#চোরাবালি_মন (পর্ব ২)

0
377

#চোরাবালি_মন (পর্ব ২)

১ম পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1472264229955266/

১.
তাহসান মনোযোগ দিয়ে নীলার ফেসবুক প্রোফাইলের ছবিটা দেখছে, এত ভালো লাগে মেয়েটাকে! দেখতেই ইচ্ছে করে। তাহসান এবার একটু স্ক্রল করতেই শাড়ি পরা ছবিটা দেখতে পায়। সেদিন এই শাড়িটাই ও পরে এসেছিল, কী যে সুন্দর লাগছে নীলাকে! তাহসানের একটু মন খারাপ হয়, নেহা কিছুতেই শাড়ি পরবে না। ও সবসময় সালোয়ার কামিজ পরে। মাঝে মাঝে যে এক আধটু শাড়ি পরতে হয়, কাজল দিতে হয় তা কে বলবে। তাহসান ছবিটা জুম করে দেখার চেষ্টা করে।

ঠিক তখন নেহার গলা পাওয়া যায়, ‘এই তোমার চা নাও। অত মনোযোগ দিয়ে কী দেখছ মোবাইলে?’

তাহসান দ্রুত হাতে ফেসবুকটা বন্ধ করে জিমেইলটা খোলে। বিরক্তির গলায় বলে, ‘আর বলো না, বাসায় এসেও শান্তি নেই। অফিসের একটা জরুরি মেইল এসেছে, তাই দেখছিলাম।’

নেহা চা টা হাতে দেয় তাহসানের, তারপর অসন্তোষের গলায় বলে, ‘তোমাদের এই ব্যাংকের চাকরিটাই বাজে। প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফিরবে, আবার এসেও অফিসের কাজ। এদিকে ছেলেটা যে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে তার খেয়াল আছে? ওকে একটু সময়ই দিতে পারো না তুমি।’

তাহসানের একটু অপরাধবোধ হয়। চা টা শেষ করে রুমনের রুমে ঢোকে, ছেলের টেবিলের পাশে খাটটায় বসে। তারপর হালকা গলায় বলে, ‘কি রে, তোর প্রিপারেশন কেমন? স্যাররা সব ঠিক মতো আসে তো?’

রুমন মাথা নাড়ে, বলে, ‘প্রিপারেশন মোটামুটি বাবা। কেমিস্ট্রিটা একটু কম বুঝি।’

তাহসান এবার বিপদে পড়ে, এসএসসি পর্যন্ত ওর সাইন্স ছিল। পরে কমার্সে চলে আসে। এখনকার ছেলেমেয়েদের এসএসসি সিলেবাস বেশ কঠিন। তাও ও আগ্রহ করে বলে, ‘দেখি তোর কেমিস্ট্রি বইটা।’

রুমন হেসে বইটা এগিয়ে দিতেই তাহসান একবার উল্টেপাল্টে দেখে। নাহ, মনে আছে এখনও। তাহসান এবার রুমনকে কেমিস্ট্রির বেসিক কিছু জিনিস শেখায়। একটা অদ্ভুত জিনিস আবিস্কার করে, ছেলেকে পড়াতে যেয়ে ওর কিছুক্ষণ আগের অপরাধবোধটা অনেকটা কেটে গেছে।

২.
নীলা ওর ডিপার্টমেন্টের সবাইকে নিয়ে বোর্ড রুমে একটা জরুরি মিটিং করছিল। ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে কোম্পানির খরচ অনেক বেড়ে গেছে, গ্রস প্রফিট ৫% কমেছে। কী করে এই ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া যায় তাই নিয়ে আলোচনা। কেউ বলছে অফিস খরচ কমিয়ে আনতে আর সাথে ওদের কোম্পানির প্রোডাক্টের দাম একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।

নীলা গম্ভীরমুখে শুনছিল আর সেই সাথে মাথায় চিন্তার ঝড় চলছিল। ঠিক তখন একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। নীলা কেটে দেয়। কিন্তু একটু পরে আবার ফোন আসতেই বিরক্তের সাথে ফোনটা ধরে। ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে, ‘ম্যাডাম, আপনার একটা পার্সেল আছে।’

নীলা ভ্রু কুঁচকায়, ও তো কোনো কিছু অনলাইনে অর্ডার করেনি। বিরক্ত গলায় বলে, ‘আপনি ভুল করছেন, আমি কিছু অর্ডার করিনি।’

