#আমাকে_ঘুড়ি_ভেবে_ওড়াস_না
।।৮।।
গোগ্রাসে খাচ্ছে উদয়। এত হাপুস হুপুস করে না খেলেও খাচ্ছে জিনিয়াও।
খিদের দোষ নেই। রাত তো আর কম হয়নি।
গালে হাত দিয়ে দুজনের সামনে বসে আছেন নাসরিন। কোন দিক দিয়ে কথা শুরু করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
জিনিয়ার সাথে উদয়ের কোনো ইটিশ পিটিশ নাই অবশ্য। থাকলে তিনি জানতেন।
উদয়ের সাথে একজনের একটু বেশিই কথা বার্তা হয় সেটা তিনি জানেন। কিন্তু সেই মেয়েটা জিনিয়া না।
এত দিন পরে এই মেয়েটা কোথা থেকে আসলো?
“প্লেটের খাবার তো শেষ, আর এক চামচ দেই?”
জিনিয়া মাথা নাড়ল সম্মতিসূচক। নাসরিন জিনিয়ার প্লেটে বিরিয়ানি বাড়তে বাড়তে বললেন, “তোমার আম্মু আব্বু কেমন আছে?”
মাথা নাড়ল জিনিয়া। “ভালো আছে।“
“আর ডালিয়া?”
“আপুও ভালো আছে।“
“বিয়ে হয়েছে?”
“হ্যাঁ, আপুর ছেলে হয়েছে তো!”
“ও আচ্ছা, দাওয়াত দিয়েছিল তোমার আম্মু, ভুলেই তো গিয়েছিলাম! ছেলে যেন কী করে?”
“ডাক্তার।“
“ডালিয়াও তো ডাক্তার, তাই না?”
“জি।“
“তা তোমাদের ঘটনাটা কী? তুমি এতদিন পরে ওকে কীভাবে খুঁজে পেলে?’
জিনিয়া অসহায়ভাবে তাকাল উদয়ের দিকে। উদয় পানির গ্লাস থেকে এক চুমুক পানি খেয়ে বলল, “আমাদের কোনো ঘটনা নাই আম্মু! ও বাসা থেকে রাগ করে বেরিয়ে আসছিল। তারপর আমি ওকে খুঁজে পাইছি, ব্যস!”
“হ্যাঁ এরকম তো হতেই পারে!” মৃদু মৃদু মাথা নাড়তে নাড়তে উদয় আর জিনিয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলেন নাসরিন। উদয় হাত তুলে বলল, “আম্মু প্লিজ! এখন ঝামেলা করো না তো! কোক স্প্রাইট কিছু আছে?”
“আছে, দিচ্ছি! জিনিয়া তুমি কোনটা খাবে? কোক না স্প্রাইট?”
“স্প্রাইট!” মৃদু স্বরে বলল জিনিয়া।
নাসরিন ফ্রিজের দরজা খুলতে খুলতে শুনতে পেলেন গলা নামিয়ে বলছে উদয়, “ইস, স্প্রাইট! আমি সময়মত না থাকলে স্প্রাইট খাওয়া বেরিয়ে যেত আজকে!”
নাসরিন মনে মনে ভাবলেন, হয়ত এরা সত্যি কথাই বলছে। কিন্তু কিছু একটা গোপন করে যাচ্ছে।
স্প্রাইটের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন, “নাও খাও। খেয়ে বাসায় ফোন কর।“
রীতিমত আঁতকে উঠল জিনিয়া। “আন্টি প্লিজ! আজকে ফোন না করলে হয় না?”
“তোমরা কী বুঝবা বাবা মা কত টেনশনে থাকে?”
“আজকে না আন্টি, প্লিজ! আব্বু মেরে ফেলবে আমাকে তাহলে!”
আবারও কেঁদে ফেলল জিনিয়া।
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে, কাঁদতে হবে না। কালকে সকালেই ফোন করো তাহলে। খাও এখন! আমি গিয়ে বিছানা টিছানা ঠিক করি, উদিতার বেডে এক্সট্রা বালিশ দিতে হবে তো!”
নাসরিন চলে গেলে উদয়ও উঠে গেল গেল হাত ধুতে, টেবিলে এসে বসল উদিতা।
“হাই আপু!”
“হ্যালো!” হাসতে চেষ্টা করল জিনিয়া।
“তুমি নাকি আমাদের নেইবার ছিলে?”
