বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ০৫

0
522

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ০৫
#ফাতেমা_জান্নাত

রাফিয়া আর সাফওয়ান তৈরি হচ্ছে আজ কে রাফিয়া এর বাবার বাড়ি যাবে তাই।সাফওয়ান সাদা পাঞ্জাবী আর পায়জামা পরে নিয়েছে।ড্রেসিং টেবিল এর ড্রয়ার আর এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা গত পাচঁ মিনিট থেকে খুঁজে চলছে কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা সে পেলো না।সেই মুহূর্তে ওয়াশরুম থেকে বের হয় রাফিয়া। লাল খয়েরি কালার এর একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে রেখেছে রাফিয়া। রাফিয়ার গায়ের রঙ শ্যাম বর্ণ।ঠিক শ্যাম বর্ণ রঙ ও বলা যায় না। তার থেকে ও অনেক টা ছাপা তার গায়ের রঙ।আর এই গায়ের রঙ এর জন্য- ই সবার থেকে কথা শুনতে হয় তাকে।তবে একটা কথা সবাই মানতে বাধ্য।রাফিয়ার হাসি টা সুন্দর। শ্যাম বর্ণ গায়ের রঙ এর মেয়ে গুলোর চেহারা যেমন এই হোক না কেন?তাদের হাসি টা থাকে মন কাড়া।নজর কাড়া হাসি তেই মুগ্ধ করে তারা।এই যে গত কাল রাতে ও সাফওয়ান যখন রাফিয়ার ঠোঁট কোল এর স্মিত হাসি টা একবার দেখে ছিলো। সে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো।বিমোহিত হয়ে ছিলো সেই হাসি তে।

রাফিয়া সাফওয়ান কে কিছু খুঁজতে দেখে বলে,

—আপনি কি কিছু খুঁজছেন?

সাফওয়ান রাফিয়ার কথা টা স্পষ্ট ভাবে শুনতে পায়নি তাই প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে,

—“হু?কিছু বল ছিলেন? ”

—“আপনি কি কিছু খুঁজছেন? আমি সাহায্য করবো?”

—আসলে আতর টা খুঁজে পাচ্ছি না আমার।কোথায় যেন রেখেছি ভুলে গিয়েছি।

রাফিয়া সাফওয়ান এর কথা শুনে কিছু বলে না।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সাফওয়ান এর কান্ড কারখানা দেখতে থাকে।সাফওয়ান টেবিল এর ড্রয়ার সহ সব কিছুতে খুঁজে চলছে তন্ন তন্ন করে।কিন্তু পাওয়ার নাম গন্ধ ও নেই।রাফিয়া উষ্ণ নিশ্বাস ত্যাগ করে কার্বাড এর সামনে চলে যায়।কার্বাড খুলে আতর দানি থেকে একটা আতর এনে সাফওয়ান এর সামনে বাড়িয়ে ধরে।সাফওয়ান কে উদ্দেশ্য করে স্বগতোক্তি করে বলে,

—“আগের টা শেষ হয়ে গিয়ে ছিলো। তাই আমি ফেলে দিয়ে ছিলাম। এগুলো কার্বাড এর মধ্যে ছিলো। আপনি হয়তো কার্বাড এর ভিতরে চ্যাক করেন নি।তাই পান নি।

—ও আচ্ছা, হ্যাঁ। ভুলে গিয়ে ছিলাম আমি।

—আচ্ছা নিন।

বলেই রাফিয়া আতর টা এগিয়ে দেয় সাফওয়ান এর দিকে।সাফওয়ান রাফিয়ার হাত থেকে আতর টা না নিয়ে তার নিজের ডান হাত টা রাফিয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।মুখে উচ্চারিত করে বলে,

—“লাগিয়ে দিন রাফিয়া”।

রাফিয়া ও কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় না করে সাফওয়ান এর হাতে আতর লাগিয়ে দেয়।চলে যেতে ধরে।কিছু একটা মনে করতে আবার ফিরে এসে সাফওয়ান এর বুক এর বাঁ পাশ এর পাঞ্জাবী এর উপর দিয়ে আতর লাগিয়ে দেয়।সাফওয়ান স্মিত হাসে
রাফিয়া কে তাড়া দিয়ে বলে,

—“আপনি রেডি হয়ে নিন রাফিয়া। অনেক টা সময় গড়িয়ে গেছে অলরেডি। পরে যেতে দেরি হবে তো”।

—“জি যাচ্ছি”।

বলে- ই রাফিয়া ড্রেসিং টেবিল এর সামনে গিয়ে চুল গুলো কে পেঁচিয়ে একটু উপরে তুলে কাঠি দিয়ে বেধে দেয়।সাফওয়ান এর সেই দিকে খেয়াল হতেই রাফিয়ার পিছনে গিয়ে অতি বিলম্বে চুল থেকে কাঠি টা খুলে ফেলে।রাফিয়া আয়নার মধ্যে দিয়ে -ই তাকিয়ে সাফওয়ান কে উদ্দেশ্য করে সুধাল,

—কাঠি খুলে ফেললেন কেন?

