বৈধ_দৃষ্টি #পর্বঃ১৪

0
225

#বৈধ_দৃষ্টি
#পর্বঃ১৪
#ফাতেমা_জান্নাত

সাফওয়ান দের বাসায় আজ জন সমাগম অবস্থা।রাফিয়া এর বাবা- মা আর রাফিয়ার মামা এসেছে সাফওয়ান এর বাসায়।রাফিয়া এর মামাতো বোন সুবর্ণার বিয়ে আর দুই দিন পরে- ই।তাই রাফিয়া এর মামা রাফিয়া এর মা বাবা কে নিয়ে সাফওয়ান দের বাড়ি এসেছে দাওয়াত দিতে।সাফওয়ান এর পুরো ফ্যামিলি কে দাওয়াত দিতে এসেছে। রাফিয়া এর শ্বশুর, বাবা আর মামা বসে ড্রয়িং রুমে কথা বলছে।আর রাফিয়ার মা আর শাশুড়ি ভিতর এর রুমে বসে কথা বলছে।রাফিয়া আর চম্পা নাস্তার ব্যবস্থা করছে কিচেন রুমে।

ড্রয়িং রুমে তিন পুরুষ এর কথা বলার মাঝে- ই রাফিয়া এর মামা রাফিয়ার শ্বশুর আমজাদ সাহেব এর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

—ভাই সাহেব! এতক্ষণ তো অনেক কথা- ই হলো।এবার তবে আসল কথা বলি।ইনশাল্লাহ আগামী দুই দিন পরে- ই আমার বড় মেয়ে সুবর্ণার বিয়ে।তাই আমি চাচ্ছি আপনারা পুরো পরিবার যাতে সেখানে উপস্থিত থাকেন। আপনারা সবাই আসলে আমি খুশি হবো।আমি ঘটা করে বিয়ের আয়োজন করবো না।কিছু আত্মীয় স্বজন আর ছেলে পক্ষে -ই উপস্থিত থাকবে।আশা করি আপনারা আসবেন।

রাফিয়া র মামার কথার পৃষ্ঠে আমজাদ সাহেব কিছু বলতে যাবে এর আগে- ই রাফিয়া এসে তাদের সামনে টি টেবিলে নাস্তা রাখে।সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার কিচেন এর দিকে ফিরে যায়।চম্পা চা এর কাপে চা ঢালছে। ঢালা শেষ হতে- ই রাফিয়া চা এর ট্রে হাতে নিতে গেলে- ই চম্পা বাধা দিয়ে বলে,

—ভাবি আমি নিয়ে যায় এটা?

রাফিয়া “না” সূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,

—ওখানে কে কে উপস্থিত আছে?

চম্পা সহজ স্বীকার উক্তি তে বলে,

—খালুজান, আপনার বাবা আর আপনার মামা।

—তোর খালুজান কে ছোট বেলা থেকে- ই দেখা দিচ্ছো। তুই ছোট থেকে -ই তো শ্বশুর বাবা কে দেখা দিস।শ্বশুর বাবা তোকে মেয়ে এর মতো করে লালন পালন করে।তাই উনার কথা বাদ দিলাম। কিন্তু আমার বাবা আর মামা কে দেখা দেওয়া কি জায়েজ তোর জন্য?

চম্পা রাফিয়া এর কথায় মাথা নিচু করে নেয়।মিন মিনে স্বরে বলে উঠে,

—না ভাবি।

—মাথায় রাখতে হবে কিন্তু এটা।তুই এখন যথেষ্ট বড়।তাই পর্দা করতে শুরু কর ঠিক মতো।এতো টা খাম খেয়ালী ভাবে চলাফেরা করা বন্ধ কর।আল্লাহর দরবারে জবাব দিতে হবে।

—আচ্ছা ভাবি মনে থাকবো।

বলে- ই মাথা টা নিচু করে নেয় চম্পা।রাফিয়া সেই দিকে তাকিয়ে হেসে চম্পার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে চা এর কাপ নিয়ে ড্রয়িং রুম এর দিকে পা বাড়ায়।

