#আমাকে_ঘুড়ি_ভেবে_ওড়াস_না ।।৭।।

0
184

#আমাকে_ঘুড়ি_ভেবে_ওড়াস_না
।।৭।।
বিশ্রী পচা গন্ধে নাড়ি উলটে আসার জোগাড়। উদয়ের মেজাজ রীতিমত আকাশে উঠে যাচ্ছে।
কোথায় বাসায় গিয়ে রিল্যাক্স করবে, তা না এই গাড্ডায় বসে আছে!
“ইস, কি গন্ধ! এই এটা কীসের গন্ধ রে?”
“তোর মাথার!” ঝাঁঝিয়ে উঠল উদয়।
“এভাবে কথা বলতেছিস কেন?”
“তাহলে কীভাবে কথা বলতে হবে তোর সাথে? কী ভেজাল বাধাইছিস কোনো আইডিয়া আছে তোর?”
উদয়ের দিকে বড় বড় চোখ করে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে রইল জিনিয়া। তারপর উঠে দাঁড়াল।
“এই কী করিস?” উদয়ের কণ্ঠে আতঙ্ক।
“তুই চলে যা! আমার যা হবে আমি বুঝে নিব!”
“এই বস! পাগলামি করিস না!” জিনিয়ার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলো উদয়।
গলা নামিয়ে বলল, “এই পচা সবজির গন্ধ, মানুষের পেশাবের গন্ধ…”
“ইয়াক! কোথায় আমরা?”
“আমার ধারণা হাতির পুল বাজারের পেছন দিকটায়।“
“এখানে তো আর থাকতে পারছি না!” চটাস করে চাপড় দিয়ে কানের কাছে পিন পিন করতে থাকা একটা মশা মারল জিনিয়া।
“আচ্ছা, তোর ওড়নাটা দিয়ে মাথায় কাপড় দে ভালো করে।“
“কেন?”
“আহ! দিতে বলছি দে।“
ওড়নার ভাঁজ খুলে বড় করে কান মাথা ঢেকে পেঁচিয়ে নিল জিনিয়া। নিজের ঘাড়ের ব্যাগ খুলে একটা প্যাকেট থেকে একটা কালো শার্ট বের করে টি শার্টের ওপরে পরে নিল উদয়। শার্টটা আজকেই কিনেছে, পছন্দ হয়ে গিয়েছিল খুব। এখন চমৎকার কাজে লেগে গেল।
“ব্যস, আমাদের গেট আপ চেঞ্জড, এখন ওরা আমাদের দেখলেও চিনতে পারবে না!” জিনিয়ার দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট স্বরে বলল উদয়।
তারপর উঠে দাঁড়িয়ে আড়মোড়া ভাঙল। এতক্ষণ বসে থেকে থেকে শরীরটায় জ্যাম ধরে গেছে।
উঠে দাঁড়াল জিনিয়াও।
“খুব আস্তে আস্তে হাঁটবি, কারো যেন কোনো রকম সন্দেহ না হয়!” গলা নামিয়ে বলল উদয়।
“ওরা কি আছে এখনো?” জিনিয়াও বলল গলা নামিয়ে।
“নাহ, কার এত ঠেকা পড়ছে!”
মোটামুটি নীরবতা নেমে এসেছে রাস্তায়, রাজধানীতে পিন পতন নিস্তব্ধতা কখনোই নামে না। রাস্তার এক পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে বড় রাস্তার দিকে যাচ্ছিল ওরা, মেইন রোডে গেলে কিছু না কিছু ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যাবে এই আশায়।
আচমকাই ওদের গা ঘেঁষে থামল টহল পুলিশের একটা ভ্যান, ঘটনার আকস্মিকতায় প্রায় চিৎকার করে উঠল জিনিয়া।
“এই, কে আপনারা? কী করেন এত রাতে?”
দুশ্চিন্তায় গলা বুক সব শুকিয়ে যাচ্ছে জিনিয়ার, শক্ত করে উদয়ের হাত চেপে ধরল ও। তবে উদয় অনেকটাই স্বাভাবিক, জিনিয়ার আঙুলে মৃদু চাপ দিয়ে আশ্বস্ত করল যে সব কিছু ঠিক আছে।
“বউ রাগ করে চলে গেছিল বাপের বাড়ী, ওকে আনতে গেছিলাম!”
