! কিংবা নিয়তি বলে দেয় ‘

তটিনির চোখের কোণায় পানি এসে জমে যায় বাপ্পির কথায়।কোনো কিছু আর না ভেবে সে উঠে বাপ্পিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।তার চোখ দুটো বাপ্পির খালি গলায় গিয়ে ঠেকে।তার চোখের ফোটা ফোটা অশ্রু বাপ্পির গলা ভিজিয়ে দেয়।বাপ্পি নিজেও শক্ত করে ধরে তটিনিকে।

‘আর আপনি সেই মানুষ যার জন্য আমি যাকে মনে ধরেছিলাম তাকে ছুঁতে পারিনি!কারণ আপনি…’

‘হ্যাঁ!’
———–
সকাল সকাল বকুল আপু বাপ্পির রুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,’সাতদিনের বেশি হয়ে গেছে।এখন আর তোমরা নতুন না!একটু হলেও পুরাতন।সুতরাং পড়ে পড়ে এত ঘুমাতে হবেনা।বিশেষত নতুন বউকে এত ঘুমাতে হবেনা।বের হও!বাপ্পি অফিস যাবিনা?’

বকুল আপুর চেঁচামেচি শুনে তটিনি লাফ দিয়ে উঠে বসে।বাপ্পি অন্যদিকে মুখ করে ঘুমাচ্ছে।তটিনি দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে গিয়ে দরজা খোলে।বকুল আপু ভেতরে বাপ্পিকে ঘুমাতে দেখে নিয়ে এইবার তটিনিকে দেখলেন।
তটিনি দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।
বকুল আপু ভ্রু কুঁচকে বললেন,’যাও গোসল করে আসো।আর এই উজবুকটাকেও গোসলে পাঠাও’

তটিনি কপাল কুঁচকে বললো,’এত সকালে গোসলের কি দরকার!দুপুরে করলে হবেনা?’

‘হাসবেন্ড ওয়াইফকে সকাল সকাল গোসল করতে হয়। এটা আর কয়বার শেখালে তোমার মাথায় ঢুকবে?’

তটিনি জিভ কামড়ে পেছনে মুড়লো।তারপর মনে করলো কাল রাতে শুধু জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিল দুজন।এইসব বকুল আপুকে কে বোঝাবে!
——–
বেশ কিছু সময় পর বাপ্পির অফিসের বসের কল আসায় বাপ্পির ঘুম ভাঙ্গলো।ঝাপসা চোখে বালিশের পাশ থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরতেই বসের এক ঝাড়িতে তার ঝাপসা চোখ পরিষ্কার হয়ে গেলো।চট করে উঠে বসে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সাড়ে দশটা বাজে।থতমত খেয়ে গলায় হাত দিয়ে সে বললো,’সরি বস!আসলে আমি না কাল পড়ে গিয়ে গলায় ব্যাথা পেয়েছি।আজ অফিসে আসা যাবেনা’

‘পড়ে গিয়ে মানুষ হাতে পায়ে ব্যাথা পায়।আর তুমি গলায় ব্যাথা পেয়েছো?’

‘ঐ আসলে এলোমেলো হয়ে পড়েছি তো!’

‘অদ্ভুত!তোমার মতন দেখি রাতুলের ও এক অবস্থা।নতুন বিয়ে করেছে পাঁচদিন হলো।কাল এসে বলছে হাতের তালুতে ব্যাথা পেয়েছে মশা মারতে গিয়ে,, বুঝি বুঝি!তোমাদের এই সময় আমিও পার করে এসেছি।বিয়ের পর এরকম উল্টা পাল্টা জায়গায় ব্যাথা হওয়াটাই স্বাভাবিক।যাই হোক!রেস্ট নাও।কাল মিস দিতে পারবেনা ‘

বাপ্পি ফোন রেখে আবার শুয়ে পড়তেই তটিনি রুমে আসলো।তার ভেজা চুল।গোসল করেনি। শুধু শুধু পানিতে চুল চুবিয়ে নিয়েছে।বাপ্পির কাছে এসে ভেজা চুলের ঝাঁকুনি দিয়ে বাপ্পিকে জ্বালিয়ে বললো,’বকুল আপুর অর্ডার। শুধু জড়িয়ে ধরলেও গোসল করতে হবে’

বাপ্পি মাথা তুলে হাত দিয়ে নিজের পিঠের উপর তটিনির ভেজা চুলের পানি মুছতে মুছতে বললো,’তুমিও গোসল করেছো?এই সকালে?’

