#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ২৮
#ফাতেমা_জান্নাত
—“আমার বড় নাতি কে তো মে’রে ছো।এখন কি ওর আত্মার শান্তির জন্য মানুষ কে দিয়ে কোরআন টা ও পড়াতে পারবো না”?
আজ সাইফ এর মৃ’ত্যুর এক বছর হলো।এক বছর আগে এই দিনে সাইফ পৃথিবী থেকে, সবার মাঝে থেকে বিদায় নিয়েছে।আজ সাইফ এর মৃ”ত্যু বার বলে নাজমা বেগম চাইছে হুজুর দিয়ে কোরআন খতম পড়াতে। এতে নাকি সাইফ এর গুনাহ মাফ হবে।আমল বৃদ্ধি পাবে।আত্মা শান্তি পাবে।আর উনার কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় রাফিয়া। রাফিয়া বারণ করতে-ই রাফিয়া কে তিনি উক্ত কথা টা বলে।
ড্রয়িংরুমে সকলে বসে আছে।সাফওয়ান রাফিয়ার পাশে বসে আছে।নাজমা বেগম এর কথা শুনে সাফওয়ান এর রীতিমত রা’গ তুঙ্গে উঠে গেছে।কিন্তু কিছু বলতে পারছে না রাফিয়া তার এক হাত চেপে ধরে রেখেছে। আমজাদ সাহেব এবার গলা খাকাড়ি দিয়ে সবার নজর নিজ এর দিকে ফিরানোর চেষ্টা করে।নাজমা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বলে,
—খালাম্মা, সাইফ এর হয়ে যদি অন্য কারো দ্বারা কোরআন পড়ানো হয়।এতে কিন্তু সাইফ এর আমল নামায় কোনো নেকি-ই যোগ হবে না।উল্টো ওই ব্যক্তির আমল নামায় নেকি যোগ হবে তিনি কোরআন পাঠ করেছে সেই জন্য।উনি কুরআন পড়েছে তাই উনার সওয়াব হবে।এতে সাইফ এর কোনো সওয়াব যোগ হবে না।তাই এসব বলা নিতান্ত -ই ভুল আপনার।এগুলো সেকেলে নিয়ম কানুন যা মানুষ নিজে তৈরি করেছে।
আমজাদ সাহেব এর কথায় নাজমা বেগম চটে যায়।রুঢ় কণ্ঠে বলে,
—কথা কম বল তুই।এই মেয়ে তো তোদের তাবিজ করে বশ করে নিয়েছে।তাই আমার মুখে মুখে কথা বলিস। এই মেয়ে আমার নাতি টা কে মে’রে ও ক্ষান্ত হয়নি।তাই এখন ওর আত্না টা কে ও শান্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে দিচ্ছে না।
সাফওয়ান এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না।আর যাই হোক তার সামনে কেউ তার স্ত্রী কে দোষারোপ করবে সেটা সে কোনো মতে-ই মেনে নিবে না।না মানে ন আকার না।নাজমা বেগম এর কথা সাফওয়ান সহ্য করতে না পেরে বলে,
—একদম চুপ করুন।আমার ভাই এর জন্য আপনাকে এত ভাবতে হবে না।আমার মৃ’ত ভাই কে রাফিয়া নয় আপনি-ই কবর এ কষ্ট পাওয়ার জন্য পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। আপনি সকালে না বলে ছিলেন, ভাইয়ার মৃ’ত্যু বার হিসেবে পাশের প্লাট এর মানুষ কে দাওয়াত দিয়ে খাওয়া তে।তা আপনি আমাকে এটা বলুন কোন হাদিসে আছে মৃ’ত ব্যক্তির জন্য মানুষ দের কে খাওয়ানো জায়েজ আছে?নিজে দের তৈরি সেকেলে পুথি পত্র বর্তমানে দেখিয়ে অন্তত আমাকে বুঝাতে পারবেন না।আমার ভাই কে কষ্ট দেওয়ার জো খুঁজছেন আপনি।একদম আমার ভাই এর ভালো করতে আসবেন না আপনি।আর একটা কথা আমার স্ত্রী কে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না।আমার স্ত্রী হাদিস কুরআন পড়ে-ই আপনার সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয়নি।আমার ভাইয়া কে কবরে কষ্ট পাওয়ার সু্যোগ করে দেওয়ার জন্য না।নিজ এর চিন্তা ভাবনা, মন মানসিকতা বদলান।নয়তো ওসব চিপ চিন্তা ভাবনা নিয়ে অন্তত আমাকে আর আমার স্ত্রীর সাথে কিছু বলতে আসবেন না।
