তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৪২

0
177

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৪২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি বাপ্পি এই সকাল সকাল ভিজে বিড়ালের মতন ভিজে বসে বসে নাস্তা করছে।বাড়ির কাজের লোক হতে শুরু করে যে বাকিজনেরা আছে সকলেই ওদের দেখছে,নিজের কাজ করছে আর মিটমিট করে হাসছে।
বকুল আপু শুরু থেকেই তার দাদার মতন আচরণ করেন।তার দাদাও যৌবনে ঠিক এমন করেই পুরো সংসার শাসন করতেন।বাপ্পির বাবা মাকে দিনে দুইবার গোসল করাইতেন সেখানে বকুল আপু তো কমই করতেছেন!

আজ বকুল আপু চলে যাবেন।যাবার সময় মাকে বারবার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন রোজ সকালে ওদের দুজনের হাত আর চুল চেক করার জন্য।ওদের এই খবিশগিরি চুকিয়ে দেয়ার জন্য কড়া করে বলে গেছেন তিনি।

বাপ্পির গলা ব্যাথা কমে গেছে অনেক আগেই তাও সে অফিস যাবেনা।ঘরে ছোটাছুটি করা বিশ বছরের নব বধুকে সে আজ খুব মনযোগ দিয়ে দেখার পেছনে পুরোটা সময় খোয়াবে বলে ভেবে রেখেছে।এরকম রুপের মোহের ভাগ নিতে হলে,উপভোগ করতে হলে একটা দিন হাতে নিয়ে চোখকে কাজে লাগিয়ে দিতে হবে।নাহয় যে অফিসের অফিস!
সারাদিনে দু মিনিট দেখার সময় পাওয়া দায়।বউকে সময় দিতে হলে এরকম অফিস কামাই দিতে হবে।

তটিনি আজ রান্নাঘরে এসে দাঁড়িয়ে আছে নাস্তা খাওয়ার পর ঘেকে।বাপ্পির দাদি বিবি খাদেজা আজ নেহারী বানাবেন এবং তার দেখাদেখি তটিনিকেও বানাতে হবে।তবে সে বানাবে এক সপ্তাহ পর।দাদির মতন একই স্বাদের হলে সে পাবে একটা সোনার টিকলি যেটা কিনা দাদির এই বাড়িতে প্রথম পা রাখার স্মৃতি হিসেবে পড়ে ছিল সিন্ধুকে।যদি স্বাদ আরও ভাল হয় তবে সে টিকলির সাথে জোড়া কানের দুল ও পাবে।আর যদি কিছুই না হয়,খেতে বিস্বাদ লাগে তবে সে কিছুই তো পাবেই না উল্টে শাস্তি স্বরুপ তাকে ৭দিন ধরে সকাল বিকালের সব রান্নার কাজ করতে হবে।এরকম একটা খেলা তিনি বাপ্পির মায়ের সাথেও খেলেছিলেন।বাপ্পির মা ওনার মতন করে নেহারী রাঁধতে পারেননি বলে এরকম সাতদিন ধরে সকাল,দুপুর,বিকাল,রাতের সব রান্না একা হাতে করেছিলেন।
ভাবতেই তটিনির গলা শুকিয়ে গেলো।সে এরকম রান্না আগে করেনি,যদি বাই চান্স হেরে যায় তাহলে তার যে শনির দশা শুরু হবে তা সে বেশ বুঝতে পারছে।
ঢোক গিলে হাতে খাতা কলম নিয়ে সে দাদিকে নেহারী রান্না করতে দেখছে।পরে মনে হলো খাতায় সেইসব লেখা যাবেনা যেসব চোখে দেখা যায়।তাই বুদ্ধি করে ফোন নিয়ে ভিডিও করা শুরু করে সে।দাদি মুচকি হেসে কাজ করতে করতে বললেন,’মাইয়ার মাথা ভর্তি বুদ্ধি!’
——–
আসিফ আসছেনা দুপুর হয়ে গেলো,সে কি তাদের বাড়ি থেকে খেয়ে আসবে নাকি আজ আসবেই না?
তার পথ চেয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল রিনি।কেউ তার মনের কথা বুঝলোনা।
আসিফ তার বাড়ি এসে আটকে গেছে। মা,বাবা মিলে তাকে বুঝাচ্ছে রিনিকে অবহেলা করা যাবেনা আর।সে আজ পর্যন্ত তাকে সবসময় অবহেলাই করে এসেছে।এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
রিনি একাকিত্বে ভুগবে সারাদিন।তাকে এই সময়ে পাশে থেকে আগলে রাখতে হবে।যত যাই হোক সে তো ওরই বিয়ে করা বউ।
তাদের ধারণা আসিফ রিনিকে ফেলে আবার শহরে চলে যাবে।
কিন্তু তারা কেউ তো জানেই না আসিফ নিজেই কাল থেকে রিনিকে নিজের দায়িত্ব করে নিয়েছে।চুপচাপ শুধু শুনে গেলো সে।
ওদিকে রিনি যে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে তা সে জানেনা।সে জানে রিনি হয়ত মাকে মনে করে বসে বসে মন খারাপ করছে।
——-
দাদির রান্না করা নেহারী খেয়ে সকলে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।তটিনি খেতে বসেও গিলতে পারছেনা।এত এত মশলা!
উনিশ বিশ হলেই তার রান্নার স্বাদ বদলে যাবে।দাদির মতন একই স্বাদের হবেনা।কি করা যায়!
তটিনিকে মুখটা কালো করে খেতে দেখে দাদি বললেন,’শোনো মেয়ে!এত ভাবার কিছু নাই।আমার মতন হতে হবে এমন কেনো বাধ্যবাধকতা নাই,তবে তুমি যদি আমার চাইতে ভাল করে রান্না করতে পারো সেটা হবে দেখার বিষয়। ‘