ওপাশ থেকে লোকটা এবার অধৈর্য গলায় বলে, ‘ম্যাডাম, আপনার নাম নীলা চৌধুরী তো? আপনারই পার্সেল, টাকা দেওয়া আছে। আমি আপনার অফিসের নিচে আছি, কাউকে একটু পাঠিয়ে জিনিসটা নিয়ে যান।’

নীলা একটু থমকায়, লোকটার কথাতে মনে হচ্ছে কেউ ওকে সারপ্রাইজ দিতেই কিছু পাঠিয়েছে। কিন্তু কে? ঝট করে তাহসানের মুখটা ভেসে ওঠে, নিশ্চয়ই তাহসান। ঠোঁটটা একটু কামড়ে একটু ভাবে, তারপর একজন পিয়নকে ফোন করে নিচে পাঠায়। মিটিংয়ে উপস্থিত সবাই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারে, কেউ একজন বসের নামে কিছু একটা পাঠিয়েছে যেটা উনি জানতেন না। নীলা মনে মনে ভীষণ বিব্রত হয়, সেই সাথে তাহসানের উপর রাগ হতে থাকে।

মিটিংয়ের বাকি সময়টা একটা অস্থিরতায় কাটে। সেদিনের পর তাহসান অনেকবার দেখা করতে চেয়েছে, নীলা নানান কাজের বাহানায় এড়িয়ে গেছে। ওরও যে ইচ্ছে হয় না তা না, কিন্তু কেন জানি ওর মনে হচ্ছে ও একটু একটু করে তাহসানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।

মিটিং শেষে রুমে এসেই দেখে ওর টেবিলের উপর পার্সেলটা পড়ে আছে। এন্টিকাটার দিয়ে কাটতেই একটা বেগুনী রঙের শাড়ির পাড় দেখা যায়। নীলা এবার পুরো প্যাকেটটা কেটে শাড়িটা বের করে, বেগুনী রঙের অদ্ভুত সুন্দর একটা শাড়ি। শাড়িটার গায়ে হাত বোলাতে যেয়েই হাতটা থেমে যায়, নাহ, এটা ঠিক হচ্ছে না। তাহসান যদি সত্যিই এই শাড়ি পাঠায় তাহলে এটা খুব খারাপ হলো। অফিসের লোকজন ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করবে এটা নিয়ে। বিশেষ করে আলতাফ সাহেব হয়ত সবার সামনেই বলবে, ‘নীলার তো আর শাড়ি কিনতে হয় না।’
ভাবনাটা ভাবতেই আবার রাগ উঠে যায়, তখনই ফোন করে তাহসানকে। তাহসান ফোনটা ধরেই একটা দুষ্টুমি করতে যেতেই নীলা গম্ভীরমুখে বলে, ‘শাড়িটা আপনি পাঠিয়েছেন?’

ওপাশ থেকে তাহসান শংকিত গলায় বলে, ‘কেন, পছন্দ হয়নি?’

নীলা আর পারে না, রাগত সুরে একটু জোরেই বলে, ‘আপনি কেন আমাকে শাড়ি পাঠাবেন? তাও আমার অফিসে। আমি এখনই আপনার ঠিকানায় এটা ফেরত পাঠাচ্ছি। এরপর কখনোই আর এমন করবেন না।’

তাহসান একটু থতমত খেয়ে যায়, কী হলো আজ নীলার। কালও তো বেশ ভালোভাবেই কথা হলো। উম, শাড়িটা পাঠানো আসলে বোকামি হয়েছে। অফিসে পাঠালে সবাই জিজ্ঞেস করবে কে দিল। তাতে বেচারি তো আরও বিপদে পড়ে যাবে। নাহ, শাড়িটা হাতে হাতে দিলেই হতো। আসলে সেদিন নীলাকে শাড়িতে দেখে খুব ভালো লেগেছিল। তাই হুট করেই শাড়িটা কেনে ও।

ফোনটা রেখে নীলা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। পানির বোতল থেকে হাফ গ্লাস পানি খায়। ধীরে ধীরে ও যখন একটু শান্ত হয় তখন মনটা খারাপ হয়ে যায়, শুধু শুধু তাহসানের সাথে খারাপ ব্যবহার করল ও আজ। আসলে রাগটা নিজের উপর ওর। ও নিজেকে কেন জানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, যতই দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে ততই যেন আরও বেশি দূর্বল হয়ে পড়ছে।