“ফাজলামি কর আমাদের সাথে?”
আপনি থেকে নিমেষেই তুমি সম্বোধনে নেমে এলেন উনি।
“না স্যার, সত্যি! আমি আনতে যাওয়ার পরে ও আসবে না বলে বের হয়ে চলে গেল! তারপর আমি আবার খুঁজতে বের হলাম! অনেক কষ্ট করে খুঁজে পাইছি স্যার!”
“তোরা হাজব্যাণ্ড ওয়াইফ? তোদের দেখে মনে হয়?”
আঁতকে উঠল উদয়। এক ঝটকায় তুমি থেকে তুইতে নেমেছে সম্বোধন।
“কী করব স্যার…ওর দাদী মৃত্যুশয্যায় ছিল! নাতিন জামাই দেখতে চাইলেন…”
জিনিয়া তাকিয়ে আছে হাঁ করে। একের পর মিথ্যা বলেই যাচ্ছে উদয়।
“কাবিননামা আছে? কাবিননামা কই? বের করে দেখা!”
“কাবিননামা নিয়ে তো বের হইনি স্যার! আমি কেমনে জানব যে ও এই কাজ করবে!”
“নেশা করে হাঁটতেছিস আবার উলটা পালটা কথা?”
“কই নেশা করলাম স্যার? আমরা ভালো ফ্যামিলির ছেলে মেয়ে!”
“এই পকেট চেক করে দেখ তো, কিছু পাওয়া যায় কিনা!”
চেক করার নামে পকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিতে পারে, জানা আছে উদয়ের। তাই সে পিছিয়ে গেল এক পা।
“এই কাজটা করবেন না স্যার! আমি জব করি, আমার বউ পড়াশোনা করে! আমাদের প্রবলেম হয়ে যাবে স্যার!”
“এই গাড়িতে উঠ! তোদের আলাদা আলাদা জেরা করব। তাহলেই বের হয়ে যাবে কেমন হাজব্যাণ্ড ওয়াইফ তোরা!”
“এমন করবেন না স্যার প্লিজ! কালকে অফিস আছে আমার, ওরও ক্লাস আছে…”
“বাসায় ফোন কর! আমি কথা বলব তোদের গার্জিয়ানের সাথে!”
আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে পকেট থেকে ফোন বের করল উদয়। ডায়াল লিস্টে উপরেই ছিল আম্মুর নাম্বার।
একটা রিং হতেই ধরল আম্মু। ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই হড়বড় করে বলল উদয়, “আম্মু শুনো, জিনিয়া হারায়ে গেছিল না? জিনিয়াকে খুঁজে পাইছি! আসতেছি আমরা! তোমরা ঘুমিয়ে যেও না, আর ঘুমালেও ফোন সাইলেন্ট করো না! আর আমাদের জন্য খাবার রেখো! এসে খাব আমরা!”
আম্মু সবকিছু শুনে চুপচাপ বলল, “আচ্ছা!”
ফোনটা কেড়ে নিলেন পুলিশ অফিসার। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলেন নাম জ্বলজ্বল করছে “আম্মু”
ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফোনটা কানে লাগিয়ে বললেন, “আপনার ছেলে বউকে খুঁজতে বের হয়েছিল?”
ওপাশ থেকে আম্মু কী বলল শুনতে পাচ্ছে না উদয়। পুলিশ অফিসার আবার বললেন, “এত অল্প বয়সে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন কেন?”
জিনিয়া করুণ মুখে তাকাল উদয়ের দিকে। উদয়ও ওর দিকে তাকাল ক্রুদ্ধ চোখে।
কে জানে আজকে কী আছে কপালে! মেরে আস্ত রাখবে না আব্বু।
আম্মুর উত্তর শুনে জোরে জোরে হাসতে লাগলেন পুলিশ অফিসার।
“আচ্ছা ঠিক আছে, আমি ছেড়ে দিচ্ছি ওদের! আপনি ওদের বলে দেবেন যেন রাত বিরাতে এভাবে হাঁটাহাঁটি না করে। সময়টা তো খারাপ।“
ফোন কেটে ফোনটা ফিরিয়ে দিলেন উনি।
“নামায়ে দিয়ে আসব তোমাদের?”