“হ্যাঁ, তুমি তখন ছোট তাই তোমার মনে নেই!”
“তোমার সাথে কি ভাইয়ার এফেয়ার নাকি?”
“না ওইরকম কিছু না!”
“না হওয়াই ভালো। একদম ফালতু একটা ছেলে!”
“ওই কী বলিস তুই আমার নামে?” টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াল উদয়।
উদিতা মুখ ভেংচে বলল, “যা সত্যি তাই বলি!”
“যা ভাগ এখান থেকে!”
উদিতা হয়ত আরো কিছু বলত। কিন্তু ও ঘর থেকে নাসরিন ডাকলেন, “উদি, কাঁথাটা রাখছিলাম যে আলমারির চাবিটা তোর কাছে ছিল না?”
“আসতেছি”, বলে চলে গেল উদিতা।
উদিতা চলে গেলে অদ্ভুত একটা অস্বস্তি এসে ভর করল জিনিয়ার মধ্যে। প্রচণ্ড লজ্জা লাগছে উদয়ের চোখে চোখ মেলাতে।
জিনিয়ার খাওয়া শেষ, উঠে দাঁড়াল ও। নিচু গলায় বলল, “থ্যাংকস!”
“আরে থ্যাংকস কেন? এনিথিং ফর ইউ!”
চোখ তুলে তাকাল জিনিয়া।
“তুই আমার ফ্রেণ্ড না? নো স্যরি, নো থ্যাংকস!”
হাসল জিনিয়া।
“তবে স্যরি বলাটা তোর উচিত, আংকেল আন্টিকে! কতটা ইমম্যাচিওরড একটা কাজ করছিস তুই বুঝতে পারছিস?”
মাথা ঝাঁকাল জিনিয়া।
“ঠিক হইছে কাজটা?’
মাথা নাড়ল জিনিয়া। “না।“
“এত টেনশন করিস না। আর কান্নাকাটিও করিস না। সকালে উঠে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। ওকে?”
“ওকে!”
“আরে এত দুঃখী দুঃখী মুখ বানায়ে রাখতে হবে না! একটু হাসি মুখে বল!”
হাসতে চেষ্টা করল জিনিয়া, “তুই খুব ভালো উদয়!”
শার্টের কলার উঁচু করল উদয়, “টেল মি সামথিং আই ডোন্ট নো!”
ও ঘর থেকে নাসরিন এসে দেখলেন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ওরা দুজন। গলা উঁচিয়ে বললেন, “জিনিয়া তোমার বিছানা করে রেখে আসছি!”
উদয় বলল, “আর আমারটা?”
“তুই কি গেস্ট নাকি?”
জিনিয়া চলে গেলে নাসরিন এগিয়ে এসে বললেন, “শোকর কর যে তোর বাপ ঘুমায়ে গেছে! যদি ঘুম থেকে উঠে শুনত না এসব…”
“তখনো তুমিই ম্যানেজ করতা, আমার লক্ষ্মী আম্মু!”
“যা সর সামনে থেকে! টেইলার্স থেকে আমার ব্লাউজগুলি এনে দিতে বলতেছি কবে থেকে…”
“কালকেই এনে দিব মাম, ডোন্ট ওরি!”
——————————————————————————————————————————
জিনিয়ার ভার্সিটির গেটের উলটো দিকে একটা টং দোকান, গত সাইত্রিশ মিনিট ধরে সেখানে ঝিম ধরে বসে আছে আশিক। জিনিয়ার ক্লাসের একজনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, ওর ফেসবুক প্রোফাইলের সূত্র ধরেই।
ওর নাম রাইসা, জিনিয়া ওর জন্মদিনের পার্টিতে গিয়েছিল। ধারণা করা যায় ওর সাথে জিনিয়ার ঘনিষ্ঠতা থাকার কথা। হয়ত বা কিছু জানলেও জানতে পারে সে।
জিনিয়ার প্রোফাইল পিকচার আর কাভার ফটোতে রাইসার কমেন্ট দেখেই নক করেছিল আশিক, মেসেজ করে জানিয়েছে পাওয়া যাচ্ছে না জিনিয়াকে। দেখা করতে রাজি হয়েছে মেয়েটা।
কথা ছিল ঠিক নয়টা চল্লিশে বের হবে মেয়েটা। প্রথম ক্লাস শেষ নয়টা চল্লিশে।
এখন বাজছে নয়টা তেইশ। মামি তাকে দেখলে কোনো না কোনো কাজ ধরিয়ে দেবেন, সেই টেনশনে আগে আগেই চলে এসেছিল আশিক।
এসে হিসাব ছাড়া চা খেয়ে ফেলেছে কাপের পর কাপ। এখন আবার তলপেটে চাপ বোধ করছে।
এদিকে আশিকের ফোনে ক্রমাগত ফোন আসছে মামির, রিসিভ করছে না সে। রিসিভ করলেই একটা না একটা কাজ ধরিয়ে দেবেন মামি।
অবশেষে গেট দিয়ে বের হয়েছে মেয়েটা, তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে উঠে দাঁড়াল খেয়ে আশিক।
“কয় কাপ হইছে?”