শাড়ির প্যাকেটটা সামনেই পড়ে আছে। এবার হাত বাড়িয়ে শাড়িটা নেয়, তারপর পরম মমতায় হাত বোলাতে থাকে। ঠিক তখনই তাহসানের মেসেজটা আসে। নীলা দ্রুত মোবাইলটা হাতে নেয়, মেসেজটা পড়ে, ‘সরি নীলা। আসলে সেদিন তোমায় শাড়িতে দেখে খুব ভালো লেগেছিল। কেন জানি কিনতে ইচ্ছে করল। প্লিজ, শাড়িটা ফেরত পাঠিও না।’

নীলা কিছু লিখতে যেয়েও লিখে না। একটু ভাবে, তারপর মৃদু একটা হাসি খেলে যায় ওর ঠোঁটে।

৩.
তাহসানের মনটা আজ ভীষণ খারাপ। কেন যে অমন বাড়াবাড়ি করতে গেল। শাড়িটা না দিলেই হতো। ভাগ্যিস নীলা শাড়িটা ফেরত পাঠায়নি।

বাসায় ফিরতেই নেহা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘কি, মুড অফ কেন?’

তাহসান মাথা নাড়ে, ‘কই না তো। এই অফিসের ঝামেলা, তাই অমন মনে হচ্ছে। তুমি এক কাপ চা দিও।’

ফ্রেশ হয়ে চা টা হাতে নিতেই মোবাইলে একটা টুন করে শব্দ হয়। তাহসান আনমনে মোবাইলটা খুলতেই ও একটা ধাক্কা খায়, নীলা ওর শাড়ি পরে ছবি পাঠিয়েছে!! নীলা! একটা অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকে ছবিটার দিকে। ভালো লাগায় মনটা ডুবে যেতে থাকে।

এই প্রথমবারের মতো মেয়েটার কাছ থেকে রোমান্টিক কিছু পেল। এতদিন শুধু অফিসের কাজ নিয়ে কথা হতো বেশি। কিন্তু আজ দুপুরে শাড়ি পাঠানোর পর ও যেমন রাগ করে বলেছিল তাতে তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিল। দুপুরের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত একটা মেসেজ দেয়নি। ভেবেছিল, আর বুঝি কথাই হবে না। কিন্তু কী সারপ্রাইজ দিল আজ নীলা!

ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটা কথা ভাবে তাহসান, নীলার আজ এই ছবি পাঠানো কি তাহলে কোনো ইংগিত দেয়? ও মনে মনে এতদিন যা চেয়ে এসেছে নীলাও কি আজ তাই চাইল, ওর সাথেই সুর মেলাতে চায়? ভাবনাটা ভাবতেই একটা শিহরণ টের পায় তাহসান।

এবার মেসেজটার উত্তর দেয় তাহসান, লিখে, ‘আমার পরানও যাহা চায়, তুমি কি তাই? খুব, খুব সুন্দর লাগছে নীলা তোমাকে। এত খুশি কোনোদিন হইনি। আজ দুপুর থেকে এত মন খারাপ ছিল, এক নিমিষেই এখন উধাও।’

নীলা টুকুনের রুমে ওর পাশে বসে পড়াটা দেখিয়ে দিচ্ছিল। ঠিক এ সময় মেসেজটা আসে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। একটা মন ভালো লাগার হাওয়া টের পায়। তাহসানের জন্য দিন দিন মনের ভেতর একটা নরম জায়গা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এটা তো ও চায়নি। একটা দুর্মর আকর্ষণ ওকে যেন টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাহসানের দিকে।

মেসেজের উত্তরটা লিখতে যাবে ঠিক তখন টুকুন বলে, ‘আম্মু, এই অংকটা একটু বুঝিয়ে দাও। স্যার বুঝিয়েছিল, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি না।’

নীলার হাতটা থেমে যায়, ওর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তুই আরেকবার অংকটা করার চেষ্টা কর। না পারলে আমি দেখিয়ে দেব।’

টুকুন মাথা নেড়ে আবার অংকটা করতে বসে। নীলা এবার তাহসানের মেসেজের উত্তর লিখে, ‘আসলে দুপুরে একটা জরুরি মিটিংয়ে ছিলাম, এমনিতেই মেজাজটা খিচড়ে ছিল। সরি আপনার সাথে তখন উল্টোপাল্টা বলে ফেলাম। আর অনেক ধন্যবাদ শাড়িটার জন্য।’

ওপাশ থেকে তাহসানও লিখতে থাকে। একটু পর তাহসানের সেই চির চারিত দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়। লিখে, ‘আচ্ছা নীলা, আপনি কী ব্যাংক?’

