বসন্তের_একদিন #পর্বঃ০৬

0
419

#বসন্তের_একদিন
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

সকাল সকাল উঠে তৃধা নিজের কাজে লেগে পড়ে।একদম চুপচাপ নিজের কাজ শেষ করে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ে তৃধা।নিজের শাড়ি দিয়ে শরীর ভালো করে ঢেকে রেখেছে তৃধা।না হলে স্কেলের দাগগুলো দেখা যাবে।

অফিসে এসে নিজের ডেস্কে বসে ফাইলে কিছু লিখছে তৃধা।

” কি করছিস তৃধা?”

তৃধা মাথা তুলে দেখে তার কলিগ রুবাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।রুবাইয়া তৃধার কলিগ হওয়ার পাশাপাশি তার অনেক ভালো বন্ধুও।যদিও বা তাদের বন্ধুত্ব এই অফিসেই হয়েছে।

” এইতো ফাইল চেক করছিলাম।তুই এখানে যে?”

” তোকে দেখতে এলাম।আজ এভাবে শাড়ি দিয়ে হাত ডেকে রেখেছিস যে?কিছু হয়েছে নাকি?”

” আরে না কি হবে,কিছু হয়নি।”

” ও আমি ভেবেছি হয়তো কিছু হয়েছে।আচ্ছা আজ অফিস শেষে আমার সাথে বাইরে যাবি?তোর ভাইয়া কাজের জন্য আজ দেরি করে ফিরবে।”

” নারে আমি যেতে পারবোনা।বাড়িতে অনেক কাজ আছে।ননদরাও আছে,দেরি হলে আবার অশান্তি করবে।”

” হুম বুঝতে পেরেছি।আচ্ছা সমস্যা নেই অন্যকোনদিন যাবো।আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন আসছি।তুই কাজ কর।”

অফিসে থেকে ১ ঘন্টা আগেই বাড়িতে ফিরে এসেছে তৃধা।এসে সে চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে।নন্দিনী বারবার রান্নাঘরে এসে এটা ওটা খাওয়া জন্য নিয়ে যাচ্ছে তবে এবার তৃধা কিছু বলেনা।সে চুপচাপ নিজের কাজ করতে থাকে।

” বউমা,বউমা।” নিজের রুমে বসে চিৎকার করে তৃধাকে ডেকে চলেছেন ফাতেমা বেগম।তৃধা চুলার আঁচ ছোট করে দিয়ে ফাতেমা বেগমের রুম আসে।

” জ্বি মা বলুন।”

” রান্না কত দূর হলো?”

” এইতো মা ভাত চুলোয় দিয়েছি।”

” আচ্ছা বেশ ভালো।তো যেটা বলতে ডাকলাম।তুমি বেতন তুলেছো তাই না?”

” হ্যাঁ মা।”

” আচ্ছা তাহলে আমাকে চার হাজারটা দাও তো।”

” চার হাজার!” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে তৃধা।

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?মাত্র চার হাজার টাকাই তো চেয়েছি।”

” কিন্তু মা এতো টাকা দিয়ে আপনি কি করবেন?আর পরশুই না আমি আপনাদের বেতনের অর্ধেক টাকা দিলাম।”

” দিয়েছো তো কি হয়েছে?এখন চেয়েছি আবার দেবে।”

” কিন্তু মা আমি এখন আপনাকে চার হাজার টাকা দিলে বাকি মাসটা কেমন করে চলবে?মাত্রই তো মাসের শুরু।আর এতো টাকা দিয়ে কি করবেন?আমাকে বলুন আপনার কি লাগবে আমি এনে দেবো।”

” নন্দুর নাকি একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছে।ও নাকি ওটা নেবো।তার জন্য ৬ হাজার টাকা প্রয়োজন।”

” ৬ হাজার টাকার শাড়ি!” এতো দাম শুনে তৃধা আকাশ থেকে পড়ে।সে জীবনেও এতো দামের শাড়ি নেওয়ার সাহস কোনদিনও করবেনা।যদিও তৃধা আর তেজবীন দুজনেই ইনকাম করে তাও তাদের হিসার করে চলতে হয় নয়তো মাসের শেষে চলতে কষ্ট হয়ে যায়।তৃধা অবাক হওয়া সাইডে রেখে বলে, “মা এতো দাম দিয়ে শাড়ি কিনে কি লাভ?ওটা তো একবার নয় দুবারই পড়া হবে।আর আপু তো এতো শাড়িও পড়েনা।আমার কাছে এখন ৫ হাজার টাকাই আছে।যেটা দিয়ে আমার পুরো মাস চলতে হবে।আমি এখন টাকা দিতে পারবোনা।”