কথা গুলো সাফওয়ান থামে।পরিবেশে নিরবতা বিরাজ মান।থমথমে মুখ নিয়ে নাজমা বেগম তাকিয়ে আছে সাফওয়ান এর দিকে।আবার দৃষ্টি ঘুরিয়ে রাফিয়ার দিকে তাকায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে।যেন এই চোখ দিয়ে-ই রাফিয়া কে তিনি ভষ্ম করবে।
সাফওয়ান রাফিয়ার এক হাত নিজ এর হাত এর মুঠোয় নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
—চলুন রাফিয়া।
রাফিয়া কে নিয়ে ঘর এর দিকে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হয় সাফওয়ান। দুই তিন কদম যেয়ে আবার দাঁড়িয়ে যায়।পিছন ঘুরে নাজমা বেগম এর দিকে শান্ত স্বরে কিন্তু কঠিন মুখো ভঙ্গি নিয়ে বলে,
—মনে রাখবেন রাফিয়া বর্তমানে সাফওয়ান এর স্ত্রী। তাই সাফওয়ান এর স্ত্রী কে নিজে এর মন মতো কিছু বলে দোষারোপ করার চেষ্টা করবেন না।আর সাফওয়ান এর সামনে তো মোটে ও না।তাহলে সাফওয়ান ও কিন্তু সহ্য করবে না তার স্ত্রী কে মিথ্যে দোষারোপ করার অন্যায়। আশা করি আমি আপনাকে বুঝাতে সক্ষম যে আমি ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছি।
বলে-ই সাফওয়ান আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে রাফিয়া কে নিয়ে ঘরে চলে যায়।পিছনে রেখে যায় তার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থাকা নাজমা বেগম কে।
মৃ’ত্যু বার্ষিকী পালন করা না জায়েজ। এতে আপনি গরীব দুঃখী দের খাওয়া তে পারেন। তবে যাদের সামর্থ্য আছে নিজে উপার্জন করে খাওয়ার।তাদের কে যদি আপনি মৃ’ত্যু বার্ষিকী কে কেন্দ্র করে খাওয়ান এতে মৃ’ত ব্যক্তির কষ্ট বাড়ে।তাছাড়া মৃ’ত্যু বার্ষিকী পালন করা বিজাতীয় দের কাজ।এসব দিবস পালন করা মুসলিম সংস্কৃতি তে নেই।
যেহেতু এগুলো মুসলিমদের সংস্কৃতি নয় তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে এগুলো কাফের-মুশরিক বিজাতীয়দের সংস্কৃতি থেকে এসেছে।
আর এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে।’
(আবু দাউদহা/৪০৩১)
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা:) থেকে বর্ণিত,
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুশরিকদের দেশে বাড়ি তৈরি করল, তাদের উৎসব দিবস পালন করল এবং এ অবস্থায় মারা গেল তবে তার হাশর তার সাথেই হবে। (সূনানে বাইহাকী: ২৩৪)
নবী মুহাম্মদ (সা:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতীয়দের তরীকা অনুযায়ী আমল করে, সে আমাদের কেউ নয়।'(ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৪নং)
‘আমাদের তরীকা ওদের(মুশরিকদের) তরীকা থেকে ভিন্ন।'(বাইহাকী ৫/১২৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৪)
সাওবান (রা:) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি সবচেয়ে যাদের বেশি ভয় করি তারা হচ্ছে নেতা ও এক শ্রেণির আলেম সমাজ। অচিরেই আমার উম্মতের কিছু লোক বিজাতীয়দের সাথে মিশে যাবে।’
(ইবনে মাজাহ : ৩৯৪২। হাদ সহি)
আবু সাইদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত,
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকদের নীতি-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে।
এমনকি তারা যদি গুইসাপের গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে।’ আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! এরা কি ইয়াহুদী ও নাসারা? তিনি (সা:) বললেন, আর কারা? (সহিহুল বুখারী ৭০২)