প্রশ্নটা বুঝতে পারে না নীলা, বলে, ‘আমি ব্যাংক হতে যাব কেন?’

ওপাশ থেকে তাহসান লেখে, ‘তাহলে আপনাকে দেখলে আমার ব্যাংকের মতো ইন্টারেস্ট বেড়ে যায় কেন?’

নীলা সশব্দে হেসে উঠতেই টুকুন অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকায়, বলে, ‘মজার কোনো ভিডিও দেখছ?’

টুকুনের কথায় নীলা থমকে যায়, তারপর সামলে নিয়ে বলে, ‘হ্যাঁ। আচ্ছা কই তোর অংকটা দেখি।’

নীলার এখন আবার মনটা খারাপ হতে থাকে। নাহ, টুকুনের সামনে তাহসানের সাথে মেসেজে কথা বলা ঠিক হয়নি। ও এখন বড় হয়েছে, ক্লাশ এইটে পড়ে, সব বুঝতে পারে। মনে মনে ভাবে, এমন আর করা যাবে না।

পরদিন অফিসে যেতেই তাহসান আবদার করে আবার কবে দেখা হবে। নীলাও খুব চাচ্ছিল তাহসানের সাথে আবার দেখা করতে। তবে এবার আর সন্ধ্যায় না, দুপুরে দেখা করবে। সন্ধ্যায় মানুষ বেশি থাকে।

৪.
গুলশান লিংক রোডে নিনাকাব্য ভবনটা আবিরের খুব ভালো লাগে। সুউচ্চ ভবনটার পুরো দেয়াল জুড়ে সুন্দর সুন্দর কতগুলো লেখা।
যেমন, ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে’,
‘স্বাধীনতা তুমি উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন’,
‘তুমি নেই তোমার বন্ধন পড়ে আছে।’

বিখ্যাত লেখকদের সব বিখ্যাত লাইনগুলো। ভবনটায় সত্যিই একটা কাব্যিক ভাব আছে। ওকে মাঝে মাঝে এখানে আসতে হয়। আজ অবশ্য ও একা আসেনি সাথে ওর কলিগ সাদাতকেও নিয়ে এসেছে।

কাজ শেষে আবির বলে, ‘সাদাত, চলো অফিসে ফিরে যাই।’

ফেরার পথে গাড়িটা একটু সামনে এগোতেই হাতের বা পাশে আড়ংটা চোখে পড়তেই আবিরের হঠাৎ করেই মনে হয় নীলা ওর লুঙ্গিটা এখনও কেনেনি। আবির হড়বড় করে বলে, ‘এই, গাড়িটা একটু আড়ংয়ে রাখো তো।’

ড্রাইভার বিরক্ত হয়, আগে বললে হতো, এখন আবার সামনে থেকে ইউ টার্ন নিয়ে আসতে হবে। সে কথা বলতেই আবির বলে, ‘এত কাছে এসে ফিরে যাব না। তুমি ইউ টার্ন নাও, কতক্ষণ আর লাগবে।’

গাড়িটা ইউ টার্ন নিয়ে আসতে দশ মিনিট লেগে যায়। গাড়ি থেকে নেমে আড়ংয়ে ঢুকেই ওর কলিগ সাদাত চোখ বড় করে বলে, ‘ওরে বাবা, এত সুন্দর!’