” আমি জানতাম,আমি জানতাম এই মেয়ে এই কথায় বলবে।নিজের বাবা-মাকে প্রতি মাসে মাসে এতো এতো দামী জিনিস কিনে দেয় তাতে ওনার টাকা কম পড়েনা যখন আমি বললাম আমার মেয়ের শাড়ি কেনার জন্য কিছু একটা দিতে তখনই ওনার টাকা কম পড়ে গেলো।হায়রে,আমি কি দেখে যে এই মেয়েকে ঘরে আনলাম।সামান্য চার হাজার টাকা দিতে পারছেনা,এই মেয়ে আমাদের সহ্য করতে পারেনা।” এছাড়াও আরো অনেক কথা বলে বিলাপ করতে থাকে ফাতেমা বেগম।তৃধা চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে।এমন না যে সে তার বেতনে পুরো টাকা তার বাবা-মায়ের পেছনে খরচ করে।সে প্রতি মাসে তার বাবা-মাকে বেশি হলে তিনহাজার টাকা দেয়,যেটা দিয়ে ওনাদের দুজনের স্বাচ্ছন্দ্যেই চলে যায়।বাকি অবশিষ্ট টাকার অর্ধেকটা সে ফাতেমা বেগমের হাতে তুলে আর বাকিটা সে নিজের প্রয়োজনে রাখে।যেহেতু তাদের বাড়তি ইনকামের কোন উপায় নেয় তাই তৃধা খুবই হিসাব করে চলে,সে যথাসম্ভব বাড়তি খরচ না করার চেষ্টা করে।

এদিকে,

তৃধা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর নন্দিনী ফাতেমা বেগমের ঘরে আসে।

” কি হলো?টাকা পেলে?”

” আর টাকা।টাকার কথা বলাতে আমাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে চলে গেলো।”

” কি।ও তোমাকে টাকা দেয়নি?”

” আরে না দেয়নি।দিলে কি আমি তোকে দিতাম না।”

” এই মেয়ের এতো বড় সাহস।দাঁড়াও আমি এখুনি ওর থেকে টাকা নিয়ে আসছি।”

নন্দিনী তৃধার রুমে এসে দেখে তৃধা রুমে নেই আর টেবিলে তার ব্যাগটা পড়ে আছে।নন্দিনী দ্রুত পায়ে ব্যাগের কাছে আছে।তারপর ব্যাগ ঘেটে পার্সটা বের করে।পার্স খুলে নন্দিনী দেখে তাতে দুটো হাজার টাকার নোট সহ আরো কিছু একশোটার নোট আছে।নন্দিনী হাজার টাকার নোটগুলো যেই নিতে যাবে ওমনি পেছনে থেকে তৃধা এসে নন্দিনীর হাত থেকে পার্সটা টেনে নিয়ে নেয়।নন্দিনীকে তৃধাকে দেখে কিছুটা ভয় পেলেও সে নিজের মুখে কঠোরতা বজায় রাখে।

” ব্যাগটা চিনিয়ে নিলে কেন?দাও ওটা আমাকে।”

” দেবে না।আর কেনই বা দেবো?ওটা কি আপনার ব্যাগ?না তো।তাহলে কেন দেবো আমি আপনাকে?আর আপনি আমার ব্যাগে হাত দিয়েছেন কেন?”