—উঁচু করে চুল বাধবেন না রাফিয়া। এটা উট এর পিঠের কুঁজ এর সাথে তুলনা করা হয়েছে।

সাফওয়ান এর কথায় রাফিয়া নিজের ভুল বুঝতে পারে।পরবর্তী তে চুল হাত খোঁপা করে একটা বেন্ট লাগিয়ে দেয়।কার্বাড এর মধ্যে থেকে বোরকা, হিজাব,নিকাব নিয়ে পড়তে শুরু করে।সাফওয়ান এগিয়ে এসে নিকাব টা নিয়ে রাফিয়া এর মুখে সুন্দর করে পরিয়ে দেয়।রাফিয়া, সাফওয়ান দুই জনে তৈরি হয়ে নিচে চলে আসে।ড্রয়িং রুমে আসতেই দেখে রাফিয়া এর শ্বশুর আমজাদ সাহেব চা পান করছেন।রাফিয়া শ্বশুর এর কাছে গিয়ে বলে,

—আসি বাবা।ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবেন আপনারা। (চম্পার দিকে তাকিয়ে) এই চম্পা বাবা মা কে টাইমলি খাবার দিস।

রাফিয়ার কথায় চম্পা হেসে দিয়ে ঘাড় কাত করে বুঝায়,” সে রাফিয়ার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে”।
আমজাদ সাহেব উঠে এসে রাফিয়া র মাথায় হাত দিয়ে বলে,

—“সাবধানে যেও মা।এবং তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।এই বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করবে।

আমজাদ সাহেব এর কথায় রাফিয়া মুচকি হাসে।আমজাদ সাহেব সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—সাবধানে যাস।পৌঁছে একবার ফোন দিস আমাকে। আর একটা কথা মাথায় রাখবি। আগে রাফিয়া এর পরিবার এর সাথে সম্পর্ক কি ছিলো সেটা ভুলে যা।সেটা অতীত। বর্তমানে সেটা তোর শ্বশুর বাড়ি।

সাফওয়ান আমজাদ সাহেব এর কথা মনযোগ দিয়ে শুনে প্রতি উত্তরে বলে,

—“জি আব্বু।মনে থাকবে “।আম্মু কোথায় আব্বু?

—তোর মা ঘরে শুয়ে আছে।মাইগ্রেন এর পেইন আর পা এর পেইন দুই টাই এক সাথে শুরু হয়েছে।তাই ঘরে শুয়ে আছে।নিচে আসতে চাই ছিলো। আমি- ই উঠে আসতে বারণ করেছি।

—ভালো করেছো।আমরা রুমে গিয়ে দেখা করে আসছি তাহলে।

বলেই সাফওয়ান রাফিয়া কে নিয়ে তার মায়ের রুম এর দিকে পা বাড়ায়। আমজাদ সাহেব সেই দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে।সাইফ এর কথা মনে পড়ে যায়।চোখে পানি এসে ধরা দেয় সাইফ এর কথা মনে পড়তে- ই।ছয় সদস্য এর পরিবার এর মাঝ থেকে এখন পাচঁ জন সদস্য। আল্লাহ হায়াত টুকু তো এত টুকু- ই রেখে ছিলো। তাই দুনিয়া ত্যাগ করতে যে বাধ্য। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়ে তিনি।মোবাইল ঘেটে বাপ বেটা তিন জন এর একটা ছবি দেখতে থাকে।কিছু সেকেন্ড গড়াতে -ই মোবাইল এর স্কিন এর উপর দুই ফোঁটা পানি এসে পড়ে।নির্নিমেষ ভাবে মুছে নেয় তা।আড়াল করে ফেলার প্রয়াস চালায় চোখের পানি। কেউ যাতে দেখতে না পায়।

🌸🌸

নতুন পরিচয় নিয়ে দ্বিতীয় বার রাফিয়া দের বাড়ি তে এসেছে সাফওয়ান। বিয়ের দিন এসে ছিলো। আর আজকে দ্বিতীয় বার এসেছে।রাফিয়ার দেবর নয় স্বামীর পরিচয় নিয়ে। দুই জনে ঘরে প্রবেশ করে।রাফিয়ার বাবা মা কে সালাম দিয়ে রাফিয়ার বাবার সাথে- ই কথা বলতে বসে যায় সাফওয়ান।রাফিয়া তার মা কে হাতে হাতে কিছু কাজে সাহায্য করতে রান্না ঘরে চলে যায়।আজ মেয়ে জামাই এসেছে,থাকবে তাই সব কিছুর তোড় জোড় একটু বেশি- ই রাফিয়ার মা এর।

রাফিয়া ঘরে এসে মাত্র ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে।এমন সময় সাফওয়ান এসে রুমে ঢুকে। রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

—“নিচে আপনার বান্ধুবি এসেছে রাফিয়া। তাই আমি উপরে চলে এলাম।”

—ও আচ্ছা।

—একটা কথা বলি রাফিয়া? কিছু মনে করবেন না তো?