এই দিকে রাফিয়া এর মামার সাথে আমজাদ সাহেব এর সব কথা ফাইনাল হয়ে গেছে।বেচেঁ থাকলে ইনশাল্লাহ রাফিয়ার মামাতো বোন সুবর্ণার বিয়ে তে আমজাদ সাহেব সবাই কে নিয়ে যাবে।আমজাদ সাহেব রাজি হওয়া তে রাফিয়ার মামা যেন খুশি তে আটখানা হয়ে গেলো। রাফিয়ার শ্বশুর এর সাথে উনার সাথে জম্পেশ মিল আছে।দুই জনে- ই খোশ গল্প করার লোক।তাই রাফিয়ার মামার কাছে রাফিয়ার শ্বশুর কে প্রথম থেকে- ই উনার বেশ পছন্দ।একজন তো আছে নিজ এর মতো।

রাফিয়া চা এর ট্রে এনে তাদের সামনে রাখতে -ই তিন জনে তিন কাপ চা হাতে তুলে নিলো।চা এর থেকে উত্তপ্ত ধোঁয়া উড়ছে।বাষ্প ছড়াচ্ছে।রাফিয়ার মামার আবার গরম গরম চা পান করা পছন্দ।উনার ভাষ্য মতে ধোঁয়া উঠা গরম চা যদি ফুঁ দিয়ে না পান করা যায় তাহলে তৃপ্তি পাওয়া যায় না।তাই গরম ধোঁয়া উঠা চা এর কাপে তিনি ফুঁ দিতে নিবে এমন সময় রাফিয়া বলে উঠে,

—কি করছো কি মামা?

চা পান করার মাঝ পথে হঠাৎ রাফিয়ার বাঁধা পেয়ে রাফিয়ার মামা হক চকিয়ে যায়।বুঝতে না পেরে রাফিয়ার দিকে দৃষ্টি ফেলে রাফিয়া কে বলে,

—কি হয়েছে রে মা?

—চা ফুঁ দিয়ে কেন পান করছো?

—ফুঁ দিয়ে না খেলে যে তৃপ্তি পাই না।

বলে- ই তিনি হেসে দেন।রাফিয়া তপ্ত নিশ্বাস ফেলে তার মামার উদ্দেশ্যে স্বগতোক্তি করে বলে,

—“অতি শীঘ্রই এই অভ্যাস বদলাও মামা।হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিষেধ করেছেন, গরম খাবার না খেতে এবং খাবার যাতে ফুঁ দিয়ে না খাওয়া হয়।
তাছাড়া ও সাইকোলজি এর মতে,”মানুষ এর নিশ্বাস এ বি”ষ থাকে।আর মানুষ যখন কোনো খাবারে ফুঁ দিয়ে খায় তখন তার খাবারে নিশ্বাস এর বি”ষ টা মিশে যায়।যা মানব দেহ এর জন্য ক্ষতি কর প্রভাব ফেলে।তাই সাইকোলজি ও গরম খাবার খেতে নিষেধ করেছে এবং খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছে”।
তবে সাইকোলজি এর আগে হযরত মুহাম্মদ (সা:) কথা টা বলে গিয়েছে।পরে -ই বিজ্ঞান বলে কথা টা।তাই খাবার ফুঁ দিয়ে খাবে না মামা।আস্তে আস্তে অভ্যাস বদলাতে শুরু করো মামা।

রাফিয়া এর কথা শেষ হতে- ই রাফিয়ার মামা বলে উঠে,

—ঠিক আছে রে মা।আমি চেষ্টা করবো অভ্যাস বদলানো এর জন্য।ছোট বেলা থেকে এই অভ্যাস তো তাই এখনো রয়ে গেছে।

—আচ্ছা মামা।আজ থেকে- ই শুরু করো অভ্যাস বদলানোর।

বলে -ই রাফিয়া তার মা আর শাশুড়ি এর রুমে চলে যায়।সেখানে চম্পা নাস্তা দিয়ে এসেছে।রাফিয়া আর চম্পা এসে তাদের সাথে খোশ গল্পে শামিল হলো।রাফিয়া তার শাশুড়ি এর পাশে বসে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে -ই রাফিয়া সাবিনার কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়।সাবিনা রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে দেয়।রাফিয়ার মা এই দৃশ্য দেখে খুশি হয় বেশ।দ্বিতীয় বার ও একই পরিবারে মেয়ের বিয়ে হয়েছে,মেয়ে যে সুখে আছে এই দৃশ্য টা দেখে- ই তিনি বুঝতে পারছেন। তিনি জানেন সাবিনা মানুষ টা রাফিয়া কে নিজ এর মেয়ের মতোই ভালোবাসে।তাই তো সাইফ এর জন্য প্রস্তাব দিতে- ই রাজি হয়ে গিয়ে ছিলো।
সত্যি -ই মেয়েটা আলহামদুলিল্লাহ সুখে- ই আছে।সাবিনা মেয়ে টা কে পরের ঘর এর মেয়ে ভাবেনি কখনো।

🌸🌸

“বউ তুমি কথা কউ,
কউ না কথা..।
“তোমায় নিয়ে আমি বেধেছি ঘর,
ভুলেছি ব্য’থা.. ”
বউ তুমি..

