#আকাশেও_অল্প_নীল #পর্বঃ১৭ #আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

0
436

#আকাশেও_অল্প_নীল
#পর্বঃ১৭
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৪৯,
পরদিন সকালবেলায়, সাহিরা বেগমের বাসায় এসে পরেছে আজাদ সাহেব স্বপরিবারে। এসেই মাহাদের বাবা হাসান সাহেবের সাথে হাতে-হাতে বিয়ের আয়েজন শুরু করেছেন। একমাত্র পুত্রের বিয়ে উপলক্ষে বড় করে আয়োজন করার ইচ্ছে ছিলো উনার। কিন্তু মাহাদের কথায় মানুষজন তেমন দাওয়াত করেননি উনি। শুধু নিজের ভাইবোন, তাদের সন্তান-সন্ততিদেরই আনাগোনা দেখা যাচ্ছে বাসায়। রাইমা মানুষের মাঝে থাকতে পারেনা, তার প্রচুর অসস্তি হয়। বাসায় এতো অল্প মানুষ থাকা সত্বেও তার বাসার কোথাও মন টিকছেনা। ইচ্ছে করছে এক ছুটে বাসায় চলে যেতে। শার্লিনকে সাথে করে নিয়ে এসেছে, তবুও তার মন টিকছেনা এখানে। অথচ নিজেদের সস্তিকর জায়গায় দু বান্ধবী থাকলে আর কাউকে লাগে না। মাহাদের বাবার পক্ষের আত্মীয় স্বজনদের দেখেই তার অসস্তি বোধ জাগ্রত হয়েছে। এখানে আসার পর নিজের খালামনির রুম দখল করে নিয়েছে রাইমা। শার্লিন আগেভাগে ওয়াশরুমে ঢুকেছে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। সে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই রাইমা উঠে দাড়ায়। শার্লিন তোয়ালে দিয়ে হাতমুখ মুছতে মুছতে বলে,

“বইনে, বাসায় যাবি কবে? আমার একদণ্ড মন টিকছেনা।”

“তোরে অকারণে আমার আত্মা বলি না বইনে, আমারও মন টিকতেছে না। অথচ মাহাদ ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে আমার কতো স্বপ্ন ছিলো। বইনে চল পালাই এখান থেকে।”

রাইমা বললো। শার্লিন হেসে দেয় রাইমার কথায়। রাইমা ভ্রুকুটি করে বলে,

“হাসছিস কেন?”

“পালানোর কথা শুনে? কার সাথে পালাবো? আমরা দুজন মেয়ে মানুষ পালিয়ে কি হবে? কেউ তো কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। চল।ইফরাদ আর দিগন্ত ভাইকে খবর দিই। ওদের সাথে পালিয়ে মাহাদ ভাইয়ের আগে বিয়ে করে নিই!”

“একটা থাপ্প’ড় খাবি তারছিড়া মহিলা।”

“বিয়ে করলাম না, বাচ্চা হলো না, দাদী হলাম না, নাতী-নাতনীর ঘরের পুতি দেখা হলো না। তুই আমায় মহিলা বানিয়ে দিলি?”

“ফালতু কথা কম বল। বোসে থাক রুমে, কোথাও যাবিনা। আমি ফ্রেশ হই৷”