যাক, সম্বোধন আবার তুমিতে উঠেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল উদয়।
“না স্যার, ঠিক আছে! আমরা চলে যেতে পারব!”
“কীভাবে যাবে?”
“আমি উবার কল করে নিচ্ছি স্যার!”
ভাগ্য ভালো উবার পাওয়া গেল একবারেই। এই বুদ্ধিটা আগে কেন মাথায় আসেনি কে জানে?
বাসায় যাওয়ার পথে পুরো রাস্তা জিনিয়ার সাথে একটা কথাও বলল না উদয়। জিনিয়া একবার কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়েছিল, কিন্তু উদয় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থেকেছে।
দুই চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়াচ্ছে জিনিয়ার। কী যে বিপদে ফেলে দিলো সে উদয়কে!
ওদিকে তার নিজের বাসার কী অবস্থা তা কে জানে? আম্মু আব্বুকে কি ফোন করে জানিয়ে দেবে যে সে সেফ আছে?
ফোন অন করতে গিয়েও থেমে গেল জিনিয়া। সাহস হচ্ছে না।
থাক, সকালেই ফোন করবে নাহয়!
বাসায় পৌঁছে কলিং বেল বাজিয়ে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে রইল উদয়। মনে হয় জেগেই ছিল সবাই।
বাইরে থেকেই শোনা যাচ্ছে ভেতরের কথাবার্তার আওয়াজ।
আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে বলল, “তুই নাকি বিয়ে করে ফেলছিস?”
“আম্মু, আগে ভেতরে ঢুকতে দাও! আমি বিয়ে করে ফেলি নাই। জিনিয়া একটা প্রবলেমে পড়েছিল। ওকে সেখান থেকে আনতে গিয়ে রাস্তায় পুলিশের হাতে পড়ছিলাম। সেই জন্য বাধ্য হয়ে বলতে হইছিল যে ও আমার ওয়াইফ!”
এতক্ষণ উদয়ের পেছনে লুকিয়ে ছিল জিনিয়া। উদয়ের আম্মু দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ানোয় এক পা এগিয়ে বাসায় ঢুকল উদয়।
সরে গেল জিনিয়ার সামনের আড়াল। উদয়ের আম্মু ভালো করে দেখে নিলেন তাকে।
জিন্সের সাথে লাল একটা ফতুয়া পরা, সোনালি রঙের একটা ওড়না দিয়ে কান মাথা প্যাঁচানো। ঠোঁটে বোধহয় লিপস্টিক ছিল, এখন হালকা হয়ে গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে দুই চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে মেয়েটা। জিজ্ঞাসাবাদ এখন করবেন নাকি পরে করবেন ভাবতে ভাবতে পরে করাই সমীচীন বলে মনস্থ করলেন তিনি।
“আসো, ভেতরে আসো! আমাদের তো এক্সট্রা রুম নাই। তোমাকে উদিতার সাথে রুম শেয়ার করতে হবে। প্রবলেম হবে না তো?”
ঝর ঝর করে কেঁদে ফেলল জিনিয়া।
(প্রিয় পাঠক গল্পের প্লট সাজাতে ডিটেইলিং করতে যেটুকু সময় লাগে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে আপনি একটা সুন্দর মন্তব্য করে লেখককে উৎসাহিত করতে পারেন। একটা গঠনমূলক মন্তব্য লেখককে যেমন অনুপ্রাণিত করে নেক্সট, next, nxt, N, F এই জাতীয় মন্তব্য লেখার আগ্রহ ঠিক ততটাই কমিয়ে দেয়। আর গল্পটা পড়তে ভালো লাগলে আমার বই সংগ্রহ করতে পারেন। প্রাপ্তি স্থান কমেন্ট সেকশনে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here