” আমার টাকা লাগবে তাই টাকা নিতে এসেছিলাম।”

” আপনার টাকা লাগবে তা বেশ ভালো কথা।কিন্তু আপনি আমার ব্যাগে কেন হাত দিয়েছেন?তাও আমাকে জিজ্ঞেস না করে।আপনার টাকা লাগলে আপনি আপনার হাসবেন্ড কে বলবেন।তা না করে আপনি আমার কাছে কেন টাকা চাইছেন?আমি আপনার এই ফালতু খরচের জন্য আপনাকে টাকা দিতে পারবোনা।আমি জানি,আপনি শাড়িটা পড়বেন না,শুধু শুধু নিচ্ছেন।হতে পারে আপনি খুবই বিলাশি জীবনযাপন করেন কিন্তু আমাদের এতো সামর্থ্য নেই যে ফালতু খরচে এতোগুলো টাকা খরচ করবো।এবার আপনি আসতে পারবেন।আর হ্যাঁ পরবর্তীতে আমাকে ব্যাগে বা পার্সে আমার অনুমতি ছাড়া একদম হাত দেবেন না।”

নন্দিনী তৃধার কথা শুনে খুবই অপমানিত হয়।সে ধুপধাপ পা পেলে তিথির রুমে চলে আসে।নন্দিনী মনে মনে ছক কসছে কি করে তৃধাকে অপমানিত করা যায়।

বিছানা বসে আছে তেজবীন।তৃধা পানি এনে তেজবীনকে দিলে তেজবীন না তাকিয়ে পানিটা নেয়।

” কিছু কি হয়েছে তোমার?”

” তুমি আপুকে কি বলেছো?” গম্ভীরভাবে বলে তেজবীন।

” ও তাহলে বলে দিয়েছে তোমাকে।তা কি বলেছে আমাকেও একটু বলো,আমিও শুনি।” বিদ্রুপ বলে বলে তৃধা।

” আপু আর মা নাকি তোমার থেকে কিছু একটা চেয়েছে আর তুমি নাকি ওনাদের অপমান করেছো।আর বাসা থেকেও বের করে দেওয়া হুমকি দিয়েছো।”

তেজবীনের কথা শুনে তৃধা জোরে জোরে হাসে।তারপর বলে, “ওনাদেরটাতো শুনেছো এবার আমারটা শোন।হ্যাঁ তোমার মা আমার থেকে টাকা চেয়েছিলেন কিন্তু আমি তা মানা করে দিয় তাও খুব ভালো ব্যবহার করে।তোমার মা কত টাকা চেয়েছে জানতে চাও?চার হাজার টাকা,তাও আবার কেন?একটা শাড়ির জন্য।তোমার বড় বোন নাকি শাড়ি কিনবে।তুমি ভালো করেই জানো আপু মোটেও শাড়ি পড়েন না।তাহলে কেন শুধু শুধু এতোগুলা টাকার শাড়ি কিনে ফেলে রাখবে।তাই আমি মানা করে দিয়।কিন্তু জানো তোমার বোন তারপর কি করছে?আমি যখন রুমে ছিলাম না তখন তোমার আপু এসেছিল পার্স থেকে টাকা নেওয়ার জন্য।তেজবীন তুমি ভালো করেই জানো আমাদের ইনকাম এতো বেশি না যে এসব ফালতু কাজে টাকা খরচ করবো।আর তোমার আপুর জন্য শাড়িটা এতোই দরকার হয় তাহলে সেটা তোমার জামাই বাবুকে বলতে বলো।ওনার তো টাকার অভাব নেই।উনি এরকম একটা কেন,দশটা কিনে দিতে পারবেন।শোন তেজবীন,সবসময় মা বোনের কথা না শুনে আমার কথাটাও শোন।আমি তোমার খারাপ চাইবোনা।আর তোমার আপুকে বলে দিও আমার থেকে যেন শাড়ির জন্য টাকা আসা না করেন।আমি দেবোনা টাকা।”

কথাগুলো বলে তৃধা বেড়িয়ে যায়।তেজবীন এখনো চুপচাপ বিছানায় বসে আছে।তার প্রতিদিনের এই অশান্তি মোটেও ভালো লাগেনা।সে বুঝতে পারে না আসলে সে কার কথা বিশ্বাস করবে।সে বাড়িতেও থাকে না যে জানবে আসল ঘটনা কি আর দোষটা কার।মাঝে মাঝে সেও বুঝে তার মা তাকে পুরোটা সত্যি বলেনা কিন্তু তারও তো কিছু করার নেই।সে তার মাকে কিছু বলতেও পারবেনা কারণ সে উনাকে খুবই ভালোবাসে আর শ্রদ্ধা করে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here