মুসলিমদের জন্য দিবস শুধু দুইটি।
ইসলামে দুইটি দিবস ব্যতীত অন্য তৃতীয় কোন দিবস পালন করা তো এমনিতেই নিষেধ।
আনাস (রা:) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখলেন যে, মদিনাবাসীরা দুটি ঈদ(আনন্দের দিন) পালন করছে। তা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাহীলিয়াতের যুগে তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধুলা, আনন্দ-ফুর্তি করতে। এখন ওই দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তাআ’লা তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন। (আবু দাউদ, ১০০৪, নাসাই: ১৫৫৫, হাদিস সহিহ)
এই হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন ঐ দুই দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন।
যেহেতু আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্য মানব রচিত গুলো পরিবর্তন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন তাই অন্য যেকোন দিবস পালন করা বাতিল হয়ে যায়।
তাই কোন মুসলমানের জন্য অন্য যে কোন প্রকার দিবস পালন করা বৈধ নয়, হোক সেটা জন্মদিন, শোক দিবস, মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, নববর্ষ ইত্যাদি যাই হোক না কেন, তা পালন করা যাবে না।আল্লাহ সকল কে হেদায়েত করুক এবং সঠিক বুঝ দানের এর তৌফিক দিক।আমিন
🌸🌸
হসপিটাল করিডোর এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত পায়চারি করছে সাফওয়ান। সাবিনা একটা চেয়ারে বসে আল্লাহর নাম জপছে।সাফওয়ান রীতিমত মতো ঘেমে একাকার হয়ে আছে।বুকে তার চিনেচিনে ব্য’থা করছে।অজানা ভয় এসে যেন মন কুঠির এর পাশে বীজ রোপণ করছে।যা সময় এর সাথে সাথে যেন বেড়ে যাচ্ছে।
বাসায় হঠাৎ করে রাফিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়।বাড়ি তে কেউ ছিলো না পুরুষ। সাবিনা কি রেখে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।শেষে নিজে-ই রাফিয়া কে নিয়ে হসপিটাল এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।সাথে সাফওয়ান কে ফোন করে জানিয়ে দেয়।হসপিটালে রাফিয়া কে এনে কেবিনে নিতে-ই সাফওয়ান হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে হসপিটালে। সাফওয়ান এর যেন এক প্রকার পা’গল প্রায় অবস্থা।একটা মিনিট স্থির হয়ে বসছে না সে।দুই কিংবা তিন দিন আগে ও রাফিয়া বলে ছিলো তার পেটে পেইন হচ্ছে। সাফওয়ান ডাক্তার এর কাছে আসতে বললে ও রাফিয়া না করে বলে আরো চার পাচঁ দিন পরে যাবে।কিন্তু চার পাচঁ দিন আসার আগেই যে রাফিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লো।সাফওয়ান এর শরীর মৃদু কাঁপছে।অজানা ভ’য়ে নিশ্বাস যেন আ’টকে আসছে।আল্লাহর কাছে তার স্ত্রী কে সুস্থ রাখার জন্য দোয়া করছে মনে প্রাণে।পুরুষ মানুষ এর কাঁদতে নেই।তবুও সাফওয়ান এর চোখ জ্ব’লছে কান্না করার জন্য।কিন্তু পানি উপস্থিত হওয়ার আগেই সাফওয়ান চোখ কয়েক বার মুছে নেয় দুই হাত দ্বারা। আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ আমার রাফিয়ার কিছু করবে না।বলেই নিজেকে শান্তনা দেয় সাফওয়ান।
চলবে ইনশাল্লাহ
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ।আসসালামু আলাইকুম