বাপ্পি চেয়েছিল তটিনিকে সামনে বসিয়ে রেখে প্রাণভরে দেখবে কিন্তু তা আর হলো কই!দাদি মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।তটিনির অপেক্ষায় রুমেই সারা দিন কেটেছে বাপ্পির।তটিনি ফিরলো তাও একেবারে দুপুরের দিকে।
বাপ্পি দরজার দিকে তাকাতে তাকাতে তার প্রায় চোখ ঝাপসা হয়ে গভীর ঘুম এসে গেছিলো।তটিনির হাতে দাদির বানানো খাবার।বাপ্পি খেতে আসেনি,কেউ ডাকেওনি কারণ সবাই মনে করেছিল ও হয়ত ঘুমাচ্ছে।আসলে সে তো তটিনির অপেক্ষায় সময় গুনছিল।তটিনি রুমে এসে দেখে বাপ্পি চোখ নড়াচড়া করছে,অনেক কষ্ট করে চোখ খুলে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।

‘সাহেব আপনার খাবার’

এরকম করে বাড়ির বাকিরা কথা বলে তাই বাপ্পি এক মূহুর্তের জন্য ভেবেছিল হয়ত বাড়ির কাজ করা কেউ একজন এসেছে।কারণ সে ছিল তটিনির চিন্তায় মগ্ন।

অনেকক্ষণ মোড়ামুড়ি করার পর যখন সে মাথা তুলে তাকালো তখন নিজের সহধর্মিনীকে হাতে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে অবাক হয়ে যায়।এই অপরুপ দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করার মতন না।

‘ আশ্চর্য! আজ কি শুধু চেয়ে চেয়েই দেখবেন?’

‘নাহ!’

‘তো?হাত থেকে খাবার নিয়ে যান।আমি কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো?’

বাপ্পি থতমত খেয়ে উঠে এসে তটিনির হাত থেকে খাবারের ট্রেটা নেয়া ধরতেই ওখানে হাজির হলেন মা।
মাকে দেখে তটিনি তাড়াতাড়ি মাথার ঘোমটা টেনে এক পাশে দাঁড়িয়ে পড়েছে।

মা রুমে ঢুকে আগে বাপ্পিকে চেয়ে দেখলেন এরপর তটিনিকে।
তটিনি ভয়ে কিছু বলছেনা কারণ ওনার চোখ রাঙানো ছিল।

‘এভাবে ধমকিয়ে তুমি বাপ্পিকে খাবার দাও?এটা কেমন ব্যবহার তটিনি?আমরা তোমায় পছন্দ করে এনেছি বলে কি এর মান রাখবানা?আমি দেখে এসেছি শুরু থেকে তুমি বাপ্পিকে ধমকিয়ে কথা বলো।তুমি হয়ত ভুলে যাও সে তোমার স্বামী এবং বয়সে বড় হয়!’

‘না মা!!সে তো এমনি ঠাট্টা করছিল।ও আমায় যথেষ্ট সম্মান করে’

‘তুই চুপ কর!লাই দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছিস আর এখন নামাতেও পারছিস না।শোনো তটিনি!এভাবে করলে চলবেনা!আমার ছেলে হয়ত কিছু বলছেনা কিন্তু আমার গায়ে লাগছে এইসব।বকুল বলে এক কথা আর আমি তো তোমাদের ব্যবহার দেখে বুঝতে পারছি অন্য কথা।তুমি তোমার এই স্বভাব শীঘ্রই বদলাবে নয়ত আমি অন্য পন্থা অবলম্বন করবো।আর এখন তুমি বসে নিজের হাতে বাপ্পিকে খাইয়ে দিবে।বাপ্পি অসুস্থ ‘

এই বলে মা হনহনিয়ে চলে গেলেন।তটিনি বাপ্পির দিকে তাকাতেই ও ট্রে টেবিলের উপর রেখে নিজে বসে বললো,’আরেহ আমি নিজেই খেতে পারবো।তুমি রেস্ট নাও’

‘নাহ!আর কষ্ট করতে হবেনা।দিন আমি আদর করে খাইয়ে দিচ্ছি’

এই বলে তটিনি তেড়ে এসে বাপ্পির কোলে বসে পড়লো।তারপর বাটি হাতে নিয়ে লোকমা বানিয়ে ওর মুখ টিপে গালে লোকমা ভরে বললো,’নাও সোনাবাবু খাও।আর তোমার মাকে গিয়ে বলো মা জানো বউ আমায় সোহাগ করে অনেক।’
———
আসিফ ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গেছে।সে আসার সময় তাদের বাগানের সরষে ফুল এক থোকনা ছিঁড়ে এনেছে রিনির জন্য।রিনির নাকি সরষে ফুল ভীষণ পছন্দের।এর আগে সে রিনির পছন্দ অপছন্দ নিয়ে এত ভাবতোনা।এখন থেকে ভাববে।
সে কারণেই এই ফুল আনা।বাড়ির বাহিরে ওকে কোথাও না দেখে আসিফ রিনির বড় ফুফুকে বাড়ির ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করে সে কোথায়।ফুফু জানায় রুমে শুয়ে আছে আর কাঁদছে।
আসিফের মন খারাপ হলো রিনির কান্নার কথা শুনে।
সে ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে রিনির রুমের কাছে এসে দরজাটা আলতো করে ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো সেটা।

‘রিনি?ভাল আছিস?’

ওমনি বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে রিনি আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।সারাটাদিন কাঁদলেও এতক্ষণ সে চুপচাপই ছিল।আসিফকে দেখে ব্যাথা যেন আবার নতুন হয়ে গেছে তার।ওকে ধরে ব্যাথা কমানোর চেষ্টায় আছে সে।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here