আবিরও অবাক চোখে আড়ংয়ের চারদিকে চোখ বোলায়। নতুন এই শাখাটায় আসা হয়নি। সত্যিই সুন্দর। আবির হেসে বলে, ‘আমি উপরে ছেলেদের সেকশনে যাচ্ছি। তুমি কিছু কিনলে কিনে ফেলো।’

আবির দোতলায় ছেলেদের সেকশনে এসে সরাসরি লুঙ্গির কর্ণারটায় আসে। বেশি সময় নেয় না, একটা সাদার উপর চেক পছন্দ হয়ে যায়। লুঙ্গিটা নিতে গিয়ে হঠাৎ মনে হয় নীলাকে একবার ফোন করে শিওর হয়ে নেয়া যায়। হয়ত ও কিনে আলমারিতে রেখে দিয়েছে, ওকে দিতে ভুলেই গেছে। ফোনটা দিতে যেয়েও দেয় না, থাক। এমনিতে যে ব্যস্ত থাকে নীলা অফিসে।

নিচে এসে দাম দিতে যেয়ে হঠাৎ করেই মনে হয় নীলার জন্য একটা শাড়ি নিয়ে যাই। যদিও ওর পছন্দ খুব খারাপ। আবির এবার শাড়ির সেকশনে যেয়ে খুঁজে খুঁজে একটা কালো জামদানি পছন্দ করে।

কেনাকাটা শেষে ওরা বের হতে নিতেই সাদাত বলে, ‘ভাই, কিছু খেয়ে যাই। ওখানে তো হালকা নাস্তা দিয়েছিল। এখন ক্ষুধা লাগছে।’

কথাটা ঠিক। আবিরও ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে, সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে বলে, ‘হ্যাঁ, আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে। চল দেখি এদের এই নতুন রেস্টুরেন্টে কী পাওয়া যায়।’

৫.
নীলার আজ স্বস্তি নিয়েই বসেছে তাহসানের সাথে। দুপুর বলে একদমই ভীড় নেই আড়ংয়ের এই রেস্টুরেন্টে। তাহসানের আজ মনটা খুব ভালো, নীলা সেদিনের সেই শাড়িটা পরে এসেছে। নীলার এখন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। তাহসানের চোখের দিকে তাকিয়ে কথাই বলতে পারছে না। এমন মুগ্ধ চোখে ও তাকিয়ে আছে!

তাহসান গলা খাকড়ি দিয়ে কথা শুরু করে, ‘তোমাকে আজ অদ্ভুত সুন্দর লাগছে নীলা। তোমার মতো এত সুন্দর আর মেধাবী মানুষ নেই।’

নীলা মাথা নাড়ে, একটু সংকোচ নিয়ে বলে, ‘কি যে বলেন তাহসান ভাই, আমার চেয়েও অনেক মেধাবী আর সুন্দর মানুষ আছে। আপনি আমাকে পছন্দ করেন বলেই এ কথা বললেন।’

তাহসান মাথা নাড়ে, ‘একটা অবজেকশন। আমাকে আপনি করে না বললে হয় না?’

নীলা হঠাৎ করেই একটু লজ্জা পেয়ে যায়, মুখটা ঘুরিয়ে নেয়। ঠিক তখনই ও আবিরকে দেখতে পায়, সাথে আরেকটা লোক। ঝট করে নীলা মুখ ঘুরিয়ে আতংকিত গলায় বলে, ‘তাহসান, আমার হাসব্যান্ড আবির এখানে। আমার ঠিক পেছনেই, খয়েরী শার্ট পরা।’

তাহসান বিচলিত চোখে তাকায়, নীলার কথা মতো লোকটাকে খুঁজে পায়। তাহসান চোখের কোণ দিয়ে দেখে ওদের থেকে দূরে একটা কোণার টেবিলে ওরা বসছে।

নীলার মুখটা ভয়ে শুকিয়ে গেছে, মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে যাচ্ছে কী বলবে আবিরকে? আচ্ছা,ও এত ভয় পাচ্ছে কেন? ও তো ওর কোনো বন্ধুর সাথে বসতেই পারে। স্কুলের বা ইউনিভার্সিটির পুরনো বন্ধু। ভাবনাটা ভাবতেই একটু ভয়টা কমে। কিন্তু সাথে সাথে এটাও মনে হয়, এই ঘোর দুপুর বেলা অফিস ফেলে ও এখানে, এটার ব্যাখ্যা কী?

নীলার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, মনে মনে একটা যুতসই ব্যাখ্যা দাঁড় করার প্রাণপণ চেষ্টা করে, কিন্তু খুঁজে পায় না। একটা কথাই ভাবে, ইশ, কেন যে আজ এলো!

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
২৪/০৭/২০২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here