৫০,
রাইমা চলে গেলো ফ্রেশ হতে। শার্লিন লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে ব্যাগ হাতড়ে কাপড় বের করলো। দুপুরের পরপর মাহাদকে হলুদ ছোয়ানো শুরু হবে। কথা ছিলো মেয়েপক্ষ থেকে কেউ আসবেনা। ছেলেপক্ষ থেকেও মেয়েপক্ষের বাড়ি যাওয়া হবে না। শুধু কাজিন ক’জন মিলে একটু আনন্দ করতে এই আয়োজন। কিন্তু দিগন্ত পরে যে কয়েকজন হয়, গিয়ে স্নেহাকে হলুদ ছুইয়ে আসতে বলেছে। সেজন্য এতো তাড়াতাড়ি সব আয়োজন শুরু করা। নয়তো বিকাল বেলায় সবাই আনন্দে মেতে উঠতো। শার্লিন হলুদের জন্য কেনা শাড়ি, অর্নামেন্টস বের করে গুছিয়ে রাখে বিছানায়। নিজের টার সাথে রাইমার গুলোও বের করে। রাইমা একেবারে গোসল দিয়েই বের হলো। গরমের আভাস পরে গেছে চারপাশে। বাসায় যে মানুষ, পরে গোসল করার জন্য সিরিয়াল পায় কি পায় ভরসা নেই। শার্লিন ইফরাদের সাথে ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো। মাহাদ ইফরাদকেও স্পেশালি আলাদা করে দাওয়াত দিয়েছে পরিবার সহ। শার্লিনের পরিবারকেও বলা হয়েছে। কিন্তু আজ শুধু মেসবাহ আসবে হলুদের সময়। আগামীকাল বিয়েতে পুরো পরিবার সহ আসবে সব। রাইমা বের হতেই শার্লিন ফোন রেখে দেয়। রাইমা তা দেখে বললো,

“বের হয়ে কথা বলায় ডিস্টার্ব করলাম নাকি?”

“না, কথা বলা শেষ বলে রেখে দিলাম। কখন আসবে শুনতে ফোন দিয়েছিলাম।”

“তো কখন আসবে ইফরাদ ভাই?”

“হলুদ ছোয়ানো শুরু হওয়ার আগেই।”

“আচ্ছা। কিন্তু বিছানার উপর সব ছড়িয়ে রেখেছিস কেনো?”

“আমি তো শাড়ি পরতে জানিনা। কতো টা সময় লাগবে কে জানে! সেজন্য আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছি। হাতের কাছে যেনো সব পাওয়া যায় এজন্য।”

“আমি শাড়ি পরাতে জানি। চল তোকে রেডি করি আগে। এরপর আমি রেডি হবো।”

“ঠিক আছে বইনে।”

রাইমা হাসে শার্লিনের কথা বলার ধরণ দেখে। এই মেয়েটা আছে বলেই তার মন খারাপ হয়না। রাইমা ব্যস্ত হয়ে পরে শার্লিনকে সাজাতে৷ শাড়ি পরিয়ে চুল বেঁধে হালকা একটু মেকআপ করিয়ে দেয়। মেকআপ জিনিসটা তার পছন্দ না হলেও কোনো অনুষ্ঠান বাধলে বা ঠ্যাকা কাজ পারি দিতে একটু আকটু শিখেছিলো সে। যার দরুণ আজ সহজেই সাজাতে পারলো শার্লিনকে। শার্লিনকে সাজানো শেষে রাইমা মুগ্ধ হয়ে বলে,

“মাশাআল্লাহ আমার আত্মার সাথী। আপনাকে কি সুন্দর লাগছে।”

শার্লিন মুচকি হেসে মাথা নিচু করে নেয়। মুখটা মুহুর্তে লাজরাঙা হয়ে উঠে। রাইমা শার্লিনকে লজ্জা পেতে দেখে হাসে। হেসে বলে,

“বাহ আমার আত্মা আবার লজ্জা পেতেও জানে।”

“তোর মতো বান্ধবী থাকা ভাগ্যের বিষয় জানিস! তোর আমার বন্ডিং টা আজীবন এমন অটুট থাকুক। তোর চোখে আমার জন্য মুগ্ধতা দেখতে পাই। কিছু বান্ধবী থাকে, যারা মুখে ভালোবাসা দেখায়, অন্তরে হিংসা প্রতিপালন করে। আমি হয়তো কিছু একটা ভালো কাজ করেছিলাম, যার দরুণ আমার রব আমায় তোকে পাইয়ে দিয়েছেন।”

“সেইম টু ইউ বান্ধবী। এবার আমায় শাড়ি পরতে একটু সাহায্য কর। বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু শাড়ির কুচি ধরবি।”

“ঠিক আছে বান্ধবী।”

রাইমা নিজেও চট করে শাড়িটা পরে নেয়। এরপর কিছু একটা মনে হতেই শার্লিনকে বলে,

“মাহাদ ভাইয়ের থেকে তার ফোন টা এনে দিতে পারবি?”