“সতের কাপ!”
মনে মনে নিজের মুণ্ডু পাত করতে করতে চায়ের বিল মিটিয়ে এগিয়ে গেল আশিক। যে মেয়েটা এসেছে তার নাম রাইসা।
“আপনি আশিক, রাইট? জিনিয়ার কাজিন!”
সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল আশিক।
“বলেন কী জানতে চান?”
“জিনিয়া তো কারো সাথে মিশত না, কোথাও যেত না। আপনারা কেউ কিছু জানেন কিনা…”
“কী জানব আমরা?”
“না মানে…ও মিসিং হওয়ার ঠিক আগে আগে বাসায় মনে হয় একটা বিয়ের কথা হওয়ার কথা ছিল। ঠিক সেই সময় ওর মিসিং হওয়ার ঘটনায় আমরা ভাবছি ওর কোনো বয়ফ্রেণ্ড আছে কিনা…”
“জিনিয়া ছেলেদের সঙ্গে কথা বলত না!”
“আর ইউ শিওর?”
“হাণ্ড্রেড পারসেন্ট!”
“ওহ!” হতাশ হলো আশিক।
লাভ হলো না। কিছু ক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ঘুরে চলে যাচ্ছিল রাইসা, কী মনে করে পেছন থেকে ডাকল আশিক, “শোনেন!”
ঘুরে তাকাল রাইসা। “আর কিছু বলবেন?”
“আমার নাম্বারটা রাখেন। যদি কোনো কিছু মনে করতে পারেন, যে কোনো এবনরমাল কিছু কিংবা এমন কোনো কিছু যেটা থেকে আমরা কোনো হিন্ট পেতে পারি আমাকে জানাবেন প্লিজ?”
“হ্যাঁ নিশ্চয়ই জানাব!” নাম্বারটা সেভ করল রাইসা। “আপনি জিনিয়াকে খুব পছন্দ করেন তাই না?”
এ প্রশ্নের উত্তর দিলো না আশিক। চাঁদকে তো সবাই পছন্দ করে, চাঁদের পানে চেয়ে থেকেও অনেক ফুল ফোটে বাগানে, তাতে চাঁদের কীইবা এসে যায়?
“আর জিনিয়ার মিসিং হওয়ার খবর কাউকে বলার দরকার নাই। প্লিজ!”
“আচ্ছা, আমি বলব না!” মাথা নাড়ল রাইসা। “আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন।“
রাইসার সাথে কথা শেষ। আশিকের ফোনে ক্রমাগত ফোন আসছে মামির, রাইসাকে বিদায় জানিয়ে রিসিভ করল সে।
“হ্যালো” বলতেই রাগে ক্ষোভে রীতিমত ফেটে পড়লেন মামি।
“দরকারের সময় পাওয়া না গেলে আত্মীয় স্বজন দিয়ে আমার লাভ কী?”
“স্যরি মামি!”
“কোন রাজকার্য করতে গেছ?’
“একটু কাজে আসছিলাম! আসতেছি এখনই!”
“আসো তাড়াতাড়ি! তোমার মামা দরজার সাথে কপালে বাড়ী খেয়ে কপাল কাটছে! আমরা হাসপাতালে ড্রেসিং করতে আসছি!”
“আমি আসতেছি এখনই!”
(প্রিয় পাঠক গল্পটা ভালো লাগলে সংগ্রহ করতে পারেন আমার বই। প্রাপ্তি স্থান কমেন্ট সেকশনে।)