বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ০৬

0
454

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ০৬
#ফাতেমা_জান্নাত

—“কিরে বলছিস না যে?তখন কি তুই তোর দেবর কে দেখা দিতি?

কথা টা রাফিয়া কে বলেই রামিসা চুপ করে।রামিসা রাফিয়া কে চুপ থাকতে দেখে- ই পুনরায় প্রশ্ন টা করে।রাফিয়া এবার রামিসা এর দিকে তাকিয়ে স্বগতোক্তি করে বলে,

—“নাহ।সাইফ এর সাথে বিয়ে হওয়ার পর ও আমি সাফওয়ান কে দেখা দিই নি।কারণ সাফওয়ান আমার দেবর ছিলো। আর দেবর কে দেখা দেওয়া জায়েজ নেই। ইসলাম তা নিষেধ করেছে।আমার নিজ এর জানা এবং ধারণা মতে সাফওয়ান আমাকে দেখে নি ভাবি দেবর এর পরিচয় থাকা কালীন। এবার যদি কখনো সে আমাকে আগে দেখে থাকে।তবে তা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হবে।কারণ আমি কখনো -ই সাফওয়ান এর সামনে আসিনি। সাফওয়ান যথেষ্ট ভাবে আড়ালে থেকেছে।কারণ তাদের ফ্যামিলি তে পর্দা ও ইসলাম সম্পর্কে সবাই অবগত ছিলো। সবাই আলহামদুলিল্লাহ পর্দা মেনে চলে।ইসলামে নারী দের চৌদ্দ জন পুরুষ ব্যতিত বাকি সবাই কে দেখা দেওয়া না জায়েজ।মানে চৌদ্দ জন পুরুষ ছাড়া বাকি সবাই তাদের জন্য গায়রে মাহরম। আর এই চৌদ্দ জন পুরুষ রা হলো: বাবা,ছেলে,ভাই,নানা,দুধ ভাই,মামা,ভাতিজা, ভাগিনা, চাচা,দাদা,শ্বশুর, সৎ ছেলে,দুধ ছেলে,মেয়ের জামাই। এই চৌদ্দ জন ছাড়া বাকি সকল এর সাথে পর্দা করা ফরজ।না করলে কবিরা গুনাহ।একটি কবিরা গুনাহ জাহান্নাম এ যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইসলামে কোথাও লেখা নেই যে দেবর কে দেখা দেওয়া জায়েজ আছে।বর্তমান সমাজে অনেকে বলে,”দেবর হচ্ছে আমার ভাই এর মতো,দেখা দিলে সমস্যা না”।
কিন্তু রাসুল (সা:) আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,

“দেবর হলো মৃ’ত্যু সমতুল্য “।(বুখারী শরীফ -৫২৩২)

তাহলে তুই বল আমি কেন কিংবা কোন হিসেবে আমার দেবর কে দেখা দিতাম? সহজ ভাষায় দেবর দের বাজ পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে।শুধু যে আমি তখন সাফওয়ান এর সামনে যেতে চাই নি পর্দা করে চলেছি। এমন টা ও না।সাফওয়ান ও পর্দা করে চলতো।শুধু যে নারী দের মাহরম চার্ট আছে এমন না।পুরুষ দের ও মাহরম চার্ট আছে। পুরুষ দের ক্ষেত্রে ও চৌদ্দ জন নারী ছাড়া বাকি দের দেখা দেওয়া না জায়েজ। আর পুরুষ দের সেই চৌদ্দ জন মাহরম নারী হলো: মা,মেয়ে,,বোন,নানী, দুধ মা,খালা,ভাতিজি ভাগ্নি, ফুফু,সৎ মা,দাদি, শাশুড়ি, দুধ মেয়ে,ছেলের স্ত্রী। এই চৌদ্দ জন মহিলা ছাড়া বাকি সবাই পুরুষ দের জন্য গায়রে মাহরম। আর এখানে কোথাও লেখা নেই যে,দেবর ভাবি একে অপর কে দেখা দিতে হবে।তাই তো আমি কিংবা সাফওয়ান কেউ কাউ কে দেখা দিতাম না।ইসলাম নিষিদ্ধ সেটা।শুধু দেবর না।ভাসুর কে ও দেখা দেওয়া জায়েজ নেই।আমাদের বর্তমান সমাজে অনেক এ বলে ভাসুর হচ্ছে বাবার মতো।রামিসা এখন তুই আমাকে বল ভাসুর কি ভাবে বাবার মতো হয়?ভাসুর কোনো মতেই বাবার মতো হয় না।ভাসুর একটা মেয়ে এর জন্য কখনো মাহরম নয়।ভাসুর ও গায়রে মাহরম এর অন্তর্ভুক্ত। আশা করি তোকে আমি বুঝাতে পেরেছি আমি কেন সাইফ কে বিয়ে করার পর ও আমার দেবর মানে সাফওয়ান কে দেখা দিতাম না?