—জি বলুন।

—আপনার বান্ধুবি কে বলবেন পর্দা করে চলতে।তার জন্য আমি একজন বেগানা পুরুষ। নন মাহরম।আমার সাথে কথা বলা, পাশে এসে বসা নিশ্চয় গুনাহ এর আওয়াতা ভুক্ত।উনা কে আপনি বুঝিয়ে বলবেন। আমি নিজ এর দিক থেকে ইনশাল্লাহ যথেষ্ট চেষ্টা করবো নিজ এর নজর কে হেফাজত করার।শুধু….

কথা বলতে বলতে- ই থেমে যায় সাফওয়ান। সাফওয়ান কে কথার মাঝ পথে থামতে দেখে রাফিয়া বলে,

—কথা টা সম্পূর্ণ করুন। শুধু কি??

সাফওয়ান দৃষ্টি নিচে নামিয়ে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে মোলায়েম স্বরে বলে,

—“শুধু আপনাতেই নজর স্থির রাখবো ইনশাল্লাহ”।

বলেই সাফওয়ান আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।রাফিয়া সেই দিকে তাকিয়ে মিহি হেসে রুম এর বাইরে বেরিয়ে আসে।ড্রয়িং রুমে বসে থাকা তার বান্ধুবি রামিসা কে নিয়ে ছাদে চলে যায়।রামিসা এর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর রাফিয়া বলে উঠে,

—তোকে কিছু কথা বলার আছে।কিছু মনে করিস না।

রামিসা রাফিয়ার কথার প্রতি উত্তরে বলে,

—“হ্যাঁ বল না”।

—তুই তোর দুলা ভাই এর সামনে আসিছ না।পর্দা মেনে চলিস।উনি তোর জন্য গায়রে মাহরম ব্যক্তি। নিজে কে হেফাজত কর।পবিত্র আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“মুমিনা নারী দের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজে দের লজ্জা স্থান এর হেফাজত করে।(সূরা নূর,আয়াত ৩১)

আবার ইমাম ইবনু কাসীর এই আয়াত এর ব্যাখ্যায় বলেন,

“তারা যাতে তাদের স্বামী ব্যতীত অন্য কোনো পর পুরুষের দিকে দৃষ্টিপাত না করে।এই জন্যই অধিকাংশ আলিমদের মতে- কামনার সহিত হোক কিংবা কামনা- বাসনা ব্যতীত হোক,উভয় অবস্থাতেই নারীদের জন্য বেগানা পুরুষের দিকে তাকানো নাজায়েজ। (তাফসীর ইবনু কাসীর-৬/৪৫)

তাহলে তুই কেন তোর দুলাভাই এর দিকে তাকাবি? উনি তোর জন্য বেগানা পুরুষ। তোর দিকে নজর দিলে উনার নিজের ও গুনাহ হবে।পর্দা টা মেনে চলার চেষ্টা কর রামিসা। নিজে তো গুনাহ – ই জড়াচ্ছিস সাথে আরেক জন কে ও জড়াতে চাইছিস? আল্লাহ কে ভয় কর।

রামিয়ার কথা শেষ হতেই রামিসা কিছুক্ষণ চুপ থাকে।কিয়তক্ষণ গড়াতেই রামিয়া কে প্রশ্ন করে বলে উঠে,

—“তুই কি সাইফ ভাইয়া কে বিয়ে করার পর সাফওয়ান ভাইয়া কে দেখা দিয়েছিলি?যদি না দিয়ে থাকিস। তাহলে দেস নি কেন দেখা, সেটা কি আমাকে একটু বলবি “?

রামিসার প্রশ্নে রামিয়া শুভ্র মেঘের আনাগোনা করা নীলাভ আকাশ এর দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করে।পরোক্ষণেই দৃষ্টি সরিয়ে রামিসার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।কিন্তু রামিসা রাফিয়ার এই হাসির কারণ বুঝতে পারেনি।

চলবে ইনশাল্লাহ✨🖤

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ।আসসালামু আলাইকুম 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here