“মাহাদ ভাই কোথায় কি কাজে ব্যস্ত আমি তো জানিনা রাই।”

“বাসাতেই দেখ, পেলে আনিস। না পেলে থাক, চলে আসবি।”

“ওকে।”

শার্লিন বেরিয়ে পরে মাহাদকে খুজতে। সফলও হয়। মাহাদ ড্রইং রুমে সব আত্মীয় স্বজনকে সকালের খাবার খাওয়াতে হাতে হাতে সাহায্য করছিলো। শার্লিন গিয়ে একটু সাইডে ডাকে। মাহাদ আসতেই বলে,

“রাই আপনার ফোন টা চেয়েছে মাহাদ ভাই।”

৫১,
মাহাদ নিশব্দে হাসিমুখে পকেট থেকে ফোন বের করে দেয়। শার্লিন ফোন টা এনে রাইমার হাতে দেয়। রাইমা ফোন টা নিয়ে কন্টাক্ট লিস্ট হাতড়াতে থাকে। শার্লিন বিছানার এক কোণায় বসে রাইমার কান্ড দেখছে। রাইমা কন্টাক্ট লিস্ট ঘেটে দিগন্তের নাম্বারে ফোন দেয়। দিগন্তের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে, অথচ দিগন্তের নাম্বার তার কাছে নেই! বিষয়টা হাস্যকর লাগছে রাইমার কাছে। কিন্তু কি করার! লোকটার সাথে ঝগড়া ছাড়া তো ভালো মন্দ দুটো কথাও সেভাবে হয়নি কখনও! নাম্বারটা নিবে কি করে? দিগন্তের নাম্বার খুজে পেতেই সে কল দেয় দিগন্তকে। দুটো রিং হতেই দিগন্ত কল রিসিভ করে। ওপাশ থেকে দিগন্তই আগে সালাম দেয়, দিয়ে বলে,

” হ্যাঁ মাহাদ ভাই বলুন!”

“আমি মাহাদ ভাই নই।”

দিগন্ত থমকে যায় ফোনের ওপরপাশে নারী কণ্ঠ শুনে। মেয়েটার গলার স্বর রাইমার মতো। সে কোনোমতে জিগাসা করে,

“রাইমা খন্দকার?”

“হ্যাঁ।”

“হঠাৎ আমার কাছে কল দিলেন! সেটাও মাহাদ ভাইয়ের নাম্বার দিয়ে!”

“আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”

“বলুন, আমি শুনছি।”

“আচ্ছা, পরে লজ্জা দেবেন না ঠিক আছে!”

“ওকে, আপনি আমার সামনে নেই যে লজ্জা দিবো।”

রাইমা মৃদু হাসে। শার্লিন বুঝতে পারলো দিগন্তের সাথে কথা বলছে রাইমা। নতুবা মাহাদের ফোন দিয়ে আর কাছেই বা ফোন দিয়ে এসব বলবে? শার্লিন রাইমাকে স্পেস দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাইমা শার্লিনকে বেরিয়ে যেতে দেখেও কিছু বললো না। রাইমা চুপ দেখে দিগন্ত বলে,

“কি হলো! চুপ যে?”

“আচ্ছা আপনি আমায় কি রকম সাজে পছন্দ করবেন?”

“আসলে আমি আপনাকে কোনো সাজেই পছন্দ করবো না।”

দিগন্ত নিজের হাসি চেপে উত্তর দেয়। মেয়েটার আসলেই মাথায় সমস্যা। নয়তো ফোন দিয়ে কেউ এই প্রশ্ন করে! রাইমার দিগন্তের উত্তরে মেজাজ খারাপ হয়। লোকটা আস্তো তিতা নিমপাতা৷ মুখে একটু ভালো কথা নেই। রাইমা নিজের মেজাজ শান্ত করার চেষ্টা করে বলে,

“আপনার হবু বউ আমি, আর আমায় কোনো সাজেই পছন্দ করবেন না?”