ইসলামি গান টা গাইতে গাইতে কার্বাড থেকে জামা কাপড় নিচ্ছিলো সাফওয়ান। মাত্রা- ই অফিস থেকে এসেছে।এসে- ই ফ্রেশ হওয়ার জন্য কার্বাড থেকে জামা কাপড় নিচ্ছিলো আর ইসলামি গানটা গাচ্ছিলো। জামা কাপড় নিয়ে কার্বাড বন্ধ করে পিছন এর দিকে তাকাতে- ই দেখে রাফিয়া তার দিকে জহুরির চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ রাফিয়া এরকম দৃষ্টি নিজ এর দিকে থতমত খেয়ে যায় সাফওয়ান। সে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে রাফিয়া এখনো তার দিকে এক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।রাফিয়া এক নজরে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাফওয়ান এর কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগলো। লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে পেলো।
এই দিকে সাফওয়ান কে লজ্জা পেয়ে মুখ নিচ এর দিকে করে ফেলতে দেখে অবাক হয়ে যায় রাফিয়া। আরেকটু ভালো করে দৃষ্টি ফেলতে -ই দেখে সাফওয়ান মেয়ে দের মতো ব্লাশিং করছে।এটা দেখে রাফিয়া পুরো আহাম্মক হয়ে গেলো। সাফওয়ান আরেক বার মাথা তুলে তাকায় রাফিয়ার দিকে।রাফিয়া কে আগের ন্যায় থাকতে দেখে সাফওয়ান পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। সেই দিকে তাকিয়ে রাফিয়া হেসে উঠে।হাসতে হাসতে রাফিয়া বলে উঠে,

–“আপনার সামনে অভিমান এর অভিনয় করা দেখছে কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে।আপনার এসব কান্ড দেখেই তো আমার পেট ফেটে হাসি আসে।ছেলেরা ও মেয়ে দের ব্লাশিং করে?আপনাকে না দেখলে বিশ্বাস -ই করতাম না সাফওয়ান “।

বলেই রাফিয়া বেলকনি তে চলে যায়।এই দিকে ওয়াশরুমে আয়নায় নিজে কে নিজেই বকছে সাফওয়ান। মেয়ে দের মতো ব্লাশিং করার এই অভ্যাস তার আসলো কোথা থেকে?না জানি রাফিয়া কি ভাবছে।ভেবেছে বউ এর অভিমান মুছবে। উলটো নিজেই লজ্জা পেয়ে বসে আছে বউ গান শুনে ফেলাতে।

ওয়াশরুম থেকে সাফওয়ান ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে বেলকনির দিকে উঁকি দিয়ে দেখে রাফিয়ার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখে ফুটে আছে।সাফওয়ান গিয়ে পিছন থেকে রাফিয়া কে জড়িয়ে ধরে।রাফিয়ার চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয়।চুলের ঘ্রাণ নেয় নাসারন্ধ্র দ্বারা।ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠে,

—আমার অর্ধাঙ্গিনী কি জন্য হাসছে এখানে একা দাঁড়িয়ে?

রাফিয়া সাফওয়ান এর হাত ছাড়িয়ে সাফওয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে,

—আমাদের সাথে হাসার কোনো মানুষ নেই তাই একা একা কারণ ছাড়া হাসছি।

বলেই রাফিয়া ঘরে চলে যায়।সাফওয়ান সেই দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকে হেসে দিয়ে বলে,

—ইশশ্ ভালোই অভিমানের এর প্রলেপ পড়েছে আমার অর্ধাঙ্গিনী এর মনে।কবে ভালোবাসার প্রলেপ দিয়ে অভিমান এর প্রলেপ মুছবো?

বলেই সাফওয়ান ও ঘরে চলে যায়।

চলবে ইনশাল্লাহ

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। শুধরে নিবো ইনশাল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here