রাফিয়া র কথা শেষ হতে- ই রাফিয়া থামে।রামিসা এত ক্ষণ রাফিয়া এর কথা গুলো সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সব কিছু বুঝে আসতে- ই রামিসা রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে অনুশোচনা এর ন্যায় বাক্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—বুঝেছি রাফিয়া।এটা ও বুঝতে পেরেছি এত দিন আমি সবাই কে দেখা দিয়ে কত টা গুনাহ করেছি।আল্লাহ আমাকে মাফ করবে তো?আল্লাহ মাফ না করলে যে জাহান্নাম এ ও বোধ হয় আমার জায়গা হবে না যেই পরিমাণ গুনাহ এই জড়িয়েছি আমি নিজের অজান্তে।

রামিসা এর কথা শুনে রাফিয়া মৃদু হেসে বলে,

—কে বলে ছে আল্লাহ ক্ষমা করবে না?তুই মন থেকে আল্লাহ এর কাছে ক্ষমা চেয়ে নে।এত দিন এর করা সকল গুনাহ এর জন্য মাফ চাই তে থাক।রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে আল্লাহ এর কাছে কান্না করে বল যাতে সকল গুনাহ মাফ করে দেয়।আল্লাহ নিশ্চয় মাফ করবে।আল্লাহ ক্ষমাশীল। আল্লাহ ক্ষমা করে দিবে যদি তার বান্দা তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে। আল্লাহ ক্ষমা করতে পছন্দ করে।শিরক এর গুনাহ ছাড়া আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়।তুই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাক।ইনশাল্লাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিবে।

রাফিয়া খেয়াল করেছে রাফিয়ার প্রতি টা কথা শুনে রামিসার চোখে পানি এসে জমেছে। রাফিয়া আর কিছু না বলে ছাদ থেকে নিচে চলে আসে।রামিসা কে এখন কিছু টা সময় একা থাকতে দেওয়ায় বেটার। মেয়ে টা এত দিনে নিজ এর গুনাহ এর কাজ সম্পর্ক এ অবগত হয়েছে।তাই এখন অনুশোচনা হচ্ছে।রামিসা এর মা কিংবা বাবা কখনো তার চাল চলন পোশাক নিয়ে কিছু বলে নি।সবার সামনে যাওয়া আসা করতো। সবার সাথে মিলা মেশা করতো কখনো বারণ করে নি।যদি তাকে বারণ করতো, পর্দা মেনে চলতে বলতো তবে মেয়ে টা আজ এমন হতো না।কিছু কিছু সন্তান ফ্যামিলি এর কারণে গুনাহ এর ভাগীদার হয় আবার কিছু কিছু সন্তান ফ্যামিলি এর কথা না মেনে নিজ এর মর্জি তে চলে গুনাহ এর ভাগীদার হয়।আল্লাহ সবাই কে হেফাজত করুক।

🌸🌸

সাফওয়ান রাফিয়া র ঘর এর বেলকনি তে দাঁড়িয়ে ফোনে আমজাদ সাহেব এর সাথে কথা বলছেন। ঠিক সে সময় রাফিয়া এসে ঘরে ঢুকে। ঘরে সাফওয়ান কে দেখতে না পেয়ে বেলকনি এর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে সাফওয়ান ফোনে কথা বলছে।সাফওয়ান এর কথা শেষ হতে- ই বাইরে তাকিয়ে মনোরম পরিবেশ দেখতে থাকে।
রাফিয়া তা দেখে পিছন থেকে ডেকে উঠে বলে,