“না করবোনা।”

“কথাটা না সায়ন্তিকার কথার মতো হয়ে গেলো।”

“সায়ন্তিকা কে?”

“এই আপনি কোন গ্রহে থাকেন? সায়ন্তিকাকে চিনেন না?”

“আমার জানামতে এই নামে আমার পরিচিত কেউ নেই যে চিনবো!”

“অবশ্য আপনার মতো মানুষ যে নিজেকে চিনেনা, সে মানুষকে কি করে চিনবে? সায়ন্তিকা ভারত বাংলা ছবির নায়িকা। ওর একটা ছবি আছে, পাওয়ার। সেই ছবিতে সায়ন্তিকাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসে পাত্র জিগাসা করেছিলো, যে পাত্রকে সায়ন্তিকা কোন সাজে পছন্দ করবে! সায়ন্তিকা উত্তর দিয়েছিলো, পাত্রকে সে পছন্দই করবেনা৷ আপনারও কি একই অবস্থা নাকি? আমায় পছন্দ না আপনার? আপার কথায় বিয়ে করছেন? এমন হলে আগেই বলে দেন। আমি আমায় পছন্দ না এমন লোককে বিয়েই করবোনা।”

রাইমা একদমে কথাগুলো বলে। দিগন্ত ফোনের এপাশে একদম থতমত খেয়ে যায়। তার মুখটা জাস্ট দেখার মতো হয়েছে। সে কি বললো, আর এই মেয়ে তার কথার কি মানে বের করে কতো ইতিহাস শুনিয়ে দিচ্ছে। রাইমা দিগন্তের উত্তর না পেয়ে ক্ষেপে বলে,

“কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?”

“ক্ষমা করেন ম্যাম। আমার ঘাট হয়েছে ওভাবে বলা। আপনাকে আমার এমনিতেই নরমাল যে রকম থাকেন, ওভাবেই পছন্দ। আমি কোনো মেয়েকে কখনও বলতে যাইনি, তারে এই সাজে, বা এরকম সাজলে সুন্দর লাগবো! এজন্য বলেছি কোনো সাজে পছন্দ করবো না। কিন্তু এটা বলিনি আপনাকে আমার পছন্দ হয়না। তবুও বলছি, শাড়ি কিনেছেন, সেটা পরুন, চুল ছেড়ে একপাশে ৩-৪টা তাজা গোলাপ গুজে দিন। একদম মেক আপ করবেন না। শুধু হালকা রঙের লিপ গ্লোজ লাগাবেন। লিপস্টিক আমার পছন্দ না। গলায় আর কানে ছোট্ট সিম্পল অর্নামেন্টস আর একহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি, অন্য হাতে ঘড়ি। ব্যস, আমার অস’ভ্য হবু বউকে আমি এভাবেই দেখতে চাই। কোনো নারীকে বলিনি, এভাবে সাজতে, ওভাবে সাজতে। আপনাকে প্রথম বললাম। তাই এই সাজে পেত্নীর মতো লাগলেও আমার কিছু যায় আসেনা। আপনাকে এই সাজেই আমার কাছে মিষ্টিপরি লাগবে।”

দিগন্তও এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে কল কেটে দেয়। রাইমার মনের মাঝে ভালো লাগার একটা শীতল বাতাস বয়ে যায়। আমার অস’ভ্য হবু বউ, শব্দটা কানে ঝনঝনিয়ে বাজছে যেনো। এই লোকটা এমন কেনো! এমনিতে কথা বলে না, কিন্তু যা বলে মনের মধ্যে গেঁথে যায়। ইশশশ, কি সব ভাবছি, লজ্জা লাগছে কেনো! রাইমা নিজের চিন্তাভাবনা দেখে নিজেই হেসে ফেলে।

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক করিনি। আমার পড়াশোনা নিয়ে একটু চাপে আছি। বলবেন না ছোটো হয়েছে। মাইগ্রেন ক্ষণে ক্ষণে প্যারা দেয়। আমার জন্য দুয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here