‘চুল ভিজিয়ে গোসেলের একটিং করতেছি। আপনি চাইলে আমার এইই টিপস ফলো করতে পারেন”

বাপ্পি উঠে বসে তটিনির হাত টেনে উল্টে পাল্টে বললো, ‘কেমনে পারে এত ভাঁওতাবাজি ‘
——–
কাল যে বাড়িটা কান্নায় হাহাকারে ভর্তি ছিল আজ সেই বাড়িটা একেবারে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।মাঝে মাঝে ঘরের একেক কোণা থেকে হুহু করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।
রিনি আজ আর কাঁদেনি,মনমরা হয়ে ফুফুদের জন্য চা বানাচ্ছে।ওর ফুফু তিনজন।তিনজনেই বেশ বৃদ্ধা।একেবারে পানিটাও ঢেলে দিতে হয়।আর সেই ফুফুদের জন্যই সে চা বানাচ্ছে।আসিফ সকাল সকাল তার বাড়িতে গেছে।কাল বাবা মায়ের সাথে একটা কথাও বলা হয়নি এত ব্যস্ততায়।তাই সকালে সময় পেয়ে সে ওদিকে গেছে।বাড়ি তো বেশি দূরেনা।যাবার সময় অবশ্য রিনিকে বলেও গেছে।বলার পরই রিনির মনটা কেমন যেন আরও বেশি উদাস হয়ে গেলো।
যা চুপচাপ ছিল,এখন আরও বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে।মন বলছে একটিবার আসিফ ফিরে আসুক,আর কোনোদিন তাকে চোখের বাহিরে হতে দিবেনা
———
বাপ্পি তটিনির মতন করে শুধু চুল ভিজিয়ে নাস্তা করতে এসেছে।বকুল আপু ওর চুল দেখলেন এরপর ওর হাতটা ধরে বললেন,’গোসল করেছো?’

‘হ্যাঁ।দেখোনা ভেজা চুল?’

‘তাহলে তোমার হাত ওমন শুকনো ক্যাকটাসের মতন হয়ে আছে কেন?গোসল করলে শরীর যেমন ঠাণ্ডা থাকে,নরম থাকে,সেরকম না কেন?’

বাপ্পি থতমত খেয়ে এদিক সেদিক চেয়ে তটিনিকে খুঁজলো।ওমনি বকুল আপু বললেন,’তাকে খুঁজোনা!সেও তোমার মতন বাটপারি করে শুধু চুল ভিজিয়ে এসেছিল।আমি ঠিক ধরে ফেলেছি, যেমনটা তোমায় ধরলাম!’

‘আপু তুমি তুমি করতেছো কেন?’

‘তো কি করবো?আর মুখ রেখেছিস?বউ জামাই সকালে গোসল করেনা?এই তোরা এত খবিশ কেন রে?’

বাপ্পি চোরের মতন নাস্তা খেতে বসা ধরলো ওমনি বকুল আপু এক ধমকে ওকেও পাঠিয়ে দিলেন রুমে, তটিনি সবেমাত্র গোসল করে বেরিয়েছে।সত্যিকারের গোসল।বাপ্পিকে দেখে রাগে ক্ষোভে বললো,’কিছু না করেও এই সকাল সকাল!!’

‘আমাকে রাগ দেখিয়ে লাভ কি!আমিও এসেছি গোসল করতে।আমিও ভুক্তভোগী ‘
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here