—এই যে শুনছেন?আম্মু ডাকছে আপনাকে। খেতে আসুন।

সাফওয়ান ঘুরে তাকায় রাফিয়ার দিকে।স্মিত হেসে রাফিয়া কে বলে,

—আসছি।

রাফিয়া আর কিছু না বলে আবার ঘুরে চলে যেতে নেয় । চলে যেতে নিবে এমন সময় পিছন থেকে সাফওয়ান বলে উঠে,

—রাফিয়া শুনুন!

রাফিয়া সাফওয়ান এর দিকে ফিরে দাঁড়ায়। কিন্তু তার দৃষ্টি নিচের দিকে নত।সাফওয়ান এর দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত তাকাচ্ছে।সাফওয়ান নির্নিমেষ ভাবে কিছু ক্ষণ রাফিয়া কে দেখে।দূরত্ব গুছিয়ে রাফিয়া এর সামনে এসে দাঁড়ায়। রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে – ই মৃদু স্বরে কণ্ঠ অতি মাত্রা- ই মোলায়েম করে স্বগতোক্তি করে বলে,

—আপনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন না কেন রাফিয়া?এখন আর তো আমাদের আগের সম্পর্ক টা নেই।এখন তো আমরা পবিত্র হালাল সম্পর্কে আবদ্ধ। এই সম্পর্ক কে অবজ্ঞা করতে তো পারি না।আমাদের মেনে নিতে হবে।আল্লাহ যা করে আমাদের ভালো এর জন্য- ই করে।আমি জানি এত সহজে এই সম্পর্ক এ আমরা স্বাভাবিক হতে পারবো না।আমাদের সময় লাগবে।ইতস্তত বোধ কাজ করবে।তবু ও আমাদের চেষ্টা করতে হবে আর পাচঁ টা স্বাভাবিক সম্পর্ক এর মতো যাতে আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়।আমার দিক থেকে আমি চেষ্টা করবো রাফিয়া, সব দিকে যথেষ্ট তা বজায় রেখে চলতে।বর্তমানে আমি আপনার দেবর নয় রাফিয়া। আপনার স্বামী।ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক কবুল বলে দুই পরিবার কে শাক্ষী রেখে আপনাকে বিয়ে করেছি রাফিয়া। আমার দিকে তাকানো আপনার জন্য বৈধ।আমার দৃষ্টি তে দৃষ্টি মেলানো আপনার জন্য ও বৈধ।এটা বৈধ দৃষ্টি। আমি কি আপনার থেকে এটা আশা করতে পারি?যে আমাদের বর্তমান এর হালাল সম্পর্ক টার ভীত আরো মজবুত করতে আপনি সহযোগিতা করবেন আমাকে?

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকে।সাফওয়ান এর কথা গুলো সে পুনরাবৃত্তি ভাবে।কিয়তক্ষণ চুপ থেকে নিজে কে ধাতস্থ করার প্রয়াস চালিয়ে মাথা টা কিছু টা উপরে তুলে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—জ্বি।ইনশাল্লাহ করবো সহযোগিতা। দুই জন এর দিক থেকে সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করবো দুই জনে ইনশাল্লাহ।

সাফওয়ান স্মিত হাসে।রাফিয়া এই প্রথম সাফওয়ান এর দৃষ্টি তে দৃষ্টি মিলিয়েছে।সাফওয়ান এর চোখ এর দিকে তাকিয়ে হেসেছে।সাফওয়ান রাফিয়া এর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কোলে হাসির রেখা টানে।দুই জন এর বৈধ দৃষ্টি মিলিত হয়েছে আজ।শুকরিয়া। ❤️

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

আশা করি আজকের পর্ব পড়ে সবাই বুঝতে পেরেছেন রাফিয়া কেন সাইফ এর সাথে বিয়ে হওয়ার পর ও সাফওয়ান কে দেখা দিতো না তার দেবর হওয়া সত্ত্বেও।
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here